ই কমার্স এর গোড়ার কথা
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
ই কমার্স কি?
ই কমার্স বলতে আমরা ইলেকট্রিক বা ইলেট্রন্ক্সি পন্যের ব্যবসা বুঝিনা আমরা বুঝি ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে যে ব্যবসা করা হয়। এটাকে আমরা অনলাইন বিজনেসও বলে থাকি কারণ এটা শুধু ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হলেই চলবেনা। এটাতে ইন্টানরেট কানেকশান ও থাকতে হবে। তথাপি রেডিও টিভি ইলেট্রনিক মাধ্যম হলেও আমরা সেগুলো কেবল প্রচার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করি, ববসায়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করিনা। সেগুলো অবশ্য গণমাধ্যমের আওতায় পড়ে। আমরা ব্যবহার করি কম্পিউটার ল্যপটপ, ট্যাব মোবাইল ফোন। এছাড়া আরো কিছু সাপোর্ট ডিভাইসের প্রয়োজন হয় আরো কিছু উচুদরের কাজ করতে গেলে। কিন্তু এগুলোতেও ই কমার্স করা যায়।
সূতরাং আমরা একমত হতে পারি যে, ইলেটনিক মাধ্যম ব্যবহার করে যে ব্যবসা করা হয় তাকে ই কমার্স বলে। আসলেই ই কমার্স বলতে আমরা বুঝি ইলেকট্রনিক্স মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যবসা করা তথা কেনাকাটা বা লেনদেন করা।
কেমন করে এলো?
কিন্তু শুরুতে ই কমার্র আদল এমন্টা ছিলনা। ১৯৭০ সালের দিকে ই কমার্স এর প্রাথমিক সূচনা হয় ইলেকট্রনিক ডাটা ইন্টারচেঞ্জ (ইডিআই) এবং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) এর মাধ্যমে একমুখী ফারন্ড ট্রানসফার এর মাধ্যম। এতে পারচেজ অর্ডার কিংবা ইনভয়েসের মতো বাণিজ্যিক ডকুমেন্টগুলো ইলেকট্রনিক উপায়ে প্রেরন করার পথ তৈরী হয়।১৯৭১/৭২ সালে ARPANET ব্যবহার করে প্রথম মারিজুয়ানা বিক্রি হয় ।১৯৭৯ সালে মাইকেল অলড্রিচ প্রথম অনলাইন শপিং এর একটি ডেমো দেখাতে সক্ষম হন।একই বছর যুক্তরাষ্ট্রে স্যাবরে এবং যুক্তরাজ্যে ট্রাভিকম নামের দুটি প্রতিষ্ঠান মিশেল আলড্রিচ এক প্রোগ্রামারকে দিয় ১৯৭৯ সালে যুক্তরাজ্যে অনলাইন শপিং করতে সমর্থ হয়।
১৯৮১ সালে Thomson Holidays ইউকে ইনস্টল করে প্রথম বিজনেস টু বিজনেস অনলাইন শপিং এর সাথে পরিচিত করান। ১৯৮২ সালে মিনিটেল নামে ফ্রেঞ্চ টেলিকম কোম্পানী প্রথমবারের মতো অনলাইন অর্ডার নেয়।১৯৯০ সালে WWW এর জনক টিম বার্নারস লি প্রথম ওয়েব ব্রাউজার শুরু করে যা ওয়াল্ড ওয়াইড ওয়েব নামে পরিচত। এই ঘটনা ইন্টারনেট জগতে এ বৈপ্লবিক পরিবতর্ন এন দেয়। এ বছর এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স সিস্টেম ও ডেটা মাইনিং সিস্টেম যুক্ত হলে অনলাইন ব্যবসার পথ সুগম হয়। এতে এয়ারলাইন কোম্পানীগুলো রিজার্ভাশন অনলাইনে টিকেট সিস্টেম চালু করতে পারে এবং ১৯৯২ সালে বুক স্ট্যাকস আনলিমিটেড বুকস ডট কম নামে প্রথম ইকমার্স শুরু করে অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসিং ব্যবহার করে।১৯৯৫ সালে জেফ বেজস শুরু করেন ইকমার্স জায়ান্ট আমাজন ডট কম। ডেল এবং সিসকো ও তাদের অনলাইন ট্রাঞ্জেকশন শুরু করেন। সাথে সাথেই শুর করে নিলাম বা অকশন জায়ান্ট ইবের যাত্রা কম্পিউটার প্রোগ্রামার পিয়েরে অমিতদারের হাত ধরে, যা আগে অকশন ওয়েব নামে পরিচিত ছিল।
১৯৯৫ সালে শুরু হয় আমাজন ডট কম। ডেল এবং সিসকো ও তাদের অনলাইন ট্রাঞ্জেকশন শুরু করেন । ১৯৯৬ সালে ভারতে বি টু বি ট্রানজেকশানের জন্য প্রথম ইন্ডিয়ান ইকমার্স সাইট ইন্ডিয়ামার্ট যাত্রা শুরু করে। ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করে চীনের ইকমার্স জায়ান্ট আলিবাবা ডট কম ।১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে মুন্সিজি ডট কম নামে একটি ই কমার্স সাইটে আসে ।
তারপরের গল্প এখনো তরতাজা । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এরমধ্যে আংশিক পূর্নাঙ্গ বিটিবি বিটুজি বিভিন্নধরনের অনলাইন লেনদেন বাড়তে থাকে। পাশাপপাশি ব্যবসা বাণিজ্যের বিভিন্ন দিগন্ত প্রসারিত হয় এবং দেশে দেশে মুক্ত বানিজ্যনীতিও প্রসার লাভ করে। অন্যদিকে প্রসারিত হয় প্রযুক্তি এতে যেমনকি সস্তা হয়েং যায় কম্পিউটার ল্যাপটপ মোবাইলসহ নানা গেজেট আর সহজলভ্য হয়ে পড়ে ইন্টারনেট সুবিধা। এরই মধ্যে ২০০১ সালে আলিবাবা ডট কম লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়।২০০৩ সালে আমাজন ডটকম প্রথম লাভের মুখ দেখে এবং তারা তাদের প্রথম বাৎসরিক প্রফিট ঘোষনা করে।
কি কি প্রক্রিয়ায় ই কমার্স হয়?
