প্রতিষ্ঠানের নাম: বেস্ট বাই (Best Buy)
ওয়েবসাইট: www.bestbuy.com
প্রতিষ্ঠা কাল: ১৯৬৬
প্রতিষ্ঠাতা: রিচার্ড সালজ (Richard Schulze) এবং গ্যারি স্মোলিয়াক (Gary Smoliak)
কর্মচারী সংখ্যা: ১,২৫০০০
প্রতিষ্ঠানটির বাৎসরিক আয়: ৪০ বিলিয়ন এর উর্ধ্বে।
বর্তমান চেয়ারম্যান এবং সিইও: হুবার্ট জলি (Hubert Joly)
বেস্ট বাই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ইলেকট্রনিক্স পণ্য রিটেইলার প্রতিষ্ঠান। ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রীর পাশাপাশি বেস্ট বাই বিভিন্ন ধরণের সেবাও প্রদান করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকো বেস্ট বাই অনলাইনে এবং অফলাইনে পণ্য বিক্রী করে থাকে তবে যুক্তরাষ্ট্রেই তাদের প্রধান ব্যবসা। বেস্ট বাই এর ১৯০০ এর বেশি স্টোর আছে। প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিলে সাউন্ড অব মিউজিক (Sound of Music) এর পরে ১৯৮৩ সালে নাম বদলে বেস্ট বাই রাখা হয়।
Source: StealingShare
বেস্ট বাই এর ওয়েবসাইট বা কোন স্টোরের ছবি দেখলেই প্রথমেই যে জিনিসটি দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হলো তাদের নীল রঙ। তাদের দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গায় নীল রঙ ব্যবহার করা হয় এবং এটি প্রতিষ্ঠানটিকে একটি বিশেষত্ব প্রদান করেছে।
বেস্ট বাই এর ঘুরে দাঁড়ান:
যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন শপিং এর জনপ্রিয়তার কারণে প্রথাগত রিটেইল স্টোর গুলোর ব্যবসা দারুণ ভাবে মার খাচ্ছিল। সার্কিট সিটি (Circuit City), রেডিও শ্যাক (RadioShack) এর মতোই বড় বড় দুটো ইলেকট্রনিক রিটেইল স্টোর চেইন এর ব্যবসা ই-কমার্সের কারণে লাটে উঠেছে। ২০০৮ সালে সার্কিট সিটি দেউলিয়া ঘোষণা করে। আর এ বছরের মার্চেই রেডিও সিটি দেউলিয়া ঘোষণা দেয়। বিনিয়োগকারীরা ধরেই নিয়েছিল যে বেস্ট বাই সেই পথেই যাবে। রিটেইল স্টোর গুলো “শো-রুমিং” (show rooming) সমস্যায় পড়ে গিয়েছিল। ক্রেতারা স্টোরে আসে, জিনিস দেখে কিন্তু কেনে না। তারা অনলাইনে অ্যামাজন থেকে স্বস্তায় সেই পণ্যটি ক্রয় করে। এ ব্যাপারকে শো-রুমিং বলা হচ্ছে।
উপরন্তু ২০১২ সালে নারী-ঘটিত কেলেঙ্কারির বেস্ট বাই এর প্রাক্তন সিইও ব্রায়ান ডান (Brian Dunn)-কে অব্যাহতি দেয়া হয়। শুধু তাই নয় বেস্ট বাই এর প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড সালজকেও এ কেলেঙ্কারির কারণে চেয়ারম্যান পদ হারাতে হয়।
এসব মিলিয়ে বেস্ট বাই এর উপরে বিনিয়োগকারীরা একরকম আশাই হারিয়ে ফেলেছিলেন। ঐ বছরই হুবার্ট জলিকে বেস্ট বাই এর নতুন সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বেস্ট বাই এর আগে জলি কার্লসন (Carlson) নামে এক বিশ্বখ্যাত ট্রাভেল অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের সিইও হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জলি এবং একদল নারী বোর্ড একজিক্যুটিভ এর নেতৃত্বে বেস্ট বাই গত বছর থেকে লাভের মুখ দেখা শুরু করে।
রিনিউ ব্ল্যু:
নতুন এগজিক্যুটিভ বোর্ড দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে তারা “রিনিউ ব্ল্যু” (Renew blue) নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করে। এ প্রোগ্রামের আওতায় তারা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। তারা প্রতিষ্ঠানটির অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলে।
২০১৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বেস্ট বাই তাদের মাল্টি-ইয়ার প্রোডাকটিভিটি প্রোগ্রাম (Multi-year Productivity Program) এর মাধ্যমে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ কমিয়ে ফেলে।
