ই কমার্স ব্যবসায় বিশ্বাসের ঘাটতি : উদ্যোক্তাদের করনীয়
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
আসলে আস্থার সংকটটা আমাদের দেশে একটু বেশী। নতুন কোনো ব্যবসা দাঁড়াতে প্রচুর সময় ব্যয় হয় শুধু এই আস্থা তৈরী করার জন্য। আর এর কারণ হচ্ছে আমাদের দেশে প্রতারণা একটু বেশী হয়। কারণ আমরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করিনা। এবং সচেতন হইনা। আমরা অবিশ্বাস করি তাও ছোটোখাটে কারণে আবার বিষ¦াস করে বসি কোনো কারণ ছাড়াই ফলে আমরা খুব সহজে ঠকি। আমরা ব্যবসার জন্য যদি কিছু নিয়ম মেনে চলি আর কাউকে বিশ্বাস করার আগে কয়েকটি যৌক্তিক ব্যাপার খেয়াল করি তাহলে আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। আজ সে বিষয়ে আলোকপাত করবো। বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো যখন বাংলাদেশে ব্যবসা করে তখন তারা কিছু বিষয়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটিকে বোঝার চেষ্টা করে তার ভিত্তিতে নিচের বিষয়গুলো তুলে ধরলাম
১. নাম এবং লোগো: যারা সচেতন বা চোখ কান খোলা রাখেন তারা এটি ধরতে পারেন। ভুয়া প্রতিষ্ঠান গুলোর নাম এবং লোগে দেখলে কিছুটা আন্দাজ করা যায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এগুলো নকল টাইপের হয়। কিছু ভ’য়া প্রতিষ্ঠান প্রত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতারণা করে থাকে। তাদের নাম লোগো এসব দেখলে কিন্তু বোঝা যায়।
২. কনটেন্ট: এ ধরনের প্রতিষ্ঠান যখন বিজ্ঞাপন দেয় তখন অল্প জায়গায় অনেক বেশী কনটেন্ট থাকে। আবার সুযোগ সুবিধা অনেক বেশী দেখায় যা অপ্রত্যাশিত। যেমন কেউ একজন যদি একটি আইফোন সেকেন্ড হ্যান্ড ৩০০০ টাকায় বেচতে চায়। তখনি আমাদেরে বোঝা উচিৎ। তাজাড়া এদের কনটেন্টে অনেক বানান ভুল থাকে। কম্পোজ এর ভুল নয়, জ্ঞানের ভুল। তখনি কিন্তু বোঝা যায়।
৩. অতিরিক্ত আগ্রহ: সাধারণত কল দেয়ার পর এরা পন্য বিক্রির জন্য অতিরিক্ত আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। তা শুনলে যদি আপনার একটু খটকা লাগে তাহলে, অবশ্যই সতর্ক হবেন।
৪. নিজস্ব সাইট অফিস ও ল্যান্ডফোন: এসমস্ত প্রতিষ্ঠানের কখনো নিজস্ব ওয়েব সাইট থাকেনা, সাইট থাকলে অফিস ঠিকানা থাকেনা, ঠিকানা থাকলে ল্যান্ডফোন নাম্বার থাকেনা। ল্যান্ডফোন নাম্বারটা গুরুত্বপূর্ন কারণ এতে ভোটার আইডিসহ যাবতীয় কাগজপত্র দিয়ে সংযোগ নিতে হয়।
৫. ইতিহাস: আরো অনেক বিষয় জেনে সতর্ক হওয়া যায়। ক. ব্যবসার বয়স কত? কোন এলাকায় অফিস? (প্রতারকরা সাধারণত কিছু নির্দিস্ট এলাকাকে বেছে নেয়)। কতজন লোক কাজ করে। যিনি মূল ব্যক্তি তার ব্যাকগ্রাউন্ড কি? ট্রেড, টিন, ভ্যাট আছে কিনা? নিজস্ব খাম, প্যাড, মানি রিসিড আছে কিনা?
