আবুল খায়ের
ই-কমার্স সম্পর্কে একটু আধটু জানেন না এমন লোক এখন খুবই কম আছেন। যেহেতু এখানে ই-কমার্স নিয়ে সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে কাজেই আপনাদের কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক ধারনা দেওয়ার প্রচেষ্টা থেকে মূলত এই লেখাটা লিখছি।
ইতোমধ্যেই আমি ই-কমার্স সাইটের জন্য কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS) নির্বাচন শীর্ষক শিরোনামে একটি লেখা পোষ্ট করেছি। সেখানে কিছু সিএমএস সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে কিছু বর্ননা এবং সেগুলোর সুবিধা, অসুবিধা এবং গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এবার প্রত্যোকটি সিএমএস এর ফিচার গুলো সম্পর্কে আমরা কিছু প্রাথমিক ধারনা নিব। তো যেহেতু আমরা ই-কমার্স সিএমএস সম্পর্কে আলোচনা করছি, কাজেই আজকের এই আলোচনায় আমরা প্রথমেই ধারনা নিবো ই-কমার্স সিএমএস গুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, বহুল ব্যাবহৃত এবং পূর্নাঙ্গ ই-কমার্স সিএমএস ম্যাজেন্টো সম্পর্কে।
শুরুতেই আমরা জেনে নিব ম্যাজেন্টো ড্যাশবোর্ড সম্পর্কে কিছু কথা।
ড্যাশবোর্ড (Dashboard): ম্যাজেন্টো সিএমএস এ সবচেয়ে লক্ষনীয় যে ফিচারটি রয়েছে তা হচ্ছে এর ড্যাশবোর্ড।আপনার ওয়েবসাইটের যাবতীয় তথ্য এবং লাইফটাইম পারফর্মেন্স আপনি মূহুর্তেই জেনে নিতে পারবেন ম্যাজেন্টো ড্যাশবোর্ড থেকে। ডাশবোর্ডে রয়েছে কিছু অতি দরকারী তথ্য ও অপশন।
- নোটিফিকেশ বার (Notification Bar): ড্যাশবোর্ডের সবার শুরুতেই যে বিশেষ অপশনটি আপনি দেখতে পাবেন তা হচ্ছে নোটিফিকেশন বার। ড্যাশবোর্ডের একদম উপরে এটি প্রদর্শিত হয়ে থাকে। আপনার সাইট এবং সিএমএস সম্পর্কে যেকোনো ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বা নোটিশ এই নোটিফিকেশন বারে প্রদর্শিত হয়। কোনো প্রকার হালনাগাদ নোটিশ বা বার্তা যদি আপনার সাইটের জন্য না থেকে থাকে তাহলে এটি উয্য থাকে।
- রিপোর্ট বারঃ এচাড়াও ড্যাশবোর্ডে আপনার প্রোয়োজনীয় সব ধরনের রিপোর্ট দেখতে পাবেন। বাম দিকে বেশ কিছু রিপোর্ট অপশন রয়েছে। লাইফটাইম সেলস হিস্টোরি, গড় অর্ডার, বিগত পাঁচ দিনের অর্ডার, বিগত পাঁচ দিনের অনুসন্ধান টার্ম, সেরা পাঁচটি অনুসন্ধান টার্ম এই অপশন গুলো এখানে প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও ডানদিকের বডি সেকশনে দেখতে পারবেন মোট অর্ডার, অ্যামাউন্ট। তার ঠিক নিচেই রয়েছে এর আয়, ট্যাক্স, শিপিং চার্জ, এবং পরিমানের রিপোর্ট বার। এরও নিচে আপনি আরও কিছু অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে সেরা পন্য, সর্বাধিকবার দেখা পন্যগুলোকে মূল্য এবং অর্ডারকৃত সংখ্যার উপর ভিত্তি করে প্রদর্শন করা থাকে। নতুন ক্রেতা এবং মোট ক্রেতার একটি লিষ্ট দেখতে পাবেন, এগুলোকে অর্ডারের সংখ্যা, গড় কত টাকার অর্ডার করা হয়েছে এবং মোট কত টাকার অর্ডার করা হয়েছে তার ভিত্তিতে প্রদর্শন করা হয়ে থাকে।এই রিপোর্ট গুলোকে বিগত ২৪ ঘন্টা, এক সপ্তাহ, চলতি মাস, বিগত এক বছর এবং বিগত দুই বছরের ভিত্তিতে আপনি দেখতে পারবেন।
মোটামুটিভাবে এসব তথ্যের বাইরে একটি ইকমার্স সাইটের পার্ফর্মেন্স রিপোর্ট কারও দরকার পড়বে না। এবং ড্যাশবোর্ডে তার সবকিছুই দেওয়া আছে।
সেলস (Sales): ড্যাশবোর্ডের পরেই আপনি যে অপশনটি আপনার ম্যাজেন্টো সিএমএস এর নেভিগেশন বারে দেখতে পাবেন তা হচ্ছে সেলস অপশন। সেলস মেনুর মধ্যে আপনি কিছু সাব-মেনু দেখতে পাবেন, সেখানে আপনার বিক্রয় সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন, প্রয়োজন মত সম্পাদনা করতে পারবেন এবং আপনার ক্রেতাকে সে ব্যাপারে অবগত করতে পারবেন।
- অর্ডারস (Orders): এই অপশন থেকে আপনি জানতে পারবেন কখন, কে, কোন স্থান থেকে আপনাকে কোন পন্যটির জন্য অর্ডার গ্রহনের আবেদন জানিয়েছেন। আপনি চাইলে চাহিদামত অর্ডারটি সম্পাদনা করতে পারবেন, গ্রহন বা বাতিল করে দিতে পারবেন এবং অর্ডারের হালনাগাদ অবস্থা সম্পর্কে আপনার ক্রেতাকে জানাতে পারবেন এখান থেকে।
