আনোয়ার হোসেন
এটি খুব অবাক হবার মত ব্যাপার যে, শুধু অধিকাংশ ই-কমার্স সাইটেরই বিজনেস ব্লগ নেই। যদিও অনেক জায়গাতেই আমরা শুনতে পাই যে, সাধারণ ব্যাবসায় গুলোর একটি ব্লগ থাকা উচিত।অবশ্য অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, অনলাইনে বেচা কেনাই যখন উদ্দশ্য তখন ই-কমার্স সাইটের ব্লগ থাকার কি দরকার ?
এটি আমরা সবাই জানি যে , একটি বিজনেস ব্লগ কোন ওয়েব সাইট প্লাটফ্রমে ট্রাফিক বাড়াতে দারুন ভুমিকা পালন করে। কিন্তু এটি ছাড়াও ব্লগের আরো অনেক সুবিধা রয়েছে, বিশেষত ই-কমার্স সাইটগুলোর জন্য। ব্লগহীন ই-কমার্স সাইটগুলো সেসব সুবিধা গুলো থেকে বঞ্চিত ।
আপনি যদি ই-কমার্স সাইটের জন্য ব্লগের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে ব্যাথ হন, তবে নিচের কারনগুলো দেখতে পারেন ।
১। এস ই ওঃ
আমরা জানি যে, বেসিক এই ই ও কি ? এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ ? সার্চ ইঞ্জিন বুটস প্রধানত ২ ধরনের কাজ করে থাকে কনটেন্ট ক্রলিং এবং ইনডেক্স নির্মাণ করা। এই বিষয়গুলোর মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন ইন্টারনেট ব্যাবহারকারিদেরকে প্রাসঙ্গিকতা অনুসারে উত্তর প্রদান করে এবং ফলাফল এনে দেয়। ই-কমার্স সাইটগুলোর অন্যতম প্রধান উদেশ্য থাকে সার্চ ইঞ্জিনে উপরের দিকে র্যাঙ্ক পাওয়া যাতে করে ইন্টারনেট ব্যাবহারকারিরা কোন পণ্য খুজলে যেন, সার্চ রেজাল্টে তাদের ওয়েব সাইটি শুরুতে থাকে।।
সার্চ ইঞ্জিনের কনটেন্ট ক্রলের জন্য ব্লগ প্রয়োজন। কারন লিঙ্ক ও কনটেন্টের মাধ্যামে সার্চ ইঞ্জিন “ক্রলার” অথবা “স্পাইডার” আন্তসংযোগ করে থাকা বিলিয়ব বিলিয়ন ডকুমেন্টের কাছে পোছে যেতে পারে। কেননা ব্লগে থাকে লিঙ্ক, নিদিস্ট প্রেসিং এবং আপনার ই-কমার্স সাইটের সাথে সম্পর্কিত কনটেন্ট। এগুলো আপনার অনলাইন কনটেন্ট গুলোকে আরো কার্যকর ভাবে ক্রল করতে সাহায্য করে। আপনার ব্লগ পোষ্টগুলো আপানার সাইটে ট্রাফিক পাঠাতে সাহায্য করে। কেননা আপনি যখনই নতুন একটি পোস্ট লিখেন সে পোষ্টটি সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অতিরিক্ত একটি ইনডেক্স পেইজ যা সার্চ ইঞ্জিন আপনার সাইটকে গুগল র্যাঙ্কিংয়ে সাহায্য করে। আর যদি আপনার কনটেন্ত মুল্যাবান হয়, তাহলে সেটা আপনাকে এস ই ও গুগল র্যাঙ্কিং এ টপে উঠতে সাহায্য করে।
২। ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধিঃ
