url

আনোয়ার হোসেন।

কনটেন্ট মার্কেটারদের সবচেয়ে বড় সংগ্রামটি হল নিয়মিত যথেষ্ট কনটেন্ট তৈরি করা এক সাথে হাই কোয়ালিটি বজায় রাখা। আর এই কাজগুলোই একজন প্রফেশনাল রাইটার প্রতিদিনই করে থাকেন।

অধিকাংশ কনটেন্টই শুরু হয় লিখিত শব্দ থেকে, আপনি কি ধরনের কনটেন্ট আপনি তৈরি করছেন সেটা কোন বিষয় না, আপনি প্রফেশনাল রাইটারদের কিছু  সিক্রেট জেনে সেগুলো থেকে অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারেন।

এই পোস্টে আমরা জানবো, প্রফেশনাল রাইটারদের ৯ টি সিক্রেট সম্পর্কে। যেসব টিপস এন্ড ট্রিকগুলো তাদেরকে অবিরতভাবে হাই কোয়ালিটি কনটেন্ট তৈরি করতে সাহায্য করবে।

১। সব সময়ই রিসার্চ মুডে থাকা

11947463_798336363609141_5452833322967009991_n

আপনার প্রফাইলে অসাধারণ সব কোয়ালিটি কনটেন্ট দিয়ে সমৃদ্ধ করতে আপনাকে সব সময়ই রিসার্চ মুডে থাকতে হবে।

রিসার্চকে শুধুমাত্র আপনার পরিকল্পনা বা লেখার সেশন এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করলে হবে না। আপনার কন্টেন্টের কোয়ালিটি ক্রমেই বাড়তে থাকবে যদি আপনি এটি নিয়মিত করতে থাকেন, কেননা নতুন নতুন সব দারুন আইডিয়া আপনার মাথাতে আসতে থাকবে ।

যখনি কোন আইডিয়া পাবেন, তখনি সেটা ডেভেলপ করতে শুরু করুন

আপনি হয়তো ভাবছেন যখন দরকার হবে তখন নতুন আইডিয়া কাজে লাগাবেন। কিন্তু কোন কিছু লেখার শুরু করার আগেই সে সম্পর্কিত আইডিয়া ডেভেলপ শুরু করা সহজ। এর জন্য আইডিয়া আসা মাত্র খুঁজতে থাকুনঃ

  • এই টপিকে প্রধান পয়েন্টগুলো কি হতে পারে
  • অতিরিক্ত তথ্যের জন্য সাইটগুলোর লিঙ্ক
  • আপনার পয়েন্টগুলো সাজাতে দরকারি ওয়েব পেইজের লিঙ্ক

রিসার্চ মুডে আপনাকে সব সময়ই ওয়েবে ব্রাউজ করে যেতে হবে। এর ফলে দেখা যাবে যে আপনি লিখতে বসার আগেই পুরো আউট লাইনটি তৈরি হয়ে গেছে ।

২। লেখাতে নিজের একটি স্টাইল তৈরি করুনঃ

11911393_798846546891456_8794604603766677572_n

কখনোই অন্য কাউকে নকল করা উচিত না। আপনার কনটেন্টের নিজস্ব একটি স্টাইল থাকা উচিত যা আপনার ব্যক্তিত্ব বা ব্র্যান্ড্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। হুমায়ূন আহমেদ খুবই জনপ্রিয় লেখক। কিন্তু উনার লেখার স্টাইল উনার নিজস্ব। আপনি উনারটা নকল করে বেশি দূর যেতে পারবেন না। মানুষ সেটা পছন্দও করবে না। মানুষ আপনার কাছ থেকে আপনার নিজস্ব স্টাইলের কিছু আসা করে। আপনার কাছ থেকে হুমায়ূন বা সুনীলকে আসা করে না ।

একবার আপনি আপনার লেখার স্টাইল তৈরি করে ফেলা মানে কিন্তু সব শেষ নয়। কেননা একজন লেখক তার লেখার দক্ষতা বাড়ানো কখনোই বন্ধ করে না। একজন কনটেন্ট রাইটার হিসেবে আপনাকে সব সময় আপনার লেখার দক্ষতাকে শান দিয়ে যেতে হবে।

লেখার স্টাইল একজন লেখকের সবচেয়ে বড় মূল্যবান সম্পদ, আর এটি পেতে সমস্ত ক্যারিয়ার জুড়েই চেস্টা করে যেতে হয় ।

