815405699_61d745ac23_b[1]
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প:  সমস্যা, সম্ভাবনা, সংকট, উত্তরণ ও ই-কমার্স

জাহাঙ্গীর আলম শোভন

এটি একটি অত্যন্ত সুখপাঠ্য লেখা হতে পারতো। কিন্তু সেপথ ধরলে কলেবর বেড়ে যাবে তাই পয়েন্ট ভিত্তিক আলোচনা রাখলাম।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প: সমস্যাসমূহ
০১. বাংলাদেশের সরকারের খুব বেশী বাজেট এ খাতে নেই।
০২. আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দয়ের বাইরে পর্যটন করার মতো কোনো স্থাপনা নেই। বাংলাদেশ সংসদভবন সাধারণের জন্য নিষিদ্ধ।
০৩. দূনীতির কারণে অল্পকিছু উদ্যোগ হলেও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়না।
০৪. আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে সময় উপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়না।
০৫. সরকারের অদক্ষতার কারণে দেশকে সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়না।
০৬. দেশে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির কারণে পর্যটকরা এদেশকে নিরাপদ মনে করেনা।
০৭. যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে ভ্রমন আনন্দেও পরিবর্তে বিষাদে পরিণত হয়।
০৮. ক্রমাগত সড়ক দূর্ঘটনার কারণে দেশীয় পর্যটকরা পর্যৗল্প উৎসাহ হারিয়ে পেলেন।
০৯. পর্যটন এলাকাগুলোতে জনসাধারণের নিরাপত্তার ব্যাপক অভাব রয়েছে।
১০, ট্যুর অপারেটরগুলো সেবা পরিবর্তে অর্থে কামাই বড়ো করে দেখে। এক্ষেত্রে পেশাদারিত্বেও অভাব রয়েছে।
১১. দেশে ইংরেজী জানা লোকের অভাবের কারণে বিদেশীরা স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারেনা।
১২. রাস্তায় নামলে হাইজাক ও ছিনতাইকারীর ভয়ে পর্যটকরা তটস্থ থাকেন।
১৩, ভারতীয় পত্র পত্রিকা এবং বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া ও নেতারা বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরাতা বিষয়ক প্রচারণা চালান এতে বিদেশীদেও মধ্যে এক ধরনের ভীতি সঞ্চার হয়। তারা এদেশে আসতে চায়না।
১৪. আমাদেও দেশের টিভি চ্যানেল বা সিনেমা বিদেশে চলেনা বলে আমাদেও সৌন্দর্য বিশ্ব মিডিয়াতে খুব একটা আসেনা।
১৫. ভালো মানের হোটেল ও সেবা দুটোই এখানে দূষ্পাপ্য। শহরকেন্দ্রক কিছু সেবা থাকলেই পযর্যটন এলাকাগুলোতে এসব সেবা দূষ্পাপ্য।
১৬. অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশের ভিসা পাওয়াও কঠিন। উপরÍু পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশেই বাংলাদেশের সরাসরি ভিসা ও কনসূলেট অফিস নেই।
১৭. বাংলাদেশের নাগরিকদেও বিরুপ আচরণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেশ সেম্পর্কে ভুল মেসেজ দেয়। বিশেষকরে ছাত্রলীগের অস্ত্রহাতে যেসব ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এগুলো ভয়ানক। এছাড়া রয়েছে বিরোধীদলের ঘণ ঘণ হরতাল ও অন্যান্য রাজনৈতিক অস্থিরতা।
১৮. জাল ডলারসহ নানারকম প্রতারণা। মার্কেটে পন্য কিনতে গেলে ওজনে ও মানে নানা ঘাটতি। বিদেশী নাগরিকদের বিরক্ত করে তোলে।
১৯. রাস্তায় বিক্ষুকদের উৎপাতও কখনো কখনো বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়ায়।
২০. বাংলাদেশে হোটেল ও যানবাহন বুকিং এবং মূল্য পরিশোধ এগুলো নিঝঞ্জাট নয়।
২১. নানারকম সামাজিক অপরাধ খুন দর্ষণ এসবের কারণেও দেশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি পর্যটর শিল্প বিকাশের পথে অন্তরায়।
২২. এয়ারপোর্টে নানারকম হয়রানীও টুরিস্টদেও চিন্তার কারণ হয়ে দাড়ায়।
২৩. বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাসসমূহ এ ব্যাপাওে শুধু উদাসীনই নয় বরং অসহযোগিতামূলক আচরণ করে।
২৪. পৃথিবীর আকর্ষনীয় সৈকতের পানি পরিষ্কার হলেও আমাদেও কক্সবাজারের অধিকাংশ এলাকার পানি ঘোলাটে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প: সম্ভাবনা
০১. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি এই দেশ। ছোট দেশে রয়েছে অনেক বৈচিত্র। এদেশের শষ্য শ্যামল গ্রামগুলো দেখার মতো সুন্দর।
০২. এদেশে আছে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, বৃগত্তম সমুদ্রসৈকত।
০৩. এদেশে সাগর নদী পাহাড় গ্রাম হাওর আরো কতো কিছু মিলে অনেক সুন্দর এক কম্বিনেশন।
০৪. আমাদের সমুদ্রসৈকত হাংরের ভয়মুক্ত।
০৫. এখানকার নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু খুবই আরামপ্রদ
০৬. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এদেশকে প্রতিবেশী দেশসমূহ থেকে আলাদা করেছে।
০৭, রাজণীতি ও অর্থণীতিতে পিছিয়ে থাকলেও সামাজিক ক্ষেত্রে আমাদেও উন্নতি আশাব্যঞ্জক।
০৮. আমাদের দেশের মানুষ স্বভাবতই অতিথিপরায়ন।
০৯. আমাদের রয়েছে পুরনো সমৃদ্ধ ও খুব সুন্দর লোকসাহিত্য সম্ভার, এসবকে সঠিকভাবে তুলে ধরা আজ সময়ের দাবি।
১০. আমাদের স্বতন্ত্র ক্রীড়া, ভাষা, সাহিত্য, প্রাচীণ নির্দশন সমূহ আকর্ষণের বিষয় হতে পারে।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প: সংকট
১১. প্রচুর জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ এখানে জনশক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য টুরিজম বেজড অনেক ব্যবসা ও শিল্প গড়ে তোলা যায়।
১২. আমাদের রয়েছে নান্দনিক লোকশিল্প, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এসব ও পর্যটক আকষণের বিষয় হতে পারে।
১৩. আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্রকে পুঁজি করে বছরজুড়ে নানা ইভেন্ট আয়োজন করে পর্যটক আকষণ করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প: সংকট