আপনি আপনার ওয়েব সাইটের মাধ্যামে অন্যদের কাছে কোন কিছু বিক্রি করতে চেষ্টা করছেন। মানে আপনার ব্যাবসায় একদল মানুষ বা কোন গ্রুপ নিয়ে গঠিত । তারমানে এখানে মানুষ একটি পক্ষ, তাই শুধুমাত্র সেলস পিস বা কুপন কোড নিয়ে পরে থাকলে চলবে কেন? আপানার ব্লগ আপানার কোম্পানির জন্য সবচেয়ে কার্যকরভাবে যা করতে পারে তা হল ,আপনার ব্যাক্তিত্বকে প্রদর্শন করা।
অবশ্যাই এমন ক্রেতা রয়েছেন যারা পণ্যের বর্ণনা ও আপনার বিজনেসের পলিসির ব্যাপারে আগ্রহী। তাই আপনাকে সেসব তথ্য সঠিক ভাবে প্রদান নিশিত করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ লোক যেখান থেকে তারা পণ্য কিনেন তার সাথে কানেক্টেড থাকতে পছন্দ করেন।
আপনার পন্য নিয়ে আপনার যে প্রচণ্ড আগ্রহ রয়েছে তা আপনার পাঠকদেরকে জানতে দিতে হবে। ভাল হয় আপনি যদি আপনার আগ্রহকে আপনার ক্রেতাদের মাযে ছড়িয়ে দিতে পারেন। লোকেদের জানতে দিন যে, ব্যাবসায় মানে আপনার কাছে কি ? একই সংগে ভঙ্গুর হতেও পিছপা হবেন না। আপনার ব্যাথতার গল্প ও শোনাতে ভুলবেন না। এর ফলে পাঠকেরা আপনার সততা ও সাহসের প্রশংসা করবে ।
লোকেদের সাথে সত্যিকার অর্থে কানেক্টেড থাকা কখনোই ব্যাবসায়ের জন্য বাধা নয়। ব্লগিং অবশ্যাই শুধুমাত্র খুব হিসাব নিকাশ করা বিক্রয় বাড়ানোর প্রচেস্টা নয় ।
একটি অসাধারণ পণ্য তৈরিতে মনোযোগ দিন, ক্রেতাদের সবচেয়ে ভাল সার্ভিসটি দিন এবং লোকেদের সাথে সংযুক্ত থাকুন। সেল আসবেই ।
৩। নিজেকে একজন ইন্ডাজট্রি এক্সপার্ট হিসেবে ব্র্যান্ড করুন
অনেক ই-কমার্স সাইটকেই দেখা যায় তারা তাদের ব্লগটিকে ব্যবহার করে নিজেদেরকে ইন্ডাজট্রি এক্সপার্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার জন্য । আপনার ব্লগ পোস্টে আপনার টার্গেট অডিয়েন্সরা সার্চ করে এমন টিপস এন্ড ট্রিকস পোষ্ট করতে পারেন। তাছাড়া আপনি পোষ্ট করতে পারেন টিওটোরিয়াল, এবং সাম্পতিক ব্রেকিং নিউজ। আর সেলস ইনফরমেশন সহ পোষ্ট ত থাকবেই। তবে এ কথা মাথায় রাখতে হবে যে, ভাল ব্র্যন্ড বানাতে আপনাকে অবশ্যই ক্রেতাদের জন্য আরো বেশি করে ভ্যালু এড করতে হবে।
৪। আপনার কাস্টমারদের সাথে এনগেগ থাকতেঃ
শুধু মাত্র শপিং করার সময় কাস্টমাররা আপনার সাইটে ভিজিটে আসার চেয়ে আপনি তাদেরকে চলমান ভিত্তিতে আপনার ব্লগের মাধ্যমে এনগেগ রাখতে পারেন। বিভিন্ন উপায়েই আপনি কাজটি করতে পারেন। নিচের তাদের কয়েকটি আইডিয়া দেয়া হলঃ
উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি ওয়েট লস রিলেটেড প্রডাক্ট সেল করেন তাহলে আপনি এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সফল হয়েছেন এমন ক্লায়েন্টদের সফল হবার গল্প শেয়ার করতে পারেন।
