১। প্রথমেই আপনাকে সিদ্বান্ত নিতে হবে যে, কোন পণ্য বা সেবা অফার করবেন। সময় নিন,অত্তাধিক তাড়াহুড়া করবেন না। ট্রেন্ড জানতে দেখুন অন্য লোকেরা কি বিক্রি করছে । কাউকে অনুসরণ না করাই ভাল। আপনি ক্যালেন্ডার চেক করতে ভুলে গিয়ে শীতের শেষে কম্বল বিক্রি শুরু করলেন কারন আপনি দেখেছিলেন কেউ একজন গত সপ্তাহে কম্বল খুব ভাল বিক্রি করছিলো ।

২। পণ্য বা সেবাগুলোর প্রাপ্তিস্থান খোঁজ করুন। বাজার নিয়ে একটি গবেষণা করুন যেমনঃ অন্য অনলাইন বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানতে পারেন তাদের পণ্য মুল্য, তাদের পেমেন্ট পলিসি, স্টোর পলিসি, ডেলিভারি পলিসি এবং অন্যান্য । এটা নিশ্চিত করার জন্য যে, আপনি যেন কোন পণ্য ২০০ টাকা প্রতি পিস বিক্রি করার পরিকল্পনা না করেন যা একজন বিদ্যমান বিক্রেতা ইতোমধ্যেই প্রতি পিস ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন। আপনাকে গণ্ডির বাইরে চিন্তা করতে হবে। ভাববেন না অনলাইন বিক্রয় মানে ইউ এস বি মেমরি স্টিক, চকচকে চাবির রিং , ওয়ালেট অথবা এলইডি টর্চ লাইট বিক্রি। আপনি যেকোন কিছু এবং প্রায় সব কিছুই বিক্রি করতে পারেন,শুধুমাত্র সেগুলোকে আইনসম্মত হতে হবে।

৩। সিদ্বান্ত নিন আপনি কিভাবে লজিস্টিক সাপোর্টসমূহ হ্যান্ডেল করবেন। আপনি ইন্টারনেটের অদ্যপান্ত জানেন , কিন্তু আপনি যখন কোন বাস্তবিক পণ্য বিক্রি শুরু করবেন , আপনাকে লজিক্টিজ সাপোর্ট নিয়ে ও কাজ করতে হবে । আপনি কি আইটেমসমূহ মজুদ করতে যাচ্ছেন ? যদি তা না হয় তবে আপনি যে অইটেমগুলো সংগ্রহ করতে চাচ্ছেন, সেগুলো সংগ্রহ করতে কত সময় লাগবে , আপনি কিভাবে তাদের মুল্য পরিশোধ করতে যাচ্ছেন, আপনি কিভাবে ডেলিভারির আয়োজন করতে যাচ্ছেন ।

৪। একটা পরিকল্পনা করুন কোথা থেকে স্টোরটি শুরু করবেন যেমনঃ ফেসবুক, বিদ্যমান মার্কেটপ্লেস (যেমনঃ ওএলএক্স, এখানেই ডট কম ইত্যাদি ) অথবা আপনার নিজের ওয়েব সাইট । যদি আপনি দীর্ঘ মেয়াদে এই সেক্টরে থাকতে চান, সেক্ষেত্রে দয়া করে ভাববেন না একটি ফেসবুক স্টোর দিয়ে অথবা ওএলএক্সে বিক্রি করে আপনি সেটা পারবেন। আপনার একটি নিজের ওয়েব সাইট থাকতে হবে যেখানে আপনার পূর্ণ নিয়ন্ত্রন থাকবে।

৫। খুজে বের করুন, কিভাবে আপনি স্টোরটি খুলতে যাচ্ছেন, কে আপনার হয়ে কাজটি করে দিবে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যেগুলো আপনাকে মনে রাখতে হবে । যেমনঃ স্টোরের ডিজাইন ও লেআঊট, ইউজার এক্সপেরিয়ান্স ইত্যাদি।

৬। বুলেট পয়েন্ট দিয়ে আপনার স্টোরের টার্মস এন্ড কন্ডিশনগুলো লিখুন। তাদেরকে বিক্রয়, সরবরাহ এবং বিক্রয় পরবর্তী ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে ভাগ করুন। সব বিষয়ে বিস্তারিত থাকলে সেগুলো ,আপনার ক্রেতাদেরকে এবং আপনাকে বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বিরত রাখবে। অসাধারন কাস্টমার সার্ভিস দিতে চেষ্টা করুন। সকল জানালাই খোলা রাখুন। তাদেরকে ফোন করতে, চ্যাট করতে, মেসেজ পাঠাতে, ইমেইল করতে, এবং এমনকি সরাসরি এসে পণ্য সংগ্রহ করার সুযোগ দিন। কয়েক বছর আগের টেলিকম শিল্পের কাস্টমার সার্ভিসের কথা মনে করে দেখুন । তারা প্রচুর বিনিয়োগ করেছে ভাল কাস্টমার সার্ভিস প্রদান করতে। এখন তারা সবাই টাকা বানাচ্ছে সেই একই জিনিস করে !