- B2B : ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ইকমার্সে যে ট্রান্সেকশন। এখানে মুলত পন্য সার্ভিস কেনা বেচা হয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে।এখানে কোন কঞ্জিউমারের সাথে ট্রান্সেজশন হয়না।এই পক্রিয়ার মাধ্যমেই মূলত ই কমাসের্র সূচনা হয়। প্রথম দিকে ব্যবসায়ীরা তাদের পারস্পরিক সুবিধার জন্য ই কমার্সের আশ্রয় নেন।ই কমার্স কনজিউমার লেবেলে নেমে আসলেও এ পক্রিয়া এখনো সমান জনপ্রিয়।
2.B2C : সরাসরি কঞ্জিউমারের কাছে পন্য বা সার্ভিস বিক্রি করা হয়। এতে একজন কাস্টমার একটা শপ থেকে পন্য ক্রয় করতে পারেন। এতে গ্রাহকই সরাসরি ব্যবসায়ীর সাথে লেনদেন করছেন। তাই B2C বলা যায়। এটা দুই রকম হতে পারে কেউ নিজেদের উৎপাদিত পন্য কনজিউমারকে পৌছে দেয়। কেউবা মার্কেট থেকে পন্য সংগ্রহ করে সেটা ভোক্তার নিকট বিক্রি করে থাকে।
- C2C: এ ধরনের টা্রনজেকশান মার্র্কেটপ্লেসগুলোতে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অনলঅইন ওয়েবসাইটট শুধু ট্রাফিক বা ভিসিটর বা কাস্টমার বা ক্রেতা বিক্রেতা এএনে দেন। ভিসিটররাই পন্য একে অফরের কাছে ক্রয় বিক্রয় করেন। কঞ্জিউমার থেকে কঞ্জিউমারদের মধ্যে কেনাকাটা ও লেনদেন হয়ে থাকে।
4.C2B : ভিজিটর যখন কোন মার্কেটপ্লেসে তার সার্ভিস সেল করেন। যেমন এতে একজন সাধারণ কনজিউমার তার পন্য বা সেবাকে মাকের্ট প্লেসে বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নিকট সেল করে থাকে। আর এই কাজটি আজকাল অনলঅইনের মাধ্যমে হরদাম সঙগঠিত হচ্ছে।
এর বাইরে আরো একটি ট্রানজেকশান হয়ে থাকে যদিও আমরা সেটাকে অনেকে হয়তো ই কমার্র আওতায় আনতে চান না। আজকাল সরকারী বিভিন্ন দপ্তার জনগনের বিভিন্ন সেবার জন্য সার্স ফি অনলাইনে গ্রহণ করে থাকেন। কেউ কেউ এটাকে ই গর্ভনসেরে অংশ বলে থাকেন। কখনো কখনো জনগন কিছু সেবার জন্য রাস্ট্রকে ফিস বা মূল্য দিয়ে থাকেন সরকার যখন সেবাটি অনলাইনে জনগনের কাছে সেল করেন। এবং সেটা লাভজনক অথবা অলাভজনক হয়ে থকে তখন আমরা অনায়াসে বলেতে পারি এটা সি টু জি ট্রানজেশান। (C2G)আবার জিটুসি ভিত্তিক কিছু লেনদেন হয়ে থাকতে পারে। সরকার জনগনের কাছ থেকে কোন প্রয়োজনে সেবা বা পন্য নিয়ে তার মূল্য সহ অনলঅইনের যাবতীয় পক্রিয়া সম্প্ন্ন করে। আজকাল দেশে দেশে এই পক্রিয়া ব্যাপক ব্যবহার হচ্চে। তা হলো (G2c)এছড়া বিটুজি আবার জিটিুবিও রয়েছে।
ই কমার্স ইন বাংলাদেশ
২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইকমার্স সাইট সেলবাজার ডট কম যার বর্মান নাম এখনি ডট কম এবং আজকের ডিল ডট কম। ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ইকমার্স সাইট রকমারি ডট ২০১৩ সালে বাংলাদেশে ইকমার্স জগতে তৈরী হয় নতুন দিগন্ত। বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক,ব্যাসিস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ইকমার্স কে জনপ্রিয় করতে শুরু করে নানান কর্মসুচি,মেলা সেমিনার ইত্যাদি। কম্পিউটার জগত নামে ম্যাগাজিন ইকমার্স মেলা করে ঢাকা সহ বাংলাদেশের অনেক অংশে।যাত্রা শুরু করে আরেকটি জনপ্রিয় ইকমার্স সাইট প্রিয়শপ ডট কম। ২৯১৪ সাল ই কমার্র জন্য ইতিহাসের বছর । এই বছরের শেষের দিকে জন্ম নেয় ই কমার্স এসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ । একই বছর এসোসিয়েশান চালূ করে ই কমার্স সেবা কেন্দ্র। এবং একই বছর আরেকটি গেীরবের সাবক্খর রাখতে পারে তারা ই কমার্স বিষয় একটি ব্লগ চালু করেনতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ই কমার্স সম্পর্ জানার সুযোগ।
