প্রসঙ্গ ভিডিও মার্কেটিং: এ বিষয়ে একটা রাইটিং
জাহাঙ্গীর আলম শোভন

http://jharkhandbihar.com/productimages/17945.jpg

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে বিশ্বজুড়ে ভাব ও ভাষায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তন হয়েছে প্রচার প্রচারণার টেকনিক ও চিন্তায়। ভিডিও মার্কেটিং একটি প্রভাবশালী মাধ্যম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সিনেমার বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে টিভি এড, ভিডিওটেপের এড এসব পেরিয়ে এখনইউটিউব ও ানলাইন বিডিও এড এর ফ্যাসিলিটি যুক্ত হয়েছে এতে। সাথে ক্যামেরা টেকনোলজি পরিবর্তন, ডিজিটাল ফরম্যাটের আগমন, কমদামী ক্যামেরার প্রসার এবং কনটেন্ট, মান উন্নয়ন এবং এডিটিং টুল সহজলভ্য হয়ে এক বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়ে এই যুগে।
এখন হাজার টাকায় ক্যামেরা ভাড়া করে ফুটেজ বানিয়ে লাখ টাকায় স্বপ্নের টিভি পর্দায় স্থান পাওয়ার চেয়ে। নিজের মুঠোফোনে বিনে পয়সার ধারণ করে বিনা খরছে। ইউটিউব চ্যানেলে তুলে দিলে কয়েকহজার দর্শক এমনকি কয়েকলাখ দর্শক অথবা কোটি দর্শকের চোখে পড়া তেমন কোন ব্যাপার নয় যদি সঠিক ভাবে ক্লিক করা যায়। তাও আবার একবার দেখিয়ে কালাস নয়। যে খুশি যেখান থেকে খুশি যতবার খুশি দেখতে পারবে দেখানে পারবে। এমনকি মুঠোফোন থেকেও। আবার ইচ্ছামত বিষয় নির্বাচন করে দেখতে পারে। তাহলে কেন আমরা এই সুবিধাটা নেবোনা।
সব ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি খুবই সবিধাজনক ও ফলদায়ী। বিষেশ করে ই কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য এটা খুব দরকারী এবং উপযুক্ত। কারণ এ্টা ব্যয়সাপেক্ষ নয় তার চেয়ে বড়ো কারণ যারা অনলাইনে শপিং করবে তাদের এই জিনিস দেখা সহজ কবে। এবং তা থেকে অনুপ্রানীত হওয়াটা বেশী কাজ করবে। যেমন: আপনি লেডিস আইটেম ব্যবসা করেন, সেটা বাংলাদেশে। এখন আপনার গ্রাহক আপনাকে খুজছে গুগল থেকে ‘‘ লেডিস আইটেম ইন বাংলাদেশ’’ লিখে। এমন অবস্থায় আপনার ওয়েবসাইট এবং ফেইসবুক থেকে আপনাকে পাবে পাশাপাশি ইউুটউবে যদি আপনার এ সর্ম্পকিত কোন ভিডিও থাকে তাহলে আপনাকে সেখান থেকেও পাবে। অন্যকোন কন্টেন্ট থেকে ভিডিও নিশ্চই বেশী প্রভাবশালী।
ভিডিও মার্কেটিং এর সুবিধা:
১.    আজকাল সহজ টেকনোলজি ব্যবহার করে ভিডিও মার্কেটিং করা যায়।
২.    ভিডিও মার্কেটিং এর জন্য খুব বেশী খরচ করতে হয়না।
৩.    ভিডিও মার্কেটিং কে বিভিন্ন ভাবে ছড়িয়ে দেয়া যায়।
৪.    কাস্টমার মুঠোফোনেই ভিডিও দেখতে পারে।
৫.    ভিডিও এড বা কনটেন্টকে এখনো মানুষ বিনোদন আইটেম হিসেবে দেখে।
৬.    ভিডিও মার্কেটিং মাধ্যেমে অসংখ্য লোকের কাছে পৌছানো যায়।
৭.    লেখার কনটেন্ট বিভিন্ন ভাষার হতে পারে। কিন্তু ভিডিও কনটেন্ট এমনভাবে দাড় করানো যায় যাতে পৃথিবীর সব ভাষার সব দেশের লোকেরা বুঝতে পারে।
৮.    ভিডিও কনটেন্ট চলমান বিধায় এটাকে জীবন্ত মনে হয় ফলে কাস্টমারের মনে এর প্রভাব বেশী পড়ে।
৯.    ভিডিওতে চলমান ভিডিও ছ্ড়াাও ইমেজ,নাচ, গান, পন্যের ছবি, ব্যবহার,  টেক্সট, প্রস্তুত প্রণালী, সাক্ষাৎকার, এনিমেশন, কার্টুন, ডকু এবং ফিকশন সবই ব্যবহার করা যায়। বলা যায় এটা বহুমাত্রিক পক্রিয়া।

