নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটা আশ্রয়স্থল হয়ে দাড়িয়েছে ই-কমার্স খাত বা অনলাইন ব্যবসায়। আমরা এক নজরে দেখে নিতে চায় এই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের অবস্থান।
- ই-ক্যাবের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ১৬০০ এর মধ্যে ২৭% উদ্যোক্তা নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। সংখ্যা ৪৩০ জন।
- তবে ক্ষুদ্র অনলাইন উদ্যোক্তাদের মধ্যে এই সংখ্যা ৩০% এর বেশী এবং ফেসবুক কেন্দ্রীক উদ্যোক্তাদের মাঝে ৪০% এর বেশী।
- দেশে ৫ লাখ এর মতো ফেসবুক পেইজ রয়েছে এরমধ্যে ২ লাখ ফেসবুক পেইজ সক্রিয়। তাদের বড়ো একটা অংশ নারী উদ্যোক্তা।
- দেশে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করে থাকে। বলতে গেলে ৪% মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করে এর মধ্যে গ্রামীণ ক্রেতা রয়েছে ২৩%।
- নারীরা যে ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে সেগুলো হলো-
হাতের কাজ, তৈরী পোশাক, শাড়ি, কসমেটিক্স, বুটিকশপ ইত্যাদি পণ্য বিক্রি করে থাকেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ১০ হাজারের বেশী নারী উদ্যোক্তা খাবার তৈরী করে অনলাইনে বিক্রি করছেন। - তবে ঈদানিং নতুনত্ব আসছে, যেমন কুরিয়ার সার্ভিস, অনলাইন এডুকেশন, ক্রসবর্ডার ই-কমার্স ইত্যাদি উদ্যোগে নারীদের দেখা যায়।
- গত বছর প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার ই-কমার্স লেনদেন হয়েছে। চলতি বছর এটা ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আগামী বছর ২০২২ এই বাজার সাইজ হবে ২০২৪ কোটি টাকার বেশী। নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ২৭% হলেও আর্থিক বিচারে তাদের শেয়ার ১৮% মতো। কারণ বেশীরভাগ নারী উদ্যোক্তাই ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করেন। এবং নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে অংশীদারী ব্যবসার প্রবণতা কম।
- নারী উদ্যোক্তারা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন সেসব সমস্যাগুলির তালিকা।
- ১) পরিবার থেকে নারী উদ্যোক্তারা বাঁধাপ্রাপ্ত হোন। সামাজিক ভাবে তারা সহযোগিতা পান না।
২) যেসব স্থানে পন্যের সোর্সিং করা যায় সেসব জায়গাগুলো নারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় নয়।
৩) বিভিন্ন ব্যাংকে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কমসুদে ঋণ দিলেও ঋণের প্রক্রিয়া খুব সহজ নয়।
৪) নারী উদ্যোক্তাগণ ট্রেড লাইসেন্স নিতে চান না এবং ব্যাংক হিসাব সংরক্ষণ করেন না। ফলে তারা ডকুমেন্টস এর দিক থেকে খুব দূর্বল হোন এবং ঋণ বা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারেন না।
৫) নারী উদ্যোক্তাদের সাথে লেনদেন এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতারকচক্র খুব সহজে তাদেরকে টার্গেট করে থাকেন। ফলে অনেক সময় প্রতারণা ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখখীন হোন তারা।
৬) প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশন এবং পরিবারের ও সমাজের সহযোগিতার অভাবে তারা আত্মবিশ্বাস ও প্রেজেন্টেশান স্কিল এর অভাবে থাকেন।
৭) নারী উদ্যোক্তারা অনেকে সময় সাপ্লায়ার ও ক্রেতাদের কাছ থেকে সাইবার বুলিং এর শিকার হোন। - নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কি করা যায় সে বিষয়ে সুপারিশসমূহ
১। পরিবার এবং সমাজ যেন নারী উদ্যোক্তার পাশে থাকে। এ ব্যাপারে সরকারী প্রচার প্রচারণা প্রয়োজন।
২। নারী উদ্যোক্তাদের প্রেজেন্টেশান, লিডারশীপ ও নেটওয়ার্কিং এর মতো সফট স্কিল তৈরীর জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
৩। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা মার্কেটপ্লেস তৈরী করা যেতে পারে। যাতে শুধু নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যই বিক্রি করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের ডেলিভারী কোম্পানী সে পণ্য ডেলিভারী দিবে।
৪। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আইনি সহায়তা, বিজনেস কনসালটেন্সি, এবং ঋণ ও বিনিয়োগ পরামর্শ বিভাগ খুলতে হবে। যাতে তারা ফোন করে যেকোনো বিষয় জানতে পারে এবং সাক্ষাৎ করেও যেকোনো বিষয় শিখতে পারে।
৫। নারী উদ্যোক্তারা সাইবার বুলিং ও প্রতারণার শিকার হলে দ্রুতগতিতে সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬। ব্যাংকের ঋণ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শর্তসমূহ আরো সহজ করতে হবে।
৭। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা কো-ওয়ার্কিং স্পেস থাকতে পারে। যাতে তাদের মধ্যে পরষ্পরের প্রতিযোগিতামুলক মনোভাবের পরিবর্তে সহযোগিতামূলক মনোভাব তৈরী হয়। ভবিষ্যতে তারা একাধিক উদ্যোক্তা মিলে বড়ো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
৮। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে জেলা পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রির জন্য মাসে বা সপ্তাহে ১ দিন বিশেষ মেলার আয়োজন করা যেতে পারে।
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
2,907 total views, 3 views today