৭। ঠিক করুন কিভাবে প্রতিদিনের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। স্টোরের কারিগরি দিকগুলো শিখতে চেষ্টা করুন যেন সেগুলো আপনাকে অনেক সাহায্য করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ আপনার ওয়েবসাইটে চ্যাট অপসান থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনার ব্রাউজারে সে উইন্ডোটি খোলা রাখুন। সেখানে হয়ত একজন দ্বিধান্বিত ক্রেতা থাকতে পারে যিনি আপনার স্টোর থেকে তার স্ত্রীর জন্য একটি ব্রেসলেট কিনতে চাচ্ছেন কিন্তু তিনি সাইজ সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়ায় কারো সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন। আপনি সৌভাগ্যবান। আপনি হয়ত মাজরাতে ক্রেতার জিজ্ঞাসার জবাব দিয়ে একটি সেল পেতে পারেন !

৮। এই পর্যায়ে একটি বাজেট তৈরি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাজেটে করা আপনার ভুলগুলোর জন্য একটি পূর্ব ব্যাবস্থা ঠিক করে রাখতে পারেন যেমনঃ প্রথমবার করতে গিয়ে আপনি হয়ত ভুল ব্যায় বা খরচের হিসাব করতে পারেন।
যেসব কারনে আপনারকে একটি অনলাইন স্টোর খোলার সময় ইতিবাচক থাকতে হবে;

অনেক কারন রয়েছে তাদের কয়েকটিঃ

১। লোকেরা নতুন কিছু ট্রাই করতে পছন্দ করে, তাই চারপাশে প্রচুর লোকজন রয়েছে যারা আপনার স্টোর থেকে তাদের পরবর্তী অন্ডারওয়ারটি ক্রয় করতে চাইবে।

২। অধিকাংশ লোকের কাছে অনলাইনে কেনাকাটা করা সুবিধাজনক,তাই ভাববেন না যে , আপনার সরকারি চাকুরি করা প্রতিবেশীই শুধু আপনার এখানে আসবে। অনেক লোক আছে যারা তাদের প্রতিদিনের জীবনে খুব কমই সময় পায় এক জোড়া মোজা কেনার জন্য। ভাল কিছু মোজা, ভাল দামে বিক্রি করে আপনি টাকা বানানোর সুযোগ পেতে পারেন।

৩। এটা সস্তায় কাজ করে। হ্যা, অনলাইনে জিনিসপত্র সস্তা। এর পিছনে দুটো কারন। প্রথমটি হল, বাস্তবিক স্টোরের চেয়ে একটি ভার্চুয়াল স্টোর চালানোর খরচ অনেক কম, কেননা এরজন্য কোন দোকান ভাড়া দিতে হয় না বা কোন ইউটিলিটি বিল দিতে হয় না। আপনাকে দামি আসবাবের জন্য খরচ করতে হবে না, অথবা রং করা বা সাজানোর জন্য ব্যয় করতে হবে না, আপনার সাইটকে সুন্দর দেখাতে যেসব প্লাগিন আপনি কিনবেন তার খরচ এসব খরচের ভগ্নাংশ মাত্র। আপনার ভাল লাগার মত কিছু অসাধারন প্লাগিন পুরোপুরি ফ্রিতে পাবেন! দ্বিতীয়টিঃ অনলাইন স্টোরগুলোকে প্রতিযোগিতামুলক হতে হয়, এবং বিক্রেতারা প্রতিযোগিতামুলক হলে দাম কমে আসে। এখন একজন ক্রেতা শুধুমাত্র তার ব্রাউজারে আরেকটি উইন্ডো খুলেই আপনার প্রতিযোগিদেরদের সাথে আপনার পণ্যের দামের তুলনা করতে পারে। আপনার পণ্য ব্যয়বহুল হলে আপনি সেল হারাবেন। অনলাইনে পণ্য কেনা ক্রেতাদের জন্যও সস্তা । একটি পণ্যের জন্য এক বা একাধিক মার্কেটে যেতে টাকা ও সময় দুই ব্যয় হয়। পণ্য সরবরাহ ব্যয় খুবই সামান্যই বলা চলে যদি আপনি শুধুমাত্র এক দিকের সিএনজি ভাড়ার সাথে ও তুলনা করেন।

