Marketing-Your-E-Commerce-Siteই-কমার্স সাইট বিজ্ঞাপন কৌশল

 

অনলাইনে কেনাকাটা বহির্বিশ্বের মত বাংলাদেশে বাড়ছে । আর এ অনলাইন ব্যবসায়ের যুগের শুরু অনেক আগে থেকেই । পৃথিবীতে ২৫ কোটির ওপর বাঙালি আছে সাথে অন্যান্য ভাষাভাষী বাংলাদেশি মানুষ আছে । ক্রেতাদের একটি বড় অংশ তরুণ সমাজ । মূলত ১৮ বছরের ওপরের বাংলাদেশের মানুষদের আমরা যদি ক্রেতা হিসেবে ধরে থাকি তবে কোটি মানুষ ক্রেতা হতে পারে । কিন্তু বাংলাদেশের অনেক মানুষই শিক্ষিত নয় , আবার অনেক শিক্ষিত মানুষই অনলাইনে কেনাকাটা করতে আগ্রহী নন ।

 

অনলাইনে কেনাকাটা করতে না চাওয়ার কারণ অর্থ নিরাপত্তা , সাথে কিভাবে কিনতে হবে তা না জানা এবং পণ্যটি ধরে দেখার কোন সুযোগ নেই । শিক্ষিত সমাজের সমস্যা এটি , কিন্তু যারা শিক্ষিত নয় তারাতো কিনবেই না । কিন্তু না , তাদেরকেও আমাদের ক্রেতা ভাবতে হবে । হতে পারে সেটা অফলাইন এর সাথে সাথে মোবাইলের মাধ্যমে কেনাকাটার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে । মোবাইলের মাধ্যমে যেন ছবি দেখতে পারে মেসেজিং সিস্টেমে , তাও ভেবে দেখতে পারে একজন ই –কমার্স ব্যবসায়ী । সেটা হতে পারে নির্দিষ্ট কিছু প্রোডাক্ট এর ছবি ও মূল্যতালিকা । এটা মূলত সরাসরি যারা ই- কমার্স সাইট ব্যবহার না করে কিনতে চাচ্ছে তাদের জন্যে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে । ক্রেতা না কিনলেও আপনার নামের সাথে এটাকে বিজ্ঞাপন হিসেবে ধরে নিতে পারেন ।

 

উপরের কথাগুলো মূলত টার্গেট ক্রেতার কথা বলা হলো । সেই মানুষগুলোকে ক্রেতা হিসেবে আপনাকেই তৈরি করতে হবে । আর সেইজন্যেই বিভিন্নরকম বিজ্ঞাপন নিয়ে এখন আলোচনা করবো ।

কথা আছে , “প্রচারেই প্রসার” ।

 

বিজ্ঞাপনকে অনলাইন এবং অফলাইন এই দুইধরণের বিজ্ঞাপনে ভাগ করতে পারি ।

অনলাইন বিজ্ঞাপন

অনলাইন বিজ্ঞাপন হিসেবে কোন কোন সাইট কিংবা পন্থা ব্যবহার করবো তা প্রথমেই ভাবতে হবে ।

 

১। লোগোঃ

প্রথমে সুন্দর একটা লোগো থাকতে হবে কোম্পানির । সহজ ও সুন্দর লোগো , যে লোগো মানুষের মনে থেকে যাবে । ঠিক সেইরকম একটা লোগো ও সহজ একটা নাম ব্যবহার করতে হবে ।ধরে নিন এটাই আপনার বিজ্ঞাপনের প্রথম ধাপ । নাম এবং লোগো দিয়েই আপনি প্রথমেই ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে চাচ্ছেন । সেটা অফলাইন কিংবা অনলাইন যেদিকেই হোক ।

 

২। ফেসবুক, টুইটার কিংবা সামাজিক মাধ্যমঃ

প্রথমেই ই-কমার্স সাইটটি সাজানোর পরেই সেই নামে একটা করে পেজ করে ফেলুন । খুব সুন্দর করে কাভার ফটো, পেজের প্রোফাইল ফটো দেন । সেই ফটোগুলো দেখলেই যেন আপনার কোম্পানির সম্পর্কে একটা ধারণা সবাই পেয়ে যায় । তারপর ফেসবুক বিজ্ঞাপন দিতে পারেন পেইড । সাথে আপনার প্রোডাক্ট এর ছবি ও মূল্য তালিকা দিতে পারেন । সাথে অবশ্যই সুন্দর একটা প্রোডাক্ট রিভিউ দিতে ভুলবেন না । ক্রেতা আকৃষ্ট এভাবেই হবে । এরপর চমৎকার রিভিউসহ পোস্টগুলো “বুস্ট পোস্ট” হিসেবে দিতে পারেন । এভাবে সেই ধারাটি সম্ভব হলে প্রায় সময় করুন প্রয়োজন মত ।

 