- ইনভয়েসেস (Invoices): অর্ডারস মেনুটির পরেই সেলস সেকশনে যে বিশেষ মেনুটি আপনি দেখতে পারবেন তা হচ্ছে ইনভয়েস। এই অপশন থেকে আপনি আপনার ক্রেতাকে তার অর্ডারের মূল্য পরিশোধ বিষয়ক সম্পর্কিত কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে অবগত করতে পারবেন। তার অর্ডারের মূল্য তিনি পরিষোধ করেছেন কিনা বা অর্ডারটি কি অবস্থাতে আছে সে সম্পর্কে জানাতে পারবেন। চাহিদামত ইনভয়েসটিকে সম্পাদনা করতেও পারবেন।
- শিপমেন্টস (Shipments): সেলস সেকশনে ইনভয়েস এর পরেই চলে আসে শিপমেন্ট এর অপশন। কোন অর্ডারটিকে কি নামে, কার মাধ্যমে, কখন কোথায়, কতটি পাঠানো হবে তার যাবতীয় তথ্য এখান থেকে সম্পাদনা এবং সংযুক্ত করা যায়।
- ক্রেডিট মেমোস (Credit Memos): সেলস সেকশনের আরেকটি অতি প্রয়োজনীয় অপশন হচ্ছে এই ক্রেডিট মেমো। আপনার অর্ডারের মূল্য এবং পরিশোধ বিষয়ক আরো কিছু দরকারি তথ্য এখান থেকে সম্পাদনা, সংযুক্ত, এবং গ্রহন, প্রত্যাখ্যান করা যাবে।
- ট্রান্সেকশন (Transaction): ট্রান্সেকশন অপশন থেকে অর্ডার আইডি, ট্রান্সেকশন আইডি, প্যারেন্ট ট্রান্সেকশন আইডি, পেমেন্ট মেথড, ট্রান্সেকশনের ধরন, এবং ট্রান্সেকশনটি কী অবস্থায় আছে, তা দেখতে এবং প্রয়োজন মত সম্পাদনা, সংযুক্ত করতে পারবেন।
- রিকিউরিং প্রোফাইল (Recurring Profiles): যদি কোনো অর্ডারের ডেলিভারী যদি আপনি সিডিউল করে দিতে চান, তাহলে এই অপশনটা কাজে লাগবে। এখান থেকে আপনি পেমেন্ট রেফারেন্স আইডি, প্রোফাইলের অবস্থা তৈরীর সময়কাল, হালনাগাদের সময়কাল, পেমেন্ট মেথড এবং সিডিউল এর বর্ননা মনিটরিং এবং প্রয়োজনমত সম্পাদনা করে নিতে পারবেন, পাশাপাশি তা আপনার ক্রেতাকে জানাতে পারবেন।
- বিলিং এগ্রিমেন্টস (Billing Agreements): এই অপশন থেকে আপনি ক্রেতার যাবতীয় বিলিং তথ্য, বিলিং আইডি, ক্রেতার নাম, ইমেইল, পেমেন্ট মেথড, রেফারেন্স আইডি (কুপন কোড, ডিসকাউন্ট কোড), বিলের অবস্থা, তৈরীর সময়কাল, হালনাগাদের সময়কাল দেখতে এবং সম্পাদনা করে নিতে পারবেন।
- টার্মস এন্ড কন্ডিশনস (Terms & Conditions): আপনার সাইট থেকে পন্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে যদি কোনো বিশেষ শর্ত থেকে থাকে, তাহলে আপনি এখান থেকে তা সংযুক্ত এবং সম্পাদনা করে নিতে পারেন। আইডি, কন্ডিশনের নাম এবং কন্ডিশন এনাবল নাকি ডিজাবল অবস্থায় আছে তা দেখতে এবং সম্পাদনা করে নিতে পারবেন।
- ট্যাক্স (Tax): সেলস সেকশনের সর্বশেষ যে অপশনটি রয়েছে তা হচ্ছে ট্যাক্স। যদিও এই অপশনটি সবসময় কাজে লাগবে না, তারপরও চলুন এটার ফিচার গুলো সম্পর্কে একটু সংক্ষিপ্ত ধারনা নেওয়া যাক। ট্যাক্স অপশনের আবার কিছু শাখা আছে। এসব অপশনের মাধ্যমে আপনি ট্যাক্স পরিশোধের নিয়ম কানুন, স্থানভেদে রেট, ট্যাক্সের রেট ইমপোর্ট/এক্সপোর্ট, ক্রেতার ট্যাক্সের ধরন, পন্যের ট্যাক্সের ধরন ইত্যাদি সংযুক্ত এবং সম্পাদনা করতে পারবেন।
ক্যাটালগ (Catalog): নেভিগেশন বারে সেলস মেনু এর পরে যে মেনুটি রয়েছে তা হচ্ছে ক্যাটালগ মেনু। এই সেকশনেও বেশ কিছু দরকারি অপশন রয়েছে। এই সেকশনটি মূলত প্রোডাক্ট, ক্যাটেগরি, এট্রিবিউটস, লিঙ্ক, সার্চ টার্মস, রিভিউ এবং রেটিংস ইত্যাদি সুবিধাগুলোর ব্যাবস্থাপনার ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে। তো চলুন কোন অপশনটি কী কাজে ব্যাবহৃত হয়।
ম্যানেজ প্রোডাক্টস (Manage Products): ক্যাটালগ মেনুর শুরুতেই যে অপশনটি রয়েছে, তা হচ্ছে প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট অর্থাৎ পণ্য ব্যাবস্থাপনা। এখান থেকে চাইলে যেকোনো সময় আপনি নতুন পন্য সংযুক্ত করতে পারবেন, আগের পন্যের যেকোনো তথ্য সম্পাদনা, হালনাগাদ করতে পারবেন। এই সেকশনে অনেক গুলো অপশন রয়েছে। সব অপশন গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাবহারের সময়ে আপনি তা দেখে এবং জেনে নিতে পারবেন। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অপশন সম্পর্কে আমি সংক্ষিপ্ত একটি ধারনা দিয়ে যাচ্ছি। পন্য সংযুক্তির ক্ষেত্রে ডিফল্ট এবং অ্যাট্রিবিউটের নির্দেশনার উপর ভিত্তি করে আপনি পন্য সনযুক্ত করতে পারবেন। পন্য গুলোকে আবার কয়েকটি বিশেষ কাঠামোর উপর ভিত্তি করে সংযুক্ত করা যায়, সিম্পল প্রোডাক্ট, গ্রুপড প্রোডাক্ট, কনফিগারেবল প্রোডাক্ট, ভার্চুয়াল প্রোডাক্ট এবং ডাউনলোডএবল প্রোডাক্ট। কোনটির কাজ কী এব্যাপারে বিস্তারিত লিখছি না। তবে সাধারনত ডিফল্ট অ্যাট্রিবিউট সেট এবং সিম্পল প্রোডাক্ট নির্বাচন করে আপনি পন্য সনযুক্তি করবেন। বাকি গুলোর কাজ যখন প্রয়োজন পড়বে, তখন এমনিতেই জেনে যাবেন।
