কাস্টমার সার্ভিস ও  ব্যবসায়ে কাস্টমার কেয়ার
জাহাঙ্গীর আলম শোভন

ভালোবাসবো ভাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে। আপনাদের নিশ্চয় হাবিব ওয়াহিদের এই গানটার কথা মনে আছে। আজকাল শুধু ভালোবাসলেই হয়না যতনও করতে হয়। ঠিক কাস্টমারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আজকাল শুধু কাস্টমারকে পন্য বা সেবা দিলে হয়না যতনও করতে হয়। সেটা আপনার সেবা বা পন্যের মাধ্যমে কাস্টমারের যতন। আজকাল বহুবিধ কারণে কাস্টমার কেয়ারের প্রয়োজনীয়তা ও জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এজন্য একটি সৌন্দর্যবর্ধক ক্রিম কোম্পানীও ক্রিমের গায়ে কাস্টমার কেয়াররে নাম্বার লিখে দিয়ে থাকে যাতে তারা কাস্টমারদের সাথে সঠিকভাবে কনটাক্ট এবং কমিওনিকেট করতে পারে এমনকি সেটা পন্য বিক্রি হয়ে যাওয়ার পরও।

 

11133702_10153232436889785_6994131643406200876_n

(ছবি: বেড়াই বাংলাদেশ এর সৌজন্যে)
কাস্টমার কেয়ার বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
১.    আপনি একটি কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে বিক্রির আগে পরে বিভিনন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন । এটা বিক্রয় বৃধ্ধিতে একটা প্রভাব ফেলবে।
২.    পন্য বিক্রিয় পর এর বিভিন্ন বিষয় যেমন পন্যের ব্যবহারবিধি, বিবিধ বা কোন প্রশ্নে আপনি একটা কল সেন্টারের মাধ্যমে গ্রাহকের জিজ্ঞাসার জবাব দিয়ে সেবা দিলেন এতে সমস্যা  মেটালেন।
৩.    আপনি২/১ বছরের ওয়ারেন্টি গ্যারান্টি দিয়ে পন্য বিক্রি করলেন। এবং শর্তমত সার্ভিসিং বা রিফ্রেসিং সুবিধা দিলেন।
একসময় মনে করা হতো পন্য বিক্রি করার পর আর বিক্রেতার কোন দায়দায়িত্ব নেই। কিন্তু সে ভাবনা এবং আইডিয়া বর্তমানে বদলে গেছে । আসুন এ বিষয়ে আলোচনা করা যাক-
১.    কাস্টমার শুধু পন্য কিনে না সার্ভিসটাও কিনে
বর্তমান যুগে এই ধারণাটা পরিষ্কার করা হয়েছে যে কাস্টমার শুধু পন্য কেনে না সার্ভিসটাও কেনে। আপনি বাজার থেকে ২টাকা দিয়ে একটা মোমবাতি কিনলেন এর সাথে আপনি মোমবাতির সার্ভিসটাও কিনলেন। কারণ বাসায় আনার পর এটি যদি না জ্বলে তাহলে আপনি হয়তো এটােেক ফেরত দিতে চাইবেন অথবা এটা যদি ভালো না জ্বলে আপনি হয়তো দ্বিতীয়বার আর ওই পন্যটি কিনবেন না। এমনও হতে পারে আপনি আর ওই দোকানেই কোনো কিছু কিনতে যাবেন না। আপনি ভাববেন কেন দোকানী আপনাকে খারাপ পন্য দিলো!। বা ওই দোকানী খারাপ পন্য বিক্রি করে বলে এধরনের একটা ধারণা আপনার মধ্যে তৈরী হবে। আপনি যদি এক কাপ চাও পান করেন কোন টি স্টলে আপনি আশা করবেন চা‘টা খাওয়ার পর আপনার মধ্যে একটা তৃপ্তির পরশ বয়ে যাবে কিন্তু বাস্তবে তা যদি না হয় তাহলে আপনি সেটা পরিহার করবেন। এজন্য পন্য এবং সেবা একই সাথে গাঁথা সেজন্যই আপনাকে কাস্টমার কেয়ারের সাহায্য নিতে হতে পারে।