০১. আমাদের যেকোনে বিষয়ে উত্তরণে মূল সংকট হলো মানষিকতার, সৌন্দর্য এবং নান্দনিকতাকে আমরা যেন ভুলে যেতে বসেছি। কক্সবাজাওে সমুদ্র ছাড়া আর কোনো আকর্ষণ আমরা তুলে ধরতে পারিনি। অথচ কক্সবাজার যাওয়ার পথে, কক্সবাজারে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক কিছুই রয়েছে।

০২. কোনো প্রাকৃতিক সুন্দর ভেন্যুকে আমরা সাজিয়ে আরো সুন্দর পর্যটন বান্ধব করতে পারিনি। বরং সৌন্দর্য নস্ট করতে আমরা ওস্তাদ।  উদাহরণ: চট্টগ্রামের ফয়েজলেক একটি সুন্দও প্রাকৃতিক নির্দশণ। একে আমরা সুন্দরের নামে একটি টাকার কুমির কোম্পানীর হাতে তুলে দিলাম। যে কোম্পানী কনসার্ট আয়োজন ছাড়া তেমন কোন সামাজিক দায়িত্বমূলক কাজ করেন। আপনারা অনেকেই স্বাক্ষী এই কোম্পানী ফয়েজলেকে একটি গাঁদা ফুলের গাছও লাগায়নি। বরং লোহা লক্কড়ের রাইড, পাকা ঝাকা কওে মূল সৌন্দর্যটাকে ঢেকে দিয়েছে। এধরনের রাইড তো অন্য স্থানেও করা যেত। একটি আল্লাহ পদত্ত সুন্দর স্থান কেন ১০০ টাকা ফি দিয়ে দেখতে হবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য কোনো কুমিরকে টাকা দিতে হবে। এর চেয়ে অযৌক্তিক আর কি হতে পারে। এটাতো সাগরের ডেউ গোনার জন্য মাঝিকে টাকার দেয়ার সমান। অথবা নতুন ঢাকা শহরে এসে বিল্ডিং এর তলা গোনার জন্য কোন বাটপারকে টাকা দেয়ার মতো।