বিখ্যাত আমেরিকান লেখক আরনেস্ট হেমিংওয়ে বলেছেন , “দক্ষতা অর্জনে আমরা সবাই শিক্ষানবীশ যেখানে কেউ কখনো মাস্টার হয় না

কিভাবে নিজের স্টাইল তৈরি করতে পারেনঃ

যাই লিখেন না কেন সেটা আপনার নিজের স্টাইল বা ভয়েজেই হওয়া উচিত। তা কখনোই অন্যের মত কিছু একটা হলে হবে না। তবে দক্ষ একজন লেখকে আপনি অনুসরণ করতে পারেন ।

মূলত সৃস্টিশীল প্রফেশনাল লেখকেরা নিজেদের উন্নয়নের জন্য তিনটি ধাপের মধ্য দিয়ে যানঃ অনুসরণ, দক্ষতা অর্জন এবং সব শেষে নতুন কিছু করা ।

আপনি পড়ে এবং স্টাডি করে দেখতে পারেন কোন লেখকের স্টাইল আপনার ভাল লাগে। তারপর আপনি আপনার স্টাইল তৈরি করতে কাজ শুরু করে দিন।

নিচের অনুশীলনগুলো চর্চা করে দেখতে পারেনঃ

১। ৫ জন কনটেন্ট রাইটার খুজে বের করুন যাদের লেখা আপনি পড়তে উপভোগ করেন।

২। তাদের প্রত্যেকের একটি করে লেখা নির্বাচন করুন

৩। লেখাগুলো প্রতিটি শব্দ ধরে পড়তে শুরু করুন, দরকার হলে শব্দ করে পড়ুন ।

৪। স্টাডি করুন লেখক কিভাবে লেখাটি লিখেছেনঃ

  • প্রথম বাক্যটি দেখতে কেমন
  • ভুমিকার ধরন
  • আর্টিকেলের কাঠামোটা কিভাবে করা হয়েছে
  • কিভাবে টপিক ডেভেলেপ করা হয়েছে এবং আইডিয়া উপস্থাপন করা হয়েছে
  • কিভাবে আর্টিকেলটিতে সমাপ্তি টানা হয়েছে
  • কল টু একশান কি ছিল

 

  1. এবার আপনি নিজে চেস্টা করুন
  2. প্রত্যেক লেখকের ক্ষেত্রেই এটি করুন
  3. আর্টিকেলগুলোকে রিভিউ করুন
  4. ৬ নাম্বার আর্টিকেলটি একই স্টাইল অনুসরণ করে লিখুন। আপনার স্টাইলের মত করে অল্প কিছু পরিবর্তন করে লেখাটিতে আরো মানসম্মত করুন।
  5. এই উপায়ে আপনি আর্টিকেল লিখে যেতে থাকুন, যতক্ষণ আপনি নিজেকে দক্ষ না মনে করছেন ।

৩। শুধুমাত্র একটি বিষয়ের উপর নজর দিনঃ

কন্টেটের এক অংশে একটিই পয়েন্ট থাকা উচিত। শুধুমাত্র একটি।

লিখতে বসে সবার আগে যেটা করা উচিত তা হল, আপনি ঠিক করে নিবেন আপনার পয়েন্টের মূল কথাটি কি হবে ?

লেখা শেষে এডিটের সময় খেয়াল রাখতে হবে লেখাতে আপনার পয়েন্টটি ঠিক আছে কিনা।

এর অন্যথায় হলে আপনাকে নির্দয় হতে হবে। যেমনটা উইলিয়াম ফকনার বলেছিলেন, “প্রিয়তমাকে হত্যা করো ”। যে কোন শব্দ, বাক্য বা অনুচ্ছেদ যা এই নিয়মকে ভঙ্গ করে তাদেরকে অবশ্যই ডিলিট করে দিতে হবে। আপনি সেগুলোকে কতটা পছন্দ করে ফেলেছেন এটা কোন ভাবেই বিবেচনায় আনা যাবে না ।

৪। দৈঘ্যে এবং গভীরতায় মিল থাকা উচিত

11947915_799402846835826_353526595919382284_o

দুটি বিষয় কোন লেখাকে পড়ার অযোগ্য করে তোলে। একটি হল যথেষ্ট বিস্তারিত না বলে কোন বিষয় ভাসাভাসা বলে যাওয়া। অন্যটি হল , জায়গার অনুপাতে কোন বিষয় খুব বেশি বিস্তারিত লিখে যাওয়া ।