৪। অনলাইন স্টোর আপনাকে দিবে পণ্য বা সেবা পছন্দ করে নেবার বিস্তৃত সুযোগ। উদাহরণ স্বরূপ আপনি যদি ড্রয়িং এ ভাল হন এবং বর্তমানে আপনার যদি ভাল কোন চাকুরি না থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি অনলাইনে বাচ্চাদের আর্ট শিখানোর বিনিময়ে কিছু অর্থ আয় করতে পারেন। আপনি কোন মাসিক বন্দবস্ত ছাড়াই বাড়ি বাড়ি আপনার আর্ট ক্লাস চালাতে পারেন। বাবা মায়েরা শুক্রবার বিকাল বেলা যখন হয়ত মুভি দেখতে যেতে চায়, তখন তাদের বাচ্চার জন্য আপনার সেবা বুক করতে পারে। শিশু দেখাশোনা সেবা দিয়ে ও আপনি আয় করতে পারেন। অন্য একটি বিষয় যা আমরা সবাই জানি যে, দেশের অন্য প্রান্তে আমরা কোন এলাকার স্থানীয় পণ্য বিক্রয় করতে পারি যা আমরা কোন বাস্তবিক দোকান দিয়ে করতে পারি না।
কিভাবে আমরা একটি সঠিক রিসার্চ করতে পারিঃ

বেশ,উত্তর দেয়ার জন্য এটা একটা কৌশলি প্রশ্ন । এটি আপনার ভিন্ন ভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এটি ভিন্ন হবে , আপনি কিভাবে চিন্তা করছেন তার উপর ও নির্ভর করে । আপনি আপনার হয়ে কাজ করে দেয়াব জন্য লোক ভাড়া করতে পারেন, ভাল হয় আপনি নিজেই যদি সেটা করেন। আপনি টিভি দেখার সময় ও কিছু গবেষণা করতে পারেন, কিছু প্রশ্নের উত্তর পেতে আপনাকে বাহিরে যেতেই হবে।

অপ্রচলিত কোন কিছু বিক্রির কোন সুযোগ রয়েছে কি ?

আপনি নিজের সৌভাগ্য গড়তে বিশাল কোন নতুন ধারনা নিয়ে আসতে পারেন। দয়া করে মনে রাখবেন যে পণ্য বা সেবা আপনি বিক্রি করতে চাচ্ছেন তা যেন আইনসম্মত হ্য়। কোন বয়সের সীমাবব্দতা রয়েছে এমন কিছু (যেমন ছুরি, এলকোহল) বিক্রি করবেন না। এর ফলাফল মারাত্তক হতে পারে। যা আমি আগেই বলেছি অনলাইন সেল এখন আর ইউ এস বি স্টিক, বা লেদার ওয়ালেট বিক্রির মদ্যে সীমাবব্দ নেই। আপনি বিক্রি করতে পারেন মৌসুমি পণ্য (যেমন শীতের সবজী) উপলক্ষ পণ্য, মুদি পণ্য এবং বিভিন্ন সেবাসমূহ । আপনি একটি বিদ্যমান বাস্তবিক স্টোরকে ও অনলাইনে স্টোর খুলতে সহায়তা করতে পারেন।
আরো কিছু জিনিসঃ

কার্যক্রম শুরু করার পূর্ব পযন্ত আপনি আপনার স্টাইলের সাথে তাল মিলিয়ে সব কিছু করতে থাকুন কিন্তু আপনাকে প্রফেশনাল হয়ে উঠতে হবে তখন থেকেই। মনে রাখবেন আপনি এখানে প্রতিদিনই নতুন জিনিস শিখবেন এবং বিস্মিত হবেন।
অনেক বিষয়ই আপানাকে স্মরণ রাখতে হবে । বিক্রয় পরবর্তী কার্যক্রম, কাস্টমার সার্ভিস, কাস্টমার ফিডব্যাক ইত্যাদি হল তাদের মধ্যে কয়েকটি। আশা করছি , আমি শীগ্রই তাদের নিয়ে লিখব। আপনাদের যদি কোন বিষয়ে প্রশ্ন থাকে তবে আমাকে জানাতে পারেন।

নোটঃ এই লেখাটি হাসান ভাইয়ের একটি লেখার অনুবাদ। মূল লেখাটির লিঙ্কঃ

8,975 total views, 4 views today

Comments

comments

Your email address will not be published.