তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ ই-কমার্সের সম্ভাবনা: প্রথমপর্ব
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? অনেকদিন পর ফিরে এলাম ই কমার্স বিষয়ক লেখালেখিতে। আপনারা জানেন সম্প্রতি বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পায়ে হেঁটে ভ্রমন করেছি। তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পাঁয়ে হেটে ৪৬দিনে ভ্রমণকার্য শেষ করলাম। চলতি ২০১৬ সালের ১২ ফ্রেব্রুয়ারী থেকে এ পদযাত্রা বাংলাবান্দা জিরোপয়েন্ট শুরু করে ২৮ মার্চ শাহপরীর দ্বীপ গোলারচর জিরো পয়েন্টে শেষ করলাম।
বাংলাদেশ সরকারের পর্যটন কর্পোরেশন এর প্রেটোনাইজেশান এর কারণে এটা একটা সরকারী প্রোগাম। যেহেতু এটা আমি শখের বশে করেছি সেজন্য এটা আমার ব্যক্তিগতও বলা যায়। যেহেতু www.tour.com.bd নামে একটি কোম্পানী আমাকে স্পন্সর করেছে সেজন্য এটা একটা ট্যুর প্রোগাম। যেহেতু বিভিন্ন সামাজিক স্লোগান ও কার্ক্রযক্রম অন্তভূক্ত ছিলো তাই এটি সামাজিক প্রোগাম। আবার যেহেতু এটা পায়ে হাটা প্রোগামে তাই এটা স্বাস্থ্য সুরক্ষা্র প্রোগ্রাম। এবং যেহেতু শিক্ষিত শ্রোতাদের কাছে ই কমার্স এ পন্য ক্রয়ের কথা বলেছি এবং আমি নিজে ই কমার্স সেক্টরের একজন প্রতিনিধি। সূতরাং এই সফরের সাথে ই কমার্স এর যোগসূত্র আছে। আর বিশেষ করে যখন যে জেলায় যেতাম আমি কবেল ভাবতাম আচ্ছা এখানে ই কমার্স পন্য কি হতে পারে।
পঞ্চগড়: এখানে যেহেতু ভালো চা উৎপাদিত হয়। প্যাকেটজাত চা অনলাইনে বিক্রি করা কি খুব কঠিন হবে আমারতো মনে ঞয়না সূতরাং এখানে চার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনা রয়েছে পঞ্চগড় চিনিকলের ঘনচিনি বা লালচিনির। অনলাইন ব্যবসায়ের সুদিন আসলে গম ভূট্টা সরিষাও অনলাইনে বিক্রি হবে। আর সুন্দরবনের মধূ যদি অনলানে বিক্রি করা যায় তাহলে ঘানিতে ভাঙা খাঁটি সরিষার তেল কি অতিই অবহেলার। এখানকার হস্তশিল্পও বেশ প্রশংসার দাবীদার।
সমতল ভূমির চা বাগান
বর্তমানে তেঁতুলিয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ারিইমিগ্রেশন পক্রিয়া চালু হয়েছে। আমরা জানি ভারতীয় ভিসা পক্রিয়ার বেশীরভাগ কাজই অনলাইনে হয়। যদিও অনলাইনে পেমেন্ট হয়না। এটাও ই কমার্সর অংশ। কেউ যদি কাল থেকে এখানকার হোটেল বোডিং অনলাইনে বুকিং দেয়ার ব্যবসায় শুরু করতে পারে সেটা কিন্তু ই কমার্সের বাইরে নয় মোটেও।
ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাওয়ের কুটির পন্য, দুধ ও দুগ্ধজাতপন্য, বীজ এসব একদিন অনলাইনে বিক্রি হবে। হয়তো সেটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এখানকার লোকেরা প্রচুর পরিমানে বাই সাইকেল ব্যবহার করে। বলা যায় এখানে ঘরে ঘরে সাইকেল। বাই সা্ইকেলের ব্রান্ডগুলোর প্রতি আস্থা বেড়ে গেলে অনলাইন থেকে বাইসাইকেল ক্রয় বিক্রয় মোটেই কোনো ব্যাপার নয়। এখনও ঢাকার ক্রেতারা চাইলে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোকে টার্গেট করে অনলাইনে বাইসাইকেল বিক্রি করতে পারে।
দিনাজপুরে ধান আর আম এরকম একসাথে ফলানোর নজিরও আছে
দিনাজপুর: ধান চালের জন্য দিনাজপুর বিখ্যাত। বিশেষ করে বাঁশমতি, চিনিগুড়া ইত্যাদি দামী চাল অনলাইনে বিক্রি হতে পারে। কোনো ভালো ব্রান্ড যদি ক্রেতাদের আস্থা ধরে রেখে এই কাজ করতে পারে। কারণ এসবের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখানকার আম তুলা ও হস্তলিম্পও একদিন অনলাইনে চলে আসেব। আর দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, কান্তজিও মন্দীর, বিরল বিল, রাম সাগর এসবকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ প্যাকেজতো এখনো বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। সূতরাং আমরাতে বলতে পারি দিনাজপুর ই কমার্স চেইনের মধ্যে চলে এসেছে। মৌসুমে অনেককে গতবার আমলিচু বিক্রি করতেও দেখা গেছে।
