আবুল খায়ের
ই-ক্যাব ব্লগে লেখা এটা আমার প্রথম পোষ্ট। কার কাছে কেমন লাগবে জানিনা। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে উল্লেখিত প্রস্তাবনাটি বাস্তবায়ন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি। পাশাপাশি সাধ্যমত চেষ্টা করেছি আপনাদের সামনে সেটা তুলে ধরার। যেমনটা নিজে ভেবেছি হুবহু সেভাবে তুলে ধরতে পারিনি। তবে চেষ্টার কোনো কমতি রাখিনি। পোষ্টটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যদি আপনি একজন ই-কমার্স নির্ভর উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন। সুতরাং পড়ে দেখার অনুরোধ রইলো।
ই-কমার্স মার্কেটপ্লেসটা এখনো সেভাবে গ্রাহক আস্থা অর্জন করতে পারে নি, যতটা আমরা ই-কমার্স উদ্যোক্তারা চাচ্ছি। বেশ কিছু দিন যাবত আমি খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি এর পিছনে কোন কোন কারন কাজ করছে।
তো প্রাথমিকভাবে আমি কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি।
এরপর সাধ্যমত এসব প্রশ্নের উত্তরও খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি।
তো যে সমাধান আমি পেয়েছি সেটা বাস্তবায়ণ করার জন্য ই-ক্যাবের বিকল্প কোনো মাধ্যম আপাতত আমার চোখে পড়ছে না।
আমি ই-ক্যাবের জন্য মোটামুটি একটা প্রস্তাবনা তৈরী করেছি। এবং এটাকে তাদের কমিটির সামনে তুলে ধরার আহবান জানাচ্ছি।
তো আর কথা না বাড়িয়ে আমি আমার প্রস্তাবনায় চলে যাচ্ছি।
ই-কমার্স বিজনেসের সূচনা হয়েছে বেশি দিন হয় নি। বিশ্ব ব্যাপি যদি বলি তাহলে বার থেকে পনের বছর হল। তবে সর্বসাধারনের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে আরো অনেক পরে। ছয়-সাত বছর হবে হয় তো।
কাজেই এ সেক্টরে খুব অভিজ্ঞ লোকের সংখ্যা খুবই কম।
আর বাংলাদেশের কথা যদি চিন্তা করি, তাহলে তো স্ক্রিলড লোক নেই বললেই চলে।
কারন, আমাদের দেশে ই কমার্স প্রতিষ্ঠিতই হয়েছে পাঁচ-ছয় বছর হবে হয় তো। আর ভোক্তা সাধারনের কাছে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে তের সালের মাঝামঝি তে গিয়ে।
প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিও বলতে গেলে হাতেগোনা কয়েকটা। তাও খুব প্রতিষ্ঠিত না। ইফেক্টিভ মার্কেটিং এর দরুণ পরিচিতি পেয়েছে।
ট্রান্সপোর্ট সমস্যা, অনুকূল ব্যাবসায়িক পরিবেশের অভাব তো রয়েছেই বটে। তার উপর আবার একেক কোম্পানী একেক রকম নীতিমালার উপর ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সুনির্ধারিত কোনো নিয়ম কোনো কোম্পানীই আমার মনে হয় মেনে চলে না। প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা মূল্য নির্ধারনী নীতিমালা, আলাদা ডেলিভারি পলিসি, আলাদা পেমেন্ট মেথড। সর্বপরি অনলাইনে যেসব কাষ্টমাররা কেনাকাটার প্রতি অভ্যস্ত হতে যাচ্ছে তারাও বিভ্রান্ত হচ্ছে আর নতুন কাষ্টমার তৈরীর সম্ভাবনা তো অবশ্যই হুমকির মুখে।
