creative-marketing

ফেইসবুক মার্কেটিং, পর্ব ২

ফেইসবুক মার্কেটিং এর জন্য বিবেচ্য বিষয়

জাহাঙ্গীর আলম শোভন

 

কন্টেন্ট: টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও ইত্যাদি মনোযোগ আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু দিয়ে তৈরি কন্টেন্টে সমৃদ্ধ প্রোফাইল জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। এমন সব কন্টেন্ট পোস্ট করতে হবে যেগুলো মানুষকে পেজে যুক্ত থাকতে আগ্রহী করে তুলবে।

কন্টেন্ট শুধু ফেইসবুক নয় যেকোন মার্কেটিং এর জন্য এটা অপরিহার্ উপাদান। আর অনলাইন মার্কেটিং এর প্রাণ হলো কনন্টেন্ট।কনটেন্ট যাই হোকনা কেন ইমেজ, টেক্সট, ভিডিও সে কন্টেন্টগুলো হতে হবে ছোট, সহজবোধ্য ও নিজস্ব ভাষায়। পণ্য ও ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত বা সাম্প্রতিক ঘটনাকে পণ্যের সঙ্গে যুক্ত করে তৈরি কন্টেন্ট যেমন ফটো, ভিডিও লিংক ইত্যাদি পোস্ট যা ব্র্যান্ড তথা ব্যবসাকে অনেকের কাছে দৃষ্টিগোচর রাখবে। আকর্ষণীয় পোস্ট তৈরি করতে হলে— প্রাসঙ্গিক ভিডিও, বিখ্যাত ব্যক্তিদের বাণী, পণ্য নিয়ে বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফার, তথ্যবহুল নোট, প্রভাবিত করতে পারে এমন ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার, মজার কোনো প্রতিযোগিতা, গল্প, কুইজ, কোনো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ইত্যাদি ব্যবহার করে আকর্ষণীয় পোস্ট ডেভেলপ করা সম্ভব। থাকতে পারে জনমত জরিপ বা এধরনের কিছূ।

পারিপাশ্বিক কানেকটিভিটি: ব্যবসার অবস্থান বুঝতে বিভিন্ন লিংকে একটিভ থাকতে হবে। হবে— নিজের শপ পেজের সোশ্যাল কাস্টমার রিলেশনশিপ, ম্যানেজমেন্ট কনভার্সেশন, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যানালিটিকস ডেটা, লিড ও সম্ভাব্য গ্রাহকের তথ্য, প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ড পেজের কমেন্ট, বৈশ্বিক প্রবণতা নিয়ে খবর ও আলোচনা, আপনি যে বিষয়ে ব্যবসা করছেন সে বিষয়ে কোন পত্রিকা পেউজ, সংগঠন থাকলে, সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ড তথা কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত খবর ও আলোচনা, ব্র্যান্ড রেপুটেশন ও পাবলিক সেন্টিমেন্ট, গ্রাহকের সন্তুষ্টি, বিশ্বস্ততা ও প্রচারের তথ্য, গ্রাহকের সমস্যা ও সমাধান।

ব্রান্ড ও সুনাম তৈরী: আপনার ব্র্যান্ডটি সম্পর্কে ভোক্তাদের মধ্যে সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে হবে পণ্যটি ব্যবহারে আগ্রহী বা যাদের প্রয়োজন হতে পারে তাদেরকে লক্ষ্য করেই প্রচারকার্য চালাতে হবে। ব্রান্ডের পরিচিত ও ইমেজ এমনভাবে গড় তুলতে হবে। যেন ব্রান্ডের নাম শুনলে ব্রান্ড সম্পর্কিত ইতিবাচক ধারনাটাই আগে মনে আসে। যেমন হরলিকস, লাক্স, বাটা ইত্যাদি। এগুলো নাম শুনলেই আমরা বুঝতে পারি যে এগুলো কি কাজে লাগে এবং এর মান কোন পর্ায়ের অবশ্যই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর সব সময় একই মানের লোগে ব্যবহার করতে হবে। রাখতে হবে একটি বিজনেস কালার।

