ই কমার্সের আলোয় ঐতিহ্যের সন্ধানে

জাহাঙ্গীর আলম শোভন

 

 

আমাদের ঐতিহ্য

ধারণা করা হয় বাঙালী জাতিসত্তার বিকাশের শুরু আজ থেকে তিন হাজার বছর আগে। বাঙালী জাতি হিসেবে সম্বোধন পায় কয়েকশত বছর আগে। আমাদের ইতিহাস ঐগিহ্যে হাজার বছরের সংস্কৃতির শেকড় অনেক গভীর। এসবের সাথে যুক্ত হয়েছে পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশের ধর্ম ভাষা ও জীবনের নানা অনুসঙ্গ। যেমন প্রাচীন আর্য ও দ্রবিড় সংস্কৃতির সাথে সেন রাজাদের শ্রেণীভেদ প্রথা বেশ পোক্তভাবেই আমাদের সমাজে বিদ্যমান ছিলো। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস ও সংস্কারগুলো আমাদের বাঙালী সংস্কৃতির সুগভীর এবং সুবিস্তৃত স্তরে প্রসারমান। বাঙালীর প্রবণতা হলো বাঙালী হাজার বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে আবার নতুনকে গ্রহণ করতে পারে। এজন্য বাংলাভাষায় আছে বিদেশী শব্দের সমাহার, বাঙালীর পোষাকে আছে নানাদেশের মিশেল, বাঙালীর খাবারে আছে নানা মিশ্রণ, বাঙালীর সংস্কৃতিতে আছে নানা উপাদান। সূতরাং আমাদের ঐতিহ্য এখনো আমাদের শেকড়ের সাথে সম্পর্ক রেখেছে আবার গ্রহণ করেছে নতুনকে। সাম্প্রতীককালে বৈদেশিক সংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহে যখন আকাশ সংস্কৃতির হাত ধরে ভেসে যাচ্চে প্রজন্মের মুল্যবোধ। তখনও কিছু কিছু উদ্য্গো তুলে আনছে আমাদের সংস্কৃতির আস্বাধনকে। বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ সেরকম একটা উদ্যোগ।

সমাজবেত্তারা বলছেন চলতি শতাব্দীট হবে ফিউশনের শতাব্দী। এখানে প্রাচ্য প্রাশ্চাত্যের সংস্কৃতি ভিন্ন হবে কি অভিন্ন হবে সেই বিতর্ক ছাপিয়ে একটা আওয়াজ উঠেছে যে সংস্কৃতিতে মিশ্রণ ঘটবে। মিশ্রণ ঘটবে শর্ট টি শার্টের সাথে ঘাগরার, মিশ্রণ ঘটবে ভাষা ও শব্দের, মিশ্রণ ঘটবে পাস্তার সাথে চিংড়ি ভাজার। এই মিশ্রণকে মেনে নেয়ার সংস্কৃতিই এখন আমাদের নিত্যদিনের সংস্কৃতি হয়ে দাড়িয়েছে। আকাশ সংস্কৃতির যুগে বিদেশী কালচার ঠেকানোর উপায় নেই। শিল্প সাহিত্যের ক্ষেত্রে বাধ বিবাধ কাম্যও নয়। মুক্তবাজার, অর্থনীতি, গণতসন্ত্র, অবাধ ততথ্যপ্রবাহ, ব্যক্তি স্বাধীনতা আর বহজাতিক সংস্কৃতি তার সাথে যুক্ত হয়েছে বিশ্বায়ন। সূতরাং আমাদের আন্দোলন হবে হাজারো সংস্কৃতির মাঝে নিজেরটা ধরে রাখার আন্দোলন। আমরা অন্য সে কৃষ্টি থেকে যাই গ্রহণ করিনা কেন নিজরেটা যেন ভুলে না যাই।