আপনি একটি গল্প বলতে পারেন । সেটি হতে পারে আপনার ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িত কোন একটি অনুপ্রেরণামূলক গল্প, আপনার ক্লায়েন্টের শেয়ার করা কোন প্রেরানার গল্প বা অথবা আপনার ব্যাবসায়ের গল্প।
ছবি ও ভিডিও পোষ্ট করতে পারেন-আপনি সেসব পণ্য বিক্রি করেন নিশ্চিতভাবেই আপনি তাদের ইমেজ ব্যাবহার করেন। আপনার ব্লগ হচ্ছে আরও একটি জায়গা যেখানে আপনি আপনার ক্লায়েন্টের সাথে ভিজুয়ালি কানেক্ট থাকতে পারেন। এটি হতে পারে, কিভাবে কোন একটি প্রডাক্ট ইন্সটল করতে হবে তার একটি ছোট ভিডিও, বা কোণ একটি পণ্য ব্যাবহারের ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অথবা নন প্রডাক্ট রিলেটেড ইমেজ বা ভিডিও তবে সেসব অবশ্যই আপনার টার্গেট অডিয়েন্স রিলেটেড হতে হবে।
উদাহরণ স্বরূপ আপনি যদি পোষা প্রাণী বিক্রি করেন , তবে আপনি মজার পোষা প্রাণীর ছবি বা ভিডিও শেয়ার করতে পারেন।
৫। আপনার কনভারসান রেট বুস্ট করতে
আপনার ই-কমার্স ব্লগ শুধুমাত্র আপনার ওয়েব সাইটে ট্রাফিক নিয়ে আসবে না , এটা আপনার কনভারসান রেট ও বাড়িয়ে দিবে। আপনার ব্লগ আপনাকে অনেক বেশি ক্রেডিবল ও রিলেটেবল অনুভুতি দিবে। আর এসব কিছু অনেক নতুন নতুন ক্লায়েন্ট নিয়ে আসবে যারা তাদের ক্রয়ের সময় অনেক বেশি আত্তবিশ্বাসী থাকবেন।
৬। একটি অনলাইন কমিউনিটি বানাতে
অনেক ব্লগেই পাঠকদের কমেন্ট করার সুযোগ থাকে। এরকম ক্ষেত্রে পাঠকরা নিজেদেরকে একটি বড় অনলাইন কমিনিউটির অংশ মনে করে । সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনি যেমনটা করেন, ঠিক সেভাবে আপনার এক্তিভিটি নিশ্চিত করুন, সকল কমেন্ট ও প্রাইভেট ম্যাসেজের উত্তর দিন ।
এখন আপনি হয়ত ভাবতে শুরু করেছেন বিব্রতকর বা স্পামের ক্ষেত্রে কি হবে ? এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, কেননা আপনি আপনার ব্লগকে এমন ভাবে সেটআপ করে নিতে পারেবেন যে , আউটসাইড কমেন্ট গুলোকে লাইভে আসতে আপনার অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
৭। কোন ঘোষণা দেবার সঠিক জায়গা
হতে পারে আপনি সাধারণত অপট-ইন ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে বা আপনার ই-কমার্স ওয়েব সাইটের একটি নিদিষ্ট জায়গাতে ঘোষণা দিয়ে থাকেন। তবে আপনার নতুন ব্লগও হবে কাস্টমারদের আপনার সাম্প্রতিক নিউজ বা আপডেট জানার দারুন একটি জায়গা। শেয়ারের বিষয় বস্তু যেকোন কিছুই হতে পারে, যেমন নতুন প্রডাক্ট, এফ এ কিউ প্রশ্নের উত্তর, সিজনাল প্রমোশান অথবা আপনার কোম্পানির যেকোন নতুন কোন কিছু যা আপনি শেয়ার করতে পারেন।