নিজের হাতে ভিডিও ক্যামেরা
আপনার যদি ক্যামেরা অথবা ক্যামেরাপার্সন এ দুটো ভাড়া করে ভিডিওফুটেজ তৈরী করার সামর্থ না থাকে। আপনি নিজেই আপনার হাতে যে ক্যামেরা আছে সেটা দিয়েই কাজ শুরু করতে পারেন। আপনি একজন ক্ষুদ্র বা ই শপ ব্যবসায়ী হিসেবে এটা করতেই পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার জন্য কিছু টিপস।
১.    ক্যামেরা যাই হোক এটা দিয়ে মাথা ঘামাবেন না। এইচডি ক্যামেরা হলে ভালো, ডিএসএলআর থাকলে আরো ভালো তা না থাকলে আপনার মুঠোফোনের ক্যমেরা দিয়েও কাজ শুরু করুন।
২.    ক্যামেরার ব্যাটারী, সেটিং ও মেমরী কার্ড সব ঠিক আছে কিনা দেখে নেবেন কিন্তু।
৩.    ভিডিও করার সময় খেয়াল রাখুন যেন কোন অনাকাঙখিত বিষয় ফ্রেমে না থাকে। যা দেখাতে চান তা যেন ভালোভাবেই ফুটে উঠে।
৪.    প্রয়োজন ছাড়া জুম, ট্র্যাক ও প্যান করবেন না। এবং প্রয়োজন হলেও খুব বেশী এসব ব্যবহার করবেন না।
৫.    শুধুমাত্র কোথাও দূরত্ব বোঝানোর প্রয়োজন হলে হালকা ও স্লো জুম করুন।
৬.    শুধুমাত্র বিস্তৃতি বোঝানোর জন্য প্যান ব্যবহার করুন। তাও খুব দ্রুত এবং বেশী নয়।
৭.    ট্র্যাক প্রয়োজন না হলে ব্যবহার করবে না। কোথাও জার্নি বা মুভমেন্ট বোঝাতে এটি প্রয়োজন জলেও ব্যবহার করবেন না যদি বিষয়টি আপনি ভালো না বোঝেন ।
৮.    অবশ্যই স্টেডি শর্ট এর উপর বেশী নির্ভর করবেন। অর্থাৎ ক্যামেরার মুড চেঞ্জ না করে এক ধরনের ফুটেজ নেবেন।
৯.    যদি অটো সেট আপ না থাকে। তাহলে ােহয়াইট ব্যালেন্স করতে ভুলবেন না।
১০.    ফোটসটা দেখে সেট করে নেবেন। শ্যুটিং শুরু আগে।
১১.    মিজ অন শর্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি আপনি স্বার্থক ব্যবহার কারী হোন।
১২.    এছাড়া লংশর্ট, মিডশর্ট, ক্লোজশর্ট ব্যবহারে সর্তক হোন। যেখানে যেটা দরকার কেবল সেখানেই সেটা ব্যবহার করুন।
১৩.    একই স্থানে একই বিষয়ে যদি অনেকক্ষণ শর্ট নিতে হয় তাহলে প্রয়োজন বুঝে ১০-১৫-২০ সেকেন্ড পর পর ফ্রেম চেঞ্জ করতে পারেন।
১৪.    পর পর একই ধরনের শর্ট ব্যবহার করবেন না। যেমন ক্লোজ শর্ট এর পরের শর্টটা যেন ক্লোজ শর্ট না হয়। লং শর্ট এর পরের শর্টও লং শর্ট না হয়।
১৫. ভিডিও এডিটিং করার সময় জটিল কোনো ফিচার ব্যবহার করবেন না। কাট টু কাট পালিসি ধরে এগিয়ে যাবেন।
১৬. এডিটিং এর সময় নতুন নজরকাড়া সৃজনশীল কোন কাট কোনকিছু ব্যবহার করতে পারেন। তবে বেশী নয়।

