আমি ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরীর পাশাপাশি কন্টেন্ট লিখি শখের বশে। বছরখানিক হল লেখালেখির সাথে জড়িত। আমার লেখালেখির বেশির ভাগ বিষয় প্রোডাক্ট রিভিউ। কখনো মোবাইল, কখনো ল্যাপটপ, কখনো ট্যাব, কখনো মুভি, কখনো পাওয়ার ডিভাইস, কখনো সফটওয়্যার, কখনো মোবাইল অ্যাপ, কখনো বা দৈনিক ব্যবহৃত জিনিস পত্র। যখন যেটা পেয়েছি সেটা নিয়েই লিখেছি। প্রায় ২০০ এর মত প্রোডাক্ট রিভিউ লিখেছি এখন পর্যন্ত। আর অন্যান্য লেখালেখি তো আছেই। যদিও পুরোপুরি এখনো শিখতে পারিনি।
প্রোডাক্ট রিভিউ নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করছি আজ। মূলত প্রোডাক্ট রিভিউ কিভাবে লিখতে হয় সেটা নিয়েই লিখব। সূত্রানুসারে কিভাবে লেখে সেটা এখনো আয়ত্ত করতে পারিনি। তবে আমি এতদিন যেভাবে লিখে এসেছি সেটাই লিখব।
প্রথমে জেনে নেই প্রোডাক্ট রিভিউ কি?
একটি নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট এর ভালো মন্দ সবকিছু বিবেচনা করে পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা লিখাকেই প্রোডাক্ট রিভিউ বলে।
প্রোডাক্ট রিভিউ কেন ও কখন প্রয়োজন?
আমরা প্রতিনিয়ত কোন না কোন প্রোডাক্ট কেনাকাটা করি। কখনো শপিং মল, কখনো দোকানে, কখনো বা ঘরে বসেই। কিছু কিছু প্রোডাক্ট আছে যা প্রয়োজন দৈনন্দিন জীবিকার তাগিদে। কিছু জিনিস শখের প্রয়োজনে। কিছু বেশি দামী আবার কিছু কম দামী। দৈনন্দিন দরকারি জিনিস কেনার ক্ষেত্রে আমরা খুব বেশি একটা রিভিউ নির্ভর না। কিন্তু যখন জিনিসটা শখের হয় আর দামী হয় তখন আমরা সেটার রিভিউ একবার হলেও ইন্টারনেট এ দেখে তারপর কিনব কিনা সিদ্ধান্ত নেই।
রিভিউ জিনিসটা খুব ই প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী।
কিভাবে লিখবেন সেটার কিছু ধাপ নিচে খুব সামান্য আকারে দিলামঃ
১। সাধারণ বর্ণনা
প্রথমেই কিছু সাধারণ বর্ণনা দিতে হবে প্রোডাক্ট সম্পর্কে এবং কিছু বর্ণনা দিতে হবে প্রোডাক্ট নির্মাতা কোম্পানি সম্পর্কে। কোম্পানির মার্কেট আর প্রোডাক্ট তালিকা দিতে পারলে আরও ভালো হয়।
২। ফিচার গুলো একসাথে লিস্ট আকারে লিখে দিন
কোম্পানি প্রদত্ত ফিচার গুলো একসাথে লিখে দিন। লিস্ট আকারে দিলে সহজেই ক্রেতার নজর কাড়বে। কিছু কিছু প্রোডাক্ট এর ক্ষেত্রে DATASHEET থেকে ফিচার জেনে নিতে হতে পারে।
৩। কিছু পজিটিভ দিক তুলে ধরুন আপনার লেখায়
আপনার দেয়া উপরের ফিচার গুলো থেকে প্রোডাক্টটি সম্পর্কে কিছু ভালো গুণাগুণ আলাদা করে লিখে ফেলুন। লিস্ট আকারেও দিতে পারেন।
৪। কিছু নেগেটিভ দিক লিখে ফেলুন
সম্পূর্ণ ফিচার থেকে প্রোডাক্টটি সম্পর্কে কিছু খারাপ দিক সম্পর্কে একসাথে লিখে ফেলুন। এই খারাপ দিক গুলোর প্রভাব সম্পর্কেও লিখতে হবে খেয়াল করে।
৫। প্রোডাক্ট টি সম্পর্কে আপনার মতামত দিন
ভালো খারাপ দুটি দিকই বিবেচনা করে আপনার মতামত টি লিখে ফেলুন। মনে রাখবেন আপনার মতামত এর উপর ক্রেতার সিদ্ধান্ত অনেকটা নির্ভর করবে তাই ভেবে চিন্তে মতামত দিন।
৬। উপযুক্ত ছবি দেয়া জরুরি
