products, goods and services
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
একাডেমিকভাবে আমরা যখন বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে যাই তখন আমাদেরকে প্রথাগত নিয়মে কতগুলো বিষয় পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। যারা কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড তারা নিশ্চয় একজন উদ্যোক্তার গুনাবলী বৈশিষ্ঠ্য ও যোগ্যতা সম্পর্কে পাঠ করে এসেছেন। আবার যারা ব্যবসা শুরু করেছেন তার অনেকে কমবেশী এ বিষয়ে জ্ঞান রাখেন। এছাড়া সাধারণ জ্ঞান থেকেও আমরা বুঝি যে একজন উদ্যোক্তার সাধারণ এবং অত্যাবশ্যকীয় গুণগুলো কি কি?  এর আগে কয়েকটি লেখায় বিশেষ করে ‘‘ ই কমার্স: প্রস্তুতি পর্ব” ‘‘জানার পরিধিটা বাড়িয়ে নিন’’ ‘‘ ইকমার্স: আপনার জন্য ১২টি ইস্যু’’ ‘‘যে ভুলগুলো উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য অর্জনে বাাঁধা’’ ‘‘জেনে রাখা ভালো’’ এবং  আরো কয়েকটি লেখায় প্রত্যক্ষভাবে একজন উদ্যোক্তার বিশেষকরে ই কমার্স উদ্যোক্তার জন্য দরকারী যোগ্যতা ও গুণাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তবুও এই প্লাটফর্মে আলাদাভাবে বিষয়গুলো তুলে ধরলাম যাতে করে যারা উপরের হেডলাইন ধরে সার্চ করবে তাদের পেতে সহজ হয় এবং আরো কিছু অত্যাবশীকীয় গুনাবলী এখানে নতুনভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
সাধারণত কিছু কিছু গুনাবলী: আমরা বলি, ভালো মানুষের ভেতরে থাকা চাই। আমাদের সমাজে একজন ভালো মানুষ বলতে আমরা কি বুঝি? তার একটা রুপ কিন্তু আমাদের সবাই মনের ভেতর গাঁথা আছে। আর স্বভাবতই ভালো মানুষটাই যদি ব্যবসা করে সেটা ভালো ব্যবসা হবে এটাই স্বাভাবিক। আপনার মহল্লার সবচে ভালো মুানুষটি যদি একটা দোকান দেন তার কাছে সবাই ভালো দামে ভালো পন্য আশা করবে, ভালো ব্যবহারতো আশা করবেই। এবং দোকানে কাস্টমারও ভিড়বে। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ না হলে কাস্টমার মুখ ফিরিয়ে নেবে। নেহায়েত ভালো মানুষ মনে করে ক্রেতারা তার কাছে গেল কিন্তু কোনো কারণে তার পন্য বা সেবা যদি মুনোঃপুত না হয় তাহলে তার কাস্টমার ছুটে যাবে। এজন্য ভালোমানুষ হওয়ার পাশাপাশি একজন ব্যবসায়ীকে ভালো এবং দক্ষ ব্যবসায়ী হওয়া চাই। আসুন জেনে নেই এজন্য তার কি কি গুণ থাকা দরকার।

০১.         দেশপ্রেমিক ও সৎ: আমার কাছে সবসময় সততা ও দেশপ্রেম এদুটো জিনিস পরস্পর সম্পর্কযুক্ত মনে হয়। আমার ধারণা একজন দেশপ্রেমিকতো সৎ হবেনই আবার একজন সৎমানুষ কেন দেশপ্রেমিক হবেন না? অনেকগুলো কারণে একজন ই কমার্স উদ্যোক্তাকে এদুটো গুনের অধিকারী হতে হবে। তিনি যদি দেশপ্রেমিক না হন তাহলে কখনোই সঠিক সেবাটি পুরোপুরি দিতে পারবেন না। তার দেশপ্রেমর একটা প্রভাব তার কাজের মধ্যে পড়বে। এতে