04নারী দিবস:
নারী উদ্যোক্তা ও ই কমার্স
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
আন্তজাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বিশেষ লেখা

সারাবিশ্বে অনলাইনে শপিংগুলোর জনপ্রিয়তা হুহু করে বেড়ে চলেছে বাংলাদেশেও এই ব্যবসা অল্প দিনের মধ্যেই বিকাশ লাভ করছে। যানজটের দেশে, বেকারত্ম সমস্যার দেশে, আর্থিক টানাপাড়েনের দেশে এ এক মহা আর্শীবাদ। এখানে প্রতিনিয়ত যোগ দিচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশা ও বয়সের মানুষ। তাদের পাশে রয়েছে ই ক্যাব বা ই কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। তারা সরাসরি ফোনে আলাপ, ইমেইলে সমাধান, গ্রুপ মিটিং, আভ্যন্তরীন সহযোগিত, ফেইসবুকে প্রশ্নোত্তর সেশন, ইক্যাব ব্লগে লেখালেখি, স্কাইপি আড্ডা, সরাসরি আলোচনা, তথ্য সরবরাহ, মার্কেটিং টিপস, আইটি লিংকস, নানাভুলভ্রান্তি সংশোধন, অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে এক সফল ই কমার্স কমিউিনিটি তৈরীর কাজে সফল হওয়ার পথে।

যত কল্যাণ কর – অর্ধেক নারী আর অর্ধেক নর
অনেকগুলো কারণে নতুন তরুন এবং স্বল্প পুজি বিনিয়োগকারীরা যেমন ই কমার্সে দিকে ঝুকেছে। ঠিকই একই কারণে নারী উদ্যোক্তারা এই ব্যবসায় আসছেন। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এ খাতে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ সবার চোখে পড়বে। তাহলে কেন একজন নারী ই কমার্সে আসবেন তা জানতে পড়ুন এই লেখাটি: (ই কমার্সে কেন আসবেন)

https://www.amarblog.com/jahangir/posts/184163

যারা ই কমার্স কিছুটা বুঝেছেন তারা নিজেরাই স্ধিান্ত নিন। কি করবেন। আর যারা ভাবছেন, করবেন কিনা? করার দরকার আছে কিনা? অথবা পারবেন কিনা কিংবা বাসা থেকে আবার কি না কি বলে? টাকা পাবো কোথায়? কিভাবে বেচবো? কার কাছে যাবে, কোথায় কি পাবো? এসব জানতে ই ক্যাবের ব্লগে সূচী দেখে লেখাগুলো পড়ে নিন। লিংক (ই ক্যাব ব্লগ) http://blog.e-cab.net/

আর আপনার জন্য এ লেখাতেই রয়েছে ক’টা পরামর্শ।

কি বেচবেন ই শপে – সম্ভাবনার দুয়ার খুলল সবে
আসলে কোনো কাজেই নারী পুরুষ বলে কোন কথা নেই। সবারই যোগ্যতা এবং সম্ভাবনা সমান কিন্তু দেশ, সমাজ ও সময়ের প্রেক্ষিতে সাধারণত দেখা যায় নারী পেশাজীবিরা কিছু কিছু পেশার প্রতি ঝুকে থাকেন। পরিবার ও সমাজে দায়িত্বপালনের জন্য হয়তোবা তাদের কিছু কিছু পেশায় থাকার সুবিধা রয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য এমনকি ই কমার্সেও তার ব্যতিক্রম নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপট নারীদের চিন্তাভাবনার আলোকে একজন নারী কি ধরনের পন্য নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। তার একটা তালিকা দেয়া যাক।
১. নারীরাই প্রধান ক্রেতা এধরনের পন্য: শাড়ি, কসমেটিক্স, মেয়েলি জিনিসপত্র, আচার, ফ্যাশনওয়ার, বুটিকশপ, আউটসোর্সিং টিম, এফিলিয়েটেড মার্কেটিং, কুটিরশিল্প, পিঠাসপ, মিষ্টি ইত্যাদি।
২. মা ও শিশুপন্য: শিশুখাদ্য, গর্ভবতী মায়ের খাদ্য ও সেবা, শিশুদের কাউন্সেলিং, শিশুদের জিনিস, অনলাইন টিচিং, শিশুদের তথ্য, খেলনা ইত্যাদি।
৩. হাতের কাছে পাওয়া যায় এমন: আপনি যে এলাকায় বসবাস করেন সে এলাকায় কি পাওয়া যায় তার উপর তালিকাটা করুন।