ধরে রাখতে চাই

তাই আমরা মনে রাখতে চাই আমাদের চর্যাপদের সেই কবি লুইপা গুন্ডুরিপাদের । আমরা ভুলে যেতে চাইনা আমাদের মধ্যযুগের পুথি ও কাব্যসাহিত্যকে। আমরা এখনো পরছি আমাদের শাড়ি লুঙ্গি পাঞ্জাবী, এখনো সরষে ইলিশ, ছোট মাছের চ্চইড়ি, মুড়িঘন্ট আমাদের মন ভরায়। প্রতিদিন প্রতিক্ষন না হলেও উৎসব আনন্দে আমরা পিঠপুলি, পায়েস, মুগন পাকন নানা পিঠার স্বাধ আস্বাধন করি রসনার আনন্দে। সেটি আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ।

ফিরে আসছে আবার

বাঙালীর এখন বিশ্বের মূল তিনটি ভুখন্ডে বাস করে। আরো কিছু এলাকা ধরলে এটা ফিরিস্ত লম্বা হবে। এসব অঞ্চলে বেড়ে উঠছে অভিবাসিী বাঙালীদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম। তারা কখনো তাদের বাপ দাদার ভিটেমাটি আর কালচারের সন্ধান করে বৈকি? তাদেরকে দিতে হবে আমাদের ইতিহাসের পরিচয়, কৃষ্টির ঘ্রাণ আর ঐতিহ্যের স্বাদ। সেজন্য আবার ফিরে আসছে আমাদের গামছা ফ্যাশন, আসছে কাবাডি, প্রািতযোগিতা, আসছে পাটিসাপটা। কিন্তু সেটা কি সর্বত্র? না তা সর্বত্র নয়। দেশের সব জায়গায় এখন তাতী চরকায় সূতা বোনে না, সবমেলায় এখন আর পুতুলনাচ হয়না, সব বাজারে এখন আর খেজুরের গুড়ের জিলাপী মেলেনা, সব বউ ঝিয়েরা এখন আর নকশী মাদুর বানাতে জানেনা। তাহলে উপায়? উপায়ের খোজার আগেই কাজ শুরু হয়ে গেছে। বাজারভিত্তিক অর্থনীতিতে সবকিছু পাওয়া যায়। তবুওতো সব বাজারে সবকিছু পাওয়া যায়না। উত্তরায় বাখরখনি দেখিনা, গাজীপুরে পুরান ঢাকার খাবার পাওয়া যায়না, ফার্মগেটে পিঠাপুলির দোকান নেই। চকবাজারে নকশীকাথা খুজে বের করা কঠিন। কুমিল্লার রসমালাই খুলনা থেকে খেলে কি সেই স্বাদ আসে, টাঙ্গাইলের চমচম বরিশালে কি মেলে, বগ–ড়ার দই নোয়াখালীতে খুঁেজ লাভ কি?

ppppppppppppn

(ছবি, পানিথলি পিঠা: ঐতিহ্যের স্বাদ এর সৌজন্যে)

এজন্য এসেছে ই কমার্স

লোকজ জিনিসপত্র, তৈজস, সৌন্দর্যবনর্ধক জিনিসপত্র, নিত্য ব্যবহার্য, ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কিত নানাপন্য অনলাইনে কিনতে পারেন দেশের যেকোন এলাকার মানুষ এমনকি বিদেশ থেকেও অনেকে কিনছেন অনেক কিছু। গ্রামে গ্রামে মোবাইল ফোন, প্রতিটি শহরে অনলাইন ব্যাংকিং বাজারে বাজারে মেবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কুরিয়ার সার্ভিস, পুরো পক্রিয়াকে সহজতর করে দিয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে সারাদেশের সব এলাকা ই কামর্স নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যোগ দিয়েছেন যারা

সংস্কৃতির প্রসারে ই কামর্সে যোগ দিয়েছে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। আমাদের ঐতিহ্যবাহী জামদানী নিয়ে কাজ করছে জামদানী ভিলা ও জামদানী মেলা সহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। । কক্সবাজারের পন্য নিয়েও রয়েছে আলাদা স্পেশাল অনলাইন শপ আর সবাইকে চমকে দিয়ে দেশীয় শতপিঠার মেলা বসিয়েছেন চট্টগ্রাম থেকে ঐতিহ্যের স্বাধ। টাঙাগাইল থেকে স্থানীয় পন্য বেচে থাকেন আঙ্গিক।

 

6,907 total views, 3 views today

Comments

comments