করে তার সম্পর্কে বাজারে ইতিবাচক ধারণা তৈরী হবে। আর অনলাইন শপে সৎ না হয়ে মোটেই ব্যবসায় টেকা যাবেনা। কারণ এটা গুলিস্তানের ফুটপাত নয় যে প্রোডাক্টস যেমনই হোক প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার মানুষ আসবে। বা সদরঘাট নয় যে লঞ্চে প্রতিদিন নতুন নতুন ক্রেতা আসে, কে ঠকলো কে জিতলো কে এতো খবর রাখে। এখানে আপনার ভিজুয়াল শপ, ক্রেতা রয়েছেন তার ঘরে, ক্রেতার পছন্দ হবে আপনাকে ক্লিক করবে, পছন্দ হবেনা, করবেনা। এখানে একবার যে ক্রেতা অসন্তুষ্ট হবে তিনি দ্বিতীয়বার আর শপিং করবেন না, এটা মোটামুটি গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়। কারণ ক্রেতার জন্য বিকল্প বাজার রয়েছে।
০২.     পেশাদারী: পেশাদারিত্ব এ ব্যবসার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান, এটা কোন টিউশনি বা পার্টটাইম জব নয়, এটা ২৪ ঘন্টার দায়িত্ব, আর মূল কনসেপ্টটাই হচ্ছে মানসম্পন্ন সেবার সাথে সম্পর্কযুক্ত। মনে রাখা জরুরী এটা  মূল বাজার নয়, এটা মূল বাজারের বিকল্প বাজার মাত্র। আপনার ই শপে হয়তো সুন্দর ব্যাগ পাওয়া যায়, এটা সাধারণ বাজারেও পাওয়া যায়। এর একটা মূল বাজার রয়েছে। তা সত্বেও গ্রাহক আপনার কাছে আসছে । পন্যের মানের নিশ্চয়তাতো থাকবেই তার সাথে সঠিক সেবাটাও চাই কিন্তু। তা না হলে গ্রাহক ই-বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে প্রথাগত বাজারেই ফিরে যাবে। এতে ব্যবসা আপনার একা মার খাবেনা পুরো সেক্টরটাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর। সুতরাং এখানে উচ্চমানের পেশাদারিত্ব এবং সর্বোচ্চ সেবার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
০৩.    ইতিবাচক মনোভাব ও দৃঢ়চিত্ত: যেকোনো অবস্থায় আপনাকে ইতিবাচক মনোভাবের পরিচয় দিতে হবে। নেতিবাচক মনোভাব মানুষকে হতাশ করে, পেছনের দিকে নিয়ে যায়, কাজে কর্মে অনুৎসাহিত করে এবং ভুল সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করে। অন্যের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে এবং ধৈর্য ধারনের জন্য নেতিবাচক মনোভাব বাঁধা হিসেবে কাজ করে। এজন্য শুধু ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নয় জীবনের জন্যও ইতিবাচক মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো কাজ করার ব্যাপারে আপনার সঠিক সিদ্ধান্ত এবং দৃঢ়চেতা মনোভাব আপনার লক্ষ্য অর্জনের সহায়ক হবে।
০৪.    পরিশ্রমী : ই কমার্স সম্পর্কে একটা ধারণা হলো এই ব্যবসা ঘরে বসে করা যায়। কথা সত্য। কিন্তু ব্যবসায়ের রিলেডেট অনেক ব্যাপার থাকে সব ঘরে বসে করা যায়না। অনেকের কাছে ব্যবসা একটা ব্রত, ইবাদাত এবং পূজোর মতো এসব লোকেরা ব্যবসা করে বিফল হয়না। আর জীবনের সব ক্ষেত্রেই পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। পরিশ্রম ছাড়া কোন কিছু অর্জন হবে এই মানসিকতা পরিহার করতে হবে। জগতে যারা সফল হয়েছেন তারা পরিশ্রমের কথাই বলেছেন। পরিশ্রমের কারনেই সুযোগ কাজে লাগে।