৩। ইউটিউব ও সাথে সামাজিক মাধ্যমঃ

কয়েক সেকেন্ড কিংবা কয়েক মিনিটের আকর্ষণীয় একটি বিজ্ঞাপন নির্মাণ করুন । চমৎকার একটি গল্প থাকবে যাতে , যা দেখলে মানুষ একবার হলেও মনে করবে ওই বিজ্ঞাপনটি অমুক কোম্পানি নির্মাণ করছে । সাথে অনেকে বলেও বেড়াবে তার পরিচিত মানুষদেরকে আপনার বিজ্ঞাপনের কথা । এর ফলে এই অনলাইন বিজ্ঞাপন মুখে মুখে অফলাইন বিজ্ঞাপনেরও কাজ করবে । হয়ত ভাবছেন এক লক্ষ লোক আপনার বিজ্ঞাপন দেখেছে কিন্তু আসলে এই এক লক্ষ লোকের সাথে আরও অনেক লক্ষ লোক সেই বিজ্ঞাপনের কথা জানলো । আর বিজ্ঞাপনে আপনার কোম্পানির নাম আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করবেন অবশ্যই । সেটা আরও আকর্ষণ বাড়িয়ে তুলবে । ইউটিউবের মাধ্যমে আপলোড করে প্রচার করুন পেজ থেকে কিংবা ফেসবুকে আপনার পেজে আপলোড দিন এবং “বুস্ট পোস্ট” হিসেবে প্রচার করুন । ভালো লাগলে মানুষ আপনার পেজে আসতে থাকবে । প্রচার হবে , সাথে ভালো পণ্য দেখলে কিনতে চাইবে অবশ্যই ।

 

৪। অ্যাপস কিংবা গেইমঃ

চমৎকার তথ্য দেয়ার মত কোন আকর্ষণীয় অ্যাপস করুন আপনার কোম্পানির জন্যে । যেটা ব্যবহার করলে মানুষ অনেক তথ্য পাবে । মনে রাখবেন একটা জনপ্রিয় অ্যাপস কয়েকদিনের মধ্যে কোটি মানুষের কাছে আপনার কোম্পানির নাম পৌঁছিয়ে দিতে সক্ষম। আর গেইমস এর কথাও ঠিক একইরকম । তরুণ কিংবা কিশোরদের কাছে একটা অসাধারণ গেইম আপনার কোম্পানিকে এনে দিতে পারে দারুণ এক সম্ভাবনা।

 

৫। ব্লগিং:

ব্লগিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা করতে পারেন । প্রোডাক্ট ভালো রিভিউ লিখে আপনার প্রতিষ্ঠানের একটা প্রচারণা চালিয়ে নিতে পারেন । থেমে থাকলে চলবেনা , সবসময় করতে হবে ।

 

৬। ই-মেইল মার্কেটিং :

সুন্দর ডিজাইন করে বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে ই-মেইল এর মাধ্যমে মার্কেটিং করতে পারেন । সাথে পুরনো ক্রেতাকে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন তথ্যমূলক কথা কিংবা ছবি দিয়ে । সাথে কোম্পানির নাম রাখবেন । একধরণের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়ে গেলো এতে করে । এবং সাথে আকর্ষণীয় কিছু পণ্যের তথ্য দিয়ে দিলেন । এতে পুরনো ক্রেতার কাছে আপনার কোম্পানির কথা আবার স্মরণ করিয়ে দেয়া হল ।

 

অফলাইন বিজ্ঞাপনঃ

অফলাইন বিজ্ঞাপনকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে । এতে করে আপনার সাইট সম্পর্কে যারা জানেনা তারা আপনার সাইট সম্পর্কে জানবেন এবং প্রোডাক্ট কিনতে আগ্রহী হবেন ।

 

১। টিভি বিজ্ঞাপনঃ

সুন্দর কমার্শিয়াল টিভি বিজ্ঞাপন নির্মাণ করতে পারেন । বাজেট অল্প হলে বিভিন্ন অভিজাত এলাকার ক্যাবল অপারেটরের মাধ্যমে টিভি বিজ্ঞাপন দিতে পারেন , তাতে অল্প খরচে প্রচার করা সম্ভব হবে ।

 

