
আনোয়ার হোসেন
বাজার গবেষণা হচ্ছে বাজার থেকে তথ্য, উপাত্ত সংগ্রহ করা যাতে করে ব্যবস্থাপনা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বিদেশে রিসার্চ এন্ড ডেভেলেপ মেণ্টের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে নতুন বাজারে প্রবেশ করা হয় বা নতুন পণ্য বা সেবা বাজারে নিয়ে আসা হয়। এর ফলাফলও হয় অনুমিত। মানে গবেষণা করে নামা ব্যবসায়ের অধিকাংশই আশানুরূপ অনেক ক্ষেত্রে আশাতীত ব্যবসায় করে। তবে আমাদের দেশে বাজার গবেষণার জন্য অর্থ ব্যয় করতে তেমন শোনা যায় না। কিন্তু এটি ভালভাবে না করে ব্যবসায় শুরু করে দিলে সফল হবার সম্ভাবনা যে খুবই কম থাকে তা বলাই বাহুল্য। কেননা আপনি জানেন না আপনি যে পণ্য বা সেবা নিয়ে বাজারে আসতে চাচ্ছেন তার বর্তমান বাজারটি কত টাকার, এর ভবিসৎই বা কি , এর ক্রেতা কারা, ক্রেতারা আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী কাছ থেকে না নিয়ে আপনার কাছ থেকে কেন নেবে, নতুন কোন বাজার আছে কিনা, বাজারের গতিধারা কি । এসব না জেনে ব্যবসায় নামার পরিণতি হবে অর্থ বা সময় দুটোরই অপচয় মাত্র। কেননা বাজার গবেষণা অনেক প্রশ্নের উত্তর দেয় যাদের কিছু নিন্মরুপ:
- বিদ্যমান ক্রেতাদের প্রয়োজন বোজা এবং কেন তারা আপনার পণ্য বা সেবা পছন্দ করবে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীর পণ্য / সেবা রেখে
- নতুন বাজার সুযোগ চিনহিত করা এবং মার্কেট ট্রেন্ড অনুধাবন করা
- বাজার সম্প্রসারণের নতুন ক্ষেত্র এবং ক্রেতা ভিত্তি বাড়ানো
- সম্ভাব্য ক্রেতাদের এবং তাদের প্রয়োজন খুজে বের করা যা আপনার পণ্য বা সেবার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে
- ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি, বিক্রয় এবং নতুন পণ্য বা সেবা তৈরি করতে অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা
- পণ্যের সঠিক দাম ঠিক করা
- কত লোক পণ্যটি ক্রয় করতে পারে ধারনা পেতে
- কোন জায়গা থেকে ক্রেতারা কেনেন জানতে
- প্রতিযোগিদের সম্পর্কে তথ্য জানতে
- প্রমোশন কৌশল যা সবচেয়ে উপযোগী
- আপনার ব্যবসায়ের সমস্যার জায়গাটি চিহ্নিত করতে
বাংলাদেশে ই-কমার্সের বাজারের উপর এখন পর্যন্ত তেমন কোন গবেষণা বা জরীপ চালানো হয়নি। ই-কমার্স নয় শুধু কমার্স বা এতিহ্যগত বানিজ্যের উপর ও আমাদের তেমন কোণ গবেষণা কর্ম বা জরীপ নেই। তারপরও নতুন যেকোন ব্যবসায় বিশেষ করে ই-কমার্স ব্যবসায় নামার পূর্বে অবশ্যই বাজার সম্পর্কে সঠিক ও বাস্তব ধারনা নিয়ে নামা উচিত। সেক্ষেত্রে বাজার সম্পর্কে ধারনা পেতে নেয়া যেতে পারে অনলাইন বা অফলাইন বিভিন্ন জরীপ বা গবেষণা কর্মের সাহায্য। এর সাথে আপনার নিজস্ব উদ্যোগে চালিয়ে বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ও ধারনা নিতে হবে। এ লেখায় আমরা বাংলাদেশের সামগ্রিক বাজার সম্পর্কে মোটামুটি ধারনা নিবো যা ই-কমার্স ব্যবসায় শুরু করতে আমাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনাল (http://www.euromonitor.com) নামের একটি প্রখ্যাত জরীপ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ২০ বাজারের একটি বলে মন্তব্য করে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে এই দেশটির রয়েছে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং যা দেশটিকে পরিণত করেছে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর একটিতে। কিন্তু এখানে বাজার তথ্য খুবই সীমিত ও ব্যবসায় পরিবেশ বেশ জটিল। বাংলাদেশে ৫০ এর উপরে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীর ভোক্তা রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বাজারের উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিস্ট নিচে দেয়া হলঃ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈচিত্রতা ভোগ বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখছে
২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেখা গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ শক্ত অবস্থানে ছিল। এ সময়টাতে দেশের গড় জিডিপি বৃদ্বির হার ছিল ৬%। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এ হার এখনো উন্নতির দিকেই আছে। আশা করা যাছে ২০১৪- ২০১৮ সালের মধ্যে জিডিপি হার ৭% হয়ে যাবে। তৈরি পোশাক খাতকে বলা হয়ে থাকে দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড। যদিও এখন কতৃপক্ষ চাচ্ছেন অর্থনীতির এ ধারা পরিবর্তন হউক এবং সেজন্য ইলেক্ট্রনিক, ফ্রোজেন ফুড, হালকা ইঞ্জিনিয়িরানিং, এবং শক্তি উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে।
