E Commerce Transaction in Bangladesh
ই কমার্স ব্যবসায়- লেনদেনের উপায়
Jahangir Alam Shovon
ই কমার্স ব্যবসায় বিকাশের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা ছিলো তার মধ্যে অন্যতম হলো পেমেন্ট সিস্টেম। কারণ পন্য যেহেতু বাসায় ডেলিভারী হয় সেহেতু পেমেন্ট নিয়ে একটা জটিলতা ছিলো। কিন্তু বর্তমানে ক্যাশ অন পেমেন্ট ডেলিভারী ও পেমেন্ট গেটওয়ে আসার কারণে এ সমস্যা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সমাধান হয়ে গেছে। এখন ক্যাশ অন ডেলিভারীর আওতা বৃদ্ধি ও পেমেন্ট গেটওয়ের ইজি মেথড এর মাধ্যমে এটা এক সময় সাধারণ জনগনের দোরগেড়ায় পেীছে যাবার প্রয়োজন রয়েছে।
যেসব কারণে অনলাইন বেচাকেনা সীমিত ছিলো সেগুলো হলো
১. আগে ডাক বিভাগে ভিপি যোগে পন্য পাঠানো হতো, কিন্তু সেটা সময়মত ডেলিভারী হতো না।
২. পরিবহন সার্ভিসে পন্য পাঠালে সেটা হোম ডেলিভারী হয়না।
৩. কুরিয়ারে পন্য পাঠালে সেক্ষেত্রে হয়তো আগেই বিকাশে টাকা নেয়া হতো সেক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট এর বিশ্বাস অর্জন এর ব্যাপার ছিলো। আবার আগেই পন্য পাঠিয়ে পরে টাকা পেতে চাইলে উদ্যোক্তার প্রতারিত হওয়ার আশংকা ছিলো।
৪. পার্সেল সার্ভিসে পন্য পাঠালে পন্যের প্রতি খুব যতœশীল থাকেনা বলে পন্য নস্ট হয়।
৫. ডেলিভারী ম্যান রেখে পন্য পাঠালে বিশাল পুজির ব্যাপার তাই এটাও ই কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য উপযুক্ত ছিলনা।
এসবের পরিপেক্ষিতে বর্তমানে ডেলিভারী এবং পেমেন্ট দুটো ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হয়েছে যদিও এখনো অনেক দূর পথ পাড়ি দিতে হবে। তবুওবর্তমানে সুবিধার পেক্ষাপটে বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে খুব ভালোভাবে অনলাইণ শপ চালানো যেতে পারে। যারা এ বিষয়ে দুশ্চিতার মধ্যে ছিলো তাদের এখন ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে। আসুন অপশনগুলো আলোচনা করে নেই।
ভিপিযোগে: ডাকযোগে এখনো মাল পাঠানো যায়। এখন মোবাইলের যোগ বলে মাল হারিয়ে যায়না। এ পদ্ধতিতে যিনি মাল গ্রহন করবেন তিনি গ্রহণ করার সময় মূল্য পরিশোধ করবেন। পরে সে মূল্য প্রেরকের নিকট পৌছে দেবে ডাক বিভাগ। এই সেবাটি নেয়ার সময় খেয়াল রাখবেন। যদি বিকাশ, পেমেন্ট গেটওয়ে ক্যাশ অন ডেলিভারী, কন্ডিশন ডেলিভারী, পার্সেল, পরিবহন, কুরিয়ার এ সুবিধার কোনো একটিতে সম্ভব না হয় তখিেন এই সেবা নেবেন। কারণ এটি সময় মত ডেলিভারী হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আর অবশ্যই মজবুত প্যাকিং করবেন। আর আপনার টাকা আসতেও সময় লাগদে পারে। সেটা ও মাথায় রাখুন।