৬. বিবেচনা: তবে এসব কিছু থাকা সত্বেও আপনি প্রতারণার শিকার হতে পারেন। আবার এসবের কিছুই নেই এমন কারো কাছ থেকেও আপনি ভালো সার্ভিস পেতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার ভরসা করতে নিজের বিবেক বুদ্ধির উপর। সেই ভরসা যদি খুব বেশী নাে থাকে আপনি ঝুঁকি না নিয়ে উপরের বিষয়গুলো যাচাই করে আপনার পার্টি নির্বাচন করুন।
এবার আসি আপনার প্রসঙ্গে। আপনি কিভাবে একজন কাস্টমারের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জণ করবেন। অবিশ্বাসের বাজারে গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জণ করা কঠিন বটে। তবুও এই উল্টো বাতাসে পাল তুলে অনেকেই পৌছে যাচ্ছেন সফলতার বন্দরে। আপনিও হতে পারেন তাদের একজন। সূতরাং ধরি মাছ না ছুই পানি ফর্মূলা বাদ দিয়ে যখন যা করবেন তা মনপ্রাণ দিয়েই করুন এবং আপনিও বিশ্বাস অর্জনের জন্য কিছু কাজ করুন। এমন কোনো ফাঁক রাখবেন না। যে ছিদ্র দিয়ে কাস্টমারের সন্দেহের অথবা নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়। আসুন দেখে নিউ কিছু ব্যাপার স্যাপার-
১. নাম লোগো ও শ্লোগান: আপনার ব্যবসার ধরণ অনুসাওে আপনি একটু সুন্দর ও মার্জিত নাম ঠিক করবেন। অবশ্যই একটি প্রফেশনাল লোগো বানাবেন। প্রয়োজনে কারো সাহায্য নেবেন। আর ঠিক করবেন একটি যুগ উপযোগী শ্লোগান। প্রয়োজনে সময় নিয়ে করবেন।
২. লিগাল ডকুমেন্টস: ট্রেড লাইসেন্স ও ব্যাংক একাউন্ট করবেন। এই দুইটি খুব গুরুত্বপূর্ন। আপনি কথায় কথায় গ্রাহক ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা দেয়ার সুযোগ আছে সেটাও জানাবেন। বলবেন আমরা যহেতু লিগ্যাল ব্যবসায়ী সেজন্য আপনি ব্যাংকর মাধ্যমেও আমাদের পেমেন্ট দিতে পারেন। লাইসেন্স এর কপি, ব্যাংক একাইন্ট নং, টিন এসব আপনি আপনার ওয়েবসাইট বা ফেইজবুক ফেইজে তুলে দিতে পারেন। প্রয়োজনে আপনার ন্যাশনাল আইডিও স্ক্যান করে তুলে দিতে পারেন। যাতে কওে কেউ আপনাকে অবিশ্বাস করলে আপনি সেটা চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।
৩. অফিস এড্রেস: আপনি অবশ্যই আপনার ঠিকানা উল্লেখ করবেন। যদি সেটা আপনার বাসা বা মেস হয় তবুও। সম্ভব হলে তার একটা ম্যাপও দিতে পারেন। এমনকি গুগল আর্থে নির্দেশ করেও দিতে পারেন।
৪. নিজস্ব সাইট অফিস ও ল্যান্ডফোন: আপনারওয়েব সাইট থাকলে ভালে, না থাকলে একটি ল্যান্ডফোন সঙযোগ নিতে পারেন। কেননা আপনার ঠিকানা পুরবর্তন হলেও আপনি সংযোগটা সেইম নাম্বারসহ সাথানান্তর করতে পারবেন।
