বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসার ও জনপ্রিয়তা এখন উন্নয়নশীল। খুব বেশি দিন হয়ত লাগবেনা সেদিন আসতে যেদিন এটি হবে তরুণ প্রজন্মের উপার্জনের একমাত্র ও প্রধান মাধ্যম। খুব বেশি ভালো লাগা কাজ করে যখন এই ব্যবসার সাথে জড়িত মানুষজনের মাঝে বসে তাদের আলাপ আলোচনা শুনি। ভালো লাগে কারণ, সে সময়টা হয়ত আমরা পিছনে ফেলে এসেছি যখন মানুষ অযথা বসে বসে সময় নষ্ট করত। নিজের উপার্জনের সময়টা হেলায় হেলায় পার করে দিত। এখনকার তরুণ প্রজন্ম খুব বুদ্ধিদীপ্ত এবং তারা যেসব বিষয় নিয়ে কথা বার্তা বলে আমার আফসোস হয় আমি আমার অলস সময় গুলোতে এই ধরনের আড্ডা কোথাও পাইনি।
ই-কমার্সের ব্যপকতা নিয়ে আমার তেমন কোন ধারণা কখনো ছিলোনা এবং এখনো নেই। তবে কন্টেন্ট নিয়ে ঘাটাঘাটি করার সুযোগ অনেক হয়েছে। তাই আমার টপিক “কন্টেন্ট” এবং আপনাদের টপিক “ই-কমার্স” এই দুটি জিনিসের সমন্বয়ে এই লেখাটি লেখার সাহস করলাম।
একটি পরিস্থিতির কথা চিন্তা করি …
ধরুন, আপনার একটি সাইট আছে যেটি দিয়ে আপনি ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করেন। বাংলাদেশে যেহেতু এখনো ই-কমার্স এর প্রতিযোগিতা লক্ষণীয় পর্যায়ে যায়নি তাই আপনি খুব ভালোভাবে ব্যবসায় লাভবান হচ্ছেন কোনরকম বাঁধা ছাড়াই। কিছুদিন পর যখন আপনার মত একই ধরনের ব্যবসা এবং আপনার মত প্রোডাক্ট নিয়ে আরও ১০ টি কোম্পানি মার্কেটে চলে আসবে তখন কি আপনার ব্যবসা একই ভাবে চলবে? আপনি কি আজকের মত সমপরিমাণে প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবেন?
পারবেন না। না পারার কারণ হল, গুগল। একই প্রোডাক্ট নিয়ে যখন একজন ক্রেতা গুগলে সার্চ করবে তখন আপনার সাইটের পাশাপাশি সেই ১০ টি সাইট ও গুগলে দেখাবে। ক্রেতা তখন কার সাইটে যাবে এবং কার প্রোডাক্ট টি কিনবে বলতে পারবেন? একই প্রোডাক্ট এবং একই গুণাগুণ থাকার পরেও সব সাইট কিন্তু প্রোডাক্ট কেনার উপযোগী হবেনা। তখন সেই সাইট টি থেকেই ক্রেতা প্রোডাক্ট টি কিনবে যেটির কন্টেন্ট খুব গুছানো থাকবে এবং পরিষ্কার বিবরণ থাকবে। সত্যিকার অর্থে ঠিক তখনই কন্টেন্ট এর আসল গুরুত্ব টি প্রকাশ পাবে।
চলুন কন্টেন্ট এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে একটু ভালভাবে জেনে নেই। এই প্রয়োজনীয়তা গুলো বিশ্বের সেরা কিছু ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রকাশিত যারা ইতোমধ্যে এই ব্যবসায় সফল।
১। ব্যবসায়ে দূরদর্শিতা বাড়াতে
সাধারণত, ভালো ব্যবসায়ীরা কখনো শর্টকাট খোঁজে না। তারা একটি দীর্ঘকালীন চিন্তা নিয়ে ব্যবসা চালায়। আপনার উদ্দেশ্য যখন থাকবে অল্প সময়ে কিছু ক্রেতা যোগাড় করে খুব সহজেই প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবেন তাহলে সেটা খুব বেশি একটা ব্যবসায়িক লাভ আপনাকে এনে দিতে পারবেনা। আর অনলাইন ব্যবসা দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখার জন্য কন্টেন্ট এর উপর নজর দিতে হবে আজকে থেকেই।
২। নির্দিষ্ট কিছু ক্রেতা খুঁজতে