বিকাশ ও মোবাইল ব্যাংকিং: এ বিষয়ে আপনাদের সবার জানা আছে। সমস্যা হচ্ছে এ লেনদেনটি তখনি হতে পারে যখন আপনি ক্লায়েন্টকে বিশ্বাস করবেন আর ক্লায়েন্ট আপনাকে বিশ্বাস করবে। অন্যকোনো পরিস্থিতিতে এই অপশনে যাওয়া যাবেনা। বিকাশে টাকা দিয়ে হরদম মানুষ প্রতারনার শিকার হয়। বিশেষকরে জিনের বাদশা টাইপের প্রতারকরা বিকাশ ব্যবহার করে থাকে। সে তুলনায় অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং নিরাপদ সেখানে টাকা গ্রহীতাকে পরবর্তীতে চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু সমস্যার আশংকা থাকলে না যাওয়াই ভালো।
ব্যাংক ও কার্ড: হ্যা আপনি ব্যাংক একাউন্ট ও কার্ডের মাধ্যেমে লেনদেন করতে পারেন। এতে আপনার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। গ্রাহকরা যদি একটু সচেতন হয়ে ব্যাংকে লেনদেন করে থাকেন তাহলে ভয় থাকবেনা। কারণ হিসাবধারীর সমস্ত তথ্যই ব্যাংকে রয়েছে। এমনকি দাগকটা একাউন্ট পেয়ী চেকও একটা উপায় বিটু বি মানে ব্যবসায়ীলা নিজেদের মধ্যে সবচে বেশী লেনদেন করে থাকেন এই চেকের মাধ্যমে। কারণ এতে সিডিউল ডেট দিয়ে ৬ মাস পর্যন্ত টাইম নেয়া যায় আবার প্রাপক টাকা না পেলে তিনও আইনের আশ্যয় নিতে পারেন। আর কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করার ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুকি রয়েছে। তবে ভালো এবং বড়ো নামকরা কোম্পানীগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত এমনটা হয়না। আর যতটুকু ঝুকি রয়েছে সেটাও যদি নিতে না চান। তহালে আপনার জন্য রয়েছে পেমেন্ট গেটওয়ে।
পেমেন্ট গেটওয়ে: হ্যা যে কথা বলছিলাম পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। আপনি যদি ই শপের মালিক হোন তাহলে আপনার থাকবে একটা ট্রেড লাইসেন্স, মাচেন্ট একাউন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র, সেই সাথে ছবি ঠিকানা ও প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে আপনি পেমেন্ট গেটওয়ে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে আপনার সার্ভিস চালু করতে পারেন। অল্প কিছু একাউন্ট ওপেনিং চার্জ ২/৩ হাজার টাকাই শুধু লাগবে। আর ওরা আপনার কাছ থেকে প্রতিটি লেনদেনে ২-৩ শতাংশ চার্জ নিতে পারে। এ পক্রিয়ায় গ্রাহক তার ব্যবহুত কার্ড দিয়ে পেমেন্ট ও অর্ডার করবে। আপনি যখন আপনার পন্য ভোক্তাকে পাঠাবেন। ভোক্তা পন্যটি পেয়ে প্রাপ্তি রশিদে স্বাক্ষর করলে। সে রশিদ আপনি পেমেন্ট গেটওয়ে হাউসকে পাঠানো মাত্র আপনার ব্যাংক হিসেবে গ্রাহক কতৃক পরিশোধিত মূল্য জমা হয়ে যাবে। আমি অন্তত দুটো কোম্পানীর কথা জানি যারা ই ক্যাবের সদস্য এবং খুব ভালো সুবিধা দিয়ে থাকে।