আপনি কনটেন্টকে বড় বা ছোট যেমনই লিখতে চান না কেন এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন, আপনি সে লেখার ততটাই গভীরে যাবেন , যতটা লেখার দৈঘ্য অনুমোদন করে ।

যেকোন দৈঘ্যের লেখাই গ্রহণযোগ্য। সেথ গোডিন এবং জেগ সাধারণত তাদের প্রতি পোস্ট ১০০ শব্দে লিখে থাকে ।

অন্যদিকে কিস মেট্রিস ও ক্রেইজি এগের ব্লগ পোস্টের দৈঘ্য ৮০০ থেকে ১৫০০+ শব্দ ।

৫। আপনার টপিকটিকে একটি ইউনিক দিক থেকে কাভার করুনঃ

11202113_801079753334802_1362705705314144234_n

প্রত্যেক কনটেন্টের একটি টপিক, একটি পয়েন্ট ও একটি স্লেন্ট থাকে ।

টপিক – আলোচনা বা কনভারসেশনের বিষয়।

পয়েন্ট – একটি মুল ধারনা।

স্লেন্ট – একটি নিদিস্ট পয়েন্ট অব ভিউ ।

হয়ত আপনি একটি ট্রেন্ডিং টপিক কভার করছেন যে বিষয়ে অন্য কনটেন্ট মার্কেটাররা লিখছেন সেক্ষেত্রে আপনাকে নতুন কিছু যোগ করতেই হবে। চেস্টা করুন নতুন একটি পয়েন্ট খুজে পেতে বা টপিকটি নিয়ে কথা বলার নতুন একটি ইউনিক এঙ্গেল খুজে নিন। যদি আপনি এগুলো করতে না পারেন তবে লিখার জন্য অন্য কোন কিছু খুজে নিন ।

৬। টাইটেলের জন্য যথেষ্ট সময় দিন যতটা দিচ্ছেন লিখার জন্যঃ

যদি টাইটেলের মাধ্যমে পাঠকদের সাথে আপনি যোগাযোগ করতে সমর্থ না হন তবে আপনার সবচেয়ে মুল্যবান ও মজার কনটেন্টটি অবহেলিত থেকে যাবে। আপনার টাইটেলটি অবশ্যই আকর্ষণ সৃস্টি করার মত হতে হবে একই সংগে এটিকে পূর্বাভাস দিতে হবে যে, পাঠকরা ক্লিক করে এসে এখান থেকে কি ধরনের তথ্য পাবেন।

নিচে ১০ ধরনের টাইটেলের নমুনা দেয়া হল যেগুলো ভাল পারফর্ম করেঃ

  1. # টপ # (তালিকা)
  2. হাউ টু (কিভাবে উপকারি বা মজার কিছু করা যায় )
  3. বেস্ট অব (ক্যাটাগরি বা ধরন)
  4. কিভাবে (কিছু করা যা পাঠকরা করতে চান)
  5. কেন (কিছু)
  6. সাক্ষাতকার (খ্যাতিমান কেউ বা অন্যান্য)
  7. ব্রেকিং নিউজ
  8. সিক্রেট অব …
  9. সংখ্যা
  10. প্রশ্ন

৭। প্রথম বাক্যটিকে সবচেয়ে ভাল করে লিখুন

11896000_799897640119680_4945020424294133532_n

আপনি ৩ সেকেন্ড সময় পাবেন আপনার পাঠকদেরকে টেনে ধরতে এবং তাদেরকে আপনার লেখাটি পড়তে শুরু করাতে। শিরোনামের পর আপনার প্রথম বাক্যটিই এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করবে ।

পাঠকদের কখনোই ভুল দিকে চালিত করবেন না। আপনার শিরোনাম ও প্রথম বাক্যটি আপনার পাঠকদেরকে যেন আপনার মুল পয়েন্টের দিকে নিয়ে যায়। পাঠকদের মনোযোগ পাবার মত কিছু একটা আপনাকে করতে হবে ।

“ ব্যাবসায়ে, আপনার ভুল থেকে শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ”

এই বাক্যটি পড়ে একজন পাঠক হিসেবে আমি চিন্তা করবো, “ ভুল? কি ধরনের ভুল? হয়ত আমি ও কোন ভুল ……… এই সামান্য সন্দেহ তার মাঝে আগ্রহ তৈরি করবে ।

“তো আপনি তাহলে লক্ষ্য করেছেন, তাই না ?”

