আবুল খায়ের
ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিটা বাংলাদেশে চালু হয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। আর জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে গতবছরের শুরুর দিক থেকে। কাজেই এই সেক্টরে যত উদ্যোক্তা বর্তমানে আমাদের দেশে রয়েছেন তারা সবাই নতুন। আমি নিজেও। তো সবচেয়ে লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে আগে থেকেই যারা পন্যসেবা বা এ জাতীয় ব্যাবসা করে আসছেন, তারা কিন্তু ই-কমার্স সেক্টরে নামছে না। নেমে থাকলেও তাদের সংখ্যা খুবই অপ্রত্যুল।
এ দিক থেকে একজন ই-কমার্স ব্যাবসায়ীকে সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট, স্টোর মার্কেটিং, কাস্টমার সার্ভিস সব এক হাতেই সারতে হয়। আর নতুন মার্কেটপ্লেস হওয়ায় যেসব উদ্যোক্তারা বড় ধরনের পুঁজি বিনিয়োগ করতে সক্ষম তারাও ঝুকি নিতে কিছুটা পিছু পা হন। আর যাদের পুঁজি নেই অথবা খুবই অল্প তাদের ব্যাপার তো আরো শোচনীয়।
তো দেখা যায় অল্প পুঁজি হওয়ার দরুন সব গুলো ক্ষাতে পর্যাপ্ত বাজেট রাখা সম্ভব হয়না অধিকাংশদের ক্ষেত্রেই। অনেকেই আবার তাদের বাজেটের পুরোটাই ব্যয় করে ফেলেন পন্য উতপাদন বা ক্রয়ের জন্য। ফলশ্রুতিতে মার্কেটিং ক্ষাত হিমশিম খায়। আবার অনেকেই যে যে পন্য ভিত্তিক উদ্যোগ নিয়ে ব্যাবসায় নেমে পড়েছেন তার সব ধরনের পন্য সংগ্রহ করতে পারেন না। কারন ঐ একটাই অর্থ সংকুলান হয় না।
এ ব্যাপারে বিশেষ করে যারা স্টার্ট আপ লেভেলে আছেন এবং শুধু অর্থাভাবে ভালোভাবে তাদের ব্যাবসা গুছিয়ে নিতে পারছেন না, তাদের জন্য আমি একটা সমাধান খুঁজে বের করেছি।
আমার সমাধান হচ্ছে, স্টার্ট আপ কোম্পানী গুলোর মাছে একটা পারস্পরিক চেইন তৈরী করা। একটা সিন্ডিকেট গঠন করা। সেটা হবে পন্য শেয়ারিং সিন্ডিকেট। সেখানে বিভিন্ন ভাবে কোম্পানী গুলো পারস্পরিকভাবে বোঝাপড়া সেরে নিতে পারেন। যেমন, কেউ ফ্যাশন প্রোডাক্টের স্টোর খুলেছেন কিন্তু শুধু টি-শার্ট অথবা শার্টের বাইরে আর কিছু তুলতে পারছেন না আপনার স্টোরে। আবার অন্য আরেক জন ওই একই বিজনেস করছেন তার আবার শুধু প্যান্ট ছাড়া আর কিছু নেই। কারো শুধু পাঞ্জাবী, কারো শাড়ী, কারো সালওয়ার কামিজ ইত্যাদি দুই একটা ক্যাটগরির বাইরে আর কোনো প্রোডাক্ট নেই।
এরকম অনেকেই আছেন আমার জানা মতে। এমনকি আমি নিজেও।
আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো এই এক-দুই আইটেমের প্রোডাক্টেরও কোয়ালিটি ভালো থাকে না। কারন হচ্ছে ভালো কোয়ালিটির পন্য তৈরী বা সরবরাহ করে এরকম কোম্পানীর কাছ থেকে পন্য কিনতে পারছে না। এর কারন ঐ কোম্পানী যে সর্বনিন্ম পরিমান পন্য একশো বা পাঁচশো নিচে অর্ডার নেয় না সেটা মিট করতে না পারা। আমার সামর্থ আছে হয়তো দশটা বা বিশটা পন্য কেনার কিন্তু উতপাদঙ্কারী একশো এর নিচে পন্য বানানোর অর্ডার নিবে না।
কিন্তু বিজনেস তো আর বন্ধ করা যাবে না। উপায়ন্তুর না খুঁজে পেয়ে চলে যেতে হচ্ছে অল্প পরিমান পন্য বানায় কিন্ত বাজে কোয়ালিটি তাদের কাছে। অথচ কাস্টমারের কাছ থেকে কিন্তু ঠিকই বেস্ট কোয়ালিটির পন্যের মূল্যই রাখছি।
এ ক্ষেত্রে ক্ষতি কার হলো? কাস্টমারের?
না। প্রতিষ্ঠানের। অর্থাৎ আমি আমার একজন কাস্টমার পার্মানেন্টলি হারালাম। তার আর আমার স্টোর থেকে পন্য কেনার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারন একটাই আমি কোয়ালিটি এনসিউর করতে পারছি না।
তো ব্যাড রিভিউর হাত থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট কিভাবে সহায়তা করবে?