17, ক্যামেরা যেন বেশী নাড়াচড়া বা জার্ক না করে সেদেক খেয়াল রাখুন। এবং ফ্রেমটা যেন নড়ে না যায়।

১৮, ফ্রেম বোঝার জন্য আমার লেখা স্টিল ছবি তোলার উপর টিপসগুলো পড়ে নিতে পারেন। http://blog.e-cab.net/uncategorized/%E0%A6%87-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B8-%E0%A6%AA%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9B%E0%A6%AC%E0%A6%BF-%E0%A6%A4%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%BE-%E0%A6%9F/

১৯. ১০ সেকেন্ডের ফুটেজ এর জন্য ২০ সেকেন্ড ভিডিও করুন। ২০ সেকেন্ড এর জন্য ৪০ সেকেন্ড তুলুন।  যেকোন সিকোয়েন্স এর জন্য ২০ সেকেন্ড বেশী রাখুন।

কি কি ধরনের ভিডিও হতে পারে।
এসময় ভিডিও বলতে টিভি এড আর সিনেমা হলে ছবি শুরুর আগে স্লাইড শো ব্যবহার করা হতো। আজকাল এসব ধারণা বদলে গেছে। যদিও আমাদের দেশে নাচে গানে ভরপুর বিজ্ঝাপন দেখানো হয়। তবে ৩০- সেনেস্ড থেকে ১ মিনিটির ভিডিওতে অনেক কিছু দেখানে যায়।  আসুন জেনে নেই সেইসব বিষয় আষয়।
১.    আপনি আপনার প্রোডক্টস প্রসেসিং এর ফুল ফর্মূলাটি ২ মিনিটের ভিডিওতে তুলে ধরতে পারেন। থাকতে পারে পিভিসি অথবা নেপথ্যকন্ঠ।
২.    আপনি ৩০-৬০ সেকেন্ডর একটি বিজ্ঞাপনও তৈরী করতে পারেন।  এটি হতে পারে, গানের, হতে পারে তথ্য দিয়ে, হতে পারে একটি স্টোরি লাইন দিয়ে।
৩.    আজকাল ২/৪ মিনিটের শর্টফিল্ম তৈরী করে অনেকে নাম করেছেন। ২ মিনিটের মধ্যেই পুরো একটি গল্প তুলে ধরা হয়। এরকম একটি গল্প তুলে ধরেও আপনি ভিডিও তৈরী করতে পারেন।
৪.    আপনি আপনার কোম্পানীর উপর একটি ডকুমেন্টারী বানাতে পারেন ৫-৭ মিনিটের। এটাতে থাকতে পারে বিজনেস পলিসি, প্রসেস, সাক্ষাৎকার আরো অনেক কিছ’।
৫.    আপনি একটি কার্টুন বা এনিমেশন তৈরী করতে পারেন। তাতেও হাস্যরস অথবা গল্পের মাধ্যমে আ পনার পন্যের গুনগান তুলে ধরতে পারেন।
৬.    আপনি একটি বিষয় ভিত্তিক ডকুমেন্টারী বানাতে পারেন। যেমন ধরুন আপনি অনলাইনে ইলিশমাছ বিক্রি করতে চান। এ অবস্থায় আপনি দেশের ইলিশমাছের উপর একটা ডকুমেন্টারী বানাতে পারেন। ৮/১০ মিনিটের। এতে ইলিশ কখন কোথায় মেলে, দাম কেমন, ইতিহাস কি? খেতে কেমন কিকি ভাবে রান্না করা যায় এসবের সাথে আপনার ব্যবসা সম্পর্কেও ১ মিনিট যোগ করে দিন।
৭.    আপনি ছবি একে পর পর সাঝিয়ে ভিডিও ফরম্যাটে নিয়েও একটা গল্প দাড় করাতে পারেন। বা বক্তব্য তুলে ধরতে পারেন। এর সাথে ইফেকেটিভ সাউন্ড  ও ভয়েস দিলে দেখবেন মনে হবে সব জীবন্ত হয়ে গেছে।
৮.    আপনার গ্রাহকদের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক এক বা একাধিক ভিডিও বানাতে পারেন। খেয়াল রাখবেন এগুলো যেন খুব বড় না হয়। এবং মেকি মনে না হয়।
৯.    আপনার ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হলে আপনি অন্য ভিডিও এবং ইমেজ নিয়ে এডিট করে আপনি নিজেই একটা ছোট প্রমোশনাল ভিডিও বানাতে পারেন।
১০.    আপনার প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার কেয়ার সুবিধাটা ভিডিও চ্যাটিং এর মাধ্যমে করে আপনি অন্যদের চেয়ে একধাপ এগিয়ে যেতে পারেন।