এই বাক্যে বলার ধরনটি আকস্মিক ও মজার। একজন পাঠক হিসেবে আমি চিন্তা করবো। “কি আবার খেয়াল করবো”  এবং তারপর নিজেকে আবিস্কার করবো আর্টিকেলের মধ্যে ।

“আপনার ল্যান্ডিং পেইজে ভাল ফলাফল চান ?”

আপনি হয়ত জানেন যে, হ্যা বা না দিয়ে উত্তর করা যায় এমন প্রশ্ন করা উচিত নয়। তাতে করে পাঠক উত্তর করবে “না” এবং তারপর তারা অন্য পেইজে চলে যাবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সবাই বিক্রয়ে ভাল ফলাফল চাইবেই, তাই এটিকে একটি নিরাপদ প্রশ্ন বলা যায় ।

৮ । একটি অনন্য সুচনা (লিড) লিখার চেষ্টা করুন ।

লিড যাকে সাধারণত লেখকরা যাকে তাদের কন্টেন্টের ভুমিকা বলে থাকেন ।

প্রত্যেক ছোট আর্টিকেলে এটা হতে পারে প্রথম এক বা দুই অনুচ্ছেদ। বইয়ের ক্ষেত্রে এটা হতে পারে প্রথম অধ্যায়। তবে সব ধরনের কনটেন্টের ক্ষেত্রেই এটা প্রথম ১০০ থেকে ৬০০ শব্দের মধ্যে সীমাবব্ধ।

আপনার লিড বা ভুমিকা অবশ্যই খুব বেশি বড় হওয়া উচিত না। এটি এমন হবে যে, পরের অংশে কি কি থাকছে তার একটা ধারনা যেন তা থেকে পাঠকেরা পান। তবে লেখার সার কথা কোন ভাবেই এখানে বলে দেয়া যাবে না।

কনটেন্টে যে ধরনের লিড ভাল ফল দেয়ঃ

  • আকর্ষণীয় গল্প ।
  • কম জানা কোন তথ্য
  • বিপরীত মতামত
  • এমন সব তথ্যের আশ্বাস দেয়া যা অন্য কোথাও নেই।
  • ব্রেকিং নিউজ

৯। হাইপ সৃস্টি না করে, বিশ্বাসযোগ্য করুন

বিশ্বাসযোগ্য বা সঠিক নয় এমন কনটেন্টের জন্য আপনার পাঠকরা সময় নষ্ট করতে চাইবেন না। তাই নিয়মটা হবে এমন,  কোন ধরনের বা হাইপ নয়, নয় কোন ধরনের সত্যের অপালাপ’ ‘

হাইপ নয়

হাইপের কারনে লোকে নিজেদেরকে প্রতারিত মনে করে , ফলে কেউই হাইপ পছন্দ করে না ।

তাই এমন কনটেন্ট লিখুন যা লোকের কাজে লাগবে, তাদের জীবনে ভ্যালু যোগ করবে। আপনি কনটেন্টকে ব্যাবহার করতে পারেন, তথ্য দেবার জন্য, বা বিনোদন দেবার জন্য । বিক্রি বাড়াতে সেল কপি ব্যাবহার করুন ।

সত্যের অপালাপ নয়

লোকে আপনাকে বিশ্বাস করলে, তারা আপনাকে রিসোর্স হিসেবে দেখবে। তাই আপনার টপিকের উপর রিসার্চ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি যদি কোন বিস্মিত হবার মত কোন ফ্যাক্টর বা ফিগার উপস্থাপন করতে চান তবে আপনাকে এর ব্যাকআপ নিতে হবে। আপনার তথ্যের উৎসের উল্লেখ করুন ।

আপনি কোন বইয়ের রেফারেন্স দিলে, কাউকে কোট করলে বা কোন রিপোর্টের উল্লেখ করলে অবশ্যই তাদের লিঙ্ক দিন।

আপনাকে বিশ্বাস করাটা লোকদের জন্য সহজ করে দিন, অন্যথা হলে তারা আপনার লেখা পড়া বন্ধ করে চলে যাবে ।

উপরের উপায়গুলো চর্চা করে আপনিও লিখতে পারবেন প্রফেশনাল লেখকদের মত কোয়ালিটি সম্পন্ন লেখা।

 

Personal Profile: আনোয়ার হোসেন
Business Page : econtentbd
Website: www.anowerhossain.com
Skype ID : anower009
E-Mail ID: [email protected]

6,502 total views, 3 views today

Comments

comments