ই কমার্স মার্কেটিং: অন্যরকম প্রমোশন প্লান
জাহাঙ্গীর আলম শোভন

যেকোনো ব্যবসায় ঝুঁকি রয়েছে। ঝুঁকি রয়েছে ব্যবসায় পন্য কেনা বেচা ও বা অন্যকোনো কাজেও। প্রতিটি কাজে ভিন্ন ভিন্ন রকমের ঝুঁিক রয়েছে।  মার্কেটিং এবং বিপননের ঝুঁকিটা একটু বেশী। সত্যিকার অর্থেই চ্যালিঞ্জিংতো বটেই। যেমন আপনি যদি কোনো ভুল পন্য কেনেন, সেটার যদি বাজারে চাহিদা ভালো না থাকে। তাহলে আপনি হয়তো কমদামে বিক্রি কওে  কিছু টাকা তুলতে পারবেন। একজন অদক্ষ কর্মী নিয়োগ দিয়ে বুঝতে পারলেন তিনি শুধু কথায় পারদর্শী কাজে নয় তখন তাকে অন্য কাজে লাগাতে পারবেন।  আপনি যদি বিপনন বা মার্কেটিং এর কাজে ভুল সিদ্ধান্ত নেন তাহলে আর তার কোন রিকভার পাবেন না। যেমন ধরুন আপনি ভুল জায়গায় এক লাখ টাকা খরচ করে একটা বিলবোর্ড লাগালেন। লাগানোর পর বুঝলেন কি ভুল করেছেন! এখন আপনি আর এই ১ লাখ টাকার কোনো রিটার্ন পাবেন না। তাই মার্কেটিং বা বিজ্ঞাপন প্রচার প্রচারনার খরচটা সত্যিকার অর্থে স্পর্শকাতর বটে।
তবুও আপনারা নতুন নতুন মার্কেটিং আইডিয়া খোঁজেন, কারণ সেটা আপনাদের দরকার হয়, ব্যবসায় যখন নেমে পড়েছেন তখনতো প্রচারনা করতেই হবে। এখন নতুন মার্কেটিং আইডিয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হলো আমি একটা আইডিয়া দিলাম সেটা উদ্যোক্তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তখন ভাই আমাকে দোষটা দেবেন না। আমি কেবল আনাকে পথ দেখাতে পারি, গন্তব্যে পৌছে দিতে পারিনা। আবার ্এমনও হতে পারে ‘‘আইডিয়াটা সত্যিই খুব সুন্দর, মাগার পাবলিক তা বুঝবার পারলোনা’’, অথবা আদতেই সেটা একটা পঁচা আইডিয়া ছিলা। তাই নতুন কিছু ব্যবহার করতে সচেতন থাকুন । আজ আপনাদের  সামনে এরকম নতুন কিছু শেয়ার করছি।

digital-fine-art-photography-by-luis-beltrn-1381191281_b
১. রেগুলার কাস্টমার থিয়রি: সর্ম্পকের বন্ধনে
এটা আসলে সেই অর্থে নতুন নয়। যেহেতু আমার কোনো লেখায় এটি আগে আসেনি সেজন্য নতুন বলছি। আপনারা দেখে থোকেন যে বিভিন্ন সুপারশপে কাস্টমার দের মেম্বারশীফ দেয়া হয়। কার্ডেও  মাধ্যমে হিসেব রেখে পন্যেও  দাম অনুসারে পয়েন্ট দেয়া হয়। ১০০ বা ১০০০ পয়েন্ট হয়ে গেলে আপনি পয়েন্ট ভাং্গিয়ে সেই সপ থেকে কেনাকাটা করতে পারেন। আপনারা যারা অনলাইন ব্যবসায় করেন তাদের  জন্য এটা খুব জটিল পক্রিয়া নয়। বিশেষ করে বড়ো বড়ো অনেক অনলাইন শপে এই সুবিধা রয়েছে। একে আরো সহজ করার জন্য আপনার কোনো একটি পন্য কিনলেই আপনি তাকে আপনার কাস্টমার ক্লাবের মেম্বার বানাতে পারেন। পরে সেই ওই ধরনের কোনো পন্য আসলে তাকে ফোন, এসএমএস মেইল করে জানাতে পারেন। অথাব তা জন্য ৫% ১০% ছাড়ও রাখতে পারেন। আপনি যদি বিশাল একটা কাস্টমার কমিউনিটি গড়ে তুলতে চান তাহলে কাল থেকে প্রমোশন করুন যে আপনার শপ থেকে একটি পন্য কিনলেই সে আপনার কাস্টমার ক্লাবের মেম্বার। আর মেম্বারদের  জন্য রয়েছে ১০% ছাড়, বছর শেষে ১০ জনের পিকনিক পাটি, প্রতি মাসে একজন ভাগ্যবানের জন্য লটারীর মাধ্যমে পুরস্কার। তবে প্রথমপন্যটি কেনার পর। টার্গেট রাখুন আপনি এক লাখ রিচ করবেন। পরে এই একলাখ কাস্টমারকে খুশি করে নিয়মিত সেবা দিন।