৮। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মকে সাপোর্টঃ
প্রতিটি ব্লগ পোষ্টের মাধ্যমে একটি নতুন ইউ আর এল তৈরি হচ্ছে যেগুলো আপনার সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্ট গুলোতে এড করতে পারেন এবং আপনার অন্যান্য অনলাইন মার্কেটিং এ লিঙ্ক করে দিতে পারেন । আপনি আপনার ব্লগে লাইক বা ‘শেয়ার’ বাটন এড করে দিতে পারেন। এ ধরনের বাটন যোগ করা সোশ্যাল মিডিয়াতে রিচ বাড়াতে খুবই কার্যকর।
অবশ্যই আপনার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের লিঙ্কও আপনার ওয়েব সাইট ও ব্লগে যোগ করে দিতে ভুলবেন না , এতে করে আপনি অনেক ফ্যান ও ফলোয়ার পাবেন।
৯। ফ্রি মার্কেটিং টুল
আপনার মার্কেটিং বাজেট যাই হউক না কেন , আপনার ব্লগ হতে পারে আপনার খুবই কার্যকর মারকেটিংযের একটি ফ্রি মাধ্যাম। আপনি চাইলে আপনার কিছু ব্লগ পোষ্টকে প্রমোট করতে কিছু খরচ করতে পারেন। আপনার প্রতিটি পোস্টই আপনাকে অরগানিক ভিজিটর দিবে। কিছু পোষ্ট রিলিভেন্ট থাকবে পুরো মাস জুরে আর কিছু পোষ্ট রিলিভেন্ট থাকবে পুরো বছর জুড়ে। সেগুলো আপানাকে এই সময় জুড়ে ট্রাফিক এনে দিতে পোষ্ট তৈরি করার সময় ছাড়া আর কিছুই নিবে না।
১০। উত্তর দিন বা জনপ্রিয় কোন প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা শুরু করুন
আপনি নতুন কোন পোষ্টের আইডিয়া পেতে পারেন আগের কোন পোষ্টের কমেন্ট থেকে বা সোশ্যাল মিডিয়া তে আপনার কোন কাস্টমার বা ফলোয়ার উত্তর খুজছেন এমন কোন প্রশ্ন থেকে ও। প্রশ্নের উত্তর করলে এটা বোজানো হয় যে, আপনি আপনার পাঠকদের কে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এবং সে ধরনের প্রশ্ন হচ্ছে খুবই ভাল একটি উপায় কোন একটি ডায়লগ চালিয়ে যাবার।
তথ্য সুত্রঃ
http://www.inc.com/adam-heitzman/6-reasons-e-commerce-websites-need-a-blog.html
http://appath.com/blog/3-reasons-ecommerce-site-blog-1-reason-shouldnt/
আরো পড়তে পারেন :
১। ই-কমার্স সাইটে ভিজিটর আনার যত পদ্দতি এবং সেগুলো শেখার রিসোর্স । (১য় পর্ব)
২। ই-কমার্স সাইটে ভিজিটর আনার যত পদ্দতি এবং সেগুলো শেখার রিসোর্স । (২য় পর্ব)
৩। ই-কমার্স সাইটের জন্য কেন করবেন ভিডিও মার্কেটিং ?
৪। ৭ টি মারাত্তক ভুল যা ই-কমার্স সাইটগুলো করে থাকে ।
৫। আপনার ই-কমার্স সাইটটিকে কিভাবে কার্যকর ও আকর্ষণীয় ভাবে সাজাবেন।
৬। ১০ ফেসবুক মার্কেটিং টিপস এন্ড ট্রিকস
৭। ফেসবুক থেকে ইমেইল আইডি সংগ্রহ করার ১০ টি স্মার্ট পদ্ধতি ।
আনোয়ার হোসেন ।
ফেসবুক পেইজ ।
7,915 total views, 3 views today