ওয়ালমার্ট এর নাম বাংলাদেশে সবাই না জানলেও যারা গার্মেন্টস সেক্টরের সাথে যুক্ত রয়েছে তারা একে এক নামে চেনেন। আমাদের তৈরি পোশাকের অন্যতম প্রধান ক্রেতা এ প্রতিষ্ঠানটি। ওয়ালমার্ট যুক্তরাষ্ট্রের একটি বহুজাতিক রিটেইল কর্পোরেশন। অনলাইনেও এ প্রতিষ্ঠানটি পণ্য বিক্রী করে। ই-কমার্সের বিখ্যাত ম্যাগাজিন “ইন্টারনেট রিটেইলার” এর সেরা ৫০০ এর তালিকায় ওয়ালমার্ট চতুর্থ। আমার এবারের লেখাটি এ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে।
প্রতিষ্ঠানের নামঃ ওয়ালমার্ট স্টোরস ইঙ্ক
স্থাপিতঃ ১৯৬২ সালে আরকানসাসে প্রথম ওয়ালমার্ট ডিসকাউন্ট সিটি স্টোর খোলা হয়।
ইনকর্পোরেটেডঃ ১৯৬৯ সাল
অর্থ বছরঃ ১ ফেব্রুয়ারি-জানুয়ারি ৩১
পণ্যঃ এটি একটি রিটেইল স্টোর যেখানে সর্বসাধারণের সাধ্যের মধ্যে দৈনন্দিন পণ্য সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র পাওয়া যায়।
ব্যবসার শাখা সমূহঃ ওয়ালমার্ট এর ব্যবসা তিনটি সেগমেন্টে বিভক্ত- ওয়ালমার্ট ইউ. এস, ওয়ালমার্ট ইন্টারন্যাশনাল, এবং স্যাম’স ক্লাব।
কর্পোরেট ওয়েবসাইটঃ http://corporate.walmart.com/
বাণিজ্যিক ওয়েবসাইটঃ www.walmart.com
বিশ্বের ২৭টি দেশে ৭১টি ব্যানারে ওয়ালমার্টের ১১,০০০ স্টোর রয়েছে। এছাড়াও ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তারা ১১টি দেশে ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রী করে।
প্রতি সপ্তাহে ২৪ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি ভোক্তা ওয়ালমার্টের দোকান এবং ওয়েবসাইট থেকে পণ্য ক্রয় করে।
প্রতিষ্ঠানটিতে মোট ২২ লক্ষ লোক চাকরি করে যার মধ্যে শুধু মাত্র যুক্তরাষ্ট্রতে আছে ১৩লক্ষ কর্মচারী।
ওয়ালমার্ট ডট কম সম্পর্কেঃ
ওয়ালমার্ট ডট কম হচ্ছে ওয়ালমার্ট স্টোরের অনলাইন ওয়েবসাইট। ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে ওয়ালমার্ট ডট কম চালু হয় এবং ওয়েবসাইটের হেড অফিস সিলিকন ভ্যালিতে অবস্থিত।
ওয়েবসাইটটিতে ১০ লক্ষ বিভিন্ন ধরণের পণ্য বিক্রী করা হয়। এছাড়াও ভোক্তারা অনলাইনে পণ্য অর্ডার করে তাদের নিকটস্থ ওয়ালমার্ট স্টোর থেকেও সংগ্রহ করতে পারেন।
ওয়ালমার্ট সুপারসেন্টার মূলত একটি বৃহৎ আকারের শপিং মল যেখানে সব কিছু পাওয়া যাবে। ১৯৮৮ সাল থেকে ওয়ালমার্ট এ ধরণের স্টোর নির্মাণ শুরু করে। এক একটি সুপারস্টোর ১লক্ষ ৮২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং ৩০০ লোক কাজ করে। এসব স্টোর দিনরাত ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। ই-কমার্স ক্রেতারা অনলাইনে অর্ডার দেবার এসব সুপারস্টোর থেকে সংগ্রহ করতে পারে সে ব্যবস্থাও আছে।
মোবাইল ওয়েবসাইটঃ
এখন যেহেতু অনেকে স্মার্টফোন আর ট্যাবলেট পিসি ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্যে ওয়ালমার্ট মোবাইল ওয়েবসাইট http://mobile.walmart.com/ চালু করেছে। এছাড়াও আছে অ্যাপ্লিকেশন- www.walmart.com/cp/Walmart-App-for-iPhone/1087865
গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি আয় করেছে ৪৮৬ বিলিয়ন ডলার যার ২২% অর্থাৎ ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছে অনলাইনে বিক্রী থেকে। চতুর্থ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি আয় করে ১৩১.৬ বিলিয়ন ডলার যা গতবছরের চতুর্থ প্রান্তিকের আয়ের তুলনায় ১.৪% বেশি।
ই–কমার্স এবং মোবাইল কমার্সঃ
