ফেইসবুকে মার্কেটিং 01: কেন করবেন ফেইসবুকে মার্কেটিং
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
আমাদের দেশে সাধারণত মানুষ আত্মীয় বা পরিচিত লোকদের কাছ থেকে কেনাকাটা করতে ভরসা পান। জরিপে দেখা গেছে বিশ্বে ৮৭ শতাংশ মানুষ তাদেরে এফএনএফ বা পরিচিত জনদের মাধ্যমে খবর পেয়ে পন্য ক্রয় করে থাকে।
এর মূল কারণ তিনটি।
১. মানুষ মনে করে তার বন্ধু ব্যবসায়ী তার কাছ থেকে দাম কম রাখবে,
২. সঠিক পন্যটি দেবে আর কোন ঝামেলা ছাড়াই কেনাকাটা শেষ করতে পারবে।
৩. পন্য ক্রয়ের পর কোনো সমস্যা হলে তাকে জানাতে পারবে। বা সহজ সমাধান পাবে।
তাহলে যদি এই তিনটি জিনিস মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়। তাহলে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনার উচিৎ এই তিনটি বিষয়ে ক্রেতাকে নিশ্চয়তা দেয়া। আসলে এই লেখাটা এখানেই শেষ হয়ে যেত পারতো। কিন্তু কতগুলো টেকনিক্যাল কারনে ঠিক এই বিষয়গুলো আপনি কি কিভাবে স্পেড করতে পারেন। তা আলোচনা করা যেতে পারে। তাছাড়া বৈশ্বিক মার্টেকে এক জরিপে দেখা গেছে ভোক্তাদের ৮৭% বন্ধু বা পরিচিতদের সুপারিশের উপর ভরসা রাখেন।আরকটি বাজার গবেষাণায় দেখা গেছে বিজ্ঞাপনের ওপর ভরসা রাখে প্রায় তিনভাগের একভাগ মানুষ, বাকী দউভাগ মানুষ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পন্যটির সাথে পরিচিত হন মাত্র, তারা বিজ্ঞাপনের সব কথা বিশ্বাস করেন না।
তাই বিপননের ক্ষেত্রে পরিচিতি সার্কেল এক বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বর্মানে বন্ধু ও চেনাজানা মানুষদের কারর্কর প্লাটফরম হলো ফেইসবুক। লং টেইলের প্রবক্তা, ওয়্যারড ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ক্রিস এন্ডারসনের মতে, আমরা এমন একটি যুগে এখন আছি, যেখানে বিজ্ঞাপনের ওপর সকলের বিশ্বাস ক্রমাগত কমছে। এর বিপরীতে ব্যক্তির ওপর বিশ্বাস বাড়ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য বিক্রয়কে বলে অর্গানিক সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং।ফেইসবুক ব্যবসাকেন্দ্র নয় এমনকি মার্কেটিং প্লেসও নয় এটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাত্র। তাই ব্যবসার মূল কেন্দ্র হিসেবে ফেইসবুককে ব্যবহার না করাই ভালো। যেহেতু এখানে পাবলিক গ্যাদার হয় সেক্ষেত্রে আপনি প্রচারের কাজে একে ব্যবহার করতে পারেন। তবে কঠিন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভোক্তাকে আকৃষ্ট করার জন্য ইউনিক, সৃজনশীল, ব্যতিক্রম এবং পরোক্ষ ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন। সেটা কেমন হতে পারে সে আলোচনায় যাওয়ার আগে আজ ফেইসবুক মার্কেটিং কেন প্রয়োজন এ নিয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।
ফেইসবুক মার্কেটিং কেন প্রয়োজন:
1. ব্যবহারকারীর সংখ্যা: আমাদের ৩কোটি ৩০ লাখ ইন্টারনেট ইউজারের মধ্যে ১কোটি 30 লাখ নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহার করেন বলে । এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। এই বিশাল কমিউনিটি যেখানে উপস্থিতি সেখানে আপনার পন্যের বিজ্ঞাপন দিতেই পারেন।
2. সময়ব্যয়: এক হিসেবে দেখা গিয়েছে ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা তাদের সময়ের ১৫-১৮ শতাংশ ব্যসবুকে ব্যয় করে থাকেন। আমাদের জীবনে বহুমুখী দিক ও কাজ রয়েছে সেক্ষেত্রে এই পরিমাণ সময় ব্যয় করা মানে সময়ের ৭ভাগের ১ ভাগ বা ৬ ভাগের এক ভাগ ব্যয় করা। তাহলে সে সময়ের মধ্যে আপনি আপনার মেসেজ দেয়ার চেস্টা করে দেখতে পারেন।
3. তরুন কমিউনিটি: আমাদের জনসংখ্যার ৬০% মানুষ ৩৫ বছরের কম বয়স্ক। এই উদ্যোক্তারাই নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছেন। আর ফেইসবুক ইউজাররাও তাই। এই কমিউনিটি আরো অনেকদিন কার্যকর থাকবে। তাই আপনারও প্রয়োজন এই কমিউনিটিতে যুক্ত হওয়া।এই কমিউনিটিই আপনার ক্রেতা হবে। এরাই আগামীদিনগুলোতে সর্ত্র নেতৃত্ব দেবে।
4. এফ-কমার্স পেজ: বাংলাদেশে এরই মধ্যে ২০০০ এর ওপরে এফ-কমার্স পেজ রয়েছে, যার মধ্যে ৮৯% পণ্য বিক্রয়সম্পর্কিত এবং ১১% সেবাসম্পর্কিত। কিন্তু পন্য সম্পর্কত পেজগুলিই তুলনামূলক বেশী একটিভ। পণ্যসম্পর্কিত পেজগুলোর বেশী নারীদের পণ্য বিক্রয় করে। আবার তাদের একটা অংশ রয়েছে নারী উদ্যোক্তা। চলতি বছর এই সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। যেখান বিক্রেতা সেখানে ক্রেতা, অথবা যেখানে ক্রেতা সেখানে বিক্রেতা আপনি যেদিক দিয়েই বিবেচনা করেন। এই বিশাল মেলায় আপনি আপনার পসরা সাজাতে পারেন।
5. ভাচুর্য়াল তথ্য ভান্ডার: ফেইসবুক ধীরে ধীিরে এক বিশাল তথ্যভান্ডারে পরিনত হচ্ছে।সারা বিশ্বে ফেসবুকের এক বিলিয়ন ইউজার রয়েছে। এখানে গ্রাহকদের সঙ্গে উপযাচক না হয়েও কমিউনিকেট করার সবচেয়ে বেশি সুযোগ রয়েছে। প্রতিদিন এখানে ২.৫ বিলিয়ন কন্টেন্ট শেয়ার করা হয়। এই বিশাল তথ্যভান্ডারে আপনি আপনার ইনফরমেশনগুলো যুক্ত করতে পারেন। এটা সত্যযে এখানে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। সেজন্য আপনি আপনার টার্গেট পিপলস পেতে কাজ করবেন। এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলবেন। কারণ আপনার ব্যবসা কিন্তু একদিনের নয়।
6. রেকডেড ডাটা হাউস: এখানে আপনার এবং সকল পেইজ ও তাদের এডিমিনের তথ্য রয়েছে। রয়েছে পন্যটি কতজন মানুষ পছন্দ করলো কতজন কিনতে চাইলো, কতজন মতামত প্রকাশ করলো তার তথ্য। এসব সেখানে অন দ্যা রেকডে থাকবে। এধরনের তথ্য আপনার প্রতিটি ব্যবসায়িক পদক্ষেপে প্রয়োজন হবে। যাতে করে আপনি সঠিক পরিস্থিতিটা বুঝতে পারেন। এবং সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