৫. ডিটেইল: আপনার ব্যবসার ডিটেইল বিবরণ দেবেন। প্রয়োজনে যত স্টাপ আছে তাদেও ছবি সহ নাম পরিচিত যোগ্যতা এসব তুলে ধওে বোঝানোর চেস্টা করবেনযে আপনি কাস্টমারের সার্ভিসের জন্য একটি স্ট্রং টিম তৈরী করেছেন।
৬. হিস্ট্রি: ব্যবসার বয়স কতো? এর মধ্যে কিকি সফলতা আছে? কত কাস্টমারকে সেবা দিয়েছেন? আপনার সাথে কোন কোন ফার্ম কাজ কওে তাদেও নাম লোগো দিতে পারেন। (অনুমতি সাপেক্ষে)।
৭. সম্পৃক্ততা: আপনি কোন ব্যবসায়ী সমিতি বা সংস্থার সদস্য হয়ে থাকলে সেটি ভালোভাবে তুলে ধরুন। বিশ্বাসের জন্য বর্তমানে এটা খুব ভালো উপায়।
৮. প্রশংসাপত্র: বড়ো কোনো কোম্পানীর সাথে কাজ করলে যদি তারা আপনার সার্ভিসে খুশি হয়। তাহলে তাদেরকে অনুরোধ করে তাদের লেটার হেডে একটা ধন্যবাদ পত্র বা সন্তুস্টি পত্র বা প্রশংসা পত্র নেবেন। যদি এরকম ৫/১০ টি নিতে পারেন। আপনার কি মনে হয়। মানুষ আপনাকে অবিশ্বাস করবে।
৯. অফিসিয়াল ডকুমেন্ট: আপনার ভিজিটিং কার্ড, আইডি কার্ড, লেটার হেড, খাম, রশিদ, সীল ইত্যাদি স্টান্ডার্ড এবং রুচিশীল হৗয়া চাই। দেখেই যেন একটি ভক্তি জাগে। এটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ন। নিজের রুচির উপর ভরসা করবেন না। ২/৪ জন বন্ধুবান্ধবকে দেখেয়ে তারপর ফাইনাল করুন।
১০. পার্টনার: আপনি কাদের কাছ থেকে মাল আনেন কাদের মাধ্যমে ডেলিভারী দিয়ে থাকেন তার বিবরণ দিন। বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে।
১১. প্রসেস: কিভাবে মাল আসে, কিভাবে প্যাকিং হয়। কিভাবে গ্রাহক পায়। ইত্যাদি ছবিসহ তুলে ধরুন। মোটকথা আপনি নিজেকে যত বেশী এবং স্মাটলি প্রকাশ করবেন। ততই আপনার বিকাশ ঘটবে। এসব দিতে গিয়ে খেয়াল রাখবেন মানহীন কোনো কিছু দিয়ে সুনামের বদলে যেন উল্টো কিছু না হয়্
১২.বিচার: মোটকথা আপনি নিজেকে বিচার করবেন যে আপনি যদি গ্রাহক হতেন কিভাবে সন্তুষ্ট হতেন, সেভাবেই ক্রেতার সামনে নিজের প্রতিষ্ঠানকে তুলে ধরুন। এবং গ্রাহকের কিকি জানার তার সবই আপনি আগেই সাইটে বা পেইজে তুলে দিন।
১২. সার্ভিস: আসল কথা হচ্ছে সার্ভিস, আপনার সার্ভিস ভালো হলে এমনিতেই আপনার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়বে। কারণ আমাদের দেশে মানুষ একজন ভালো সার্ভিস পেলে সেটা সবাইকে সাজেস্ট করে। আবার খারাপ হলেও কিন্তু জোর গলায় বদনাম করে। সূতরাং সাধূ সাবধান।
13.কল সার্ভিস: আমাদের দেশে শুধু অনলাইনে অর্ডার হয়না। এজন্য ফোনের অপশনও রাখবেন। আবার অনলাইনে অর্ডার হলেও ফোনে কন্টাক্টা করে নিতে পারেন।
ফোনে কথা বলার সময় ব্যবসায়িক ম্যানার অনুসরণ করবেন।
জাহাঙ্গীর আলম শোভন: বিজনেস কনসালটেন্ট
Previous Article: ই কমার্স সম্পর্কে কয়েকটি ভুল ধারণা
7,176 total views, 4 views today