২.    কাস্টমারের সাথে কানেকটেড থাকুন
আপনি অবশ্যই কাস্টমারের সাথে কানেকটেড থাকতে চাইবেন। আপনার ব্যবসার ভালোর জন্য। কারণ আপনার প্রোডাক্টস একবার বিক্রি করেই শেষ নয়। আপনি আপনার পন্য আরো বেশী এবং বার বার বিক্রি করতে চাইবেন। আর সেজন্যই কাস্টমারের সাথে আপনার কানেকটিভিটি প্রয়োজন। বিক্রয়োত্তর পন্যসেবা একটা ভালো উপায় যা আপনাকে কাস্টমারের সাথে সংযুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। আর এই সংযুক্তি হবে আপনার ব্যবসা বিকশিত হওয়ার একটি উপায়।
৩.    কাস্টমার সন্তুষ্টি ও বিশ্বাস অর্জন
আপনার পন্য  বিক্রি হওয়ার পর আপনি গ্রাহককে বিকয়োত্তর সেবা দেবেন তাতে আপনার প্রতি গ্রাহকের আস্থা বাড়বে। গ্রাহক আবারো আপনার পন্য ক্রয় করবে। যিনি এ যাবত আপনার কোন পন্য ক্রয় করেনি তিনিও প্রথমবার পন্য কিনতে ভরসা পাবে। কাস্টমার যদি জানতে পারে আপনার পন্যের বিক্রয়োত্তর সেবা রয়েছে। এবং পন্যের সু্িধা অসুবিধা নিয়ে ফোনে বা সরাসরি কথা বলার এবং সমস্যা সমাধানের সুযোগ আছে  Íাহলে বিক্রয়োত্তর সমস্যার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হতে পারে এবং পন্যটি বিনতে উদ্ভুদ্ধ হতে পারে।
৪.    এক ধরনের ব্রান্ডিং ও মার্কেটিং
কাস্টমার কেয়াররের মাধ্যমে একধরনের মার্কেটিং ও ব্রান্ডিং হয়ে থাকে । যেমন আপনি পন্য ক্রয়ের আগে বা পরে যদি কাস্টমারের সাথে সারাসরি বা ফোনে কথা বলেন কাস্টমার আপনার পন্য সম্পর্কে যেমনি ইনফরমেশন জানবে তেমনি আপনার আত্মবিশ্বাস ও সহযোগি মনোভাব কাস্টমারকে পন্যের ব্যাপারে আশ্বস্ত করবে এবং কাস্টমার এতে পন্য টি ব্যবহারে প্রলুব্দ হবে। আর কাস্টমার বিভিন্ন প্রশ্নে উত্তররের মাধ্যমে পন্যটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেলো। যা আসলে বিজ্ঞাপন বা বিলবোর্ডে লিখা সম্ভব হয়নি।
৫.    পন্যের বাজার তৈরী করা
অনেকসময় নতুন ধরনের পন্য বা সেবা বাজারে আসলে কাস্টমার পন্য এবং তার ব্যবহার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেনা । এসমস্ত কেন্ত্র একটি ফোন সার্ভিস বা তথ্য কেন্দ্র কাস্টমারের কিউরিসিটি দূর করতে পারে এবয়ং পন্যটির ব্যবহার ও উপকার সম্পর্কে ভোক্তা সাধারণকে সচেতন করে পন্যটির বাজার তৈরী করতে সাহায্য করে ।

