ফটোগ্রাফীর পরামর্শ: ছবিসহ
জাহাঙাগীর আলম শোভন
আপনারা অনেকে ছবি তুলেন। যারা বিশেষ অভিজ্ঞ নয় বা এ বিষয়ে কোন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেননি। তাদের কাজে লাগবে এই পোস্টটি। যদিও এর আগে আমি পন্যের ছবি তোলা ও ভিডিও করার উপর ভিন্ন ভিন্ন দুটি পোস্ট দিয়েছিলাম। কিন্ত এই পোস্টটি আমি উদাহরণছবি সহ দিচ্ছি, হয়তো এতে করে ছবি তোলার নন্দনতত্বটা প্রাকটিক্যালি বুঝতে পারেন। ছবি তোলা একটি শিল্প এটা আজ সবর্জন স্বীকৃত। ছবি শুধু তুললেই সেটা শিল্প হয়না। তাতে শৈল্পিক উপাদান থাকা চাই। থাকা চাই নান্দিনিকতা, সৃজণশীলতা, অর্থপূর্ণতা ও ভাষা প্রকাশের ইঙ্গিত। আসুন তাহলে কিছু বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করা যাক। যেহেতু অনেকে ডিজাইনের জন্য ছবি তোলেন। অনেকে ছবি তোলেন অনলাইন পত্রিকার জন্য। তাই সবার জানা উচিৎ। অনেক সময় দেখা যায় ফটোগ্রাফার ছবি ঠিকভাবেই তুলেছেন কিন্তু ডিজাইনার ছবিটা এমনভাবে এডিট করেছেন যে তার অর্থই বদলে গেছে। তাছাড়া যারা ফেউসবুকে হরদম ঝবি পোস্ট করেন তাদেরও কাঝে লাগবে। একটি আনাড়ি ছবি আর একটি সঠিক ছবি দুটোর কোনটির প্রায়োরিটি থাকবে এবং সমছদারদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে সেটা নিশ্চই বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। আর ফেইসবুকে নজের এতো এতা ছবি না দিয়ে নিজের তোলা ছবি যদি সেটা সঠিক নিয়ম মেনে তোলা হয় এবং দেখার মতো সুন্দর হয় সেটা দিতে পারাই কি যোগ্যতার ব্যাপার নয়। তাই আজ প্রাথমিক বিষয়টা জানুন। আর অপেক্ষা করুন, পোডাকটস ফটোগ্রাফী, নিউজ ফটোগ্রাফী আর ফটো এডিটিং সম্পর্কিত কয়েকটি পোস্ট এর জন।
তাহলে শুরু করা যাক।
(১) ফ্রেমটা এমনভাবে নিন। যেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা অর্থপূর্ণ জিনিস কেটে না যায়। সেটা আপনার মূল সাবজেক্ট না হলেও সিট বাজেভাবে কেটেগেলে ছবির সৌন্দর্হানি ঘটতে পারে। আবার কখনো কেটে যাওয়ার মাঝেই রয়েছে পূর্ণতা। যদি আপনি এডিটিং টেবিলে বসে সঠিক কাটটি দিতে পারেন। তাতে মনে হয় কেটে না গেলে সুন্দর হতো না। তবে সেটা বোঝার জন্য চর্চা থাকা দরকার।
- রুলস অব থার্ড এর কথা মনে আছেতো। আপনার সাবজেক্টকে এমনভাবে ধরুন, যেন তা ফ্রেম এর মাঝখানে না থাকে। বরং এই ছবিতে কল্পিত চারটি রেখা আকার পর রেখাগুলো চারিটি বিন্দুতে ক্রস করেছে সে বিন্দুগলোর উপরই থাকবে আপনার সাবজেক্ট এর ফোকাল পয়েন্ট। খুব জটিল মনে হচ্ছে কি? । একদম চিন্তা করবেন না। ছবি তুলতে তুলতে এটি আপনার চোখের পর্দায় আঁকা হয়ে যাবে।
(3) রুলস অব থার্ড এর ব্যবহার করা না করা দুটো ছবির মধ্যে পার্থক্য দেখলে বোঝা যাবে কোনটা মামুলি কোনটা অন্যরকম। তাই নয়কি?