রংপুর: রংপুর তামাকের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু আজকাল অনেক কিছুই এখানে চাষ ও উৎপাদন হয়। সেসব একদিন সবার চোখের গোছরে আসলে হয়তো এসবের চাহিদা তৈরী হবে। আর মোস্তফা জব্বর স্যার বলে থাকেন যে একদিন সব ব্যবসাই হবে ই কমার্স মানে ই কমার্স এর বাইরে কোনো ব্যেবসায় থাকবেনা। সেদিন তামাক কি আর বাঁশে বেত কি সবই আকম পন্য হয়ে যাবে।
আর এখনো এখানকার সব্জি অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। হয়তো রংপুরের সব্জি বলে হচ্ছেনা। কিন্তু বেশ কয়েকজন অনলাইন সিব্জি বিক্রেতা রংপুর থেকে অর্গানিক সব্জি সংগ্রহ করে থাকেন। এসব জেলায় কীটনাশক বিহীন সব্জিচাষ ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এটা একটা আশান্বিত হওয়ার মতো বিষয়।
বগুড়া: বগুড়াতো এখই ই কমার্স এর একটা অংশ। বগুড়ার দইয়ের মতো জটিল প্যাকের খাদ্যপন্য অনেকেই অনলাইনে বিক্রি শুরু করেছেন। সূতরাং এখানকার অন্যান্য পন্যের ভবিষ্যতও ভালো বলা যায়। ধান শাকসিব্জি ভ্যট্টার কথা আলাদা বলার কিছু নেই। তবে কৃষি কাজে ব্যবহুত বিভিন্ন পন্য একটা সম্ভাবনার কথা বলে। সাম্প্রতীক সময়ে আবিষ্কৃত রুটি বানানোর মেশিন অনলাইলে বিক্রি হচ্ছে। এটা প্রথম ডিজাইন করেন বগুড়ার এক তরুন। বগুড়ায় প্রচুর এনজিও রয়েছে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান তৈরী করতে িএনজিওগুলো ই কমার্স ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে পারে।
সিরাজগঞ্জ: এখানকার লুঙ্গি গামছা শাড়ি কি অনলাইনে বিক্রির উপযোগী নয়? এই প্রশ্ন সবার কাছে। আজ দেশের সমগ্র ই কমার্স সেক্টর পিছিয়ে আছে বলে এর কদর হচ্ছেনা। সহজে প্যাকিংযোগ্য, অপচনশিীল এমন পন্য অনলাইনে বিক্রি করে কুরিয়ারে পাঠানে অনেক সুবিধাজনক। এ ধরনের পন্যের সম্ভাবনা খুবই উজ্জল। শুধুমাত্র নিশ্চিত করা জরুরী যে ভোক্তার কাছে সঠিক পন্যটি পৌছে দেয়া হচ্ছে।
দুধের তৈরী নানাপন্য ঢাকাবাসির জন্য কেউ চাইলে এখনি অনলাইনে নিবেদন করতে পারেন। হ্যা হয়তো ব্যবসায়টা দাড়াতে সময় লাগবে। যতক্ষন না আরো বেশী বেশী মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা না করবে ততক্ষণ তা হয়তো হবে না। তবে মিস্টি বা খাদ্যপন্য যারা বিপনন করেন তাদের জন্য এটা একটা দিক।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের শাড়ি নিয়ে বেশ কয়েকজন অনলাইনে বেচাকেনা করছেন। কেউ কেউ করবেন ভাবছেন। এসব পন্য সারাদেশে খুব সহজে পাওয়া যায় বলে এখনো অনলাইনে বেচাকেনা জমে ওঠেনি। তবে আমর যদি মানুষের বিশ্বাস অর্জণ করতে পারি তিাহলে এর সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য অবশ্য সবাইকে একসাথে কাজ করার এখনই সময়।
বেশী বেশী ধরনের পন্য অনলঅইনে চলে আসলে সঠিক মান, দাম ও সেবা দিতে পারলে মানুষ একদিন ই কমার্সর দিকে আসবে। এখন প্রশ্ন হলো ই কমার্স উদ্যোক্তারা ভোক্কার আস্থা কতটা অজর্ণ করতে পারেন।
তেুঁতুলিয়া থেকে টেকনাফের পথে ১৮ টি জেলা পড়ে এর মধ্যে জেলাসদর পড়ে ১৫টি। গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ এই তিনটি জেলাকে ঢাকা বলা যায়। তাহলে বাকী থাকে ১২ জেলা। এই ১২ জেলাতে এই কমার্স সমবাবনা নিয়ে আমার দুই পর্বের লেখার প্রথম পর্ব আজ দিলাম। অচীরেই দ্বীতিয় পর্ব আসবে আশা করি।
চলবে—-
ছবি: জাহাঙ্গীর আলম শোভন
7,310 total views, 4 views today