ক্যাশ অন ডেলিভারী: এই সার্ভিসটা দিয়ে থাকে বাংলাদেশের কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিস। তারা আপনার পন্য ভোক্তাকে পৌছে দেবে। এবং পন্যের লিখিত দাম সংগ্রহ করে আপনাকে এনে দেবে। ইউরোপে পেমেন্ট গেটওয়ে ও কার্ড সিেেসটমে বেশী লেনদেন হলেও এশিয়ায় ক্যাশ অন ডেলিভারী সিস্টেমটা জনপ্রিয়। প্রায় তিনভাগের দুইভাগ লেনদেনই এই পক্রিয়ায় হয়ে থাকে। তবে এর সার্ভিসের এরিয়া এখনো সীমিত। নিরাপত্তা এবং ব্যবসায়িক ঝুকির কারনে এমনটা হয়েছে। কিন্তু এটা কোন কোন সমস্যা নয় কারণ বেশীরভাগ ক্রেতারা এই সার্ভিস এরিয়ার মধ্যে থাকেন।
কন্ডিশন ডেলিভারী: এটা ক্যাশ অন ডেলিভারীর মতোই তবে এক্ষেতে হোম ডেলিভারী হয়না। কোম্পানীগুলো বড়ো বড়ো পার্সেল ডেলিভারীর জন্য এই সার্ভিস নিয়ে থাকে। জেলাশহরের বাইরে এই সেবা নেই বললে চলে। এক্ষেত্রে কাস্টমারকে পার্সেল কোম্পানীর স্থানীয় অফিসে গিয়ে মূল্য পরিশোধ করে মাল গ্রহণ করতে হয়। তবে এ পক্রিয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে পন্য নিধারিত পয়েন্ট পৌছে যায় এবং গ্রাহক সময়মত ডেলিভারী নেলে টাকা আসতেও দেরী হয়না।
ডাক ব্যাংকিং: বাংলাদেশ ডাকবিভাগ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে থাকে। এই সেবাটি বাংলালিংক প্রোভাইড করে থাকে। এটি বিকাশের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এটা খুবই বিশ্বস্থ। সমস্যা হলো এটা পেতে হলে ডাকঘরে যেতে হবে। আর অফিসটাইম ব্যতিত এই সেবা পাওয়া দূরহ।
অনলাইন ব্যাংকিং: অনলাইন ব্যাংকিং এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। আপনি আপনার ব্যাংক একাউন্ট থেকে নিজেই সেম ব্যাংক বা অন্যব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন। এতে কোন ভয় নেই। এবং আপনার ক্রেতা ভোক্তারাও আপনাকে অনলাইনে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারে। এটা আপনার জন্য একটা বিশ্বাসের ভিত্তি। কারণ আপনি এই অফারটা দিয়ে ক্রেতাকে সহজে বোঝাতে পারেন যে যেহেতু আপনার ব্যাংক একাউন্ট আছে সেহেতু আপনি একজন সত্যিকারের ব্যবসায়ী । আর আর্থিক নিরাপত্তার জন্য গ্রাহক অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা নিতেই পারেন।
সরাসরি লেনদেন: এই পদ্ধতিতে হাজার বছর ধরে লেনদেন চলে আসছে। এবং এখনো অব্যাহত আছে। আপনি যে এলাকায় শপ খুলেছেন স্থানীয়দের জন্য আপনি এই সুবিধা রাখতে পারেন। তারা পন্য দেখে পছন্দ করে কিনবে। আর মূল্য পরিশোধ করে মাল হাতেনিয়ে বাসায় যাবে। অথবা নিজস্ব ডেলিভারী ম্যান দিয়েও এটা করা যায়। একটি কোম্পানীর জন্য একা সম্ভব না হলে ১০জনে মিলে একসাথে করতে পারেন। তবে বিশ্বস্ত কুরিয়ার সার্ভিসের নির্ভরযোগ্য ক্যাশঅন ডেলিভারী সেবা পেলে এই বাড়তি ঝামেলার কি দরকার?
আমার পরামর্শ হলো আপনি উপরের সবগুলো অপশন রাখুন। কাস্টমারকে বেছে নেয়ার সুযোগ দিন তিনি কোন পদ্ধতি বেছে নেবেন। এতে কাস্টমারেরও সবিধা হবে। এবং আপনারও বিশ্বাসযোগ্যতার শক্ত ভিত্তি তৈরী হবে।
15,278 total views, 3 views today