(4) সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করা ভালো। কিন্তু সেজন্য ফোকাস ও লাইট ঠিক থাকা চাই। ১. সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড সত্বেও ছবি বা সাবজেক্ট ঠিক আছে। ২. সাবজেক্ট ব্যবকগ্রাউন্ড একাকার হয়ে গেছে। ৩ সাবজেক্ট ভিন্নরকম হওয়াতে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড চমৎকার হয়েছে।
5) যদি সম্ভব হয় বাড়তি কিছু ব্যবহার করে ছবিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করুন। তবে সেটা যেন দৃষ্টিনন্দন হয়। বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ হয়। এবং মূল বিষয়কে আড়াল করে না দেয়। (6) খুব বেশী আয়োজন করে ছবি তুলতে না পারলে। পাকৃতিক পরিবেশকে বেছে নিন। ফল পাবেন। ছবিটি দেখুন।
7) ছবিতে বা ফ্রেমের ভেতরে কোন সেন্টার থাকলে তাকে সেন্টারে রাখার দরকার নেই। পাতার ছবিটাতে সেন্টারটাকে পাশে রাখায় এটা ছবি না হয়ে শিল্প হয়ে গেছে। পরের ছবিতেও মহিলাটি যদি মাঝ বরাবর থাকতেন তাহলে ছবিটা সুন্দর হতোনা।
(8) একটা ফ্রেমে অনেক রকমের মাত্রা ও কম্পিবনেশন থাকতে পারে। প্রথম ছবিতে তিনটি ছায়া এবং ২য় ছবিতে তিনটি আলোক বিন্দুর এক কম্বিনেশন ত্রিভুজ আকৃতির জ্যামিতিক মাত্রা দিয়েছে উপরের ছবিতে।
(৮)শুধুমাত্র ফেম এর কারণে একটি সাধারণ ছবি অসাধারণ লুক পেতে পারে। সাবেজেক্ট সামনে ফাঁকা জায়গা এবং দূরের শহুর এই ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকার সময়কে বাড়িয়ে নিয়েছে। একটি সাধারণ ছবিও সুন্দর লাগছে। আগেও লিখেছি যে সাবজেক্ট সামনে ফাকা জায়গা ছবির কারুকাজকে অনন্য করে তোলে। পরের ছবিটিতেও যদি মহিলার সামেনে স্পেস না থাকতো তাহলে ছবিটা মাঠে মার খেতো।
(৯) ছবি তোলার ক্ষেত্রে আলো ছায়ার খেলা গুরুত্বপূর্ণ। এর ভালো ব্যবহার জানলে স্বার্থক ছবি তোলা যেতে পারে। আর না জানলে অর্থমন্ত্রীর ভাষায় বলি “অল আর রাবিশ”
(10) একটি খালি জায়গা আসলে খালি নয়। সে বলতে পারে না বলা কথা। প্রথম ছবিটিা কি সেকথাটাই বলছেনা? ছবিতে আড়া আড়িভাবে যদি কোন বিভাজন রেখা থাকে সেটা যেন ফ্রেম এর ঠিক মাঝখানে না পড়ে এটা খেয়াল রাখুন ছবি তোলার সময় আর না হলে এডিটিং এর সময় অবশ্যই খেয়াল করুন। পরের ছবিতে পানিও আকাশের বিভাজন রেখাটি দেখুন।
(11) প্রেম প্রকৃতি আর রোমন্স তিনটি জিনিস নিগুড় বণ্ধনে আবদ্ধ। এ ধরনের ছবির ক্ষেত্রে পারিপার্শিক পরিবেশ এবং সামনের খালি জায়গা। ওহ সুপার। (12) কোন পন্যের সাথে হিউমান ফিগার ব্যবহারের সুবিধা হলো এতে পন্যের সাইজটি কি তা সহজে বোঝা যায়।
(13) কখনো ছবি এতটাই অর্থপূর্ণ হয় যে, এর জন্য ক্যাপশনের প্রয়োজন হয়না। অনায়াসেই বলা যায় ‘‘ পথের বাপই বাপরে মনা পথের মাই মা, পথের মাঝে পাবি খুজে আসল ঠিকানা’’
(14) ছবিতে সাবেজেক্ট ও অবজেক্ট এর অর্থপূর্ণ ব্যবহার আপনার মুন্সিগীরিকে প্রকাশ করবে। দেখুন ব্যক্তিত্বের প্রকাশে পেছনের আলোটি কি দারুন ভূমিকা রাখছে। একটি ছবিকে অন্যভাবে তুলে ধরতেও আলোছায়া আপনাকে সাহায্য করে।