- প্রোডাক্ট ইনফর্মেশন (Product Information): প্রোডাক্ট ইনফর্মেশন তথা পন্য বিবরন সেকশনে অনেকগুলো অপশন দেখতে পারবেন, আর এর জন্যই ম্যাজেন্টো একটু বেশি এডভান্স। এই অপশন গুলো আপনার সংযুক্ত করা পন্যকে আপনার সাইটে সঠিক ভাবে প্রদর্শন করতে সাহায্য করবে। তো চলুন, এবার জেনে নেওয়া যাক কোন অপশন কিভাবে কাজ করে এবং কোন ফিল্ডে কী তথ্য প্রদান করতে হয়।
- জেনারেল (General): পন্য বিবরন মেনুতে প্রথমেই এই জেনারেল নামক অপশনটি দেখতে পাবেন। তো বোঝাই যাচ্ছে পন্যের সাধারন তথ্যগুলো এখানে প্রবেশ করাতে হবে। এই অপশনে পর্যায়ক্রমে পন্যের নাম, বিবরন, সংক্ষিপ্ত বিবরন (কী ধরনের পন্য), এসকেইউ বা প্রোডাক্ট কোড/মডেল নাম্বার, ওজন, কতদিন পর্যন্ত তা নতুন পন্যের তালিকাভুক্ত থাকবে, স্ট্যাটাস (এনাবল/ডিজ্যাবল)-পন্য প্রদর্শন করতে চাইলে অবশ্যই এনাবল করে নিবেন, ইউআরএল কী (এটা স্বয়ংক্রিয় ভাবেই তৈরী হয়ে যাবে), ভিজিবিলিটি (কোথায় কোথায় আপনার পন্য প্রদর্শন করতে চান)-ডিফল্ট ভিজিবিলিটি হিসেবে ক্যাটালগ, সার্চ নির্দেশ করা আছে ওটাই রেখে দিন, ম্যানুফ্যাকচারের দেশ (যদি বাংলাদেশের পন্য হয়ে থাকে, তাহলে ড্রপ ডাউন অপশন থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন করুন, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও একই সূত্র প্রযোজ্য), এই সেকশনে সবার শেষে যে অপশনটি দেখতে পাবেন তা হচ্ছে, আপনার পন্যটি ফিচার পন্য তালিকায় যুক্ত করতে চান কিনা। আপনি ইয়েস অপশনটি বাছাই করুন।
- প্রাইসেস (Prices): জেনারেল মেনুর পরেই প্রাইস মেনু দেখতে পারবেন। এখান থেকে সাধারনত পন্যের মূল্য নির্ধারনের জন্য যাবতীয় নীতিমালা প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এই মেনুর শুরুতেই দেখতে পারবেন প্রাইস অপশন। সেখানে পন্যের স্বভাবিক মূল্য কত তা প্রবেশ করান, এরপর গ্রুপড প্রাইস নামক একটি অপশন দেখতে পাবেন, এটি সাধারনত কিছু বিশেষ ক্রেতা এবং পন্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে (পন্যের যদি স্বাভাবিক, পাইকারী, খুচরা প্রভৃতি মূল্য থাকে এবং তা প্রদর্শন করতে চান), এরপর স্পেশাল প্রাইস নামক একটি অপশন রয়েছে যেখানে আপনি যদি আপনার পন্যে কোনো বিশেষ ডিসকাউন্ট বা মূল্য ছাড় দিতে চান তা দিতে পারবেন। এবং পন্যের ডিসকাউন্ট মূল্য কত তা এখানে প্রবেশ করাতে হবে। যদি ডিসকাউন্ট না দিতে চান তাহলে এই অপশনটি এড়িয়ে যান। এরপর যদি ডিসকাউন্ট দিতে চান তাহলে তা কোন তারিখ থেকে কোন তারিখ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে তা নির্ধারন করুন। এরপর টাইয়ার প্রাইস বা বেঁধে দেওয়া মূল্যের একটি অপশন পাবেন। এটা গ্রুপড প্রোডাক্টে ডিসকাউন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এটি গ্রুপড প্রোডাক্টের নিয়মানুসারেই সেট করে নিতে হবে ডিসকাউন্ট মূল্য দিয়ে। এরপর এপ্লাই ম্যাপ এবং ডিসপ্লে অ্যাকচুয়াল প্রাইস নামক দুইটি অপশন দেখতে পাবেন। আপনার প্রয়োজন মত হ্যাঁ/না সেখানে বসিয়ে নিন। বুঝে উঠতে না পারলে, যেমন সেট করা আছে সেভাবেই রেখে দিন। এরপর উৎপাদনকারী কর্তৃক নির্দেশিত খুচরা মূল্যের জন্য একটি অপশন রয়েছে। এটি প্রযোজ্য হলে, সেই মূল্য কত তা প্রবেশ করান, প্রযোজ্য না হলে এড়িয়ে যান। সবার শেষে ট্যাক্স ক্লাশ নামে একটি অপশন রয়েছে। যদি আপনার পন্যের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার কর প্রযোজ্য হয় সে ক্ষেত্রে তা কিভাবে প্রযোজ্য (পন্যের কর/শিপিং কর) নির্বাচন করে নিন। প্রযোজ্য না হলে নান নির্বাচন করুন। কোনো ক্রমেই এটি এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