০৩. কোনো একটা সুন্দর জায়গা যখন প্রাদপ্রদীপের আলোয় আসে তখন সেখানে নানারকম চোর চোট্টার আড্ডাখানা হয়। সেখানে মানুষ নিরাপত্তার পরিবর্তে নানা হয়রানী ধোকাবাজি ও মূল্যকারসাজির শিকার হয়। আর বিদেশীরা সব বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যায়।

০৪. কোনো একটি সুন্দর বা স্বাস্থকর স্থানে প্রাইভেট সেক্টও নানা ব্যবসার মাধ্যমে বিকশিত হবে এটা সা¦াভাবিক কিন্তু কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় যে প্লট প্লাট বিক্রির ব্যবসা শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে মূল পর্যটন এলাকার সীমানা কতটুকু রক্ষা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই এ ব্যাপাওে প্রশ্ন তুলেছেন।

০৫. চট্টগ্রাম এমন একটি শহর যেখানে সাগর নদী পাহাড় সমভূমি বনাঞ্চল এ পাঁচের কম্বিনেশন। এরকম শহর পৃথিবীতে অনেক গুলো নেই। এই সুন্দরকে কি আমরা ব্যবহার করতে পেরেছি।

০৬. ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক হোটেল মোটেল আছে। কিন্তু পর্যটকের জন্য কয়টি হোটেল আছে? চট্টগামের কোন হোটেল থেকে কি পাহাড় দেখা যায় অথবা সমুদ্র? কক্সবাজারে অবশ্য ইদানিং হয়েছে। সব শহরেই একই অবস্থা। একজন পর্যটক ছুটি কাটাতে আসে নিরিবিলি থাকার জন্য। আর আমাদের হোটেলগুলো সব শহরের ফ্যাঁ ফুঁ এর ভেতরে। তাহলে আমাদের ব্যবস্থাপনা পর্যটকদের জন্য নয়? এরকম আরো হাজারো বিষয় আছে যা আমাদের চিন্তা চেতনা প্রেজেন্ট করছে এবং তা ইতিবাচক নয়?

০৭. একজন পর্যটক যদি কক্সবাজারে আসে তিনি বুঝি দিনরাত শুধু সমুদ্র দেখবেন আর সমুদ্র দেখবেন। সেখানে সমুদ্রকেন্দ্রীক কোনো আয়োজন থাকবেনা? অথচ সব দেশেই তা আছে। আমাদেও এখানে বছওে একদিন ঘুড়ি উড়াও, একটিদন বিচবল, একদিন বিচ ক্রিকেট, একদিন কনসার্ট, ব্যস, বছরের আর ৩৬০ দিন কিছুই নেই। এভাবে পর্যটক আকষণ করা যায়? পর্যটন কর্পোরেশন এর দেয়া যেসব তথ্য রয়েছে যে বছরে এত এত বিদেশী পর্যটক আসে। আসলে তার বড়ো একটা অংশ ভারতীয় নাগরিক যাদেও আত্মীয় আছে ঢাকায়, তার পরের বড়ো একটা অংশ অনাবাসী বাংলাদেশী যারা বিদেশী পার্সপোর্ট বহন করেন। এবং বাংলাদেশী সীলে ঘুরে বেড়াতে স্বাচ্চন্দবোধ করেন না। আর একটি অংশ ব্যবসায়ী আর একটি অংশ আফ্রিকান নাগরিক। প্রকৃত পর্যটকের সংখ্যা খুব কম।