(15) ছবিতে মডেলের ব্যবহার যদি সঠিকভাবে ম্যাচ করে কঠিন সুন্দরভাবে ফুটিয়ে না তুলতে পারলে কি দরকার ওসব করার। সাথে সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড সহ অন্যান্য কম্বিনেশনও দেখে নিতে ভুলবেননা। ।মডেল মানে যে কেবল জীবন্ত মডেল তা নয়। পতুল কিংবা ম্যানকিন হতে পারে।
(16) এডিট করার সময় সঠিকভাবে ফ্রেম কাটতে না পারলে ছবির অর্থ বদলে যেতে পারে। সূতরাং সাধু সাবধান।
(17) বিভিন্ন ধরনের ফ্রেম কম্বিনেসশন করে আপনি ছবি তুলতে পারেন। যেমন গোল্ডেন রেক্ট, গোল্ডেন ট্রায়াঙাগাল,
(18) ছবি তোলার সময় একটু বাড়তি জায়গা নিয়ে তুলুন যাতে পরে পছন্দমত ফ্রেমিং করা যায়। বিশেষ ধরনের ফ্রেমিংআপনার ছবির স্বার্থকতা ফুটিয়ে তুলতে পারে।
(19) বিভিন্ন রকম ফ্রেম কাঠামোতে আপনি আপনার ছবির স্বার্থক রুপায়ন ঘটোতে পারেন।
(20) কোনো একটি ক্রিয়েটিভ আইডিয়া আপনার ছবিকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। উপরের দুটি ছবি দেখুন। আবার আইডিয়া মারও খেতে পারে। যদি সেটা ম্যাচিউরড, অর্থবহ ও দৃষ্টিনন্দন না হয়। তৃতীয় ছবিটা কিছুটা সেরকম।
(21) দেখুন, বেলুনটা হয়তো আপনিই ফেলে এসেছিলেন। আর একজন ক্যামরাশিল্পী সেটাকে না ধরেই তা দিয়ে একটা সুন্দর ছবি একে নিল। দূরে লালসবুজ বল, পানি, পানিতে বেলুনের ছবি এসব না থাকলে এই ছবিটার দিকে কারো চোখই পড়তোনা। দেখার চোখ থাকলে এটা আপনিও পারবেন। পরের ছবিতে রাতে পানিতে একটি কলমি ফুল ঝরে পড়ার পর তোলা ছবি। কিন্তু এ ছবিতেও কিছু ভুল আছে বলুন কি কি?
(22)একটি ছবির ভেতর লুকিয়ে থাকতে পারে, শিল্প, গণিত বা জ্যামিতি। উপরের ছবি দুটো দেখুন।
(23) একটু অন্যরকম ভাবনা জন্ম দিতে পারে নতুন ধরনের দৃষ্টি।
(24)এডিট করেও অসাধারণ কিছু চিন্তার প্রতিফিলন ঘটাতে পারেন।বিশেষ কোনো অর্থে বেঝানোর জন্য এ ব্যবস্থা খুব কাজের। কিন্তু ই কমার্স এ প্রোডাক্টস ফটোগ্রাফীর জন্যিএ ধরনের এডিটিং করবে ন না যাতে আপনার পন্যের মান সাইজ ও রং কৃত্রিম হয়ে যায়। তাহলে ডিম দেখতে আন্ডার মতো হয়ে যাবে।
(25) দেখুন দরজাটা না থাকলে হয়তো বোঝা যেতনা, টবসহ টেবিলটি কোথায় আছে। 2 নং ছবিটির লো এঙ্গেল এর কারণে মহিলার ব্যক্ত্বি ফুটে উঠেছে।
(26) দেখুন সামনের খালি জায়গাটি বলে দিচ্ছে এই সন্তানকে নিয়ে মা বাবাকে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। পরের ছবিতে দেখুন- সন্তানের মতোই যত্ন করতে হয় ধানের ছারাগাছকে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড এ কথাই বলে দিচ্ছে।
(২৭) অনেকসময় আমরা ছবি এমনভাবে তুলতে পারি অথবা এডিট করতে পারি যাতে পাশে অনেক জায়গা থাকে। বিশেষ করে ইমেজের উপর কিছু লেখার কথায় মাথায় থাকলে ছবি তোলার সময়ও এমনটা করতে পারেন, পরের ছবিটি দেখুন।
(২৮) এবার আপনিই বলুন। কিকি গুনে সাধারণ হয়েও একটি ছবি অসাধারণ হয়ে যায়?
(২৯) উপরের ছবিগুলো দেখে বিচার করুন। এতে কি কি ভুল করা হয়েছে।
(***)প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফী বিষয়ে এরকমএকটি পোস্টের অপেক্ষায় থাকুন।
আপনাদেরকে ফটোগ্রাফীর উপর প্রাথমিক ধারণা দেয়ার জন্য এই পোস্টটি দিলাম। েএরপর পো্ডাক্টস ফটোগ্রাফীর উপর অনুরুপ একটি পোস্ট পাবেন। তখন বুঝতে আরো সহজ হবে। যদি এটা পড়ে রাখন।
9,217 total views, 4 views today