- মেটা ইনফরমেশন (Meta Information): পন্য বিবরনের এই মেনুটি এসইও এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন। এখানকার প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতেই আপনার পন্য এবং সাইটের গুগল সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্ক নির্ধারিত হবে। কাজেই খুব সতর্কতা আর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এই তথ্যগুলো প্রয়োগ করুন। এই মেনুর শুরুতেই মেটা টাইটেল নামক একটি অপশন রয়েছে। ভিজিটরের প্রোডাক্ট পেজ ট্যাবের টাইটেল কী নামে প্রদর্শন করবে এই অপশনটি থেকে সেটি নির্দেশ করে দিতে হবে। কাজেই এখানে পন্যের মূল নামটি প্রবেশ করান। এরপর মেটা কী-ওয়ার্ডস নামক একটি অপশন দেখবেন, এখানে পন্যের সার্চ ইঞ্জিন র্যাঙ্ক টপে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় কী-ওয়ার্ডস প্রবেশ করান। যদি এই ব্যাপারে ধারনা না থাকে তাহলে, কিছু প্রোডাক্ট ট্যাগ বা পন্যের ধরন কী-ওয়ার্ড হিসেবে প্রবেশ করান। সবশেষে মেটা ডেসক্রিপশন নামে আরেকটি ফিল্ড দেখতে পাবেন, এখানেও এসইও এর কী-ওয়ার্ডস ব্যাবহার করে পন্যের একটি বিবরন প্রবেশ করাতে হবে। মনে রাখতে হবে এই বিবরনটি কোনো ক্রমেই ২৫৫ অক্ষরের বেশি হতে পারবে না।
- ইমেজেস (Images): এরপর ইমেজেস নামে পন্যের ছবি সংক্রান্ত একটি মেনু পাবেন, যেখানে পন্যের ছবি আপলোড করে সেটি কোথায় কোথায় কীভাবে প্রদর্শিত হবে তা নির্ধারন করতে হবে। ছবি আপলোড করতে প্রথমেই ব্রাউজ ফাইলস বাটনে ক্লিক করে ছবির লোকেশন খুঁজে বের করে তা সিলেক্ট করুন। এরপর আপলোড ফাইল বাটনে ক্লিক করে, ছবি আপলোডের জন্য অপেক্ষা করুন। এরপর বেইজ ইমেজ। স্মল ইমেজ, থাম্বনেইল ইমেজ সহ কোথায় কোথায় তা প্রদর্শিত হবে তা নির্ধারন করার জন্য ছবির ঐ অপশন গুলো সিলেক্ট করুন। বুঝে উঠতে না পারলে সবগুলোই সিলেক্ট করুন। একাধিক ছবির ক্ষেত্রে একই নিয়ম অনুসরণ করুন।
- রিকিউরিং প্রোফাইল (Recurring Profile): নির্বাচিত কিছু পন্যের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হয়। প্রযোজ্য না হলে এই মেনুটি নো সিলেক্ট করে এড়িয়ে যান। তবে জেনে নিন এটা কী কাজে লাগে। এই মেনুটি শুধুমাত্র সিডিউল ডেলিভারী এবং সে অনুযায়ী ক্রেতার পেমেন্ট সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেলিভারী প্রসেস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেমেন্ট গ্রহনের কাজে লাগে। এখানে সিডিউল, বিলিং, ট্রায়াল পিরিয়ড এবং ইনিশিয়াল ফিস নামে চারটি প্রধান অপশন রয়েছে। আপনি যদি এধরনের সার্ভিস প্রদান করে থাকেন তাহলে আপনার বিজনেস পলিসি অনুযায়ী তথ্য গুলো সাবমিট করে নিতে পারবেন। আর এই সেবা যদি আপনি না প্রদান করে থাকেন তাহলে এই মেনুটিকে এড়িয়ে যান।
- ডিজাইন (Design): যদি আপনি পন্যে কিছু অতিরিক্ত তথ্য যেমনঃ- উৎপাদনকারী, রঙ প্রভৃতি যুক্ত করতে চান সেক্ষেত্রে এই অপশনের সঙ্গে অ্যাট্রিবিউটস সেট থেকে তা পূর্বেই যুক্ত করে নিতে হবে। এব্যাপারে পরবর্তীতে আবার আলোচনা করা হবে। এছাড়াও পন্যটি কোন থিমে কিভাবে প্রদর্শন করতে চান, তা এখান থেকে নির্ধারন করে দিতে পারবেন। যদি এব্যাপারে বুঝতে কষ্ট বা ঝামেলা হয়, তাহলে এই মেনুটিকে এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
- গিফট অপশনস (Gift Options): যদি আপনি আপনার কোনো পন্যের সঙ্গে কোনো বিশেষ উপহার নির্ধারন করতে চান বা কোনো ক্যাম্পেইন ঘোষনা করতে চান তাহলে এই মেনু থেকে কুপনকোড সহ তা সংযুক্ত করে নিতে পারবেন। ক্রেয়েট নিউ অ্যাট্রিবিউটস বাটনে ক্লিক করলেই আপনার ব্রাউজারে একটি নতুন উইন্ডো আসবে সেখান থেকে প্রয়োজন মত গিফটিং অপশন বাছাই এবং নির্ধারন করুন। যদি কোনো গিফটিং ক্যাম্পেইন না থেকে থাকে, তাহলে এটা এড়িয়ে যান।