ওয়ালমার্ট এর মূল ব্যবসা রিটেইল আউটলেট এবং প্রথমদিকে প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে বিক্রীর উপরে তেমন গুরুত্ব দেয় নি। এ ভুল সিদ্ধান্তের ফলে ওয়ালমার্ট ই-কমার্সের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারেনি। কিন্তু এখন প্রতিষ্ঠানটি মনযোগী হয়েছে। বর্তমানে ওয়ালমার্টের মোট বিক্রীর ৩% ডিজিটাল কমার্সের মাধ্যমে হচ্ছে এবং ২০১৪ সালের বড়দিনের ছুটিতে ওয়ালমার্টে ডিজিটাল বিক্রীর পরিমাণ ১৮% এ বেড়ে দাঁড়িয়েছে
ব্যবসা ধরে রাখার জন্যে আগামী দুই বছরে ওয়ালমার্ট ই-কমার্স এবং দোকান দুইদিকেই বিনিয়োগ করবে। এ বছরে ই-কমার্স খাতে ওয়ালমার্ট ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ালমার্টের অনলাইন বিক্রী থেকে আয় হয় ১২ মিলিয়ন ডলার
ওয়ালমার্টের সিইও ডগ ম্যাকমিলন ঘোষণা দেন যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্যে তার প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পণ্য সম্ভার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করবে। বলা হচ্ছে যে এ বছরেই প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে ১ কোটি বিভিন্ন ধরণের পণ্য তুলে ধরবে।
অনলাইনে অর্ডারকৃত পণ্য সমূহ সরবরাহ করার জন্যে ওয়ালমার্ট চারটি নতুন ফুলফিলমেন্ট সেন্টার খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে
গত বছরের আগস্টে ওয়ালমার্ট সেভিংস ক্যাচার (Savings Catcher) নামে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু করে। এ অ্যাপ্লিকেশনটির মাধ্যমে একজন ক্রেতা অনলাইনে একটি নির্দিষ্ট পণ্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কতদামে বিক্রী হচ্ছে তা জানতে পারেন। ইতিমধ্যেই অ্যাপ্লিকেশনটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
নিজস্ব দোকানে বিক্রীর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন চ্যানেলে পণ্য বিক্রী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চতুর্থ প্রান্তিকের অর্থনৈতিক ফলাফল ঘোষণার সময়ে প্রতিষ্ঠানটির চীফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার চার্লস হোলি বলেন, “আগামী ১৮ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে আমরা ই-কমার্স খাতে বিশাল বিনিয়োগ করবে। অনলাইনে আমাদের ক্রেতারা যাতে সহজে এবং সাধ্যের মধ্যে তাদের পণ্য ক্রয় করতে পারে সে চেষ্টা আমরা করব।”
গত বছরের ক্রিসমাসে যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ালমার্টের ৭০% ওয়েবট্রাফিক আসে মোবাইল ডিভাইস থেকে। যেসব ক্রেতারা একসময় ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ ব্যবহার করত তারা এখন মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করছে। এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ অবস্থা দেখা যাচ্ছে। ব্রাজিলে ক্রিসমাসে মোবাইল ট্রাফিক প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রচুর লোক ওয়ালমার্টের ওয়েবসাইট ব্রাউজ করেছে কিন্তু পণ্য ক্রয় ছিল কম। মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারকারীদের কিভাবে ক্রয় করতে আকৃষ্ট করা যায় সে ব্যাপারেও এখন ওয়ালমার্ট কাজ করছে।
Source:
http://fortune.com/2015/03/11/target-walmart/
www.pymnts.com/news/2015/walmart-throws-its-weight-behind-mobile/#.VSuaHvmUcYB
www.pymnts.com/news/2015/walmart-throws-its-weight-behind-mobile/#.VSuaGfmUcYB
www.internetretailer.com/2015/02/13/wal-mart-expands-us-e-grocery-options-and-invests-canada
8,266 total views, 3 views today