২. বি ফর বি মার্কেটিং: আমরা আমরাইতো

আপনি একটি পন্য আপনার শপ থেকে বিক্রি করে থাকেন, আপনার পরিচিত ও বিশ্বস্থ একজন শপহোল্ডার তার অন্য ধরনের পন্য বিক্রি করে থাকেন। এক্ষেত্রে তার পন্যটি আপনি বিক্রির কাজে সহযোগিতা করলেন আর আপনার পন্য তিনি বিক্রি করলেন। চাইলে আপনার সাইটে আপনি তার লিংকটাও শুধু দিতে পারেন। আর তার সাইটে থাকবে আপনার লিংক। আবার এভাবেও হতে পারে- আপনার সাইটে তার পন্য, তার সাইটে আপনার পন্য শো করলেন এতে গ্রাহক আপনার কাছ থেকেই পন্যটা কিনলো কিন্তু ডেলিভারীটা দিলো আপনার বন্ধুশপ। অথবা বন্ধুশপ থেকে আপনার একটা পন্য কেউ কিনলো আর ডেলিভারী আপনি দিলেন। অথবা একধাপ এগিয়ে তার ২/৪টা পন্যেও  স্টক আপনার কাছে আার আপনার ২/৪টা পন্যের স্টক তার কাছে থাকতেই পারে॥  এক্ষেত্রে আপনার এসোসিয়েমন এর সুবিধা নিতে পারেন। তবে নিজেদেও  মধ্যে যেন লেনেেদন নিয়ে কোনো সমস্যা না হয় এটা খেয়াল রাখবনে। এর ফলে গ্রাহকের সার্ভিসের কোনো অসুবিধা যেন না হয়। তাহলে গ্রাহক আপনাদেও  দুজনের সম্পর্কেই খারাপ ধারনা করবে। আর দুজনের ব্যবসাই লাটে উঠবে। তখন ভাই এই বাজে আইডিয়ার জন্য জাহাঙ্গীর আলম শোভনকে বকা দিবেন না যেন।

৩. স্পেশাল কেয়ার: শুধু আপনার জন্য
আমরা যখন দোকানে যাই, দোকানী প্রায়শ একটা কথা বলে থাকে ‘‘এটার দামতো বারোশ টাকা, আপনার জন্য নয়শ টাকা’’। এটা আমাদেও দেশের স্টাইল। আর বিদেশে বলে এটার দামতো ৩০ ডলার আজকের জন্য ১৮ ডলার। আমরা কিন্তু পামটা বুঝতে পারি। যে দোকানী গুল মারছে তাও ধরতে পারি। আমি তার মামাখালু নয়যে আমার জন্য সে বিশাল ছাড় দেবে। আর আজ এমন কোনো দিন নয়যে আজ সে লস দিয়ে মাল বেচবে। মজার ব্যাপার হলো এটা বোঝার পরও আমরা কনভিন্স হই । আর পন্যটিা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কিনি। এবং এই কৌশলটা কার্যকর বলে এটা খুব ভালোভাবে টিকে আছে। ঠিক এই মুহুর্তে কত জায়গায় কতজনযে এই কৌশলটা ফলো করছে। আল্লাহই জানে!
অনলাইন শপে আপনি এধরনের অফার দিতে পারেন। তবে একটু অন্যভাবে। যেমন বলতে পারেন যেহেতু আপনি আমাদেও  সাইট ভিজিট করেছেন সেহেতু আপনার জন্য বিশেষ অফার, যেহেতু আপনি আগে একটা পন্য কিনেছেন, যেহেতু আপনি রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এভাবে একটি উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে ছাড় দিন তাহলে সেটা গ্রাহকের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হবে।

৪. সচেতনতা ও ব্যবহার বাড়াতে: সকলের তরে সকলে আমরা
এটা পরোক্ষভাবে বিপনন এর একটি পক্রিয়া। জনসার্থে আপনি এটা করতেই পারেন। লাইফবয় হ্যান্ডওয়াশ বাজারে রিলিজ হওয়ার পরে ইউনিলিভার হাত ধোয়ানোর জন্য জনস্বার্তে কতযে কাজ করছে। বলুনতো এটা বের হওয়ার আগে কি মানুষের হাত ধোয়ার দরকার হয়নি? তারা প্রথমদিকে শুধু হাত ধোয়ার প্রচারনা চালায় কারণ মানুষ হাত ধোয়া বাড়ালেতো কিছু মানুষ তাদেও  পন্য দিয়ে হাত ধোবেই। আপনি যদি দেশীয় পন্য বিক্রি করেন তাহলে প্রথমদিকে দেশীয় পন্য ব্যবহারের সুফল নিয়ে বা এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রচার প্রচারনা চালাতে পারেন। আপনি যদি মধূ বিক্রি করেন, মধূর গুনাগুন প্রচার করুন,  কিকি কাজে লাগে তা নিয়ে প্রচারনা চালান,  আপনি যদি শুটকি বিক্রি করেন। আমিষের অভাবে মানুষের কিকি সমস্যা হতে পারে আর মাছে ফরমালিনে কিকি রোগ ছড়ায় এসব জানিয়ে শুটকি খাওয়ার পরামর্শ দিতে থাকুন।