- ইনভেন্টরি (Inventory): পন্য সংযুক্তির ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মেনু হচ্ছে এই ইনভেন্টরি। এটি মূলত পন্যের পরিমান, স্টক ম্যানেজমেন্টের জন্য দরকারি। এখানে আপনি অনেকগুলো অপশন দেখতে পাবেন। বিভিন্ন অপশন ভিভিন্ন রকমের কাজ করে থাকে। বুঝতে কষ্ট হলে কোয়ান্টিটির ফিল্ডে পরিমানটা বসিয়ে সবার নিচের স্টক অ্যাভেইল্যাবিলিটিতে ইন স্টক নির্বাচন করে দিন। মনে রাখবেন, কোয়ান্টিটি এবং স্টক অ্যাভেইল্যাবিলিটি নির্বাচন না করলে কিন্তু পন্য আপনার সাইটে প্রদর্শিত হবে না। এটা ম্যাজেন্টোর একটা বিশেষ ফিচার। কোনো প্রোডাক্ট যদি স্টক আউট হয়ে যায়, তাহলে এই ফিচারের বদৌলতে তা আপনার সাইট থেকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ইনভিজিবল হয়ে যাবে।
- ক্যাটেগরিস (Categories): এরপর আরেকটি মেনু পাওয়া যাবে ক্যাটেগরিস নামে। সেখান থেকে পন্যের ক্যাটেগরি নির্বাচন করতে হবে। প্রথমে প্যারেন্ট ক্যাটেগরি, এরপর সাব-ক্যাটেগরি পর্যায়ক্রমে পন্যের মূল ক্যাটেগরি এখান থেকে বাছাই করে নিতে হবে।
- রিলেটেড প্রোডাক্টস (Related Products): আপনি যে পন্যটি যুক্ত করছেন তার সমধর্মী বা একই জাতীয় একাধিক পন্য যদি আপনার প্রোডাক্ট লিষ্টে থেকে থাকে তা এখান থেকে বাছাই করে নিতে পারেন। যে পন্যটি আপনি বাছাই করতে চান, সেটিকে মার্ক/টিক চিহ্ন দিয়ে নির্দেশ করে দিন। না করতে চাইলে এড়িয়ে যান।
- আপ-সেলস/ক্রস সেলস (Up-sells/Cross-sells): এরপর পর পর দুইটি মেনু পাবেন আপ-সেলস এবং ক্রস-সেলস নামে। আপনার সাইটের সর্বোচ্চ কিক্রিত এবং লক্ষসীমা অতিক্রম করা পন্য গুলো ক্রেতাকে দেখানোর জন্য আপনার প্রোডাক্ট পেজের সাথে এই পন্য তালিকা যুক্ত করতে পারেন।
- কাস্টম অপশনস (Custom Options): পন্যের সঙ্গে যদি অতিরিক্ত আরও কিছু তথ্য আপনি যুক্ত করতে চান (সাইজ, রঙ, রেশিও, ওজন প্রভৃতি) তাহলে এই মেনুটি আপনার কাজে লাগবে। এখান থেকে আপনি বিভিন্ন অপশন লেখা, ফাইল, নির্বাচন এবং তারিখের ভিত্তিতে যুক্ত করতে পারবেন।
ফিচারড প্রোডাক্টস (Featured Products): প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট মেনুর ঠিক পরেই রয়েছে ফিচারড প্রোডাক্টস নামে আরেকটি মেনু। এখান থেকে আপনার সাইটের হোমপেজে প্রদর্শন করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক পন্য আপনি ম্যানুয়ালি বাছাই করে নিতে পারেন। পন্য বাছাই করতে যে যে পন্য প্রদর্শন করতে চান ফিচারড বিভাগে সেগুলো মার্ক/টিক চিহ্ন দিয়ে সেইভ করে নিন।
ম্যানেজ ক্যাটেগরিস (Manage Categories): ক্যাটালগ সেকশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মেনু হচ্ছে এই ক্যাটেগরি। এখান থেকে মূলত আপনি আপনার সাইটে যে যে ধরনের পন্য বিক্রি করে থাকেন তার ধরন সংযুক্ত করতে পারবেন খুব সহজেই। ক্যাটেগরি মেনুতে বেশ কিছু অপশন রয়েছে। রুট ক্যাটেগরি এবং সাব ক্যাটেগরি নামে দুই ধরনের ক্যাটেগরি এখানে যুক্ত করা যায়। আপনার সাইটের টেমপ্লেটের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন নিয়মানুসারে এসব ক্যাটেগরি যুক্ত করতে হবে। তবে সাধারনত রুট ক্যাটেগরি হিসেবে একটি ডিফল্ট ক্যাটগরি আগে থেকেই সংযুক্ত করা থাকে তার সাব ক্যাটেগরি হিসবে বিভিন্ন ক্যাটেগরি আপনি যুক্ত করতে পারবেন। বিস্তারিত অপশনের নির্দেশনা অনুযায়ী করে নিতে পারবেন।
অ্যাট্রিবিউটস (Attributes): ক্যাটালগ সেকশনে আরও একটি দরকারি মেনু হচ্ছে আট্রিবিউটস। এর মাঝে দুটি সাব মেনু আছে ম্যানেজ অ্যাট্রিবিউটস এবং ম্যানেজ অ্যাট্রিবিউট সেট নামে। ম্যানেজ অ্যাট্রিবিউটস থেকে আপনি ডিফল্ট অপশনের বাইরেও নতুন অপশন যুক্ত করতে পারবেন কনফিগারেবল পন্য সংযুক্তির জন্য। ম্যানেজ অ্যাট্রিবিউট সেটে অনেক অপশন পাবেন যেগুলো পন্যের বিবরন তুলে ধরার কাজে লাগবে।
ইউ আর এল রিরাইট ম্যানেজমেন্ট (URL Rewrite Manegement): এই মেনুর মাধম্যে প্রোডাক্ট পেজের লিঙ্ক গুলো মনিটরিং, সম্পাদনা এবং সংযুক্তি করতে পারবেন।
সার্চ টার্মস (Search Terms): এই মেনুর সাহায্যে দেখতে পারবেন কোন পন্যগুলো ভিজিটররা আপনার সাইটে সার্চ করে। প্রয়োজনমত এগুলো সম্পাদনা এবং সংযুক্ত করতে আপনার সুবিধা হবে।