০৮. স্কুবা ডাইভিং নেই, ¯েœা কারলিং নেই, সার্ফিং খুবই সীমিত, ফিশিংও তাই, নেই ভালো বোটিং সুবিধা, ওয়াটার রাইডিং নানা আয়োজন কবে হবে কেউ জানেনা, সী রানিং ইভেন্ট সুযোগ প্রতিযোগিতা কোনোটাই নেই, বিচ স্পোটিংও হাতে গোনা দু চারটি, সুইমিং খুব বৈচিত্রপূর্ণ নয় এখানে, ক্লাইম্বিংএর কথাও শোনা যায়না, সানবাথিংও সম্ভবত খুব সূককর নয়, শার্ক ডাইভিং এর তো প্রশ্নই ওঠেনা, মোটর ডাইভিং খুব একঁেঘয়ে টাইপের, সিনে শূটিং শুধ বাংলাদেশী ছবির, ওয়াচিং সী এর অনেক অপশন নেই। এতো গেল সমুদ্র কেন্দ্রীক বিভিন্ন ইভেন্ট এরকম পাহাড়, গ্রাম, নদীকেন্দ্রীক এবং আদীবাসী সংস্কৃতি নির্ভর অনেক আয়োজন করা যায়। সেসব এখানে নেই।

০৯. এছাড়া বিলাসী টুরিস্টদের জন্য স্কাই কার, রিসার্চ ট্ওায়ার, সিঙ্গেল এভিয়েশন, গল্ফ, সুইমিং পুল, সুইমিং জোন, ক্যাসিনো, পানশালা, বিশেষায়িত ক্লাব, ইনডোর আউটডোর স্পোর্টসজোন, পার্টি এন্ড এক্সিবিশন সেন্টার, কর্মাসিয়াল স্যণনঁ, স্টুডিৗ এপার্টমেন্ট, আর্ন্তজাতিক মানের শপিং সেন্টার, বহুজাতিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইত্যাদি আয়োজন প্রতিটি পর্যটন নগরীতে থাকতে হবে। অথচ একটিতেও নেই। আপনি একজন টুরিস্ট হিসেবে নিরপেক্ষভাবে আপনি যখন ভ্রমনে যাবেন তখন কোন ভেন্যু বেছে নেবেন। সকল সুযোগসুবিধা আছে এরকম একটি জায়গা নাকি শুধু, সাগর, শুধূ বন, শুধু পাহাড় আছে এমন স্থান। নিজেই উত্তর পেয়ে যাবেন।

১০.  ভারতের শ্লোগান- ইনক্রিডিবল ইন্ডিয়া, মালয়েশিয়ার- ট্রুলি এশিয়া, আমরা দিতে পারি হার্ট অব ওয়ালর্ড অথবা হার্ট অব এশিয়া কিন্তু কে দেবে? বিড়ালের গলাও আছে, ঘন্টাও আছে, বাঁধার কেউ নেই।

্ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প: উত্তরণ

০১. যুগউপযোগী পর্যটন নীতিমালা তৈরী করতে হবে।
০২. পর্যটন কর্মক্ষম জনগোষ্টি তৈরী করতে হবে।
০৩. পর্যটন বান্ধব যোগাযোগ ও স্থাপনা তৈরী করতে হবে।
০৪. পর্যটন শিল্পের জন্য ব্যবসা সহজ করতে হবে, ট্যাক্স কমাতে হবে, আয়কর রেয়াত করতে হবে।
০৫. সরকারী বেসরকারী ভাবে দেশে বিদেশে প্রচারণ চালাতে হবে।
০৬. পর্যটন এলাকাগুলো নিরিবিলি করে তার নিকটবর্তী শহওে সমস্ত নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
০৭. পক্রিয়া সহজ করতে হবে, ভেন্যুগুলো নিরাপদ করতে হবে।
০৮. প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সরকারী ও বেসরকারীভাবে গাইড স্বেচ্চাসেবক ও খন্ডকালীন কর্মী তৈরী করতে হবে।
০৯. বিভিন্ন দেশ জাতি ধর্ম তাদের কালচার ও রুচি অনুযায়ী খাবার পোশাক ও সুযোগসুবিধা থাকতে হবে।
১০. পাহাড় সিটিতে পাহাড়জোড়, সমুদ্রসিটিতে সমুদ্রতটে, বনসিটিতে বনের পাদদেশে, রিভারসিটিতে উপকুলে রিসোর্ট থাকতে হবে। তবে শুধূ রিসোর্ট সেখানে হাবিজাবি দিয়ে হৈ হল্লার ব্যবস্থা করা যাবেনা।
১১. আমাদের ভূমি যেহেতু উর্বর আমরা আরো বোটানিক্যাল পার্ক তৈরী করে এক একটাতে লাখো প্রজাতির গাছ লাগিয়ে পর্যটক ও গবেষকদের আকর্ষণ করতে পারি।
১২. আমাদের মূল পর্যটন ভেন্যু যদি কক্সবাজার হয়, এখানে একটি ডলফিন সার্কাস বসাতে পারি, পারি গ্লাসসজ্জিত বিশাল একটি মৎসপার্ক স্থাপন করতে। যেখানে বিশ্বের সুন্দর, বিরল আর বৃহৎ প্রজাতির মাছেরা স্থান পাবে। আমরা পানির নিচে একটা রেস্টুরেন্ট বা পার্টি সেন্টার করতে পারি।
এমনিভাবে করা যায় আরো অনেক কিছু।
১৩. অন্যান্য পর্যটন ভেন্যুগুলোতেও স্থাপনা, ইভেন্ট, সুযোগসুবিধার পাশাপাশি সারাবছর নানা আয়োজন করতে পারি। পৃথিবীর নানা দেশে এরকম আয়োজন করে পর্যটক আকর্ষণ করা হয়। যেমন টমোটো মারামারি পর্যন্ত হয় কোনো কোনো দেশে।
১৪. আমরা সারাবছর নানা ইভেন্ট আয়োজন রাখতে পারি, যেমন আমাদের লোক গান, লোকখেলা, লোকনাচ ইত্যাদি, থাকতে পারে আদীবাসি উপজাতির নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্টানের মহড়া ও প্রদর্শণী। নানা ক্রীড়া সাস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন হতে পারে পর্যটন শহরে সারা বছর। হতে পারে আন্তজাতিক নানা উৎসবও।
১৫. কক্সবাজারে একটি আন্তজাতিক কালচারাল সেন্টার থাকতে পারে। সেখানে একই জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন হলে নানা আয়োজন থাকবে। চলবে- যাত্রা, নাটক, অপেরা, ব্যালে ডান্স, মুনপুরি নৃত্য, ডিস্কো ড্যান্স, মডার্ন ড্যান্স, আমাদেও নিজস্ব সাংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন যার যেটা পছন্দ সে সেটা দেখবে। থাকবে একটি আন্তজাতিক সিনেমা হলও।

১৬. যদি ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রশ্ন আসে তাহলে সংশিলস্ট এলাকায় মুসলিমদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা অথবা খোলামেলা আমেরিকান বা ইউরোপিয়ানদের জন্য ভিন্ন জোন কিংবা কট্টরদের জন্য অন্য সেক্টরকরে সবাইকে যার যার ধর্ম, বিশ্বাস রুচি ও সংস্কৃতি অনুযায়ী পর্যটন সবিধা ভোগ করার সুযোগ দিতে হবে। অনেকে আমার সাথে হয়তো দ্বিমত হবেন যে একটি মুসলিম রাস্ট্রে এত সব কিছু হতে পারেনা। আমি বলবো এদেশে মদ, পতিতাবৃত্তি, ব্যবিচার, অপসং¯কৃতি, ভারতীয় টিভি ও সিনেমা সংস্কৃতি যদি বহাল তবিয়তে থাকতে পারে। তাহলে ওসব কথার কি লাভ? হ্যাঁ যদি দেশে ইসলামী রাস্ট্র কায়েম হয় আর যদি এসব অপরাধ ও অপসং¯কৃতি পুরোপুরি বন্ধ করা যায়। তাহলে আমি আমার আধুনিক সংস্কৃতি বিষয়ক প্রস্তাবগুলো তুলেনিতে পারি।

