E Commerce in Bangladesh
ই কমার্স বিষয়ক ১০টি এক্সক্লুসিভ প্রশ্নোত্তর
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
এখানে ২/১টি প্রশ্ন আছে যেগুলো কেউ আমাকে করে থাকবেন। তবে অনেক প্রশ্ন সরাসরি আমাকে করেনি। কিন্তু দীর্ঘদিনের আড্ডায় ও আলোচনায় বুঝেছি এ বিষয়গুলো উদোক্তারা জানতে চায়।
১. (প্রশ্ন ) আমি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকি। গ্রাম বা মফস্বল থেকে কি ই কমার্স করা সম্ভব?
উত্তর:
গ্রাম বা মফস্বল বলে কথা নয়। কথা হচ্ছে ই কমার্স করার জন্য যে পারিপাশ্বিরক সেবাগুলো দরকার সেগুলো আপনার হাতের কাছে আছে কিনা? সেটা দেখা। এটা থাকলে আপনি ই কমার্স করতে পারেন। যেমন-
ক. ইন্টারনেট সংযোগ: আপনার ওয়েবসাইটে পন্য আপলোড করার মত স্পিড, এবং অন্যান্য বিষয়ে ব্রাউজিং ও ডাউনলোড সুবিধা ইত্যাদি।
খ. শিপিং সার্ভিস: কুরিয়ার বা পার্সেল এজন্ট আছে কিনা? যেখানে আপনি অন্তত প্রতিদিন একবার সহজে যেতে পারেন।
গ. ব্যাংকিং: অনলাইন সার্ভিসেস ব্যাং থাকা জরুরী যেখানে অন্তত আপনি সপ্তাহে ২ বার যেতে পারেন।
ঘ. বিকাশ ও মোবাইল ব্যাংকিং: বিকাশ এবং মোবাইল ব্যাংকিং আপনার হাতের কাছে আছে কিনা?
ঙ. টেকনোলজি: আপনি নিজে ওয়েবসাইট বানাতে না পারলে সেটা কাউকে দিয়ে বানাতে পারবেন, সেটা বুঝলাম। কিন্তু আপনার নিজের এ বিষয়ে ধারণা থাকা চাই। আর এটাতে কোন সমস্যা দেখা দিলে সার্ভিসের ব্যাপারে কাউকে পাওয়া চাই। সেটা আপনার গ্রামে হওয়াটা জরুরী নেয়। অন্যকোন শহর থেকেও আপনাকে ওই সেবাটা দিতে পারলে হলো।
২. আমার কাছে ২০ হাজার টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে কি ই কমার্স করা যাবে?
উত্তর:
আসলে ব্যবসায়ে টাকাটা মূল নয়। মূল কাজ হলো ব্যবসাটা বোঝা। আপনি যদি ব্যবসা না বোঝেন তাহলে ২০ লাখ টাকা থাকলেও করার দরকার নেই। কিন্তু ব্যবসা করতে তো টাকা লাগে। কিছু ভাগ্যবান লোকেরা কষ্ট করে খুব অল্প টাকা দিয়ে আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আপনি যদি তাদের একজন হন তাহলে তো ভালো। আর ২০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করলে যদি সব ঠিকমত না হয় তাহলে তো ভালোই অল্পের উপর দিয়ে গেলো। কিন্তু যদি প্লান প্রোগামমতো সব হয় আপনি ২০ হাজার টাকায় মাসে না হয় ২/৩/৪ হাজার টাকাই ব্যবসা করবেন। কিন্তু সেটাকে কি কি ব্যবসা বলা যাবে? তবে আপনার যদি মনে হয় আমি ২০ হাজার দিয়ে শুরু করবো আস্তে আস্তে শিখবো। এবং একসময় সফল হবো। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। সেক্ষেত্রে আপনি শুরু কতরতে পারেন। ৭টি জিনিস লাগবে আপনার সফল হতে কঠোর পরিশ্রম, অসীম ধৈর্য, বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত, পরিমিত ব্যয়, পরিপূর্ণ সততা, ব্যবসায়িক মনোভাব ও ব্যবসাটা বোঝা। আপনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন সাইকেলে চড়ে দূরপাল্লা পাড়ি দিতে আপনি কতটা প্রস্তুত ও আত্মবিশ্বাসী। এই প্রশ্নে উত্তর কেবল আপনিই দিতে পারেন। আমি নই। বরং আমি আপনাকে প্রশ্ন করবো মানুষতো লাখ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা করে। কেউ আবার ষ¦ল্প পুজিতেও সফল হয়। আপনার কি মনে হয় আপনি ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটা ই কমার্স দাড় করাতে পারবেন কিনা? আমি আপনাকে এটুকু বলতে পারি অন্যযেকোন ব্যবসার চেয়ে এখানে কম টাকায় ব্যবসা শুরু করার সুযোগ আছে।
৩. আমি পন্য সংগ্রহ করতে পারবো কিন্তু মার্কেটিং করবো কিভাবে বুঝতে পারছেনা?
