নারী উদ্যোক্তা ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ

Women Entrepreneur and Personality Development

জাহাঙ্গীর আলম শোভন

begum-rokeya-sakhawat

আসলে একজন উদ্যোক্তাকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখা উচিৎ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নয়। কিন্তু এই মুহর্তে আমাদের দেশে নারী তথা নারী উদ্যোক্তা ও নারী পেশাজীবিরা পুরষদের মতো নির্বিঘেœ কাজ করার সুযোগ পাননা। এটা সমাজের সমস্যা হোক, দেশের সমস্যা হোক এটা একটা সমস্যা। নারীরা এমন কিছু সমস্যা মোকাবিলা করেন যেটা একই সমাজের একজন পুরুষকে মোকাবেলা করতে হয়না। আর সেজন্যই আমরা নারীর বিষয়গুলো নিয়ে আজ আলাদা ভাবে আলোচনা করতে চাই।
বাংলাদেশে ই কমার্স ও এফ কমার্স ব্যবসা খুব দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। আর নারী উদ্যোক্তাারা বিভিন্ন সুবিধার কারণে এখানে এসে যোগ দিয়েছে। কিন্তু নারীদের কয়েকটি প্রবণতার কারনে তারা এই ব্যবসায় কাংখিত সফলতা পাচ্ছেন না। সে বিষয় পরে কথা হবে। আজ আলোচনা করবো একজন নারীকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য কেন ব্যক্তিত্বের বিকাশ প্রয়োজন এবং কিভাবে ব্যক্তিত্বের বিকাশ একজন নারীকে সফল করতে পারে।
১০ জন থেকে আলাদা: আমাদের সমাজের একটা প্রবণতা হলো একইরকম করে ভাবা। যার চোখে নারী যা তিনি সাইকে ঠিক সেরকম করে ভাবেন। আর আমাদের নারীদের একটা প্রবণতা হচ্ছে তারা কোন কিছু নতুন করে শুরু করতে চান না। কেউ কিছু করেছেন দেখলে তিনি সেটা করার কথা ভাবেন। খুব ব্যতিক্রম দুএকজন আছেন। নারীদের মধ্যে যারা নতুন প্রথম কিছু করেন দেখা গেছে তা তিনি তার কোন পুরুষ আত্মীয়ের উৎসাহে করেছেন। অবশ্য নতুন কিছুর সাথে জড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একজন নারীর বিভিন্ন রকম ঝুঁকি রয়েছে সেটাও ফেলে দেয়ার মত নয়।
তাহলে তিনি কিভাবে ১০জন থেকে আলাদা ভাববেন। প্রথমত তিনি জেনেই কাজ শুরু করবেন। এবং আশপাশর ১০জন নারী যে পেশা নিয়ে কাজ করছে তিনি সে ট্যাবুটা ভাঙবেন। ভেঙ্গে তিনি নতুন একটা কাজ শুরু করবেন। এতে তিনি ১০জন থেকে আলাদা হবেন। তার এই আলাদা হওয়া তাকে ইউনিক একটা পরিচয় দেবে। পরে সেটা তার একটা আইডেন্টিটি বা আলাদা পরিচয় দাড় করাবে। এতে করে তিনি তার ব্যবসা বা পেশাকে সকলের কাছে অন্যরকমভাবে তুলে ধরার প্রয়াস পাবেন।

ব্যাক্তিগত ব্রান্ডিং: নিজের পন্য, সেব,া পেশা বা শপ ব্রান্ডিং এর আগে তিনি নিজের ব্রান্ডিং করবেন। আমাদের দেশে মানুষ পরিচিত মানুষের কাছ থেকে শপিং করতে পছন্দ করে। ফলে তিনি যদি তার লেখনি। সমাজিক কাজ, সৃজণশীল কোন উদ্যোগ এর মাধ্যমে অথবা সামাজিক বিভিন্ন নেতত্ব ও উপস্থিতির মাধ্যমে নিজেকে পরিচিতি ও নিজের একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে পারেন। পরে তিনি যদি কোন ব্যবসা বা পেশায় নামেন তার ভাবমূর্তি দিয়ে তিনি সহজে সফল হতে পারবেন। কারণ সবাই ধরে নেবে তিনি ভালো মানুষ, তিনি কাউকে ঠকাবেন না।