১৭. পাড়ায় পাড়ায় ট্যুর ক্লাব গড়ে তুলতে হবে। এই ক্লাব ৩ ধরনের হবে। ০১. কর্মাশিয়াল, ০২, ননকর্মাশিয়াল, ০৩. সামাজিক ব্যবসায়। ব্যবসায়িক ক্লাবগুলো বিজনেস পারমিশন নিয়ে কর্মীনিয়োগ দিয়ে নানারকম ট্যুর সার্ভিস দেবে।  ননকমার্শিয়াল ক্লাবগুলো সামাজিক সংগঠন হিসেবে পর্যটন কর্পোরেশন, যুব মšত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর এসব কতৃক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হবে। এদের স্বেচ্চাসেবক থাকবে। এরা দেশের জন্য কাজ করবে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন ভ্রমনকারীকে সহযোগিতা করবে। বিপদে পড়লে সাহায্য করবে। এবং দেশে বিদেশের বিভিন্ন ক্লাবের সাথে টুরিস্ট বিনিময় করবে। এটা একটি বিপ্লবের মতো কাজ করবে।

১৮. দেশকে ১২ টি বিভাগে ভাগ করতে হবে। নতুন বিভাগগুলো হলো- কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, যশোর, বগুড়া ও পার্বত্য বিভাগ। প্রতিটি বিভাগের পর্যটন কর্পোরেশন আলাদা আলাদা ও স্বায়ত্বশাষিত হবে। প্রতেক্যেে নিজস্ব, ইনস্টিটিউট, রিসোর্ট, গাড়ি ইত্যাদি থাকবে। প্রত্যেকে আলাদাভাবে তার এলাকার সৌন্দর্য তুলে ধরে প্রচারণা চালাবে। এতে করে নতুন আইডিয়া আসবে, কর্মক্ষম জনবল তৈরী হবে, বেকারদের কাজ হবে, তাদের মধ্যে একিটি প্রতিযোগিতা সৃস্টি হবে। উন্নয়ন ত্বরান্নিত হবে।সর্বোপরি আমুল পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন দিগস্ত উম্মোচিত হবে। পাশাপাশি একে অপরের সহযোগী শক্তি হিসেবেও কাজ করবে। প্রতিটি বিভাগের বিমানবন্দরগুলোকে কার্যকর করতে হবে। রেলওয়েকে উন্নত করতে হবে। ট্রেনে পর্যটক কোটা সংরক্ষণ করতে হবে।

১৯. সারাদেশ থেকে তরুন মাঝ থেকে আরো আইডিয়া নিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে দেশের পর্যটন শিল্পকে।

২০. একটি আর্কিটেকচারাল পার্ক স্থাপন করা যায়, যেখানে পৃথিবীর বিলুপ্ত নগরের নকশা ও বিখ্যাত স্থাপনার ডামি থাকবে। বানাতে পারি একটি খেলনা মিউজিয়াম, যেখানে দুনিয়ার তাবত খেলনা থাকবে। বিশ্বের নানা দেশের মাটি নিয়ে হতে পারে মাটি জাদুঘর আরো কতকি? ইচ্ছেটাই আসল করার মতো অনেক কাজই আছে।

২১. একটি বিজ্ঞান জাদঘর আজ সময়ের দাবি। নদীমাতৃক দেশে দরকার একটি রিভার মিউজিয়ামও। একটি ওয়াটার মিউজিয়াম হতে দেশের বিদেশের মানুষের আগ্রহের বিন্দু।

২২. বিদেশী নাগরিক এবং টুরিস্টদের গাড়ি হরতাল অবরোধের বাইওে রাখতে হবে।

্ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প: ই কমার্স প্রসংগ

পর্যটনের প্রতিটি ধাপেই ই কমার্স শক্তিশালি ভূমিকা রাখতে পারে। বিস্তারিত এই পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় শুধূ পয়েন্টাই লিখলাম।