৬.    প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এগিয়ে থাকে:
ছোট ছোট উদ্যোক্তগণ যারা পন্য কিনে বিক্রি করেন। তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় সবাই প্রাই একই পন্য বাজারে এনে থাকেন । এখন দেখা গেলো সবার পন্যের মান এক এবং দামও প্রায় এক। এই অবস্থায় প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অন্যদের চেয়ে আপনি এগিয়ে থাকবেন যদি আপনার কাস্টমসার সার্ভিস থাকে।
৭.  ভুলভ্রান্তি দূর
অনেক সময় দেখা যায় আপনার প্রতিযোগি বাজারে আপনার সাথে না পেরে আপনার পন্য সম্পর্কে একটা বদনাম বা রিউমার ছড়িয়ে দিলো। আর কিছু কাস্টমার এতে করে বিভ্রান্ত হয়ে গেলো। কিন্তু এ অবস্থায় যদি আপনার একটা কাস্টমার কেয়ার, কাস্টমার সার্ভিস, কল সেন্টার থািকে তাহলে ক্রেতারা অনায়াসে ফোন করে তাদের সন্দেহ দূর করতে পারে।
৭.    স্থায়ী বিশ্বাস
কোনো কোম্পানীর সার্ভিস সেন্টার বা কাস্টমার কেয়ার থাকলে ক্রেতারা মনে করে এই কোম্পানী স্থায়ীভাবে ব্যবসা করার জন্য নেমেছে সূতরাং এদেরকে সহজে বিশ্বাস করা যায়।

ই কমার্স ও কাস্টমার কেয়ার
ই কমার্স ব্যবসায়ীরা প্রথমত কাস্টমারদের অর্ডার নেয়ার জন্য এবং তাদের ডেলিভারী আপডেট ও অনল্যান্য তথ্য জানার সুবিধার্থে একটি হটলাইন বা কল সেন্টার রাখতে পারেন।
দ্বিতীয়ত: পন্যটি বিক্রয় করার পর কাস্টমারদের কাছ থেকে ফোন করে জেনে নিতে পারেন সুবিধা অসুবিধা। এবং ভবিষ্যতে তিনি কি পন্যটি কিনতে চান? বা তিনি কতটা সন্তুুষ্ট বা অসন্তুষ্ট হয়েছেন। যদিও এটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার কিন্তু ছোট এই কাজটা করে আপনি কাস্টমারের আস্থাভাজন হতে পারেন এবং কস্টমারের অনেক নিকটে চলে যেতে পারেন।
তৃতীয়ত: ফোনে একটি লাইভ সার্ভিস রাখতে পারেন। যাতে করে কাস্টমার পন্যটি ক্রয় করার পর তার মনে কোনো  প্রশ্ন জাগলে বা ব্যবহার পক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে সহজে একটি ফোন কলের মাধমে জানতে পারে।
চতুর্থত: যদি ইলেট্রনিকস পন্য বা গেজেট হয় তাহলে উৎপাদনকারীর পলিসি অনুযায়ী অথবা আপনি নিজে পন্যটি সম্পর্কে বিক্রোয়ত্তর সেবার ব্যবস্থা রাখতে পারেন। এতে কাস্টমার আপনার পন্য কিনতে ভরসা পাবে।
পঞ্চমত: এছাড়া আরো একটি সার্ভিস আপনি ব্যবসায়িক কৌশল হিসেবে নিতে পারেন। গ্রাহকের জন্য সু্িবধা থাকেবে যে, গ্রাহক এই বা দুই বছর ব্যবহার করার পর যদি পন্য টি বিক্রয় করতে চান তাহলে তাহলে আপনার ফার্ম সেটি আবার কিনে নেবে। অবশ্য ৬মাস একবছর পর পন্যের অবস্থার উপর দাম নির্ভর করবে। পরে এই পন্য আপনি আরেকটি বিভাগের মাধ্যমে পুরনো পন্য হিসেবে বিক্রি করতে পারেন। বা স্টক লটে বিক্রি করে দিতে পারেন। আপনার লাভটা হলো এই অফার দিয়ে আপনার পন্যের বিক্রি বাড়ানো।
বিক্রয়োত্তর সেবা
ইলেকট্রনিক্স পন্য ও গেজেট এর জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। সূতরাং এই সেবাটি রাখুন। এবং শর্তে সেবা দিন। আপনার নাম ও বিজনেস প্রতিষ্ঠা পেলে ব্যবসা তখনো করতে পারবেন।

আসুন আমরা আমাদের ধারণাগুলো বদলে নিই। বর্তমান বাজার ব্যবস্তা এবং গ্রাহকের চাহিদার আলোকে আমরা আমাদের ব্যবসায়িক কৌশল ঠিক করি।

13,518 total views, 2 views today

Comments

comments