৪. আত্মীয় সূত্রে: আপনার পরিচিত বা কোনো আত্মীয়র মাধ্যমে পেতে পারেন এমন পন্য হতে পারে। যেমন ধরুন আপনার একজন আত্মীয় গার্মেন্টস ব্যবসা করেন, আপনি তার পন্যগুলো আপনার নিজ উদ্যোগে অনলাইনে বিক্রি করুন। আর লাভের টাকাটা নিজের পকেটেই ঢোকান। মন্দ কি?
৫. পারিবারিক ধারাবাহিকতায়: পারিবারিক ব্যবসার উত্তরাধিকার। যেমন ধরুন আপনার ভাই বা বাবা একটি রেস্টুরেন্ট চালান আপনি সেটার উপর নির্ভর করে অনলাইনে অনায়াসে ক্যাটারিং সার্ভিস দিতে পারেন। আপনার স্বামী হয়তো একটা কসমেটিক্স দোকান করে তার পন্যগুলোই আপনি ফেইসবুকে একটা ফেইজখুলে বিক্রি শুরু করুন। আর তাক লাগিয়ে দিন তাকেও।
৬. নিজের কাজ: আর আপনি যদি নিজে কোন কাজ জানেন হোক সেটা এম্ব্রয়ডারী, হোকনা সেটা আচার বানানো, হোক সেটা বুটিক বা সেলাই অথবা হোক পুতুল বানানো অথবা হাতে তৈরী মজার কার্ড, হোকনা কাগজ কিংবা মাটির খেলনা। আপনি সেটাই বানান। একটা নাম দিয়ে বিক্রি শুরু করে দিন অনলাইনে। আপনার নিজের কাজটা বাজারে বিক্রি হলে আপনার চেয়ে খুশি আর কার বেশী কে হবে বলুন। এমনকি বই খাতা বাঁধাই ওয়ালম্যাট, ছবির ফ্রেম বানানো আরো কতো কি? হোকনা কমদামী একটা সার্ভিস। অথবা একটা মাত্র আইটেম তাতে কি? সেটাতো আপনার আইডেন্টিটি।
৭. গতানুগতিক কাজ: আর বিউটিশিয়ানের কথা নাইবা বললাম। এমনকি আপনি যদি রান্না শেখার একটা অনলাইন হাইজ করেন তাতেওতো আমি ভালো সম্ভাবনা দেখছি। আর রান্না করা খাবার সাপ্লাইয়ের কথাতো আগেই বল্লাম। ভালো ছবি আঁকা, হাতের লেখা কম্পিউটার, গান, নাচ শেখানো সবইতো সম্ভব অনলাইনে। আপনি অনলাইনে শেখাতে না পারেন, অনলাইনে প্রচার সুবিধাটাতো নিতে পারেন।
৮. ছোট্রএকটা কাজ: আপনি খুবই অল্প কিছু অনলাইনে একটা পেইজ খুলে ফ্রি শেখান বিস্তারিত শেখার জন্য আপনার সেন্টারে আসতে বলুন অথবা বাসায় গিয়ে শিখিয়ে আসুন। আপনাকে পটাচ্ছি কেন জানেন? আপনি যদি কিছু ফ্রি শেখান তাহলে আমি শিখতে পারবো যে? তবে বসে কেন বোন। মা বাবার কথা ভাবছেন? স্বামী নিষেধ করে কিনা সে ভয়। তাদেরকেও সাথে নিন, ছোট একটা দায়িত্ব ভাগ করে দিন। শুরু করুন তাহলে।
৯. সৃজণশীল কাজ: এমনকি আপনি যদি শুধু বিয়ে বাড়ির সাজের দায়েত্ব নেন অথবা ফুলই বেচেন ই কমার্সে দোষ কি তাতে। বিয়ে বাড়ীর আলপনা আকার কন্টাক্টাও যদি আপনি কেবল ফেইসবুকে মার্কেটিং করে মাসে ২টা কাজ পান ক্ষতি কি? বড়ো কাজ হলে দুজন সহযোগীও নিতে পারেন। এমনকি আমাকেও, আমিও এই কাজটা পারি। হাহাহা।

