বাংলাদেশে ই - সিগারেট।

ই-সিগারেট: তারুণ্যের আকর্ষণ, নাকি ধ্বংস?

দিন দিন আমরা আধুনিক হচ্ছি, ডিজিটাল হচ্ছি। এই আধুনিকতার ছোঁয়া সব জায়গায় লাগতে শুরু করেছে। তবে সব আধুনিকতাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনে না। কিছু কিছু আধুনিকতা আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংসের পথেও নিয়ে যাচ্ছে। তেমনই একটি ক্ষতিকর জিনিস হলো ই-সিগারেট।
ই-সিগারেট আসার পর প্রচার করা হলো যে, এটি প্রচলিত তামাক তথা নিকোটিনে ভরপুর সিগারেটের একটি নিরাপদ বিকল্প। উপরন্তু এটি প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপানকারীদের ধূমপানের অভ্যাস দূর করার জন্য একটি কার্যকরী প্রযুক্তি হিসেবেও প্রচার করা হলো। তবে যেরকম ভাবা হয়েছিল সেরকম আসলে ঘটল না। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিগারেট বাজারের তিন-চতুর্থাংশ দখল করে নেয় নবাগত ই-সিগারেট। গতানুগতিক সিগারেটের চেয়ে এই নতুন ধরনের সিগারেটের চাহিদাই জনগণের কাছে বাড়তে থাকে। পরিকল্পনানুসারে এর মূল ক্রেতা প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপানকারীদের হওয়ার কথা থাকলেও তা হলো না। উল্টো অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর -কিশোরীরা, যারা কখনো ধূমপানই করেনি, তারা এই সিগারেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। আসলে ই-সিগারেট বিভিন্ন আকার এবং স্বাদ ও গন্ধের পাওয়া যাওয়ায় তা সকলের নিকট অধিক সমাদৃত হয়। তবে এর কুফল যে সাধারণ সিগারেটের তুলনায় কোনো অংশেই কম নয় সেই ব্যাপারটা অনেকেই অগ্রাহ্য করে। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এই ই-সিগারেটের ফলে ১৮ জনের মৃত্যু ঘটে এবং ১,০০০ জনেরও বেশি মানুষ ফুসফুসের মারাত্মক রোগে আক্রান্তু হয়।
ইতোমধ্যে ২০টিরও বেশি দেশে, বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ই-সিগারেটের বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিছু কিছু দেশে তো এই ধরনের সিগারেট কারো মালিকানায় রাখার উপরও দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। যেসব দেশে এই ইলেকট্রনিক সিগারেট নিষিদ্ধ হয়েছে সেসব দেশের মধ্যে থাইল্যান্ড খুব কঠোরভাবে এটি তত্ত্বাবধান করছে। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং নরওয়ে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের উপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ই-সিগারেটের উপর হোয়াইট হাউজ সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কিছুদিন পরই ভারত জরুরি ভিত্তিতে ই-সিগারেটের উৎপাদন, আমদানি এবং বিক্রি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। আমাদের দেশেও এখন ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা সময়ের দাবি।
গ্যাটসের তথ্য সূত্রানুসারে আমাদের দেশে ২০১৭ পর্যন্ত ৬.৪% মানুষ ই-সিগারেট সম্পর্কে জানেন। এর মধ্যে পুরুষ ১০.৭% ও মহিলা ২.৩%। আবার ০.৪% মানুষ জীবনের কোন না কোন সময় ই-সিগারেট গ্রহণ করেছেন। আর বর্তমানে গ্রহণ করছেন ০.২% মানুষ। এই তথ্য থেকেই দেখা যায় যে, দেশে ই-সিগারেট গ্রহণকারীর সংখ্যা একেবারে কম নন। এটি যে দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাবে সেটি বলাই বাহুল্য। ফলে যত দ্রুত সম্ভব আইন করে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে।
কমবয়সীদের মধ্যে ই সিগারেটের ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার পরিণতি হয় ভয়াবহ। কিশোর-কিশোরীরা ই-সিগারেট ব্যবহার করলে সাবালক হতে হতে ধূমপানে অতিরিক্ত অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারে। প্রতি ১০ জনে ৯ জনের মধ্যেই এরকম দেখা যায়। তাছাড়া এগুলো ব্যবহারে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।
ইদানিং অনলাইনে বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটেও অবাধে ই-সিগারেট বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে মানুষের মধ্যে বিশেষ কওে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ই-সিগারটের সহজলভ্যতা অনেক বেশি। মেয়েরাও তারুণ্যের আকর্ষণ থেকে ই-সিগারেট গ্রহণ করছে। এটি তাদের জন্য ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আর তাই যুব সমাজকে ই-সিগারেটের কালো ছোবল থেকে রক্ষা করতে আইনের মাধ্যমে এটির প্রদর্শনী ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করতে হবে।

7,415 total views, 6 views today

Comments

comments