যোগাযোগ ও নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি: ফেইসবুক যেহেতু সামাজিক যোগাযোক মাধ্যম তাহলে এরে মাধ্যমে যোগাযোগের কাজটা অত্যন্ত সহজ। প্রথমত যেসব লোক কিনতে চেয়ছে তাদের সাথে যোগাযোগ করে অর্ডার নিশ্চিত করা এবং পন্যটি সঠিকভাবে তার হাতে পেছৈানোর জন্য সাভিৃস গিুলোতে সহযোগিতা করে তাকে আপডেট জানানো। দ্বিতীয়ত যারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে বা মতামত দিয়েছে তাদের সাথেও যোগাযোগ করা যেতে পারে। এমনকি কাস্টমার কেয়ার বা মার্টিং বা পাবলিক রিলেশান বিভাগের মাধ্যমে সম্ভাব্য খোতাদের ফোনে কানেকটেড করা। আগ্রহী ভোক্তার সঙ্গে ফোনে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা গেলে তা ব্যবসার জন্য খুবই কার্যকর হবে।‘ওয়ার্ড অব মাউথ মার্কেটিং’ এর মাধ্যমে ভোক্তা পণ্য সম্পর্কে কোনো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালে তার জন্য তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনসহ অন্যান্য ভোক্তার কাছে বিষয়টি বড় করে তুলে ধরতে হবে। ভোক্তার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কাস্টমার কেয়ার ও কমিউনিটি উন্নয়ন: আজকাল পন্যবিক্রয় করার সাথে সাথে আমরা সেবাও বিক্রয় করে থাকি। মূলত এ কথাটিই সত্য। পন্য কোন বিক্রয়যোগ্য বস্তু হতো না। যদি এর সাথে সেবা যুক্ত না থাকতো। যেমন ধরুন আপনি একটা কলম কিনলেন। কেনার পর আপনি সেটা ব্যবহার করবেন। এই সেবাটিই পন্যটির উপযোগিতা তৈরী করেছি। কারণ যদি কেনার পর পর পন্যটির কোন ব্যবহার না থাকে তাহলে বাজারের জন্য সেটি আদতে কোন পন্য নয়। তাহলে পন্য মানেই সেবাযুক্ত হবে। এই সেবাটি কয়েকপ্রকার যেটাকে আমরা কাস্টমার কেয়ার বলি। প্রথমত পন্যটি সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করার জন্য যে সার্ভিস প্যাকেজ রয়েছে। দ্বিতীয়ত পন্যটি বিক্রয়সংক্রান্ত কার্যাবলী এগুলোও কোম্পানীর অভ্যন্তরীন সাভির্সের মধ্যে পড়ে। যেমন মাকের্টিং, ডেলিভারী ইত্যাদি। আমরা যেটাকে বলি বিক্রয়োত্তর সেবা। পন্যে ক্রয়ের পর ভোক্তা সাধারণ যদি পন্যটি কাংখিত সময় পযর্ন্ত উপযোগিতা না রেখে ব্যবহার করা যায় তাহলে এটির কোন প্রয়োজন হয়তো ভোক্তার কাছে থাকবেনা। এজন্য আজ এটা গুরুত্বপূণূ হয়ে দাড়িয়েছে একজন এক্রতা শুধু একটি পন্য কেনেন না। তিনি একটি সেবাও কেনেন। সে সেবাটি সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ফার্রম পক্ষ থেকে যে সহযোগিতা এটা আজকাল খুব জনপ্রিয়, কাযর্কর ও সফল উপায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ মানুষ যদি ১০০টাকা দিয়ে পন্য দিনে ৩ দিনে ব্যবহার করতে না পারে, আমার ১৫০ টাকা দিয়ে কেনার পর ১ বছর কাস্টমার সাভির্স পায় নিশ্চই দ্দিতীয়টা গ্রহণ করবে।

বিশেষ প্রচারণা: সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে কাজটি বেশি বেশি করতে হবে। ব্র্যান্ড পেজে নিয়মিত না এমন কারও পেছনে এ ধরনের প্রচারণা চালিয়ে সময় ব্যয় করার প্রয়োজন নেই। এসব পোস্টে আক্রমণাত্মক বক্তব্য, ঘৃণাবাচক কথা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। ছোট ও সহজবোধ্য পোস্ট, টিপস, রিসোর্সের লিংক, সামাজিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন পোস্ট। এসব মূল ব্যবসা বা কনসেপ্ট এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। অন্যান্য সামাজিক ইভেন্ট এর সাথে এড করতে হবে।

বাজার নজরদারী: অর্গানিক সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ পারফরমেন্স ইন্ডিকেটর হলো— নিজের ও প্রতিদ্বন্দ্বীর গ্রোথ রেট, পোস্ট ভিউয়ারদের সংখ্যা ও তাদের ভৌগোলিক অবস্থান, পাবলিক সেন্টিমেন্ট, ট্যাগিং, বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ড, সার্চ, গ্রাহকের সচেতনতা, গ্রাহকের সন্তুষ্টি, রিভিউ, প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে লিড সংখ্যা, লিড, কনভার্শন ও সেলের পেছনে ব্যয়, লিড কনভার্শন রেট, ভ্যালু, ফেসবুকে প্রতি গ্রাহকের জন্য সাপোর্ট কস্ট, পেইড রিচ ও এনগেজমেন্ট ইত্যাদিব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ফেইসবুকের ভেতরেও অনেক ফেইসবুক রয়েছে।