খুবই সিম্পল একটা বিষয়।
প্রথম উপায়ঃ কন্ট্রিবিশন-আমি যে পন্য উতপাদন করতে চাচ্ছি ঠিক একই সময়ে আরো পাঁচ দশজনও ঠিক একই পন্য তৈরী করতে চাচ্ছে। এখানে প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে, আপনি কিভাবে বুঝলেন বা সিউর হলেন?
আবারও খুবই সিম্পল একটা প্রশ্ন করলেন। আমার উত্তর হচ্ছে যারা ই-কমার্স বিজনেসে নেমেছেন তারা ৯০% উদ্যোক্তাই ট্রেন্ডিং প্রডাক্ট/ডিজাইনের উপরই ফোকাস করছেন। কাজেই অনেকেরই টার্গেট প্রোডাক্ট/ডিজাইন প্রায় একই রকম। এখন সেই পাঁচ বা দশজন উদ্যোক্তা মিলে যদি একটা চেইন তৈরী করে ভালো মানের একটা প্রতিষ্ঠানের কাছে যাই তাহলে আমার ধারনা সহজেই তাদের ইনিশিয়াল কোয়ান্টিটি মিট করা যাবে। অর্থা দশ জনে যদি প্রত্যোকে দশ পিছ করে পন্য বানাই, দেখা যাবে একশো পিছের একটা বড় কোয়ান্টিটি হয়ে গেছে।
উপকারিতাঃ রিজেন্যাবল কষ্ট এর মধ্যেই বেস্ট কোয়ালিটির পন্য পাওয়া গেল। ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুজনেরই সার্থ অক্ষুন্ন থাকলো।
২য় উপায় হচ্ছেঃ শেয়ারিং- ধরুন আমার একটা মেগা স্টোর, কিন্তু পোশাক ব্যতীত আমার কাছে আর কোনো পন্য নেই। আরেকজনেরও মেগা স্টোর, তার কাছে শুধু ঘড়ি আছে, আরেকজন আবার শুধু মানিবাগ, বেল্ট এসব চামড়া জাত পন্যই রাখতে পারছে, আরেকজন জুতা, স্যান্ডেল, কেউ আবার আ্যাক্সেসরিস বিক্রি করছে, কেউ গিফট আইটেম, কেউ স্পোর্টস আইটেম। কিন্তু সবারই মেগা স্টোর/ লাইফস্টাইল শপ। দিনের পর দিন একই আইটেম নিয়ে পড়ে থাকার দরুন কাস্টমাররাও খুব বিরক্ত। অনেকে বাজে মন্তব্যও করছে। উদ্যোক্তা হতাশ। কি করবে বুঝে উঠতে পারছেন না। মাল্টি আইটেম প্রোডাক্ট রাখার পুজিও আবার তার কাছে এই মূহুর্তে নেই। তো এক্ষেত্রে তিনি কি করবেন?
হ্যাঁ এটা একটা চিন্তার বিষয় এক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে এই সিন্ডিকেট বা চেইনটাই তাকে সাহায্য করতে পারবে। যেহেতু স্টার্ট আপ বিজনেসের ক্ষেত্রে কোনো বিনিয়োগকারী বা ব্যাংকলোন পাওয়া যাবে না। সেহেতু মিউচুয়াল চেইন তৈরী করে একে অপরের বিনিয়োগকারী হয়ে যাওয়াটাই বেশি গ্রহনযোগ্য বলে আমার কাছে মনে হয়।
অর্থাৎ আমার কাছে যে পন্য আছে তা আমার চেইনের সবগুলো কোম্পানীর সাইটে তুলে দেওয়া যেতে পারে। আমার চেইনের যার যার যে পন্য আছে তা আমার সাইটে তুলে দেওয়া যেতে পারে। এতে করে কাস্টমারও বাড়বে। স্টোর গুলোও সচল হতে থাকবে।
এই ব্যাপার গুলো কিন্তু আমি যত সহজে তুলে ধরলাম তত সহজ না। সবাই কিন্তু এই অভিমত সমর্থন করেন না। এর ঘোর বিরোধী মানুষও আমার চোখে পড়েছে।
তবে সবচেয়ে গুরুতবপূর্ন বিষয় হচ্ছে বিশবাস আর সততা। সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যদি আপনি ব্যাবসায় নেমে থাকেন এবং অন্য উদ্যোক্তার উপর বিশবাস রাখতে পারেন তবেই কেবল এধরনের চেইন বা সিন্ডিকেট গঠন করা যেতে পারে, তা না হলে কিছুতেই সম্ভব না। আমি এই কথাগুলো এজন্যই লিখলাম
কারন এই সংগঠনটিই এধরনের লেখা পোস্ট করার যোগ্য প্লাটফর্ম। ই-ক্যাব সৎ উদ্যোক্তাদের জায়গা আমি বিশবাস করি। তাই এই লেখাটা দিয়েছি।
ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।
7,228 total views, 2 views today