একমাত্র একটি সুগঠিত কন্টেন্ট পারে আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার কাছে আপনাকে ও আপনার প্রোডাক্ট সহজেই পৌঁছে দিতে। যারা সব ধরনের ক্রেতা লক্ষ্য করে মার্কেটে আসে তাদের চেয়ে যারা নির্দিষ্ট কিছু ক্রেতা টার্গেট করে মার্কেটে আসে তাদের সফল হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। একমাত্র সঠিক ভাবে এসইও সম্পন্ন কন্টেন্ট আপনার ক্রেতার কাছে নিয়ে যাবে অনয়াসে।
৩। মার্কেটিং এর চাপ কমাতে
সুগঠিত ও সঠিক ভাবে লেখা একটি প্রোডাক্ট কন্টেন্ট খুব সহজেই গুগলের মাধ্যমে আপনার চাহিদা মত ক্রেতার কাছে আপনার প্রোডাক্ট টি পৌঁছে যাবে। এতে করে আপনাকে আর আগের মত জোড়াল মার্কেটিং করা প্রয়োজন হবে না।
৪। নতুন ক্রেতার বিশ্বাস যোগাতে
অনেক সময় যারা নতুন ক্রেতা তারা কোন প্রকার ঝামেলায় জড়াতে চান না তাই তারা স্থায়ী ও টেকসই কোন সাইট থেকেই নিজেদের পণ্যটি কিনে ফেলেন। নতুন কোন সাইটে তারা তখনই যান যখন নজরকাড়া কোন লেখা বা বর্ণনা খুঁজে পান। তাই পুরনো কাস্টমার এর পাশাপাশি নতুন ক্রেতা ধরে রাখতেও আপনাকে কন্টেন্ট এর উপর নজর দিতে হবে।
৫। প্রোডাক্টের নিজস্বতা বোঝাতে
আপনার প্রোডাক্ট টি কেন ভালো, কেন লোকে সেটা কিনবে এবং কেন সেটি অন্য কোথাও ভালো পাওয়া যাবে না এইসব জিনিস আপনি খুব সহজ ভাষায় কন্টেন্ট এর মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে পারবেন যেটি শুধুমাত্র প্রোডাক্ট ফটো থেকে বোঝা সম্ভব নয়।
৬। গুগলকে আপন করে নিতে
গুগলের প্রধান এবং প্রথম শর্ত হল মান সম্মত কন্টেন্ট। যে ওয়েব সাইটে যত ভালো কন্টেন্ট থাকবে গুগল সেটিকে তত ভালো ভাবে প্রথম দিকে জায়গা করে দিবে। অনলাইনে ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই গুগলের মত করে চলাটাই ভালো তা না হলে, ভালো মানের ক্রেতা পাওয়া সম্ভব হবে না।
৭। আপনার ক্রেতা সবসময় আপনারই রাখার জন্য
ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, যেকোনো মূল্যে ক্রেতা ধরে রাখতে হবে। ক্রেতা ধরে রাখতে হলে আপনাকে নতুন কিছু দিতে হবে ক্রমাগত। তাই ক্রেতা কে নতুন আঙ্গিকে কন্টেন্ট তৈরি করে দিন এবং সেটি হালনাগাদ করুন ক্রমাগত। আপনার ক্রেতা আপনারই থাকবে।
উপরে খুব অল্প পরিসরে কন্টেন্ট এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। আরও ভালোভাবে জানার জন্য নিচে দেয়া লিঙ্ক গুলো দেখতে পারেন। সবাইকে যার যার ব্যবসায়ে সফল হবার আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।
Source:
http://www.marketing-jive.com/2010/03/content-development-importance-of-brand.html
http://www.sitesuite.com.au/article/the-importance-of-ecommerce-product-descriptions
http://www.saydaily.com/2014/06/8-e-commerce-sites-with-fantastic-editorial-content
https://ecommerce.shopify.com/guides/ecommerce-seo-101/seo-content-tutorial
http://www.practicalecommerce.com/articles/72165-SEO-101-Part-8-Content-Optimization
লেখকঃ মোহাম্মাদ ইসমাইল হোসেন
6,129 total views, 3 views today