7. বাস্তবচিত্র: অনেকের একটা প্লাটফরম বিধায় পারস্পরিক তুলনা ও বিশ্লেষনের মাধ্যমে আপনার সামনে ব্যবসার অতীত বতর্মান ও ভবিষ্যতের একটা বাস্তব চিত্র ফুটে উঠে। তাই আপনার উচিৎ ব্যবসায়িকভাবে অন্তত প্রচার সুবিধার জন্য ফেইসবুকের সাথে সম্পৃক্ত থাকা।
8. ইউজার ফ্রেন্ডলী ও ইজি ফিল্টারিং: ফেইসবুক খুবই ইউজার ফ্রেন্ডলি একটা সাইট এবং সামাজিক যোগাযোগের জন্য পারফেক্ট কেন্দ্র। এতে যেকোন ধরনের পেইজ বা ইউজারকে স্থান, সময়, বয়স, পেশা, পছন্দ বিভিন্নভাবে ফিল্টারিং করে আলাদা করা যায় ফলে টাগেটেডে কাস্টমারদের খুজে পাওয়া সহজ হয়।
9. টার্গট পিপল সার্চ ও ফিল্টারিং: শুধু বিজ্ঞাপনের জন্য নয় লোকেদের খুজে পেতেও আপনি ফেইসবুকের সার্চ এবং ফিল্টারিং সুবিধা পেতে পারেন। ফলে আপনি পৌছে যেতে পারেন আপনার কাংখিত গ্রাহকদের নিকটে।
10. পিডব্যাক ও কাস্টমার অপেনিয়ন: এটা পারফর্ংমিং আর্টবা স্টেজ শোএর মতো এখানে পন্য পোস্ট বা পাওয়া বা সেবন এর সাথে সাথে গ্রাহক তার অনূভতি ব্যক্ত করতে পারে। ফলে আপনি খুব সহজে জেনে যান কাস্টামার কি চান বা তার সুবিধা অসুবিধা কি। এর থেকে আপনি সহজেই আপনার করনীয় ঠিক করে নিতে পারেন।
11. লাইভ কন্টাক্ট ও ইনস্ট্যান্ট কাস্টমার কেয়ার: এতে একটা দোকানে যেমন দোকানে পন্য বিক্রয়ের সময় কাস্টমারের সাথে কথা বলে নিতে পারেন ফেইসবুকেও তাই। ফলে ক্রেতা ভোক্তার যোগাযোগটা খুব কাযক্রর আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হয়ে থাকে।
12. কমিউনিটি বিল্ডআপ ও রেগুলার যোগাযোগ: এখানে নিদিৃষ্ট পন্যাভ্যাস, বা নীতি, বা প্রচলন বা কমিউনিটিকে ঘিরে নিদির্স্ট ধরনের পন্য কেন্দ্রীক আগ্রহী জনগোষ্ঠি তৈরী করে নিতে পারি।তে বিশেষায়িত বাজারব্যবস্থা পবর্রে েসাহয়াক শবক্তি হিসেবে কাজ করে।
মনে রাখবেন: ফেইসবুক কোন বাজার বা মার্কেট প্লেস নয়। এখানে আপনি পন্য বেচতে চাইলে অবশ্যই সাবধান থাকবেন। আপনি এমনভাবে প্রমোট করবেন যাতে মনে হয় আপনি নিজস্বার্থে ফেইসবুককে ব্য্যহার করছেন না। বরং সবার প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে আপনি একটা অফার দিচ্ছেন মাত্র।
ফেইসবুকে আমাদের এখানে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। যেমন এখানে ফিমেল ইউজার মাত্র ২১ শতাংশ, যদিও এর প্রকৃত সংখ্যা হবে ১৫-১৬ শতাংশ কারণ মেয়েদের নামে প্রচুর ফেইক আিইডি রয়েছে। রয়েছে ডিসেএবল ও ইনএকটিভ আইডি।পণ্যসম্পর্কিত পেজগুলোর ৯০% নারীদের পণ্য বিক্রয় করে।যে বাজারে ৯০ শতাংশ ক্রেতা পুরুষ আর ১০ শতাংশ ক্রেতা নারী। আর সে বাজারে আমরা পন্যের পসরা সাজিয়েছি ১০ শতাংশ ক্রেতার জন্য ৯০ শতাংশ পন্য সাজিয়েছি। আরো বিষয় সাধারণত আমরা মনে করি মহিলারা যেহেতু ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকেন। সেজন্য তাদের কাছে অনলাইন শপ জনপ্রিয় হতে পারে। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে েএর ভিন্নতা রয়েছে। অনেকেই বলছেন নারী ক্রেতাদেরকে বোঝানে খুব কঠিন। কেউ বলছে মহিলারা চায় মার্কেটে গিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখে শুনে পন্য ক্রয় করতে। এছাড়া কার্ড, ওয়ালেট, ব্যাংক একাউন্ট এসব ক্ষেত্রে মহিলারা পিছিয়ে রয়েছেন।