অন্তত একটি নান্দনিক এর ফটো দিন। খেয়াল রাখবেন ফটো টি যেন ভালো রেজুলেশন এর হয়। কারণ ক্রেতা এই ফটো দেখেই আপনার বিবরণের মিল দেখার চেষ্টা করবেন। ফটো টি অবশ্যই কালার হতে হবে। সাদা কাল ফটো কখনোই বস্তুর সঠিক অবস্থা ব্যাখ্যা করতে পারেনা। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকাটা অত্যাবশ্যক।
৭। অভিজ্ঞদের মতামত
যারা ইতিমধ্যে আপনার বর্ণিত প্রোডাক্টটি ব্যবহার করেছে তাদের মতামত টি যদি সম্ভব হয় দিয়ে দিতে হবে। এতে করে প্রোডাক্টটি কেনার ব্যাপারে ক্রেতা সঠিক ফলাফলটি দেখতে পাবে। একটি প্রোডাক্ট ক্রেতারা এক এক জন এক এক উদ্দেশ্যে কিনে তাই নির্দিষ্ট কিছু টপিক এর উপর ওই প্রোডাক্টের খুব ভালো কিছু তথ্য পাওয়া যায় অভিজ্ঞদের মতামত দেখে।
৮। কিছু বাস্তব সম্মত উপাত্ত দিতে হবে
কিছু কিছু ওয়েবসাইট বিভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে খুব ভালো কিছু তথ্য গবেষণা করে বের করে। এই তথ্যগুলো তারা ক্রেতাদের সুবিধার্থে প্রকাশও করে। এইসব তথ্য যদি অনলাইনে পাওয়া যায় আপনার রিভিউ তে সেটা দিয়ে দিন।
৯। একটি জোরালো সিদ্ধান্ত দিন
উপরে যতখানি বর্ণনা দেয়া হয়েছে তার উপর একটু জোরালো ভাবে আপনাকে কিছু লিখতে হবে। এই ক্ষেত্রে আপনাকে ধরে নিতে হবে প্রোডাক্টটি কিনবে কিনা সেটা নিয়ে ক্রেতা এখনো সন্দিহান। এই পর্যায়ে এসে আপনি তাকে আরেকবার জোরালো কথায় বুঝিয়ে বলুন।
১০। প্রোডাক্টটি কেনার যথাযথ সাইট লিঙ্ক দিয়ে দিন
প্রোডাক্টটি সম্পর্কে সবকিছুই লিখলেন কিন্তু ক্রেতা যদি সেটি কেনার জন্য Google এ খোঁজাখুঁজি করে সময় নষ্ট করতে থাকে তাহলে একটু বিরক্তই হতে পারে। তাই যথাযথ ওয়েবসাইট বা কোম্পানির লিঙ্কটি এই অংশে দিয়ে দিন। ক্রেতা ধরে রাখতে হলে এইটুকু কষ্ট আপনাকে করতেই হবে।
১১। তুলনা প্রদর্শন করুন
যে প্রোডাক্টটি নিয়ে আপনি লিখতে বসেছেন এবং ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছেন সেটির প্রতিযোগী কোম্পানি গুলো খুঁজে বের করুন। আপনার কোম্পানির প্রোডাক্টটির সাথে সেইসব কোম্পানির প্রোডাক্ট এর সাথে একটু COMPARISON CHART বা কিছু বর্ণনামূলক তুলনা প্রদর্শন করুন। অবশ্যই আপনার প্রোডাক্টটি ভালো সেটা বলতে হবে এবং কেন ভালো সেটা আপনাকে একটু ঘুরিয়ে বলতে হবে।
শুরুতে ভাবতাম এইসব লেখালেখি করতে হলে অনলাইনে কাজ করতে হবে। আমি কখনোই ওইভাবে সময় করতে পারি না চাকরীর সুবাদে। কারণ CLIENT এর সাথে কাজ করা মানে বিপুল সময় নিয়ে কাজ DEAL করা। সপ্তাহ দুই হবে RAZIB AHMED ভাই আর E-CAB এর সাথে পরিচয়। যার কারণে লোকাল মার্কেটে প্রোডাক্ট রিভিউ এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারছি। মনে হয় বেশিদিন আর অনলাইনে ঢুঁ মারতে হবেনা। লোকাল মার্কেটেই টুকটাক কাজ পাওয়া যাবে। আমি মন থেকেই আশাবাদী।
এই লেখাটি “প্রোডাক্ট রিভিউ” নিয়ে লেখা আমার প্রথম লেখা। তাই ভুলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। আর RAZIB ভাই ভরসা না দিলে আমি E-CAB গ্রুপে লেখার সাহসটাই পেতাম না হয়ত।
সবশেষে আমার বন্ধু MD SHAHFAYET JINNAH BIDDUT ও তার টিম TechProCircle এর কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞ যাদের কাছ থেকে আমার হাতেখড়ি।
ধন্যবাদ সবাইকে। ভালো থাকবেন।
লেখকঃ Mohammad Ismail Hossain
9,324 total views, 6 views today