২। বিজ্ঞাপন হিসেবে নাটক কিংবা সিনেমা ব্যবহারঃ

আপনার বাজেট অনুযায়ী অবশ্যই আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন কিভাবে প্রচারণা করবেন । কোন একটি নাটকে অল্প কিছু টাকা লগ্নি করুন । আমি বলছিনা পুরো নাটকের বাজেট আপনার হতে হবে । নাটকের কিংবা চলচ্চিত্রের কিছু কিছু অংশে আপনার প্রোডাক্ট এর ব্যবহার দেখাতে হবে । সেই প্রোডাক্ট এর গায়ে আপনার কোম্পানির নাম লেখা থাকবে , তাতে করেই নাটক কিংবা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অল্প কিংবা বেশি টাকা খরচ করেও আপনি আপনার সাইটের বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন। যেমন ধরুনঃ নায়ক- নায়িকা কফি পান করছে , সেই কফির মগে আপনার কোম্পানির নাম থাকলো । এই ধরণের প্রচারণা করতে হবে । কিছুদিন আগে “জিরো ডিগ্রি” নামে একটা বাংলা চলচ্চিত্র মুক্তি পায়, সেখানে এভাবেই “রানার” গ্রুপের কোম্পানির মোটর সাইকেলের বিজ্ঞাপন দেয়া হয় । দেখা যায় নায়ক মাহফুজ যেই মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন সেটা “রানার” কোম্পানির । আবার যেই রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন সেই রাস্তায় “ রানার” কোম্পানির বিলবোর্ড দেখানো হয় । এবার নিশ্চয় বুঝলেন বিজ্ঞাপন কিভাবে করা হল এবং প্রচার কিভাবে করল । এভাবে নাটক কিংবা চলচ্চিত্র যতজন দেখবে ততজন আপনার ই- কমার্স সাইট সম্পর্কেও একটি ধারণা পেয়ে যাবেন । এইরকম কিছু একটা আপনিও করতে পারেন । অন্তত ভালোবাসা দিবসে কোন একজন পরিচালকের টিভি নাটকে এ পন্থা অবলম্বন করে দেখতে পারেন ।

 

৩।বিলবোর্ডঃ

বিলবোর্ড এ আপনার কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিতে পারেন । সুন্দর গোছানো কিছু ছবি কিংবা মডেলসহ । উপস্থাপন ভালো হলে মানুষ মনে রাখবেই ।

 

৪। প্রিন্ট বিজ্ঞাপনঃ

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে পারেন । ক্যালেন্ডার উপহার দিতে পারেন নতুন বছরে । এছাড়া যারা পত্রিকা দিয়ে যায় বাসায় , তাদের মাধ্যমে আপনার কোম্পানির আকর্ষণীয় লিফলেট দিতে পারেন । এখানে অবশ্যই আকর্ষণীয় লিফলেট হতে হবে । কারণ অধিকাংশ লিফলেট মানুষ পড়েনা , তার কারণ প্রথমেই সেই কাগজ আপনাকে আকর্ষণ করেনা । সবসময় আপনাকে দিয়ে বিচার করেন , আপনি গ্রাহক হলে কি করতেন । তাহলে প্রচারণা আপনার কাছে অনেক সহজবোধ্য হয়ে উঠবে।

 

৫।বাস কিংবা যানবাহনে বিজ্ঞাপনঃ

বাসে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন । সেই ক্ষেত্রে আমি আবারো বলবো অবশ্যই আকর্ষণীয় ইস্টিকার লাগাবেন ।

 

৬। রেডিও বিজ্ঞাপনঃ  

এফএম রেডিও এখন এক জনপ্রিয় মাধ্যম । এর মাধ্যমে কোন একটা অনুষ্ঠানের প্রচারণা চালাতে পারেন । কোন একটা প্রোগ্রাম আপনার কোম্পানির হতে পারে।

 

৭। বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা উৎসবঃ

উৎসব কিংবা অনুষ্ঠানের স্পন্সর হতে পারেন । সেটাও প্রচারণা । মাঝে মাঝে কিছু ফ্রি টি-শার্ট দিতে পারেন , তার মাধ্যমেও একধরণের প্রচারণা হয়ে যাবে ।

৮।মেসেজঃ

মেসেজ দিতে পারেন আপনার গ্রাহককে । তবে এ ব্যাপারে গ্রাহককে সবসময় বিরক্ত করবেন না । বিশেষ উৎসবে এই মেসেজ দিতে পারেন নতুন কোন প্রোডাক্ট এর খবর দিয়ে ।

৯। প্রোডাক্ট সাপ্লাইঃ

প্রোডাক্ট সাপ্লাইয়ের সময় আপনার কোম্পানির নাম সেই প্রোডাক্ট মুড়ানো প্যাকেটে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে হবে । সাথে একটি অভিনন্দন কার্ডও দিতে পারেন ক্রেতাকে শুভেচ্ছা স্বরূপ ।

 

উপরের এই বিজ্ঞাপন কিংবা প্রচারণা আপনাকে ভালো মানের প্রোডাক্ট এর সাথে সাথে সবসময় মানুষের কাছে সময় সুযোগ ও প্রয়োজন অনুযায়ী চালাতে হবে ।

 

 

ধন্যবাদ সবাইকে ।

ভালো থাকবেন ।

শুভেচ্ছা

Content Writer- Nazmul Hasan Majumder

For Facebook profile click here

For Facebook Page – contentever

 

 

 

13,130 total views, 5 views today

Comments

comments

Your email address will not be published.