রিভিউস এন্ড রেটিংস (Reviews and Ratings): এই মেনুতে মূলত আপনার পন্যে কাষ্টমারের করা রিভিউ এবং রেটিং গুলো জমা হয়। রিভিউ এবং রেটিং মেনুতে দুইটি বিভাগ রয়েছে একটি রিভিউ বিভাগ, যেখানে ক্রেতার রিভিউগুলোর সাময়িক ব্যাবস্থাপনা পরিচালিত হয়। প্রয়োজনমত যেকোনো রিভিউ গ্রহন এবং বর্জন করা যায়। রেটিং মেনুতে প্রাইস, কোয়ালিটি, ভ্যালু প্রভৃতি অপশন রয়েছে। এগুলোকে চাইলেই সম্পাদনা করা যায়। পাশাপাশি নতুন রেটিং অপশনও সংযুক্ত করা যায়।
ট্যাগস, গুগল সাইটম্যাপ (Tags, Google Sitemap): এছাড়াও ক্যাটালগ অপশনের শেষের দিকে আরও দুইটি মেনু রয়েছে ট্যাগস এবং গুগল সাইটম্যাপ নামে। ট্যাগ অপশনে কাষ্টমার কর্তৃক সম্পূরণ করা পন্যের ট্যাগ রিকোয়েষ্ট গ্রহন বর্জন এবং ব্যাবস্থাপনার সুবিধা রয়েছে। পন্যের সঠিক ব্যাবস্থাপনা এবং সাইট ম্যানেজমেন্টের জন্য গুগল সাইটম্যাপও একটি কার্যকরি ফিচার।
মোবাইল (Mobile): ম্যাজেন্টোর আরেকটি অসাধারন ফিচার রয়েছে, যা অনেকেরই নজর কাড়ে। নেভিগেশন বারে ক্যাটালগের ঠিক পরেই মোবাইল নামক একটি মেনু রয়েছে।এতে রয়েছে দারুন সব সুবিধা। আপনি একজন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভলপার না হলেও কয়েক মিনিটেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন আপনার সাইটের জন্য স্মার্ট ফোন অ্যাপ্লিকেশন।আইপ্যাড, আইফোন এবং এন্ড্রোয়েড স্মার্টফোনের জন্য কয়েক মিনিট সময় ব্যয় করলেই তৈরী হয়ে যাবে আপনার সাইটের জন্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন।পুরো সিস্টেমটি পরিচালনার জন্য ম্যানেজ অ্যাপস, সাবমিশন হিস্টোরি, মেসেজ টেমপ্লেটস, মেসেজ কিউই, এডমিন অ্যাপ্লিকেশন সেটিংস নামে বেশ কিছু অপশন আছে সেখানে। একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলেই পুরো ব্যাবস্থাপনাই শিখে নিতে পারবেন অল্প সময়েরমধ্যেই।
কাস্টমারস (Customers): নেভিগেশন মেনু বারে মোবাইলের পরেই যে মেনুটি রয়েছে, তা হচ্ছে কাস্টমারস। অর্থাৎ আপনার সাইটের যাবতীয় ক্রেতার তথ্যগুলোর ব্যাবস্থাপনা এই মেনু থেকে পরিচালিত করা সম্ভব।এখানে ম্যানেজ কাস্টমারস, কাস্টমার গ্রুপস এবং অনলাইন কাস্টমারস নামে তিনটি শাখা রয়েছে। ম্যানেজ কাস্টমার থেকে আপনি কাস্টমারের যাবতীয় দরকারি তথ্য (নাম, কন্টাক্ট ইনফরমেশন, লোকেশন, আইডি, রেজিস্ট্রেশনের সময়কাল ইত্যাদি) দেখতে এবং যাচাই করে নিতে পারবেন। সুবিধামত সম্পাদন, বর্জন করতে পারবেন। কাস্টমার গ্রুপস অপশনটি মূলত আপনার ক্রেতাদেরকে আপনার সাইটের সাধারন, খুচরা, পাইকারী, বিনা-নিবন্ধনকৃত ইত্যাদি শ্রেনীতে বিভক্ত করে দেয়। যার মাধ্যমে আপনি আপনার ক্রেতাদেরকে খুব সহজেই সনাক্ত করতে পারবেন। এছাড়াও অনলাইন কাস্টমার অপশনের মাধ্যমে আপনি দেখতে পারবেন কোন কাস্টমার বা ভিজিটর এই মূহুর্তে আপনার সাইটে ভিজিট করছে এবং কোন পেজে আছে। এর ফলে কাস্টমার বিহ্যাভিয়ার সম্পর্কে আপনি একটি পরিষ্কার ধারনা নিতে পারবেন খুব সহজেই।
প্রোমোশনস (Promotions): আপনি যদি আপনার ক্রেতাদের জন্য কোনো বিশষ প্রোমোশনের ব্যাবস্থা করতে চান (যেমনঃ- ৫০০০ টাকার অধিক শপিং এ ৫% মূল্য ছাড়) তাহলে তা এই মেনুর সাহায্যে ব্যাবস্থাপনা করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াটিকে দুইটি পদ্ধতিতে পরিচালনা করতে পারবেন।
ক্যাটালগ প্রাইস রুলস (Catalog Price Rules): এই পদ্ধতিতে আপনার সাইটে থাকা বিভিন্ন পন্যের উপর ভিন্ন ভিন্ন ধরনের মূল্যছাড় থাকতে পারে (যেমনঃ- শার্টে ১০% মূল্য ছাড়, প্যান্টে ৫% মূল্য ছাড়) এবং ইনভয়েসের সময় প্রত্যোকটি পন্য থেকে তখন সেটার ছাড়কৃত মূল্য আলাদা আলাদা হিসাবে কর্তন করে মোট শপিং এর বিল তৈরী করবে।
শপিং কার্ট প্রাইস রুলস (Shopping Cart Price Rules): এই নিয়মের আওতায় একজন ক্রেতা তার মোট শপিং এর উপর একটি নির্ধারিত (৫%, ১০%) ছাড় পাবেন। এবং বিলের মোট টাকা থেকে ছাড়কৃত মূল্য একসাথে কর্তন করা হবে।
উভয় প্রক্রিয়াকেই ক্রেতাভেদে (খুচরা, পাইকারি, সাধারন ইত্যাদি) ভিন্ন ভিন্ন ডিসকাউন্ট এমাউন্টের মোড়কে সাজানো যায়, এবং ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালা নির্ধারন করে দেওয়া যায়। এই প্রক্রিয়ায় আপনি ক্রেতাকে একটি কূপন কোডের মাধ্যমে তার ছাড়ের পরিমান বেঁধে দিতে পারবেন।