কি ওয়ার্ড: ব্যবসার সামাজিক অবস্থান বোঝার জন্য উদ্যোক্তাকে নিজের ব্র্যান্ড কিওয়ার্ড, প্রোডাক্ট কিওয়ার্ড, প্রোডাক্ট টাইপ কিওয়ার্ড, গ্রাহকের সমস্যা ও কন্টেন্ট ডিমান্ড কিওয়ার্ড, লিড জেনারেটিং কিওয়ার্ড ইত্যাদি সব সময় নজরে রাখতে হবে। নিজেদের পোস্ট গুলো দেয়ার সময় কি ওয়ার্ এর প্রতি যত্নবান হতে হবে। সার্চ দিয়ে জেনে নিতে হবে। কোন ধরনের কি ওয়ার্ডের বাজার কেমন। মানে চাহদা কেমন।

সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান কনভার্সেশন:

কাস্টমারকে এমনভাবে ফেস করতে হবে যেন প্রতিটি কাস্টমার নিজেকে মনে করে যে আপনি তাকে বিশেষ কাস্টমার হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এটা না করতে পারলে ভালো রেপুটেশন তৈরি করা সম্ভব হবেনা। এই পদ্ধতিতে কোম্পানির অনলাইন রেপুটেশনের ওপর লক্ষ রাখা ও তা বোঝা দরকার। সে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের নেতিবাচক রেপুটেশন কাটিয়ে ওঠঠতে হবে। সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করা ও তা সমাধান করা এবং ভোক্তাকে পণ্যের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা যায়। এক্ষেত্রে আন্তারিকতার সহিত ভোক্তাদের ।ন্যান্য সমস্যার ফোনে সমাধান দিতে পারলে আরো ভালো হয়। যেমন আপনি অনলাইনে কাচা সব্জি বেচেন। সব্জির ব্যাপারে কোন প্রশ্ন করতে গ্রাহক ফোন দিলে আপনি সে সবজির পুষ্টিগুন ও খাদ্যগুন বলতেই পারেন। গ্রাহক আগ্রহী হলে বলতে পারেন সব্জি রান্নার ২/১ রেসিপিও। অবশ্য এসব আপনাকে আগে থেকে জেনে হাতের কাছে রাখতে হবে।

প্রেস রিলিজ, ব্লগিং, প্রোডাক্টস রিভিও, রিলেটেড সাইট বা ব্লগে বা নিউজে ছোট কমেন্ট ও গেস্ট পোস্টিংয়ের মাধ্যমে কন্টেন্ট মার্কেটিং, পণ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি ইত্যাদি করা যায়। নিজেকে কাস্টমারের পর্ায়ে নিয়ে ভাবতে হবে। সেভাবে প্রোডাক্টস ও প্যাকেজ ডিজাইন করতে হবে। দাম ঠিক করতে হবে। এবং সমস্যা সমাধান করতে হবে।

ফেসবুক মার্কেটিংয়ের জন্য আরও যা যা করা যায়: ফেসবুক ইভেন্ট মার্কেটিং চেকলিস্ট, গ্রুপের মাধ্যমে ফেসবুকে কমিউনিটি বিল্ডিং, লোকাল ব্র্যান্ডিং, ভিডিও মার্কেটিং, ফেসবুক অপটিমাইজেশন ও ওপেন গ্রাফ অপটিমাইজেশন, আরএসএস ফিড, মোবাইল ও কিউআর কোড, সাবলিমিনাল ব্র্যান্ডিং,

কন্টেন্ট মার্কেটিং: কন্টেন্ট রিসার্চ ও প্ল্যানিং, কন্টেন্ট ডিজাইন, কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট, কন্টেন্ট অপটিমাইজেশন, কন্টেন্ট ডিস্ট্রিবিউশন, ভাইরাল কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি, কন্টেন্ট মার্কেটিং টুল ইত্যাদি। কনটেন্ট তৈরীর সময় গ্রোহকের রুপচ ও পারিপাশ্বিক অবস্থার কথা মাথায় রাখতে হবে। বতর্মানে মফস্বলের তরুণদের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহারের যে পরিমাণ তা শহরের চেয়ে বেশি। আমাদের দেশে বেশী ব্যবহুত হচ্ছে স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোন। কাজেই কন্টেন্টগুলো ডেভেলপ করতে হবে এগুলো স্মার্টফোনে দেখার উপযোগী করে। ফেসবুক ইনসাইট থেকে দেখা ভোক্তা ও ইন্টারেস্টেড ভোক্তারা দিনের কোন সময়ে অথবা সপ্তাহের কোন দিন ফেসবুকে অ্যাকটিভ থাকেন। তাহলে সফলতার হার বেশী থাকবে।

একটা বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আপনার পন্য সেবা ও ডেলিভারী যেতকান একটা বিষয়ে ভোক্তা যদি ক্ষুব্ধ হয়ে একটি পোস্ট দেয়। একজনের কারণে ১০ জন গ্রাহক এবং আলটেমিটলি সুনাম নস্ট হবে। সূতরাং ফেইসবুকে মার্কেটিং এ এই সতর্কতা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

16,315 total views, 3 views today

Comments

comments

Your email address will not be published.