২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জনসংখ্যা পৌছে যাবে ১৮ মিলিয়নে ২০১৩ সালের এক জরীপে দেখা গেছে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫৭ মিলিয়ন। যা দেশের মোট ভুমির তুলনায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। মাত্র ৩০% জনসংখ্যা সে সময় পর্যন্ত শহরাঞ্চলে বসবাস করতো। ক্রমবর্ধমান তৈরি পোশাকখাত এবং চাকুরির সুযোগ অনেক লোককে এখন শহরে বাস করতে উৎসাহিত করছে।
আধুনিক খুচরা বিক্রয়ের হার বৃদ্ধি
খুচরা ব্যবসা বাংলাদেশের এতিহ্যগত ব্যবসায়, তবে আধুনিক খুচরা ( আধুনিক ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে যে খুচরা বিক্রয় ) বিক্রয়ের হার মোট বিক্রয়ের মাত্র ১০ ভাগ। তবে এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। গবেষণা কাজ চলাকালের হিসেবে দেখা গেছে প্রতি বছর ১৫% হারে আধুনিক খুচরা বিক্রয় বাড়ছে। আশা করা যাচ্ছে ২০২০ সালের মধ্যে আধুনিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিক্রয়ের পরিমাণ বর্তমানের ৪ গুন হয়ে যাবে। অর্থের মানদন্ডের যার পরিমাণ কিনা ৩৭ বিলিয়ন ডলার। সব ধরনের ভোক্তা শ্রেণীর বৃদ্ধি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে দেখা গেছে বাংলাদেশে সব ভোক্তা শ্রেণীগুলো বেশ ভালভাবে তাদের কাজ সম্পাদন করছে। এ হার সামনের দিনগুলোতে বজায় থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বহুজাতিক কোম্পানিগুলো হাই কোয়ালিটি পণ্যের উপর বেশি নজর দিচ্ছে
ভোগ্য পণ্যের বেলায় দেশী পণ্যগুলো বিদেশী পণ্যের সাথে শক্ত প্রতিদবন্ধীতা করছে, অনেক ক্ষেত্রেই কম মুল্যের কারনে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের সাথে পেরে উঠছে না। তাই বিদেশী কোম্পানিগুলো টার্গেট করছে শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে। এর বাইরে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের ভোক্তাদেরকে এই বার্তা দিতে চাচ্ছে যে , বিদেশী ব্রান্ডগুলো সবচেয়ে ভাল গুনগত মানের ।
ব্যবসায় পরিবেশ উন্নতি কল্পে অবকাঠামোগত বাধা দূরীকরণ
ব্যবসায় করার জন্য বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেশগুলোর একটি। কিন্তু খুবই নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ হচ্ছে ব্যবসায়ের প্রধানতম সমস্যাগুলোর অন্যতম। আশা করা যাচ্ছে আসছে বছরগুলোতে অবকাঠামো খাতে বড় ধরণের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। সরকার পরিবহন খাতে উন্নতি আনতে বাইপাস, ফ্লাইঅভার, সেতু, মেট্রো রেলসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং গনপরিবহন খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এর বাইরে বাংলাদেশের আছে সুগঠিত একটি রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আর আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অন্তর্দেশীয় জল যোগাযোগ ব্যবস্থা যা কিনা সড়ক পথে যোগাযোগের ভাল বিকল্প হতে পারে। নতুন পাবলিক এবং প্রাইভেট পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমের ২০১৬ সালের মধ্যেই বিদ্যুৎ সমস্যার ও সমাধান আশা করা যাচ্ছে।
এগুলো বাংলাদেশের সামগ্রকিক বাজারে একটি তুলনামূলক চিত্র যা থেকে আমরা বাজারের একটি ধারনা পেতে পারি। এখন আপনি যে পণ্য বা সেবা নিয়ে ব্যবসায় করতে আগ্রহী সেই নিস নিয়ে সুনিদ্রিস্ট তথ্য সংগ্রহ করুন যাতে করে আপনি সুনিদ্রিস্ট সে পণ্য বা সেবার বাজার, ভোক্তা, চাহিদা, ভবিসৎ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। খুটিনাটি সব তথ্য নিয়ে বাজারে প্রবেশ করলে তখন বাজারে অবস্থান হবে লাভজনক। অন্যথা না জেনে শুনে হুট করে বাজারে প্রবেশ করলে হুট করেই বাজার থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হতে হবেন।
তথ্য সুত্রঃ
১। http://www.euromonitor.com/markets-of-the-future-in-bangladesh/report
২। http://www.amis-outlook.org/technical/bangladesh/en/
৩। http://www.amis-outlook.org/technical/bangladesh/en/
6,815 total views, 2 views today