নিউজলেটার (Newsletter): প্রোমোশনের পরে আরেকটি অতি দরকারি ফিচার/মেনু রয়েছে ম্যাজেন্টোতে। তা হচ্ছে নিউজলেটার। এই নিউজলেটার সম্পর্কে নতুন করে হয়তো আপনাকে জানাতে হবে না। তবুও একটু বলছি। নিউজলেটারের মাধ্যমে আপনি আপনার সাইটের বিভিন্ন প্রোমোশনাল অফার (সাপ্তাহিক, মাসিক, বার্ষিক, বিশেষ দিন, বিশেষ পন্য ইত্যাদির) আপনার সাইটের ক্রেতা, সাবস্ক্রাইবার/গ্রাহকের ইমেইলে পাঠাতে পারবেন। এর জন্য নিউজলেটার মেনুতে কিছু বিশেষ অপশন যুক্ত করা আছে। এখানে আপনি যেকোনো নিউজলেটারের টেমপ্লেট কোড যুক্ত করতে পারবেন। রয়েছে গ্রাহক লিষ্টের একটি বিশেষ প্যানেল। এছাড়া নিউজলেটার কিউই, এবং নিউজলেটার পাঠানোর সমস্যা সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট অপশনও রয়েছে, যার মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটাকে আপনি খুব সহজেই ব্যাবস্থাপনা করতে পারবেন।
সিএমএস (CMS): সাইটের তথ্য সংযুক্তি এবং তার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ম্যাজেন্টোতে আরও একটি বিশেষ মেনু রয়েছে, যার নাম সিএমএস। এই মেনুতে বেশ কিছু অপশন রয়েছে। প্রথমেই আছে পেজ ম্যানেজমেন্টের একটি অপশন। এখান থেকে আপনার সাইটের মূল পেজগুলো, (হোম, এবাউট আস, প্রাইভেসি পলিসি, টার্মস এন্ড কন্ডিশন্স ইত্যাদি) সংযুক্ত, সম্পাদনা এবং মুছে ফেলার কাজটি সেরে নিতে পারবেন। এছাড়াও থিমের তথ্য এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রয়েছে একটি স্ট্যাটিক ব্লক অপশন, যেখানে কিছু খুটিনাটি তথ্য আপনি সাইটের বিভিন্ন অংশে যুক্ত করে নিতে পারবেন। এরপর উইজেট নামে আরেকটি অপশন আছে। প্রয়োজন মত সেখানে আপনি নতুন উইজেট যুক্ত করতে পারবেন। সবার শেষে এই মেনুতে খুবই চমকপ্রদ একটি অপশন রয়েছে, যার নাম পুল/কমিউনিটি পুল। এই পুল অপশনের সাহায্যে আপনি বিভিন্ন সময় আপনার ক্রেতা, গ্রাহক এবং ভিজিটরদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে ধরে, তার সমাধান এবং তাদের অভজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। যা আপনার ব্যাবসায়িক চিন্তাধারাকে উন্নত করতে, পন্যের মান, ধরন উন্নত করতে এবং বিক্রয় বাড়াতে সহযোগী ভূমিকা পালন করবে।
রিপোর্টস (Reports): এটি হচ্ছে আপনার সাইটের জন্য সবচেয়ে দরকারি একটি ফিচার। শুরুতেই একবার বলে এসেছি ম্যাজেন্টো ড্যাশবোর্ডেই আপনার সাইটের রিপোর্টের একটা ওভারভিউ দেওয়া থাকে। কিন্তু এরপরও যদি আপনার সাইটের প্রত্যোকটি রিপোর্টই আপনি বিস্তর ভাবে জানতে এবং দেখতে চান, তাহলে আপনার জন্য সুখবর। ম্যাজেন্টোর এই রিপোর্ট মেনুতে আপনি আপনার সাইটের সার্বিক রিপোর্টকে আলাদা আলাদা করে বিস্তর ভাবে দেখতে এবং জানতে পারবেন।
এখানে পাবেন সেলস সংক্রান্ত যাবতীয় রিপোর্ট যা এ যাবৎ পর্যন্ত আপনার সাইট থেকে হয়েছে। এই তথ্যগুলো অর্ডার, ট্যাক্স, ইনভয়েস, শিপিং, রিফান্ড, কুপন এবং পেপাল সেটেলমেন্টস শীর্ষক শ্রেণীভেদে আলাদা আলাদা ভাবে দেখতে পারবেন।
রয়েছে কার্টের রিপোর্ট অপশন, যেখান থেকে কার্টে সংযুক্ত হওয়া সকল পন্যের লিষ্ট এবং অ্যাবডোনেড কার্ট রিপোর্টগুলো দেখতে পারবেন।
এরপর দেখতে পারবেন পন্য ভিত্তিক রিপোর্ট। সর্বাধিক পরিমান বিক্রি হওয়া পন্য, মোট অর্ডার, সর্বাধিকবার দেখা পন্য, স্টক ফুরিয়ে আসা পন্য এবং অ্যাপ্লিকেশন বেইজড পন্য থাকলে তার ডাউনলোডের পরিমানের রিপোর্টগুলো এখান থেকে আলাদা আলাদা ভাবে দেখতে পারবেন।
এরপর রয়েছে কাস্টমার রিপোর্ট অপশন। এখান থেকে আপনি আপনার সকল ক্রেতার একাউন্টের লিষ্ট, সর্বাধিক পরিমান অর্ডারকারী কাস্টমার, অর্ডার সংখ্যার ভিত্তিতে কাস্টমার লিষ্ট গুলো দেখতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি আপনার কাস্টমারের চাহিদা সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং উন্নত সেবার মান নিশ্চিত করতে পারবেন।
এরপর রয়েছে ট্যাগ রিপোর্ট অপশন, এখান থেকে কাস্টমার, প্রোডাক্ট এবং পপুলার ট্যাগ গুলোর রিপোর্টগুলো আলাদা আলাদা লিষ্ট আকারে দেখতে পারবেন।