উত্তর :
মার্কেটিং এর হাজার উপায় আছে। আপনাকে ঠিক করতে হবে,
ক. আপনি কোন বিষয়টা ভালো বোঝন?
খ. যে বিষয়টা আপনি ভালো বোঝেন, বা জানেন তার বাজার চাহিদা কেমন?
গ. সে পন্য বা সেবাটির ব্যবহারকারী কারা?
ঘ. যারা আপনার টার্গেট কাস্টমার তারা কোন মাধ্যম তারা বেশী প্রভাবিত হয়?
ঙ, আপনি সে প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞাপন দিতে পারেন।
সবচে বড়ো কথা আপনি কোন প্রক্রিয়ায় মার্কেটিং কিভাবে করবেন সেটা বোঝা ছাড়া আপনার ব্যবসায়ে নামা ঠিক হবেনা।
৪. ই ক্যাব বা ই কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সদস্য হওয়া ছাড়া কি ই কমার্স করা যায়না? ই ক্যাবের সদস্য হলে কি লাভ?
উত্তর:
ই কমার্স দেশের অন্যান্য ব্যবসার মতো একটা ব্যবসা। কেউ বসুন্ধরা সিটিতে দোকান দিয়েছে, কেউ গুলিস্তানে, কেউ পাড়ার গলিতে কেউ গ্রামের বাজারে আপনার ই শপটা হলো আকাশে। এটা দেখা যায়না কিন্তু এখান থেকে সবাই কেনাকাটা করতে পারে। আপনি কোন কিছুর সদস্য না হয়েও দেশের আইন মেনে আপনি ব্যবসা করতে পারেন। কেউ আপনাকে ঠেকাবেনা।
কিন্তু ই ক্যাবের সুবিধা হলে কিছু সুবিধা রয়েছে
ক. আপনি যেকোন পরামর্শ ও সহযোগিতা পাবেন?
খ. এ বিষয়ে সহব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা ও সমস্যা জানতে পারবেন
গ. আপনি কারো দ্ধারা ক্ষতিগ্রস্থ হলে ই ক্যাবের মাধ্যমে প্রতিকার চাইতে পারবেন।
ঘ. একটি এসোসিয়েশনের সদস্য হলে লোকেরা আপনাকে সহজে বিশ্বাস করবে।
ঙ. সবাই এক হলে যেকোন দাবী দাওয়া আদায় করা যাবে, যা পরবর্তীতে ই কমার্স খাতের বিকাশে সাহায্য করবে।
৫. ভবিষ্যতের বাংলাদেশে ই কমার্স ব্যবসায় কোন পর্যায় যেতে পারে? কি ধরনের পন্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে টিকে থাকতে পারবে।
উত্তর:
আসলে ভবিষ্যতের কথা বলা কঠিন? দেশের অনেক পেশা ও ব্যবসার ভবিষ্যত থাকা স্বত্বেও সেগুলো প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। এটা ব্যবসার সাথে বা বাজারের সাথে থাকলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। আপাতত আপনি ভেবে নিন আগামী দিনগুলোতে মানুষ কোন কোন সেবা