তাদের যেসব স্টোর গুলোতে কম বিক্রী হচ্ছিল সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১৪ সালে বেস্ট বাই যুক্তরাষ্ট্রে ২০টি এবং অন্যান্য দেশে ২১টি স্টোর বন্ধ করে দেয়। এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিক বাবদ বেস্ট বাই এর মোট স্টোরের সংখ্যা ১৯৪১। এছাড়াও কর্মী ছাঁটাই করা হয়, এবং সাপ্লাই নেটওয়ার্ককে আরো উন্নত করা হয়।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হচ্ছে স্টোরস উইদিন এ স্টোর প্রোগ্রাম (Stores-within-a-store Programme) । সোজা বাংলায় বললে দোকানের ভিতরে দোকান। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বেস্ট বাই সাপ্লায়ারদের সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নত করেছে। যেমন-অ্যাপল, মাইক্রোসফট, স্যামসাং এর মতো নামিদামি ব্র্যাণ্ড গুলো বেস্ট বাই এর গুরুত্বপূর্ণ স্টোর গুলোর মধ্যে তাদের শপ খুলতে পারে। ২০১৩ সালে বেস্ট বাই এবং স্যামসাং এর মধ্যে একটি চুক্তি হয় যার আওতায় বেস্ট বাই ১৪০০ এর বেশি স্টোরের ভিতরে স্যামসাং এক্সপেরিয়েন্স শপ চালু হয়েছে।
তাদের স্টোর গুলোকে তারা আরো আকর্ষণীয়ভাবে সাজিয়েছে যাতে করে বেশি বেশি ক্রেতা আসে।
অনলাইনে বিক্রী বৃদ্ধির জন্যে বেস্টবাই তাদের ওয়েবসাইটের ডিজাইন পরিবর্তন সহ আরো উন্নত ফিচার যোগ করেছে যেমন-ভাল সার্চ ইঞ্জিন যার মাধ্যমে ক্রেতা সহজেই তার পছন্দের পণ্যটি খুঁজে পেতে পারে। পূর্বেই আমি শো-রুমিং সমস্যার কথা বলেছে। এ সমস্যার মোকাবেলা করার জন্যে ২০১৩ সালে বেস্ট বাই অনলাইনে এবং তাদের স্টোর গুলোতে গ্যারান্টি সহকারে অ্যামাজন, অ্যাপল, ডেল, এইচপি, সিয়ার্স (Sears), স্টেপলস (Staples) এবং ওয়ালমার্ট এর তুলনায় কম দামে পণ্য বিক্রীর ঘোষণা দেয়। এর পাশাপাশি তারা টেলিভিশন বিজ্ঞাপনেও প্রচুর টাকা খরচ করে।
অনলাইনে বিক্রী বৃদ্ধির বেস্ট বাই তাদের সেলস ডিস্ট্রিব্যুশন নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করেছে। ক্রেতাকে তার পণ্যটি যাতে দ্রুত এবং কম খরচে ডেলিভারি দেয়া যায় তার জন্যে বেস্ট বাই তাদের ১৪০০ এর বেশি স্টোরে “শিপ ফ্রম স্টোর” (Ship-from-Store) সিস্টেম চালু করেছে।
এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালে বেস্ট বাই এর মোট বিক্রী ১৩% আসে অনলাইন থেকে।
২০১৫তে বেস্ট বাই এর ব্যবসা:
এ বছরটি বেস্ট বাই এর জন্যে ভালই কেটেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে আয় করে ৭৮৯০ মিলিয়ন ডলার, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৭,৮৭৮ মিলিয়ন ডলার এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ৮,০৯০ মিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক ব্যবসা থেকে প্রথম প্রান্তিকে আয় হয় ৬৬৮ মিলিয়ন ডলার, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৬৫০ মিলিয়ন ডলার এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ৭২৯ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম প্রান্তিকে বেস্ট বাই ই-কমার্স থেকে আয় হয় ৬৭৩ মিলিয়ন ডলার, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৬৭৬ মিলিয়ন ডলার এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ৭০৯ মিলিয়ন ডলার।
এ বছরে বেশি দামি কম্পিউটার এবং ইলেকট্রনিক্স অ্যাকসেসরিজ এবং স্মার্ট ফোন বেশি বিক্রী হয়েছে। বেশি বিক্রী হওয়া পণ্য গুলোর মধ্যে আছে অ্যাপল ওয়াচ। অ্যাপল পণ্য ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বেস্ট বাই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডে বেস্ট বাই এর সব বড় স্টোরেই অ্যাপল এর ঘড়ি পাওয়া যাবে।
ক্রেতারা যাতে সহজে টাকা লেনদেন করে এ জন্যে বেস্ট বাই এর স্টোর গুলোতে এখন মোবাইল ওয়ালেট সুবিধা যুক্ত হয়েছে। এখন ক্রেতারা অ্যাপল পে, অ্যান্ড্রয়েড পে এবং স্যামসাং পে দিয়ে বেস্ট বাই এর স্টোরে পণ্য ক্রয় করে দাম মেটাতে পারবে।
আসন্ন হলিডে সিজনে অনলাইনে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্যে বেস্ট বাই বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে। অনলাইনে যে কেউ পণ্য কিনলে তাদেরকে ফ্রি-শিপিং সুবিধা দেয়া হবে। অক্টোবর থেকে জানুয়ারির ২ তারিখ পর্যন্ত বেস্ট বাই এর অনলাইন স্টোর থেকে পণ্য কিনলে ফ্রি-শিপিং সুবিধা প্রদান করা হবে।
লেখক: এস এম মেহদি হাসান
সূত্র:
ফর্চুন (১)
ফর্চুন (২)
11,608 total views, 3 views today