এরপর রয়েছে রিভিউ রিপোর্ট অপশন। এখান থেকে পন্যের এবং ক্রেতার রিভিউ গুলো আলাদা আলাদা লিষ্ট আকারে দেখতে পারবেন।
সবার নিচে যে রিপোর্ট অপশনটি রয়েছে তা হচ্ছে সার্চ টার্ম। এই অপশনের মধমে কবে, কখন, কোন পন্যটি আপনার সাইট থেকে সার্চ করা হয়েছে তার একটা লিষ্ট আপনি দেখতে পারবেন।
প্রতিটি রিপোর্টই কিছু এডভান্স সার্চের সাহায্যে শর্ট করে দেখতে পারেন, সময়, দিন, সপ্তাহ, মাস বছর ইত্যাদির ভিত্তিতে।
সবার শেষে একটি মেনু রয়েছে যেটা দিয়ে সম্পূর্ণ তথ্যগুলোকে রিফ্রেশ করতে সাহায্য করে।
সিস্টেমস (Systems): ম্যাজেন্টো এডমিন প্যানেলের নেভিগেশন বারের সর্বশেষ মেনুটি হচ্ছে এই সিস্টেমস। এর অনেকগুলো সাবমেনু এবং এসব সাব-মেনুর সঙ্গে অসংখ্য ফিচার এবং অপশনস রয়েছে, যার পূর্ণাঙ্গ বর্ননা এই পোষ্টে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও কিছু সাধারন ধারনা দিচ্ছি।
এই সেকশন থেকেই মূলত পুরো সাইটের নিয়ন্ত্রন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়ে থাকে। সিস্টেমস মেনুর শুরুতেই আছে মাই একাউন্ট অপশনস, যেখান থেকে এডমিন যেকোনো সময় তার ব্যক্তিগত তথ্য, ইমেইল, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।
এছাড়াও নোটিফিকেশন, টুলস, ওয়েব সার্ভিস, ডিজাইন, ইম্পোর্ট/এক্সপোর্ট, কারেঞ্চি ম্যানেজমেন্ট, ট্রান্সেকশনাল ইমেইল, কাস্টম ভ্যারিএবলস, পারমিশন (ইউজার, রোলস), ম্যাজেন্টো কানেক্ট ম্যানেজার, পাকেজ এক্সটেনশন, ক্যাস ম্যানেজমেন্ট, ইনডেক্স ম্যানেজমেন্ট, স্টোর ম্যানেজমেন্ট, অর্ডার স্ট্যাটাস, কনফিগারেশন, এসইও সহ ডিজাইন এবং ডেভলপমেন্ট সংশ্লিষ্ট সকল অপশন এখানে রয়েছে। সব অপশনের নাম কাজ উল্লেখ করতে পারলাম না। তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
মূলত ম্যাজেন্টো সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ বিবৃতি দিতে হলে ছয় মাস-এক বছরের একটি বিশেষ কোর্সের আয়োজন করতে হয়, তারপরও সব বিষয় সম্পর্কে তথ্য দেওয়া সম্ভব কিনা সে ব্যাপারে আমি সন্দিহান।
শেষ কথাঃ নিজের অভজ্ঞতা আর স্বল্প দক্ষতার আলোকে যতদূর সম্ভব হয়েছে আপনাদের সামনে একটি সংক্ষিপ্ত ধারনার আলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম মাত্র।
একটি কথা না বললেই নয় সিএমএস পরিচালনা খুব কষ্ট সাধ্য কিছু নয়, একটু সময় নিয়ে ফিচারগুলোর ব্যাবহার শিখে নেওয়াটাই মূখ্য বিষয়। আমি মূলত যে ফিচার গুলো সম্পর্কে আপনাদের ধারনা দিলাম, তাতে অনেকেরই হয়তো বুঝতে বাকি নেই যে, ই-কমার্স সিএমএস ব্যাবহার করলে অতিরিক্ত কোনো বিলিং, পস, স্টক ম্যানেজমেন্ট সফটওয়ার এর তেমন কোনো প্রয়োজন হয় না। শুধু ম্যানেজমেন্ট এর প্রক্রিয়াটা বুঝে নেওয়াটাই সময়ের ব্যাপার। আর ম্যজেন্টো সে ক্ষেত্রে একটি দারুন অপশন।
আগেও কয়েকবার বলেছি, আবারও বলছি ম্যাজেন্টো হচ্ছে ই-কমার্স সাইটের একটি পূর্ণাঙ্গ সিএমএস। ই-কমার্স ভিত্তিক এমন কোনো ফিচার নেই যা আপনি ম্যাজেন্টোতে পাবেন না।
আমার প্রদত্ত তথ্যে যদি কোনো ভুলত্রুটি থেকে থাকে তাহলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। মনে চাইলে সংশোধন করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। এটা ই-ক্যাব ব্লগের ইতিহাসের এযাবৎ পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ পোষ্ট। কাজেই এতটা ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, ই-ক্যাবের সঙ্গেই থাকুন।
ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্রঃ ম্যাজেন্টো এডমিন প্যানেল
ভার্সনঃ ১.৮.১.০
আরও জানতে ভিজিট করুন http://magento.com
অথবা, http://www.magentocommerce.com
আরও পড়তে পারেনঃ
ই-কমার্স সাইটের জন্য কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS) নির্বাচন
ফেইসবুক বিজ্ঞাপনের কন্টেন্ট সংগ্রহঃ ওয়েবসাইট প্রোমোট
ফেইসবুক বিজ্ঞাপনের কন্টেন্ট সংগ্রহঃ পোষ্ট বুস্ট/পোষ্ট এংগ্যাজমেন্ট
ফেইসবুক বিজ্ঞাপনের কন্টেন্ট সংগ্রহঃ পেজ প্রোমোট
পণ্য সীমাবদ্ধতা ও মান নিয়ন্ত্রনের উপায়
ই-কমার্সের সম্ভাবনা ও প্রস্তাবনা
11,294 total views, 3 views today