৫. পন্যের গায়ে প্রমোশন: প্রচার হবে অটোমোশন
কলকাতায় বাজার কলকতা নামে একটা সুপার শপ আছে। এখান থেকে ওদের শপিং ব্যাগ কেনা যায় ৩ টাকা ৫ টাকা। আপনি এমন কিছু পন্য বিক্রি করতে পারেন যেগুলোতে নাম লেখা থাকে এবং তাতে নামটা সহজে ছড়িয়ে যায়। যেমন ধরুন ঘর সাজানোর বেলুন, টি শার্ট, ব্যাগ, শপিং ব্যাগ, খাতা, স্কুল ব্যাগ ছাতা ইত্যাদি।

৬. শপিং সেন্টার এজেন্ট: দেশজুড়ে নেটওয়ার্ক
হ্যাঁ এটা শপিং সেন্টার এর জন্য নতুন অপশন। দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় আপনি বিশেষকওে  কায়েকটা মার্কেটে ইন্টারনেটসহ  কম্পিউটার বা ল্যাপটপ বসাতে পারেন। যেখানে লেখা থাকবে এই কম্পিউটার থেকে অর্ডার দিয়ে পন্য ক্রয় করলে অমুক শপের সকল পন্যে ১৫ ছাড়। বা কোনো গিফট। এতে দুটো সুবিধা একটা হলো আপনি বিক্রিটা একটু বাড়ালেন আর অন্য সুবিধা হলো আপনি সে মার্কেটে বসুন্ধরা বা যমুনা আগত ক্রেতাদেও  মাঝে আপনার সুনাম ছড়িয়ে দিলেন।
আর গ্রামে গঞ্জে যেখানে ইন্টারনেটের সার্ভিস দেয়া হয়। দোকান বা ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র তাদেরকে আপনার এজেন্ট বানিয়ে এভাবে সেবা দিতে পারেন। এখান থেকে পন্য অর্ডার করলে ছাড়। তবে এখানে যার দোকান তাকে কিন্তু কিছু কমিশন দিতে হবে।

৭. কম্যূনিটি বিল্ড আপ: পর্দার অন্তরালে
এটা এক ধরনের ইন্টেলেকচুয়াল মার্কেটিং বলতে পারেন।  মনে করেন,  আপনি আচার বিক্রি করেন। এখন আপনার ওয়েবসাইট আছে, আছে ফেইজবুক ও পিন্টারেস্ট ফেইজ। তা স্বত্বেও আপনি ‘‘মজার আচার’’ নামে একটা ফেইসবুক পেইজ খুলতে পারেন। তাতে আপনি আচার সম্পর্কিত নানা পোস্ট ও তথ্য দিতে পারেন এবং বেশী বেশী লোককে ফেউজের সাথে এড করে নিতে পারেন। পরে আপনি আপনার ফেইজে ১০/২০ হাজার লোক হলে বিভিন্ন পোস্টেও ভিতওে  কৌশলে আপনার আচারের সুনাম প্রচার করতে পারেন। এতে সুবিধা হলো যারা আচার পছন্দ করে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তারাই আপনার এই পেইজের মেম্বার হবে এবং আপনি নির্দিস্ট কমিউনিটরি কাছে আপনার পন্যবার্তা পাঠাতে পারলেন। এমনি করি একটি বিষয় ভিত্তিক ব্লগও আপনাকে সহযোগিতা করতে পারে। এগুলোতে বিভিন্ন রেসিপি মতামত পোলিং এমনকি কুইজ কম্পিটিশানও আয়োজন করতে পারেন।

আপনাদের  জন্য এ মাসে তিনটি মার্কেটিং বিষয়ক পোস্ট দিলাম। আশা করি আগেরগুলোও আপনার পড়েছেন। আমার প্রথম ১০০ লেখাতেও ৫/৭টা মার্কেটিং বিষয়ক আর্টিকেল ছিলো। ভবিষ্যতেও আরো পাবেন। এতে আপনাদেও  মতামত জানাবেন। আর কেউ এত উপকৃত হলেও জানাতে ভুলবেন না। আপনারা এগুলো পড়ে উপকৃত হলে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার ফল পেলে আমি আরো বেশী বেশী এ ধরনের আইডিয়া শেয়ার করবো। আজ এখানেই শেষ করছি।

9,959 total views, 3 views today

Comments

comments