৮. প্রজন্ম বাজার: হ্যাঁ নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা আগ্রহী এ ধরনের একটি শপও আপনি অনলাইনে চালাতে পারেন। আমি জানি আপনার যে পছন্দ বা রুচি আছে তাতে নানারকম গিফ্ট সামগ্রীর একটা পেইজ আপনি সহজে চালাতে পারেন। কাপল হাউজ নাম দিয়ে কাপল সিরিজের বিভিন্ন পন্যও রাখতে পারেন। ভয় নেই আমাকে কাউন্সেলিং ফি দিতে হবেনা। কোন গিফট আইটেম ফ্রি দিতে হবেনা, কোনো মহিলার গিফট নিয়ে আমি ঘরে আগুন লাগাতে চাইনা। আপনি সফল হোন এটাই আমার প্রত্যাশা।
যদি এই লেখা পড়ে অথবা না পড়ে কিছু একটা করতে চান আর আরো বেশী জানতে চান:
অন্যান্য পরামর্শ ই ক্যাব পেইজ থেকে নিন। লিংক: (ই ক্যাব ফেইসবুক পেইজ)

https://www.facebook.com/groups/761254873927726/

ই কমার্সে নারী উদ্যোক্তা- কি ভাবছেন ক্রেতা ভোক্তা
নারী উদ্যোক্তার সুবিধা:
০১. সাধারণ প্রবণতা থেকে আশা করা যায়, আপনার কাছে নারী ক্রেতারা সহজে ভিড়বে।
০২. একটু সুন্দর ভাবে সামলাতে পারলে ইয়ং জেনারেশন এর নারী পুরুষ সব ক্রেতাই পাবেন।
০৩. সব বয়সের মানুষই আপনার কাছে সহজে আসবে, ভাববে একজন নারী প্রতারক হবেন না।
০৪. পরিবারের সম্মতি ও আলোচনার মাধ্যমে শুরু করুন, আশাকরি সকলের সহযোগিতা পাবেন। তার আগে নিজে ভালোভাবে বুজুন, তারপর পরিবারের লোকদের বোঝান।
৫. আপনি নিজে একটু সচেতন ও কৌশলী হলে পন্য সংগ্রহ করাও তেমন কঠিন কিছু হবেনা।

নারী উদ্যোক্তার অসুবিধা ও করনীয়:
১. সতর্ক থাকবেন আপনি নারী বলে কেউ আপনাকে ঠকানোর চেষ্টা করতে পারে।
২. আপনি নারী কিন্তু অতি চালাক কাস্টমারেরা ভাবতে পারে আপনি আসলে একটা ছেলে, ব্যবসা ভালো চালানোর জন্য মেয়ের নাম নিয়েছেন। সূতরাং নিয়মকান্ত্রিক ভাবে আগান।
৩. কখনো মুখের কথায় কাজ করবেন না। ব্যবসায়িক নিয়মে লেনদেন করবেন। কারো মিস্টি কথায় বিশ্বাস করবেন না। নিজ যতই মিস্টি কথা বলুন লেনদেনের ক্ষেত্রে কঠিন থাকুন। তা না হলে বিপদে পড়তে পারেন। হয়তো এ ধরনের লোক ১০০ জনে ১ জন হবে যে আপনকে বিপদে ফেলতে পারে। কিন্তু আমি চাইনা আপনি ১% রিস্কটা নেন। কেননা আপনি ৯৯টা সফল বিক্রয় করেছেন সেটা কেউ বলবেনা। একটা সমস্যা হলে সেটাই সবাই বলবে। কোন কোন ক্ষেত্রে নিজের লোকেরাও। যদিও আমি আপনার পক্ষেই থাকবো। কিন্তু আমাকে কি কেউ ডাকবে বলেন?
৪. কোনো আন্দাজ বা ধারণা বা আবেগ বা সন্দেহের বশে সিদ্ধান্ত নেবেন না। প্রতিটি সিদ্ধান্ত যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেবেন। কারণ আপনার ধারণা ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা কম কারণ আপনি ইতিপূর্বে ৫/১০ বছর যাবত ব্যবসা চালিয়ে আসেন নি। তাই ভুল করে মাসুল দেয়ার আগেই আর যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ নিতে ই ক্যাব আড্ডায় চলে আসুন। রাজীব ভাই আছে, আফজাল ভাই, নাফিস ভাই, নাহিদভাই, ইফাত আপু তারা সাথে সাথে আপনাকে বুদ্ধি পরামর্শ দেবে। মাঝে মধ্যে আমাকেও পাবেন, আমি হয়তো কমই বলবো কারণ আমিতো সব লিখেই দিয়েছি।