০৫.    নিয়মানুবর্র্তি: নিয়মনীতির প্রতি শ্রদ্ধা, পালন ও চর্চা ই কমার্স ব্যবসায়ীর জন্য বেশী জরুরী। কারণ আইটি জগতে প্রতিটি বিষয় গানিতিক নিয়ম কানুনের সাথে সম্পর্কযুক্ত, এখানে একটা ফুলস্টম, কমা, কোলন সবকিছুরই মূল্য রয়েছে। কোনো একটা এদিক সেদিক হলে সিস্টেমটা কাজ করবেনা। এজন্য এ ব্যবসার প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিয়মটা চর্চায় থাকা দরকার , তাহলে সার্বিক ফলাফলে এর একতটা প্রভাব পড়বে।
০৬.    খুঁতখুঁতে ও পন্যের মান বোঝার ক্ষমতা: মনে রাখবেন গ্রাহক কেবল ছবি ও ফিচার দেখে আপনার কথায় বিশ্বাস করে আপনার পন্যটি ক্রয় করছে। সব গ্রাহকের সেন্স অব হিউমার, কালার সেন্স, কোয়ালিটি সেন্স, আর্ট সেন্স, ফ্যাশন ও স্টাইল সেন্স সমান নয়। এজন্য এগুলোর ক্ষেত্রে আপনাকে উচ্চমাত্রা বজায় রাখতে হবে। তাহলে আপনি অন্তত ৯৮ ভাগ কাস্টমারকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন। আপনি যদি গড়পড়তা মান ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে আপনি ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ ভাগ ক্রেতা সন্তুষ্টি পাবেন। বা আরো কমও হতে পারে। কিন্তু ৪০ অসন্তুস্ট ক্রেতা! আপনি মনে করবেন আপনার পন্যের ৪০ টি অপবিজ্ঞাপন। যে বিজ্ঞাপন প্রতিনিয়ত আপনার সুনাম নষ্ট করছে।  আর এই মাত্রাটা নিয়ন্ত্রনের জন্য পন্য এবং সেবার ব্যাপারে আপনাকে খুঁতখুঁতে হওয়াটা দরকার। আপনাকে ১০০ জনের কথায় মাথায় রেখে কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে।
০৭.    সময়ানুবর্তি: এ ব্যাপারে বাঙালীর বিশ্বজোড়া বদনাম আছে। আপনি আমি কেউ এর বাইরে নয়। অবশ্য দুই একজন ব্যতিক্রম রয়েছেন। আপনি যদি তাদের একজন হন তো আপনাকে আমার স্যালুট। আর যদি না হন তাহলে সর্তক হোন। কারণ আমরা ১০ টায় মিটিং হলে মনে করি ৩০ মিনিট পরে যাই, ৩০ মিনিটতো দেরী হতেই পারে। রাস্তায় যানজটের কথা কেনা জানে। ১১ তারিখ ডেলিভারি ডেট হলে আমরা মনে করি ১দিন তো দেরী হতেই পারে। পথে কতো সুবিধা অসুবিধা আছেনা। কাস্টমারকে বুঝিয়ে বলবো। এগুলো একদম ভুলে যাবেন। আ্পনি ১০০ ভাগ সময় মানার চেস্টা করবেন। হ্যাঁ সুবিধা অসুবিধা আছে সেজন্য সময় মানাটা আরো বেশী জরুরী। কারণ তথাকথিত সুবিধা অসুবিধার কারনে ১০টা কেসের মধ্যে ২টা কেসেতো আপনার দেরী হবেই। সে সাথে আপনি যদি ডিল দিয়ে দেন তাহলে বাকী আরো ৬টা কেস ডিলে বা লেট হবে। তখন দেখা যাবে ১০টার মধ্যে ৮টাই বা ১০টাই ঠিকসময়ে ড্রিল করতে পারেনি। তখন আপনার ই-কমার্সটা  লেটকমার্স হিসেবে খ্যাতি পাবে। ই শপটা হবে লেট শপ, ডটকম এর অর্থ হবে লেট কম।