কোথায় ব্যবহার করবেন এসব ভিডিও
১.    বিনে পয়সায় ব্যবহার করতে পারেন ইউটিউবে। তবে রিলেটেড কি ওয়ার্ড সেট করতে ভুলবেন না। আর এসইও করে দিতে পারেন।
২.    আপনার ওয়েব সাইটে একটা ভিডিও গ্যালারী করে সেখানে দিতে পারেন।
৩.    আপনার ক্লায়েন্টদের মেইল বা এসএমএস পাঠাতে সাথে ভিডিওর লিংটাও দিয়ে দিতে পারেন।
৪.    আপনার পেইজবুক টাইমলাইনেও পোস্ট করতে পারেন।
৫.    টিভিতে ব্যবহার উপযোগী হলে তো ভালো, তা না হলে কেবল টিভিতে দেখাতে পারেন।
৬.    বিভিন্ন জনপ্রিয় গান ও নাটকের অংশের সাথে যুক্ত করে সেগুলো মোবাইলে গান ডাউনলোডের দোকানে দিয়ে দিতে পারেন।
৭.    বাজারে যারা বিভিন্ন নাটক ও গানের সিডি বের করে তাদের মাধ্যমে এড দিতে পারেন।
৮.    এগুলো মোবাইল উপযোগী ফরম্যাট করেনেটে দিয়ে দিন যাতে সবাই ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারে।
৯.    কর্মীদের মোবাইলে রাখুন। পন্য ডেলিভারী করার সময় ব্লুটুথ ব্যবহার করে  আগ্রহী গ্রাহকের ফোনে দিয়ে দিতে পারে।

এভাবে ভিডিও টেকনোলজি ব্যবহার করে আপনি আপনার পন্য সেবা ও বার্তাকে ছড়িয়ে দিতে পারেন সর্বত্র।
আপনার এবং আপনার ব্যবসার জন্য শুভকামনা রইলো। আবার দেখা হবে। পরের সেশনে। ভালো থাকুন, সে পর্যন্ত।

5,889 total views, 2 views today

Comments

comments

Your email address will not be published.