সবাই মিলে করি কাজ: তিনি চেস্টা করবেন তার কাজটার সাথে পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ত করতে, সবাইকে না হলে অন্তত একদুইজনকে। এমনকি নামমাত্র হলেও। যেমন তিনি একটা কোম্পানী করলেন। সেখানে তার বাবাকে চেয়ারম্যান রাখলেন। এটা তার জন্য সহায়ক হবে। আর যদি পরিবারের কেউ না হন। অন্তত এলাকার বা নিজের একজন বান্ধবীকে সাথে নিতে পারেন। আর যদি একটা গ্রুপ নিতে পারেন। তাহলে তো কোন কথাই নেই। কারণ একটা মেয়েকে কেউ যত সহজে একটা কথা বলতে পারবেন, ৫টা মেয়েকে তত সহজে কিছু বলতে পারবেননা।
সামাজিক পর্দা: আসলে ধর্মীয় পর্দা অপর্দা যার যার বিষয়। কিন্তু সামজিক পর্দা একজন উদ্যোক্তা নারীর জন্য প্রয়োজন। এটা অবশ্য নারী পুরুষ সব্রাই প্রয়োজন। কারণ সমাজের বাসিন্দারাই তার ভোক্তা তাদের কাছে তার ইতিবাচক মানসিকতার পরিচয় পৌছানো দরকার। সামাজিক পর্দা কেবল পোষাক নয় এটা আচার আচরণ সবকিছুই মিলে। এই পর্দার কোন মাপকাঠি নেই। এটা এক এক সমাজ এক এক দেশের জন্য এক এক রকম।
একটি কাজ অনেক রকম করে করা এবং সেরাটা বের করা: আপনি কারো অনুকরণ করবেন না। তবে কে কিভাবে করছে সেটা জেনে আপনি আপনার রাস্তা ঠিক করবেন। সেটা কারো সাথে মিললো কি মেলেনি সেটা কোন বিষয় নয়। আপনি যে লক্ষ্য অর্জন করতে চান সেটার জন্য আপনার পদ্ধতি কতটা পারফেক্ট আপনি শুধু অতটুক ভাবুন। যেমন ধরুন: সবাই ফ্যাশন হাউস দিয়ে ই কমার্স করছে। আপনি সেটা না করে আপনি অফিস স্টেশনারী বই খাতা দিয়ে শুরু করলেন। অথবা ফ্যাশন হাইসই করলেন কিন্তু আপনার পেইজটা পন্যটা অন্যদের চেয়ে আলাদা হলো। আপনি সবার মতো করে ছবি না তুলে ইন্টারনেট ঘেটে সঠিক পদ্ধতিতে ছবি তুললেন। আপনি মার্কেটিং এর জন্য ফেসবুকের লাইক না কিনে আপনি নতুন ১০টা উপায় খুজে বের করলেন। এভাবে আপনি নিজের সেরাটা বের করে নিতে পারবেন।

জানার পিপাসা: বেশীরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে প্রবণতা তিনি যা জানেন সেটাই বেশী, তার বেশী আর কি জানবেন। বা তিনি অন্যের চেয়ে বেশী জানেন। সত্যি বলতে কি একটা চালাক ও অন্যদের চেয়ে অল্প বেশী জানেন এ ধরনের মহিরাদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা দেখা যায়। তিনি যখন ৫ বছর ধরে দেখেন যে তার আশপাশে ১০ জনের চেয়ে তিনি বেশী বুঝেন তখন তার এই সমস্যাটা তৈরী হয়। কিন্তু একমসয় তিনি সত্যি পিছিয়ে পড়েন। কারণ পৃথিবীটা প্রতিদিন একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে। আর যুক্ত হচ্ছে নতুন তথ্য। আর এজন্য প্রতিদিন শিখতে হয়। আর শেখার জন্য আপনার অনুসুন্ধিৎসু মন দরকার। আপনি একটা তালিকা করুন। আগামী ছয়মাস আপনি কি কি কাজ করবেন। এ কাজগুলো করার জন্য আপনার কি কি স্কিল দরকার আর এই স্কিল গুলো অর্জণ করার জন্য আপনার কিতি জানা দরকার। এবং জানতে হলে কোথায় যেতে হবে কি করতে হবে?