০৮.    সম্পর্কতৈরীতে পারদর্শী: আমাদের দেশে সম্পর্ক একটা ব্যাপার ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। বিয়ের শপিং করবেন? আপনি প্রথমেই পরিচিত কারোর কথা ভাবেন, পিসি কিনবেন? সবক্ষেত্রেই। এমনকি আপনি মাছ কিনতে যখন বাজারে যান সেখানেও যার সাথে আপনার একটু হাই হ্যালো হয়। তার কাছ থেকেই বেশী কেনেন। এই দিকটা একটু খেয়াল রাখতে হবে। যেহেতু আপনার দোকানটা বসুন্ধরা সিটি কিংবা কাস্টমারের গলির মোড়ে নয় সেজন্যও এখানে সম্পর্কটা আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আর আপনি যেহেতু পন্য তৈরী করছেন না, অন্যকারো পন্য সেল করছেন আবার এদিকে কাস্টমার কিন্তু আপনাকে চেনে, সমস্যা হলে আপনাকে ধরবে, ব্যবসাটা আপনার এজন্য পন্যের মানের বিষয়টি ঠিক থাকার জন্য সাপ্লায়ার বা উৎপাদনকারীর সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। মানুষের সম্পর্কতো আর জন্মের আগে থেকে পরিবারের বাইরে হওয়ার সুয়োগ হয়না তাই আপনাকে আপনার প্রয়োজনে এই আন্তরিক সম্পর্কগুলো তৈরী করে নিতে হবে।
০৯.     সদালাপী ও বন্ধুবৎসল: এগুলো প্রতিটি ব্যবসায়ীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনি নিজেই একটু নিজের সমালোচনা করুন। এগুলো আপনার মধ্যে আছে কিনা। যদি না থাকে কার মাঝে আছে তাকে অনুসরণ করুন। আপনি নিজেই ভেবে দেখুন আপনি যাদের সাথে লেনদেন করেন তারা কেমন আচরণ করলে আপনার ভালো লাগে। এবিষয়টি কখনো কখনো নয় সব সময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ন। এমনকি আপনার ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা থাকলেও আপনি কাস্টমার, কর্মী বা পার্টিকে হাসিখুশিভাবে মিশুন। ব্যক্তিগত হতাশা সমস্যা যেন ব্যবসায় ছায়া না ফেলে খেয়াল রাখুন। এটা কঠিন বটে। কিন্তু করতে পারাটাইতো আসল পরীক্ষা।
১০.         ধৈর্যশীল ও আত্মবিশ্বাসী: ব্যবসার উত্থান পতন থেকে শুরু করে, রিলেটেড পার্টির আচরণ, কর্মীদের কোন সমস্যা, আর্থিক কোনো জটিলতা সবই সামলে নিতে হয়। মনে রাখবেন এসব সমস্যা কিন্তু আপনার একার নয়। যেখানে যাবেন সমস্যার কথা শুনবেন। সমস্যা যখন প্রতিমূহুর্তে ঠান্ডা মাথায় সামলে উঠতে পারবেন, তখন এটাকে ডালভাত মনে হবে। আর আপনার মনে হবে ব্যবসার এটাও একটা রুটিন ওয়ার্ক। এতে আপনি আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন। কাজের উদ্ধীপনা বাড়বে। আত্মবিশ্বাস এবং উদ্দীপনা আপনাকে সমানে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। ধৈর্যই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সহায়ক। উত্তেজিত হবেননা। অস্থির অবস্থায় কোনো সিধান্ত নেবেন না।