ই ক্যাব স্কাইপি আইডি : eadda
৫. কোনো ব্যক্তি, সেটা গ্রাহক বা সরবরাহকারীর আচরণ দেখে সতর্ক হোন। কাউকে পন্য দেয়ার আগে অগ্রিম টাকাপয়সা দেবেন না। বিশেষ করে আপনি যার স্থায়ী ঠিকানা চেনেন না। পন্য শিপিং, পেমেন্ট মুড, প্যাকিং, টাকা গ্রহণ, ট্রেড লাইসেন্স্, ব্যাংক একাউন্ট, ব্যাংকলোন সব বিষয়ে আপনাবে পরামর্শ দেয়ার ক্ষমতা রাখে আমাদের ই ক্যাব। হুঁ। https://www.facebook.com/groups/eeCAB/

(কানে কানে বলি এই ফাঁকে আমি কিন্তু জামার কলার ঝেড়ে নিয়েছি, কারণ এটা আমাদের ই ক্যাবের একটা গৌরব)

অনলাইন শপে নারী ক্রেতা- আপনার সাথে কটি কথা
আর আপনি কোনো পরামর্শই যদি না নেন। আমি জানি আপনি একটা কাজ ঠিকই করবেন তাহলো আমাদের ই শপগুলো থেকে পন্য ক্রয়। ঘরে বসে আপনর পছন্দের সবকিছু এখন অনলাইনে পাচ্ছেন কিনবেন না কেন। আজই কিনুন।
হাউজ টিচার থেকে সুন্দর ফার্নিচার, মুরি মুড়কি থেকে লইট্টা শুটকি, বইপত্র থেকে ছাতাছত্র, তাজাসব্জি থেকে রুটি রুজি, হাতব্যাগ থেকে প্লাস্টিক ট্যাগ, জামদানী থেকে আমদানী, ভারতীয় কিংবা শারদীয়, তাতের শাড়ী কিংবা কাচের হাড়ি, বাচ্চার ছুচণি থেকে কিচেন লুছনি, মিস্টির প্যাকেট থেকে শীতের জ্যাকেট, ইলিশ মাছ থেকে ফুলের গাছ, পয়েলা বৈশাখ বা ঈদের পোষাক, প্রীতি উপহারি থেকে মন মনোহারী, চায়না গুডস থেকে ফাষ্ট ফুডস আর কি বলবো বলেন যে কি নেই। এখানে। কোনটা কার কাছে সেটা জানতে এড করুন ই কমার্স এসোসিয়েশান বাংলাদেশ এর সভাপতি রাজীব ভাইকে: (রাজীব ভাইর ফেইসবুক লিংক)..https://www.facebook.com/apurazib

কিভাবে করবেন লেনদেন- অল্প কথায় জেনে নেন
বিকাশ: কাউকে আপনি টাকা বিকাশ করলে বাসায় পন্য পৌছে দেবে? অথবা পন্য দেয়ার পর টাকা বিকাশে দিন। (একটু সাবধানে করবেন, বিকল্প ডাচবাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং)

ব্যাংক একাউন্ট: কারো একাউন্টে টাকা পাঠালে তিনি আপনাকে মাল পাঠাবে, অথবা মাল পাঠানোর পর তাদের একাউন্টে টাকা জমাি দন।

(বানানটা আর একাউন্ট নাম্বারটা শুদ্ধ করে লিখবেন, টাকা জমা দেয়ার সময়, নইলে বেচারা বিপদে পড়বে)
ক্যাশ অন ডেলিভারী: কারো পন্য হাতে পেয়ে টাকা পরিশোধ করবেন? (টাকা দেয়ার আগে প্যাকেট পন্যটা খুলে চেক করে নিবেন)
কন্ডিশন ডেলিভারী: কেউ আপনাকে পন্য পাঠিয়ে বলবে এসএপরিবহনে গিয়ে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে।

(ই ক্যাব মেম্বার হলে ভয় নেই, এর বাইরে কেউ হলে নিজ দায়িত্বে লেনদেন করুন)
আরো আছে ভিপি, পরিবহন সার্ভিস, পার্সেল, রেল ট্রান্সপোর্ট, লঞ্চ সার্ভিস। সেগুলোতে না যাওয়াই ভালো যদি আপনি ভালো না জানেন।

আজ আর নয়। শুভ হোক আর্ন্তজাতিক নারী দিবস। জগতের সকল নারী গৌরাবান্বিত আপন গৌরবে।
জাহাঙ্গীর আলম শোভন/ ০৩/০৩/২০১৫

5,796 total views, 4 views today

Comments

comments

Your email address will not be published.