ভালো মার্কেটিং করার জন্য আপনার কন্টেন্ট: এমন কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে যা ভোক্তাদের সব সময় পণ্য, ব্র্যান্ড বা কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত রাখবে। ব্র্যান্ডের লাইকদাতা ও তাদের বন্ধুদের মনোভাব বুঝে কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে। কন্টেন্টগুলো হতে হবে ছোট, সহজবোধ্য ও নিজস্ব ভাষায়। পণ্য ও ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত বা সাম্প্রতিক ঘটনাকে পণ্যের সঙ্গে যুক্ত করে তৈরি কন্টেন্ট যেমন ফটো, ভিডিও লিংক ইত্যাদি ক্রমাগত পোস্ট করে যেতে হবে যা ব্র্যান্ড তথা ব্যবসাকে অনেকের কাছে দৃষ্টিগোচর রাখবে। আকর্ষণীয় পোস্ট তৈরি করতে হলে— পোস্টে ইনফোগ্রাফ, মিম, কার্টুন ইত্যাদি ইমেজ যুক্ত করতে হবে। প্রাসঙ্গিক ভিডিও, বিখ্যাত ব্যক্তিদের বাণী, পণ্য নিয়ে বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফার, তথ্যবহুল নোট, প্রভাবিত করতে পারে এমন ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার, মজার কোনো প্রতিযোগিতা, গল্প, কুইজ, ট্রেন্ডি কোনো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ইত্যাদি ব্যবহার করে আকর্ষণীয় পোস্ট ডেভেলপ করা সম্ভব।
পারিপাশ্বিক কানেকটিভিটি: ব্যবসার অবস্থান বুঝতে যেখানে যুক্ত থাকতে হবে— নিজের ব্যবসায়িক পেজের সোশ্যাল কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট কনভার্সেশন, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যানালিটিকস ডেটা, লিড ও সম্ভাব্য গ্রাহকের তথ্য, প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ড পেজের কনভার্সেশন, বৈশ্বিক প্রবণতা নিয়ে খবর ও আলোচনা, সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ড তথা কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত খবর ও আলোচনা, ব্র্যান্ড রেপুটেশন ও পাবলিক সেন্টিমেন্ট, গ্রাহকের সন্তুষ্টি, বিশ্বস্ততা ও প্রচারের তথ্য, গ্রাহকের সমস্যা ও সমাধান, ইন্ডাস্ট্রিতে প্রভাবশালীদের কথোপকথন ইত্যাদি।
টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও ইত্যাদি মনোযোগ আকর্ষী বিষয়বস্তু দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে সমৃদ্ধ প্রোফাইল জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। এমন সব কন্টেন্ট পোস্ট করতে হবে যেগুলো মানুষকে পেজে যুক্ত থাকতে আগ্রহী করে তুলবে।
এ বিষয়ে আরো একটি লেখার অপেক্ষায় থাকুন
6,481 total views, 3 views today