বা পন্য ঘরে বসে পেতে চাইবে। যেগুলে চাইবে সেগুলোর ভবিষ্যত আছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। আরো একটা বিষয় আমরা খেয়াল করতে পারি পশ্চিমে অথবা চীনে বা ভারতে গত জ্জ বছরে কি ধরনের পন্য বা সেবা জনপ্রিয় হয়েছে। আগামী ২/৩ বছরে আমাদের এখানে সেরকম হতে পারে। ব্যকিক্রম ঘটবে হয়তো ১০-১৫% শতাংশ ক্ষেত্রে। আমি আপনাকে চোখ বন্ধ করে এগুলো বলে দিতে পারি আমি চাই আপনি নিজে এগুলো খোজ খবর নিয়ে জেনে নিন। এগুলো জানার জন্য খোজখবর নিতে গিয়ে আপনি আরো অনেক কিছু জানবেন জানবেন অনেক কাযকারণও এমনকি এমন কিছুও জানতে পািেরন যা হয়তো আইম জানি না।
৬. আমি ব্যবসায় করলে কুরিয়ারে বা সরাসরি পন্য পাঠাতে পারবো কিন্তু পেমেন্ট মুড নিয়ে চিন্তায় আছি।
এ সমস্যাটার অনেকটা সমাধান হয়ে গেছে
প্রথমত আপনি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে টাকা নিতে পারেন।
আর কাস্টমার যদি অতটা কস্ট করতে না পারে তাহলে তো বিকাশ বা মোবাইল ব্যাংকিং রয়েছে।
বিকাশে হয়তো টাকা আগে নিতে হবে নয়তো পন্য। এক্ষেত্রে কেউ যদি কাউকে বিশ্বাস না করেন। তাহলে ক্যাশ অন ঢেলিভারী সার্ভিস নিতে পারেন। অনেক কুরিয়া এই সার্ভিস দেয়। এতে ওরা আপনার ঠিকানামত সার্ভিস দিয়ে কাস্টমারের কাছ থেকে মূল্য গ্রহণ করে সেটা আবার আপনাকে পৌছে দেবে।
আর যদি আপনি যে এরিয়াতে মাল দেবেন সেখানে এই সার্ভিস না থাকে তাহলে পরিবহন সার্ভিসে কন্ডিশন ডেলিভারী নিতে পারেন।
এক্ষেত্রে ক্লায়েন্টকে পার্সেল অফিসে এসে টাকা দিয়ে পন্য গ্রহণ করতে হবে।
এতে যদি কাস্টমার রাজি না হয়। তাহলে পেমেন্ট গেটওয়ে নিন। তাতে কাস্টমার কার্ড দিয়ে আপনাকে পেমেন্ট করবে অনলাইনে। সেই টাকা পেমেন্ট কোম্পানীর কাছে চলে যাবে। যখনি আপনি যেলিভারী নিশ্চিত করে পেমেন্ট কোম্পানীকে জানাবেন তখনি টাকা আপনার একাউন্টে চলে আসবে।
এই সার্ভিসের জন্য যদি কাস্টমারের কার্ড না থাকে তাহলে ডাকযোগে মানে সরকারী ডাকে ভিপিডোগে মাল পাঠাবেন আর গ্রাহক টাকা দিয়ে মাল ছাড়িয়ে নেবে। তবে সময়মত না পৌছালে কি হবে সে ঝুকিটা নিতে হবে।
৭. আমি একজন ছাত্র, ছাত্ররা কি ই কমার্স করতে পারে?