১১.        মেজাজনিয়ন্ত্রক ও অন্যের সুবিধা অসুবিধা বোঝা: মেজাজটা নিয়ন্ত্রনে রাখা জরূরী, যারা হুটহাট রেগে যান, বা খুব বেশী রাগেন, বা রেগেগেলে নিয়ন্ত্রণ হারান, বা একবার কোনো কারণে রাগ করলে আর স্বাভাবিক হতে পারেনা। তারা সর্তক হোন, বুঝেনতো যন্ত্রপাতির ব্যাপার, তার উপর আইটির মামলা। কর্মীদের সাথে মেজাজ ধরে রাখতে না পারলে ১ হাজার সন্তুষ্ট কর্মীর মাঝে ১জন ক্ষুব্ধ কর্মীর জন্য যেকোন সমস্যায় পড়তে পারেন। ই কমার্স বিজনেস সাইবার সিকিউরিটির কথাটা ভুলে যাবেন না। কথায় বলে, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। আর যে আপনার সুবিধা অসুবিধা যতই বুঝুক না বুঝুক আমি অন্তত আপনাকে পরামর্শ দেবো ্অন্যের ভালোমন্দ সুবিধা অসুবিধা এগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে। এটা অনূভুতি ও মানষিকতার ব্যাপার এটা বই পড়ে হয়না। আপনি সচেতন হবেন অন্যের প্রতি সহমর্মী হবেন। এতে নগদ ফায়দা না পেলেও নিজের ভাবমূর্তি উন্নয়নের মাধ্যমে একটা পর্যায়ে আপনি এর সুফল পাবেন।
১২.     দূরদর্শী: কথাটার শাব্দিক অর্থ হলো যিনি দূরের জিনিস দেখেন। আর পরিভাষাগত অর্থ হলো যিনি অনেকদিন পরে কি হবে তা আগে বুঝেন। আপনি যত দূরদর্শী হবেন তত দূরপথ পাড়ি দিতে পারবেন। বাজার ব্যবস্থা ও বাজারের গতিপ্রকৃতি একটু আগে আগে বুঝতে পারলে ভালো। যে সোনার ব্যবসায়ী আগে বুঝতে পারেন আগামী মাসে সোনার দাম বাড়বে তাহলে নিশ্চই তিনি প্রয়োজনীয় স্টক করতে পারবেন। শুধু সোনা শেয়ার কিংবা আলু তেলের ব্যবসা নয়। সব ব্যবসায় কমবেশী এ জ্ঞানটা কাজে লাগে।
১৩.         কর্মী চালনায় বিচক্ষণ: ই কমার্স ব্যবসায় হয়তো বেশী কর্মী প্রয়োজন হয়না। তবে এখানে এক একজন কর্মী আপনার ব্যবসার একএকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। মনে রাখা ভালো যে কর্মীরা গ্রাহকের সাথে যে আচরণ করবে। গ্রাহক সে আচরণ দিয়ে ব্যবসাটাকে ওজন করবে। আর কর্মী নির্বাচনে, কর্মীর সাথে আচরণে, কর্মীর মেজাজ মর্জি, সুবিধা অসুবিধা বোঝায় যিনি যত দক্ষ হবেন তিনি এবিষয়ে তত ভালো করবরেন।
১৪.         বিজনেস ম্যানার্স সম্পর্কে সচেতন:  এটা আমাদের এখানে কমন সমস্যা। আমরা একটু বেশকম হলেই বলি। যান যান আপনার মতো কাস্টমার দরকার নেই। সতর্ক হোন এবং সতর্ক হোন। মনে রাখবেন কাস্টমার হয়তো একজোড়া জুতাই আপনার কাছথেকে কিনলো অথবা কিনলোনা। আপনার কিন্তু জীবিকার ফায়সালা অর্থাৎ রুটি রুজির ব্যাপার। আপনি কাস্টমারের কটু কথা যদি একটু হজম করেন তাতেতো কোন ক্ষতি নেই বরং উপকার ছাড়া। তাহলে নিশ্চিত ক্ষতি হবে এমন একটা কাজ আপনি কেন করতে যাবেন। সহজে একটা কথা বুঝুন কাস্টমার হাজার রকম থাকবে কিন্তু বিক্রেতা বা দোকানী একইরকম হবে। অর্থাঃ কাস্টমারের চোখে ভালো। শুধু নিজে নিজে ভালো মানুষ হলেন তা কিন্তু নয়। অন্যান্য পার্টির ক্ষেত্রেও আচরণের বেলায় একই কথা প্রযোজ্য। শপথ করুন যে যাই হোক, আমি ভালো হবো। যে যেমনি বলুক, আমি ভালো বলব্ ো। কথাটা আপনার কর্মীদেরও বলুন। সবসময় চোখে পড়ে এমন কোনো জায়গায় লাগিয়ে রাখুন। কাজে দিবে।