০১. বর্তমানে প্রচার প্রচারণার জন্য ইন্টারনেটের জুড়ি নেই। তাই ই কমার্সকে এ ব্যাপারে ভালোভাবেই কাজে লাগানো যেতে পারে।
০২. ক্লাব গঠন, সমন্বয় ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনলাইন অন্য যেকোন মাধ্যমের চেয়ে বেশী কার্যকর হতে পারে।
০৩. হোটেল, টিকেট বুকিং, গাইড সংগ্রহ ইত্যাদি নানাকাজ তো বহু আগে থেকেই ই কমার্স এর মাধ্যমে হচ্ছে সেটাকে আরো বেগবান করার জন্য বাংলাদেশের ই কমার্স ও ট্যুরিজম দুটোকেই উন্নয়নের পথ ধরে এগিয়ে নিতে হবে।
০৫. লেনদেন ও সেবা পাশাপাশি তথ্যবিনিময় যেমন ই কমার্স এর মাধ্যমে হতে পারে, তেমনি হতে পারে বিভিন্ন দেশ ও ক্লাবের সাথে ট্যুরিস্ট বিনিময়।
০৬. অনলাইনে অর্ডার নিয়ে টুরিস্টদের কাছে সহজে দেশীয় বিভিন্ন পন্য, গ্রামীণ সামগ্রী, কুটির শিল্প ইত্যাদি হোটেলে পৌছে দেয়ার মাধ্যমে দেশ এবং পর্যটন দুটোরই উপকার করতে পারে ই কমার্স।
০৭. ই কমার্স হাউসগুলো অন্যেও গাড়ি বুকিং দেয়ার পাশাপাশি নিজেরাও নানা সার্ভিস দিতে পারে।
০৮. একটি ইকমার্স ট্যুরিজম সাইট হতে পারে যে তারা একজন ট্যুরিস্ট এর যতরকম সার্ভিস দরকার হয় তা এক ছাদের নিচ থেকেই দিতে পারে। ওয়ানস্টপ সার্ভিস যাকে বলে। তাতে পর্যটকদের হয়রানি ও দুশ্চিন্তা দুটোই কমবে।
০৯. অনলাইন গাইড সার্ভিসের মাধ্যমেও ই কমার্স সেবা দিতে পারে। একজন গাইড স্বশরীরে পর্যটকের সাথে না থেকে ফোনে বা চ্যাটে থেকে পর্যটককে সারাক্ষণ গাইড করতে পারে। এবং ঘন্টা হিসেবে বিল হবে। ই কমার্স হতে পারে এ ধরনের সার্ভিস বা ব্যবসার একমাত্র উপায়। এতে পযটকও কম খরচে সেবা পাবে।
১০. আমাদের দেশে উদ্যোক্ত তরুনরা একটি পেশা খুব ভালোভাবেই করতে পারবে। যেহেতু তাদেও বেশী পুঁজি পাট্টা নেই। তারা একটি ই কমার্স এর মাধ্যমে দেশের হোটেল এবং পরিবহস সার্ভিস এর বুকিং দিতে পারে। এতে করে তারা হোটেলের কাছ থেকে একটা ভালো কমিশন পাবে। কোনো প্রোডাক্টস স্টক বা সেল না করেই এ ব্যবসায় লাভ করা যায়। হোটেলগুলে পিকসিজনে ৫-২০% এবং অফপিক সিজনে তাদেও মূল্যেও উপর ১০-৪৫% বা কখনো তারও বেশী কমিশন দিয়ে থাকে। তরুনরা এ কাজটা সহজে করতে পারে। শুধু প্রয়োজস দেশপ্রেম, সততা, আন্তরিকতা, সদ্চ্ছিা।
১১.  ই কমার্স ব্যবসায়ী তরুন উদ্যোক্তারা অনলাইনে শোরগোল তুলে সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনে প্ররোচিত করতে পারে।

নোট: কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দুটো স্বল্পকালীন কাজ করতে গিয়ে আমার যে ধারণা ও জানা হয়েছে। তার আলোকে এ লেখাটি তৈরী করলাম। আমি জানি এ বিষয়ে আরো অনেক সমস্যা, সম্ভাবনা ও ইকমার্স সুযোগের ব্যাপার আছে। কিন্তু আমি এমনকিছু বিষয় তুলে ধরলাম যেগুলো সচরাচর আলোচনায় আসেনা। আসা করি নতুন উদ্যোক্তাদের কাজে লাগলেও লাগতে পাওে, তবে চিন্তার খোরাক পাবেন সবাই , ধন্যবাদ

লেখক: জাহাঙ্গীর আল শোভন

11,757 total views, 2 views today

Comments

comments

Your email address will not be published.