হ্যা ছাত্ররা চাকুরী ব্যবসা করতে পারলে ই কমার্সও করতে পারবে। ই কমার্সের কাজগুলো আপনি নিজে করতে হবে। অথবা কাউকে দিয়ে করাতে হবে। আপনি যদি সার্ভিস এবং প্রকিউরমেন্ট ঠিকমতো করতো পারেন আপনি ছাত্র কি চাকুরীজীবি সেটা বড়ো কথা নয়।
যেমন
ক. প্রতিদিন আপনাকে আপনার পেইজে আপডেট দিতে হবে।
খ. সঠিকভাবে পন্যের ছবি তুলে, ভালো ডিজাইন করে, বিবরণসহ পোস্ট করতে হবে।
গ. অনলাইন ও অফলাইনে প্রয়োজনীয় প্রমোট করতে হবে।
ঘ. পন্য সঠিক জায়গা থেকে সঠিক দামে কিনতে হবে।
ঙ, অর্ডার পাওয়ার পর সঠিকভাবে কথা বলে নিশ্চিত করতে হবে।
চ. ঠিক প্যাকেটে ঠিক সময়ে ঠিক লোকের কাছে পন্য ডেলিভারী দিতে হবে।
ছ. পন্য বিক্রির পর প্রাপ্তি নিশ্চিত ও দাম বুঝে নিতে হবে।
সবচেয়ে বড়ো কথা ব্যবসাটা বুঝতে হবে।
৮. আমি ব্যবসা করতে চাই, কিন্তু পন্য কোথা থেকে সংগ্রহ করবো?
এ কথায় বললে পাইকারী বাজারে পাবেন। আর আসলে এতটুকু না জানলে ব্যবসা করার দরকার নেই। তবু বলছি আপনি যে পন্য সহজে সংগ্রহ করতে পারবেন। সে পন্যের ব্যবসাই করুন। অন্য কিছু নয়। এরর্পও যদি আপনি অজানা কিছু নিয়ে কাজ করতে চান তাহলে সে পন্যটি কোথায় কখন পাওয়া যায়? কিভাবে সঙগ্রহ করতে হয় বিস্তারিত জেনে নিন।
৯. ই কমার্স বিষয়ে আমি খুব ভালো বুঝিনা, কিন্তু আমার ব্যাপক আগ্রহ আছে, এখন কি করবো?
আপনি ই ক্যাবের ফেইসবুক পেইজের পোস্টগুলো সময় নিয়ে পড়–ন
আপনি ই ক্যাব ব্লগের লেখাগুলো ধারাবাহিকভাবে পড়–ন
আপনি রাত ৯টার পর ই ক্যাবের স্কাইপে আড্ডায় অভিজ্ঞদের আলোচনা শুনুন
আপনি ই ক্যাবের সার্ভিস সেন্টারে ফোন করে কিছু জানতে চাইলে জেনে নিন
আপনি ই ক্যাবের আড্ডায় সরাসরি অংশ নিন, কখন আড্ডা হবে জানতে ফেইসবুক পেইজে চোখ রাখুন।
আপনি ই ক্যাবের কর্মশালাতে অংশ নিন।
এবং আপনি নেটে সার্চ দিয়ে জানুন
ই কমার্স পেউজগুলো ভিজিট করুন
ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অভিজ্ঞদা শুনুন।
বাজারের উপর নজর রাখুন।
১০. আমি একটা সুপার ই শপ খুলতে চাই, সব ধরনের পন্য বিক্রি করবো, মার্কেটিং করবো কিভাবে?
প্রথমত আপনি যদি সব ধরনের পন্য বেচতে চান। তাহলে বিভিন্ন পন্যের আলাদা আলাদা মার্কেটিং করবেন। এবং আপনার প্রয়োজন ব্রান্ডিং করা। যেমন স্বপন এগারা নন্দন এদের নাম শুনলে বোঝা যায় এখানে কিকি পাওয়া যায়। তবে সঠিক পরামর্শ হবে আপনি শুরুতে সব পন্য বিক্রি অথবা মার্কেটিং কোনোটিই করার প্রয়োজন নেই। আপনি বেস্টসেল হবে এমন পন্যগুলো দিয়ে শুরু করুন। একটি করে পন্য বাড়ান আর সে পন্যটির প্রমোশন করুন। সাথে সাথে ব্রান্ডও প্রমোশন হবে। এভাবে ধীরে ধীরে অগ্রসর হোন। ধাপে ধাপে সব ধরনের মাধ্যমে প্রচারনা চালান। কম খরচের মাধ্যমে গুলো দিয়ে শূরু করুন।
13,304 total views, 2 views today