২০১৪ তে ইকমার্স বেশ জনপ্রিয়,কুরিয়ার সার্ভিস,পেমেন্ট গেটওয়ে সহ ইকমার্সের জন্য দরকারী অনেক ইনফ্রাস্টাকচার ছাড়াই ইকমার্স এগিয়ে যেতে । এ বছরেই আসে যুক্ত হয় মোট চারটি পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানী। ২০১৩ সালে এখানে ক্যাশ অনডেলিভারী সার্স চলিু করে সোনার কুরিয়ার সার্স নামে একটি কুরিয়ার সাভির্স কোম্পানী। আর ২০১৪ সালে ই কুরিয়ার নামে আরোকটি কোম্পানী এবং অরামেকস্ আসায় উদ্যোক্তারা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেন। পেমেন্ট গেটওয়ে কোমব্পানীর মধ্যে রয়েছে ওয়ালেটম্যাক্স, এসএসএল, ইজিপেটওয়ে।
২০১৪ সাল বাংলাদেশের ই কমার্সের ইতিহাসে একটি মাইল ফলক এ বছর অনলাইন শপওনারদের সম্মিলিত প্রয়াসে যাত্রাম শুরু করে ই কমার্স এসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ বা ই ক্যাব। যাত্রার শুরু থেকেই দেশে একটি নতুন কর্মউদ্দীপ্ত ব্যবসায়িক সেক্টর তৈরীতে বহুমখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সংস্থাটি। ফলে দিশেহারা তরুন উদ্যোক্তারা ভরসা ও আত্মশবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে এক নতুন দিনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। বিশেষ করে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে এগিয়ে আসে ই ক্যাব।
তবে ফেইসবুকে বিজনেস শুরু হওয়ার পর পরই এদেশে ই কমার্স বিকশিত হতে থাকে আর এ পিছে সবচে বেশী অবদান রেখেচে মোবাইল ব্যাকিং ব্রান্ড বিকাশ। বর্মানে বিকাশ বিশ্বের সবচে বড় মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রকিতষ্ঠান।
এদেশে ই কমার্স বিকাশের পেছনে আরেকটি ভূমিকা ছিলো সেটা হলো তথ্যপ্রযিুক্তি বিষয়ক ম্যাগজিনগুলোর। মাসিক কম্পিউটার জগত ই ক্যাবের সাথে থেকে নানা উদ্যোগের জোগান দিয়েছে আর নিয়মিত ই কমার্ বিষয়ক লেখা ছেপে সচেতনতা তৈরীর কাজটিও করেছে। এছাড়া কম্পিউটার ভুবন ও কম্পিউটার বিচিত্র বিভিন্ন ফিচার ও কভার স্টোরি প্রকাশ করেছে। এ ব্যাপারে বেশ পিছিয়ে রয়েছে দৈনিক পত্রিকাগুলো। বেশকিছু প্রতিবেদন বিভিন্ন প্রত্রিকায় প্রকাশ পেলেও প্রয়োজনের তুলনায় কম।
সরকারীভাবে এ সময়ের মধ্যে বেশীকিছু ঘোষণা আসছিলো যাতে বিনিয়োগকারী ও ভোক্তারা উভয়ে আশ্বস্থ হয়। ২০১৫ সালে ব্যাপকহারে অনলঅেইনে কেনাকটা শুরুৃ হয়ে । এর মাত্রা বছরের শেষে দিকে দ্বিগুন না হলেও কাছাকিাছি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরো জানতে: পরের যেকোন একটি লেখায় চোখ রাখুন: শিরোনাম: ই কমার্স ইন বাংলাদেশ।
লেখাটি তৈরী কিছু তথ্যের জন্য নির্ভর করেছি।
১. উইকিপিডিয়া
২. ইকমার্স এসোসিয়েশন এর ফে।সিবুক পেইজ।
৩. ই ক্যাব ব্লগ
৫. মাসিক কম্পিউটার জগত
৬. http://www.pchelplinebd.com
13,025 total views, 8 views today