১৫.         আইটি জ্ঞান সম্পন্ন: আইটি জ্ঞানটা ই কমার্স ব্যবসায়ার জন্য জরুরী। তবে এজন্য যে আপনাকে আইটি জিনিয়াস হতে হবে। তা নয়। প্রাথমিক জ্ঞানটা অন্তত থাকা চাই। তারপর স্থান কাল পাত্র বিশেষে আপনি কি ব্যবসা করছেন কিভাবে করছেন। এটার উপর নির্ভর করবে আপনার কতটুকু আইটি জ্ঞান দরকার। প্রাথমিকভাবে ওয়েব ই মেইল ব্লগ, সোসাল কমিউনিকশন, ডোমেইন, হোস্টিং, সফ্টওয়ার, ইকমার্স সাইট, ইন্টারনেট ওয়ার, সাইবার সিকিউরিটি, অনলাইন শপিং, বায়িং, অনলাইন মার্কেটিং, ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা থাকাটা জরুরী।
১৬.         ইংরেজীতে দখলী: দুনিয়াটা ইংরেজীতে চলছে, অনলাইন জগৎতো আরো বেশী ইংরেজীতে ঘুরছে। এজন্য ইংরেজীটা জানা দরকার। এর মানে এই নয় যে আপনাকে রীতিমতো একজন ইংলিশম্যান হয়ে যেতে হবে। ওয়েবব্রাইজিং, ফেসবুকিং, স্মার্ট ফোন, ই মেইল ও অনলাইনে কেনাকাটা ইত্যাদি কাজ করতে পারলে আপনি ই কমার্স শুরু করতে পারবেন এবং পরে আস্তে আস্তো যতটা প্রয়োজন আয়ত্ব করার চেষ্টা করুন। তবে এরচেয়ে বেশী জানলে একটা বিষয়ে অন্তত আপনি এগিয়ে থাকলেন।
১৭.          সচেতন : একজন ব্যবসায়ী হবে একজন সচেতন নাগরিক। এর কোনো অন্যথা নেই। তিনি তার আশপাশ তার দেশ জাতি ও সমাজসম্পর্কে সচেতন থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। দেশের আর্থসামাজিক চিত্রটা তার কাছে পরিস্কার থাকতে হবে। ব্যবসায়িক নিত্যনুতন তথ্যও তার নখদর্পণে থাকা চাই।
১৮.         সামাজিক ও ব্যবসায়িক যোগাযোগে দক্ষ: যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কাজের একটি। এব্যাপারে দ্ক্ষতা আপনারকে ব্যবসায়িক জগতে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আবার শুধু যোগাযোগ বর্থতার কারণে আপনার অন্যসব যোগ্যতা থাকা সত্বেও আপনি ব্যর্থ হতে পারেন। সূতরাং বিষয়টির প্রতি নজর দিন। এজন্য আপনারি গণযোগাযোগের উপর কালকেই একটা কোর্স করে ফেলতে হবে, তা নয়। আপনার কাদের সাথে যোগাযোগ প্রয়োজন তাদের নাম, ঠিকানা, ফোন ও কার্ড রাখুন। তারা কে, কোথায় এবং কি করে তা মনে রাখুন। দেখা বা কথা হলে কুশল বিনিময় করুন। নাম ও পেশা মনে রাধার চেষ্টা করুন। কেউ যদি তার নিজের কোনো সুসংবাদ বা দুসংবাদ বলতে চায় শুনুন। দুসংবাদ হলে সমবেদনা জানান, সুসংবাদ হলে উৎসাহ দিন। পরের বার দেখা হলে সেটি জানতে চান। তবে নিজের ব্যক্তিগত আলাপচারিতা করতে যাবেনন। একজনের ভালোমন্দ অন্যকে বলবেন না ভুলেও। ব্যবসায়িক যোগাযেগের নিয়মগুলো আয়ত্ব করুন। প্রয়োজনে নেটে বা বইতে একটু আধটু লেখাপড়া করুন। ব্যবসায়িক আলাপে প্রতিবারই যার সাথে কথা বলছেন তার এবং তার ব্যবসার শুভ কামনা করুন এমনকি আপনার প্রতিদ্ধন্ধি হলেও।