প্রতিযোগিতার মনোভাব ও সেরা কাজ করার চিন্তা: ব্যবসা মানেই প্রতিযোগিতা, তবে প্রতিযোগিতা মানে অন্যের পিছে লাগা নয়, যে সময়টা আপনি অন্যের যশখ্যাতি নিয়ে টেনশন করবেন। সে সময়টা নিজে কিভাবে ভালো করবেন। সেটা ভাবেন অনেক কাজ দেবে। আপনি ভাবুন সব্রা চেয়ে আমার পেজটা আলাদা হবে। সেজন্য আপনি আলাদা ও নতুন ধরনের ফেইজগুলো ভিজিট করুন। আপনি ভাবুন আপনার পন্যের ছবি হবে সবার চেয়ে সেরা। তখন আপনি কিভাবে সেরা ছবি নেবেন। সে রাস্তাটাও পেয়ে যাবেন।

সাধারণ প্রবণতাগুলো থেকে বের হয়ে আসা: আমাদের সাধারণ প্রবণতা হলো কোন কিছু করে দেখা যদি হয় হলো নইলে চাকরী বাকরি একটা করবো খন। এই মানুষিকতা ত্যাগ করে লেগে থাকেত হবে। কখন কি হবে সেটা পরে দেখা যাবে। তবে আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো। মোট কথা লেগে থাকার মানসিকতা তৈরী করতে হবে। আমরাতো জানি লেগে থাকার কারনে অনেকেই অনেক কঠিন কাজে সফল হয়েছেন।

জানার আছে অনেক কিছু: আর একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জানিনা মনে করে দূরে সরে থাকা যেমন একটি ভুল তেমনি কম জেনে অনেক জেনেছি বলে কাজ শুরু করে দেয়াও ঠিকনা। আপনি ধরে নেবেন। আপনি কিছু বুঝেন এবং বাকিটা বুঝে নেবেন। একটা কাজের কি কি সমস্যা হতে পারে সেগুলো ভাবুন, প্রত্যেকটির কয়েকটি সমাধান ঠিক করে রাখুন, তাহলে আপনি কখনো হতাশ হবেন না। যখনি ধাক্কা খাবেন তখনই আপনার মনে হবে ও এই ব্যাপার! আচ্ছা ঠিক আছ তাহলে, অন্যভাবে করে দেখা যাক। আপনি একটা নোটবইতে আপনার ভাবনাগুলো লিখে লিখেও আগাতে পারেন। তবে এটা মনে রাখবেন। আপনি যে কাজই করেন না কেন সে বিষয়ে আপনাকে ভালোভাবে জানা দরকার। আমিতো বলবো প্রেম, বিয়ে, সন্তান ধারণ এসব করার আগেও এসব ব্যাপারে স্টাডি করা দরকার। ব্যবসা বাণিজ্যর ক্ষেত্রেতো বলার অপেক্ষাই রাখেনা।

Torn-paper-with-natural-background-vector

ই কমার্স সেক্টর: ই কমার্সে দেখা যাচ্ছে বেশীরভাগে মহিলা ফেইসবুকে পেইজ খুলেছেন। বিকাশে লেনদেন করছেন। আর ছবি তুলে তুলে পোস্ট করছেন। কারণ তিনি আরেকজনকে দেখেছেন এভাবে করতে। ই কমার্সের জানার এবং করার এর চেয়ে ১০০ গুণ ভালো রাস্তা আছে তিনি সেটা ভাবনাতেই আছেন না। ফলে মেয়েদের এফ. শপগুলো সব একইরকম, সব একই প্রোডাক্টস। এমনকি ছবি পর্যন্ত একই রকম। বিগত দিনগুলোর অভিজ্ঞতায় দেখেছি তারা একটা ছবি কিভাবে তুললে ভালো আসবে। এটা ভাবতেই রাজি নন। কোনোরকম একটা ছবি হলেই হলো। দয়া করে এই প্রবণতা থেকে বের হন।

7,976 total views, 3 views today

Comments

comments

Your email address will not be published.