ই কমার্স শুরুর খরচাপাতি
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
ই কমার্স শুরু করার ব্যাপারে যেসব বিষয়ে ভীতি কাজ করে তারমধ্যে অন্যতম হলো পুজিপাট্টা। অনেকে মনে করেন একদম টাকাই লাগেনা। আবার অনেকে ভাবেন নিশ্চয় অনেক টাকার ব্যবাপর স্যাপার। আসলে দুটি কথাই সত্য। আপনি যদি ধারে পন্য এনে শুধু ফেউসবুকে এড দিয়ে বেচতে পারেন। তাহলেতো তেমন খরচের ব্যাপার নেই। এখন কথা হচ্ছে আপনি সেটা কতটা পারবেন। বড় বড় ব্যভসায়দের জীবনী পড়লে দেখো যায়। ২০০/১০০ টাকা নিয়ে জীবনের প্রথম ব্যবসা শুরু করেছে। সূতরাং টাকা লাগার বিষয়গুলো যদি আপনি যোগ্যতা আর পরিশ্রমের জোরে চালিয়ে নিতে পারেন। তাহলে জিরো থেকেও হিরো হওয়া যায়। তবে হয়তো সবাই নয়। এটার জন্য আপনার ভেতর একটা জেদ ও আত্মবিশ্বাস থাকা দরকার।
প্রতিটি ব্যবসায়ের একটা পুঁজি থাকে। যেটা দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হয়। ই কমার্স এমন এক ব্যবসা এখানে সর্বোচ্চ পুঁজি খাটানের যেমিন সুযাগ রয়েছে। তেমনি প্রাইভেট টিউশনির মতো আসা যাওয়ার খরচ চালিয়েও এই ব্যবসা শুরু করা যায়। তবুও অনেক সময় নতুন উদ্যোক্তারা বিষয়টি জানতে চান। কিন্তু তাদের সামনে সঠিক চিত্রটি উঠে আসেনা। অনেকেই খরচ লাগবেইনা মনে করে মূল জিনিসটাকে সঠিভাবে করেন না। আবার অনেকে অনেক টাকার ব্যাপার ভেবে পিছু হটেন। আসলে পুরো ব্যাপরটা নির্ভ করছেন। আপনি কি ব্যবসা করছেন এবং সেটা কিভাবে করছেন তার উপর। এখানে নূনতম থেকে আলোচনা শুরু করা হয়েছে ব্যবসায়ের বিভিন্ন খরচাপাতির বিষয়ে।
1. ডোমেইন হোস্টিং
একটি ডোমেইনের জন্য খরচ পড়তে পারে ৭শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। হোস্টিং এর জন্য ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত লাগতে পারে সাইজ বুঝে। তবে ডোমেইন হোস্টিংসহ ৩ হজার থেকে ৫ হাজারের মধ্যে ১০০ এমবি স্পেস এর একটি হোস্টিং পেতে পারেন। আর ওয়েব সাইট ডিজাইনের জন্য সাধারণত ৫-২৫ হজার পর্যন্ত লাগতে পারে। তবে জুমলাসহ আপডেটেড কাস্টমাইজ সুবিধাসহ একটি ই কমার্স ওয়েব সাইটের জন্য ৫০ হজার থেকে এক লাখও খরচ পড়তে পারে। আর কাজটি নিজে জানলে তো কথাই নেই। এবং ফেইসবুক ব্যবহার করে প্রোডক্টস সেল করতে পারলে তো পুরো খরচটাই বেঁচে যাবে।
2. ট্রেড, টিন, ভ্যাট, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, কোম্পানী রেজিস্ট্রেশন ও এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স:
ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য আপনার ই শপ, অনলাইন শপ, ই কমার্স, ই বিজনেস, অনলাইন বিজনেস কিংবা ওয়েব বিজনেস নামে কোন ক্যাটাগরি বাংলাদেশে সরকারী দপ্তরে এখনো অর্ন্তভূক্ত হয়নি। সেক্ষেত্রে আপনি নিতে পারেন- সফ্টওয়ার, আইটি, কম্পিউটার ফার্ম অথবা জেনারেল সাপ্লায়ার ক্যাটাগরি। সপ্টওয়ার এবং আইটির জন্য সরকারী খরচ ১১০০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকা, কিন্তু আপনার মোট খরচ আসবে ৪ হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার। কম্পিউটার ফার্ম বলতে এখানে কম্পিউটার সেন্টার বোঝায়, কম্পিউটার সেন্টার এবং সরবরাহকারী ক্যাটাগরিতে সসরকারী খরচ ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা হলেও মোট খরচ সাড়ে তিন থেকে চারহাজারে ঠেকবে। টিন এর জন্য কোন খরচ নেই। ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনের প্রকৃত খরচ কম হলেও ট্রেড লাইসেন্স এর মতো এখানে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লাগতে পারে।
আর যদি লোগো বা কোন নামকে রেজিস্ট্রার্ড ট্র্রেডমার্ক করতে হয় তাতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ রয়েছে। কোন বই সিডি বা সপ্টওয়ার বের করতে চাইলে সেটা কপিরাইট করার জন্য ১ থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হতে পারে। আর কোম্পানী রেজিস্ট্রেশনের খরচ অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। তাতে ২৫- থেকে চল্লিশ হাজার টাকার একটা বাজেট দাড়াবে। এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স এর খরচ ২০- ৩০ হাজার।