১৯.     সাপ্লাই ও ডেলিভারী সম্পর্কে জ্ঞাত: এটা একজন ই কমার্স ব্যবসায়ীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এ বিষয়ে আপনি অনেক কিছু না জানুন তাতে চলবে তবে দেশের সাপ্লাই ও ডেলিভারী অপশনগুলো, আপনি যে পন্্য নিয়ে ব্যবসা করে বা করবেন তার উৎপাদন, সংগ্রহ, বিক্রয়, সরবরাহ , প্যাকিং, পরিবহন ব্যবহার সহ পুরো পক্রিয়াটা জেনে রাখুন।
২০.         পেমেন্ট ও ব্যাংকিং ধারণা প্রাপ্ত: এবিষয়ে সব সময় আপডেট থাকুন। একদিন ব্যাংকে গিয়ে জেনে আসুন তাদের কি কি সেবা আছে। দেশী বিদেশী ব্যবসার কি কি পেমেন্ট প্রসিডিওর আছে, বাংলাদেশে কি কি সুবিধা আছে এবং কি কি নাই, এবং কি কি থাকলে ভালো হতো এবিষয়টা জেনে রাখুন। নতুন কোনো অপশন আসলে খোজখবর করুন। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যবিভাগে ফোন করে আপনার প্রয়োজনের কথা বলুন। সমস্যার কথা বলুন তাদের, করনীয় সম্পর্কে বলুন । এরকম এক হাজার লোক যদি ফোন করে তাহলে তাদের ঘুম ভাঙতেওতো পারে। তখনতো আপনার সাথে আমিও উপকৃত হবো।
২১.      প্রচারনা ও বিভিন্ন বিভাগের প্রতি মনোযোগী:  প্রচার প্রচারণার বিভিন্ন উপায় এসবের খরচ এবং আউটকাম সম্পর্কে ধারণা নিন। অনলাইনে প্রচারের কি কি সুযোগ আছে তাও জেনে নিন। ব্যবসা কম হোক বেশী হোক প্রচারণায় ডিল দেবেন না। প্রথমে বিভিণœ ভাবে ট্রাই করুন। খেয়াল রাখুন কোন প্রচারণায় বেশী ফল আসছে। সেটা অব্যাহত রাখুন। আপনার দোকানটা যেহেতু সফট বা ভার্চুয়াল জগতে সুতরাং আপনার নানামুখী প্রচারণার প্রয়োজন হবে। কথাটা ভুলবেন না।
আপনার মাঝে সবগুণাবলী কমবেশী থাকবে এমনটাই আশা করি আমি। যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে বেশীরভাগ গুণ থাকা দরকার, অথবা যে বিষয়গুলো নাহলেই নয় সেগুলো থাকা দরকার। অথবা যদি তা না থাকে আপনি সেগুলো অর্জণ করার চেস্টা করুন। আপনি অনেক গুনি মানুষ হতে না পারলেও যে দোষগুলো আপনার ব্যবসার ক্ষতি করবে সেগুলো দূর করুন তা না হোক অন্তত নিয়ন্ত্রণ করুন। নিজের ভিতর কোনো গুণের অভাব বুঝতে পারলে সেটা আস্তে আস্তে প্রাকটিস করা শুরু করুন। এই মূহুর্তে আমিও একটা করছি: আপনাদের ব্যবসায়িক উদ্যোগ সফল হোক, আপনার জন্য শূভকামনা থাকলো। আশাকরি আপনি আপনার ই শপের মাধ্যমে শুধু নিজে লাভবান হবেন না। দেশ, জাতি ও ই কমার্স সেক্টরকে কিছু দেবেন। এই কামনা করছি।

আজকের লেখা ২১টি পয়েন্টে শেষ করতে চাই। এখানে কোনো কোনো বিষয় আগের লেখার সাথে রিপিট হয়েছে। মনে রাখবেন যেটা গুরুত্বপূর্ন সেটা রিপিট হবেই। আর রিপিট হওয়ার ফলে আশাকরি পাঠকের কথাটা বেশী মনে থাকবে। আর যেটা বেশী গুরুত্বপুর্ণ সেটিা বেশী মনে থাকাতো ভালোই। কি বলেন?

 

10,203 total views, 2 views today

Comments

comments

Your email address will not be published.