সব চেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ইতিমধ্যেই দেশে হাজার হাজার ই-কমার্স/এফ-কমার্স কোম্পানী চালু হয়ে গেছে। তার মধ্যে অনেকে হুজুগেও নেমে পড়েছেন, ই-কমার্স ব্যাবসার সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত না হয়েই। হয়তো আমি নিজেও এই লিস্টের একজন। তবে সুসংবাদ হচ্ছে, সমস্যা যেহেতু আছে কাজেই তার সমাধানও আছে। খুঁজে বের করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
আমার প্রাথমিক সমাধান হচ্ছে, এসব ছোট, বড়, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোম্পানি গুলোকে আগে একটা নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসা। সে ক্ষেত্রে গ্রাহক বিভ্রান্তি অনেকাংশে দূর হবে।
তো ই-ক্যাব সে ক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করতে পারে? প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে। হ্যাঁ তো ই-ক্যাবের কাছে আমার প্রস্তাবনা হচ্ছে,
- প্রথমত ই-ক্যাবে একটা নতুন উইং যুক্ত করা। অর্থাৎ সকল ই-কমার্স কোম্পানীদের নিয়ে একটা রেগুলেটরি কমিশন গঠন করা।
- এক্ষেত্রে সকল ইকমার্স কোম্পানীদের ই-ক্যাবের সদস্য করে নেওয়া। সদস্যদের দুইটি মানদন্ডের উপর ভিত্তি করে যুক্ত করা। রেজিস্টার্ড এবং আনরেজিস্টার্ড।
যেহেতু অলরেডি ই-ক্যাবে রেজিস্টার্ড সদস্য প্যানেল রয়েছে। এটা আগের মতই রাখা। রেজিস্টার্ড সদস্যরা সবক্ষেত্রেই অগ্রাধিকার পাবে। বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে।
এতে হবে কি, নির্দিষ্ট রেগুলেশন মেনে চলে সব কোম্পানীই বিজনেস বান্ধব মার্কেটপ্লেস তৈরী করতে পারবে। ইচ্ছামত বিজনেস পলিসি প্রণয়ন করে মার্কেটপ্লেসটা নষ্ট করতে পারবে না।
কোম্পানী গুলো নিজেদেরকে ই-ক্যাবের সদস্য দাবি করতে পারবে। পাশাপাশি ই-ক্যাবের বিশেষ মনিটরিং এর মধ্যে থাকতে পারবে। এতে করে কাষ্টমাররাও বিভ্রান্ত হবে না। কারন তারা জানবে ই-ক্যাবের সদস্য কোম্পানীগুলো একই নীতিমালা মেনে বিজনেস করে। আস্থা তৈরী হবে অনলাইন শপিং এর প্রতি।
এতে ই-ক্যাবের কী লাভ?
ই-ক্যাব তাদের রেজিস্টার্ড সদস্য কোম্পানী গুলোর পাশাপাশি আনরেজিস্টার্ড কোম্পানী গুলোর ডেটা সহজেই সংগ্রহ করতে পারবে। যাদের ভবিষ্যত রেজিস্টার্ড কোম্পানী হিসেবে পাওয়ার সুনিশ্চিত সম্ভাবনা থাকবে। পন্য, কোয়ালিটি, মার্কেটিং, পেমেন্টমেথড, ডেলিভারি পলিসি সব ক্ষেত্রেই ই-ক্যাব একটি সুনির্ধারিত নিয়ম বেঁধে দিতে পারবে। যাতে করে ই-ক্যাব সহ পুরো মার্কেটপ্লসের সুনাম বাড়বে। ক্রেতা বাড়বে, বিক্রেতারা সুফল পাবে। আর মার্কেটপ্লেস বাঁচলেই ই-ক্যাব বাঁচবে। ব্যাবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এককথায় সবাই লাভবান হতে পারবে।
পন্য, কোয়ালিটি, পেমেন্ট এবং ডেলিভারী নীতি নির্ধারনের ব্যাপারেও আমার কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে। পরবর্তী পোষ্ট গুলোতে ধারাবাহিক ভাবে এগুলো তুলে ধরবো ইনশা আল্লাহ।
ধৈর্য ধরে লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
9,934 total views, 2 views today