3. ব্যাংক হিসাব ও অন্যান্য:
ব্যাংকে একটি চলতি হিসাব খোলার দরকার হতে পারে। এজন্য খরচ ধরা যায় ২ হাজার টাকা। অন্যান্য পেমেন্ট গেটওয়েতে হিসাব খোলার জন্য আরো কিছু টাকা মিলে এখানে ৫ হাজার টাকার একটা বাজেট রাখা যায়।
4. অফিস সেট আপ:
শুধুমাত্র ঠিকানার জন্য হলে একরুমের একটা অফিস- ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ ১০ হাজার, ফার্ণিচার ২০,০০০, স্টেশনারী ৫০০০, মোবাইল ও টিএনডটি লাইন ৫,০০০, ইন্টারনেট ও ডিশ লাইন ৫,০০০, ছাপার কাজ ৫,০০০, অন্যান্য ৫,০০০ টাকা। সর্বমোট ৫০,০০০ টাকা। ছাপার কাজের মধ্যে- লেটারহেড, বিজনেস কার্ড, মানি রিসিপট, খাম, সিল ইত্যাদি। কিন্তু এলাকা, সাইজ, প্রয়োজন ও ভাবসাব অনুসারে এটা আসলে ৫ লাখ থেকে ৫০ লাখও হতে পারে। সেটা নির্ভর করছে আপনার সামর্থের উপর। তবে আপনি আপনার বাসাকেও অফিস হিসেবে দেখাতে পারেন। আবার নিতে পারেন কোন র্ভাচুয়াল কিংবা শেয়ারিং অফিসও।
5. জনবল:
ডেলিভারী ম্যান ২ জন ৮,০০০ করে ১৬,০০০ টাকা, খরচ মিলিয়ে ২০,০০০/- পিয়ন ১ জন ৭,০০০ টাকা, অনলাইন ডাটা আপডেটর ১ জন ১০,০০০, কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজার ১ জন ১২,০০০ টাকা। প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তবে প্রথম দিকে আপনি নিজে সামলাতে পারলে একাই অথবা ৮/১০ হাজার টাকা বেতনের একজন সহকারী নিয়ে কজা শুরু করে দিতে পারেন।
প্রচার প্রচারণা: প্রচার প্রচারণার ক্ষেত্রে যেমন কোটি টাকা খরচ করার রাস্তা আছে, তেমনি অল্প টাকায় প্রচারনার অপশনও রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আপনি কিছু স্টিকার, কিছু ফেসবুক এড এসব দিয়ে ১০ হাজার টাকার একটা বাজেট করেও শুরু করতে পারেন। অথবা অনলাইনে, পত্রিকায় ও ফেস্টুনে এড দিয়ে লাখ টাকার প্রজেক্ট হিসেবেও হাত দিতে পারেন। দিতে পারেন বড় বিলবোর্ড কিংবা টিভি এডও। তবে আপনি নিজে
একটু একটিভ হলে ফেইসবুকে প্রচারণা, ব্লগিং, ই মেইল, এসএমএস, এসইও, প্রেস রিলিজ ইত্যাদি দিয়ে বিনে পয়সাও এড দিতে পারবেন।
6. স্যাম্পল, স্টক ও স্টল:
ব্যবসা বা পন্যের ধরণ অনুসারে আপনার প্রয়োজন হতে পারে পন্যটির এক-দুটি পিস, অথবা প্রতিটি আইটেম ২/৪/১০ পিস করে স্টকে রাখা। এক্ষেত্রে আপনি কতদামী, পন্য কতটি আইটেম এবং প্রতিটি আইটেম কয়টি করে রাখতে চান সেটার উপর খরচটা নির্ভরশীল। আমরা ধরে নিলাম এর খরচ ৫-৫০ হাজার মিনিমাম। আপনি বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করতে চাইলে সেক্ষেত্রে কিছু স্টক দরকার, দরকার হবে কিছু লজিস্টিক সার্পোটেরও।
উপরের আলোচনার আলোকে খরচের যে চিত্র পাওয়া যায় তা ন্মিরুপ
সর্বন্মি খরচ: শুধুমাত্র মোবাইল ও ইন্টারনেট বিল দিয়ে শুরু করা যায়- ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা।
নিন্ম খরচ: এসেনসিয়াল খরচ দিয়ে শুরু-ডোমেইন হোস্টিং ৫০০০ টাকা থেকে ১০, ০০০ টাকা।
নিন্মমধ্য খরচ: ডোমেইন হোস্টিং, প্রচার প্রচারণা, ওয়েব ডিজাইন- ৩০,০০০- ৫০,০০০ টাকা
মধ্যমমানের খরচ: নেট, ওয়েব, মার্কেটিং, অফিস, কর্মচারী ও কিছু সেম্পল মিলিয়ে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ
উচুমধ্য খরচ: ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ
উচ্চ খরচ: ৫০ লাখ থেকে উপরের দিকে।
এখন বিচার আপনার হাতে পারসোনা সেলুন কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। আর গ্রামের বাজারে হাতে হারিকেল আর পিড়ি নিয়ে সেলুন দিয়েছে। গ্রামের স্বর্কাকার ১০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেছে। আর আপন জুয়েলার্স হয়তো ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এখন আপনি কিভাবে শুরু করবেন। সেই সিদ্ধান্তটা আপনিই নিন। আপনার ক্ষমতার উপর বিচার করে কাজ শুরু করে দিন। তার আগে আপনার যদি পুজি হয় ৫০০০ টাকা সেভাবেই প্লান করে আগাতে থাকুন। আপনার সাফল্য কামনায়।
12,876 total views, 6 views today

