
ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১ এর পর্যায়ক্রমিক চিত্র ও ই-ক্যাবের কর্মপ্রক্রিয়া
১। অনেকের মনে থাকার কথা ২০১৫/১৬/১৭ সালের দিকে ই-কমার্সের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা ছিল ভাল ডেলিভারী সাপোর্ট না থাকা। অনলাইনে কিছু প্রতারক বিক্রেতা সেজে ক্রেতাকে ঠকাত। কিছু ক্রেতা সেজে বিক্রেতাকে ছিনতাই করত। তখন ই-ক্যাবে যেসব অভিযোগ আসতো তার বেশীরভাগ ছিল লজিস্টিক বা কুরিয়ার এর বিরুদ্ধে। তার আলোকে নীতিমালার বিষয়টি ১৭ সালে প্রথম আলোচনায় আনে ই-ক্যাব।
২। ২০১৮ সালে ডিজিটাল কমার্স নীতিমালায় ধারা ৩.৩.৬ এটি যুক্ত করা হয়। ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ২০১৮।
৩। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন প্রাইভেট সেক্টর ডেভলপমেন্ট কমিটির সভায় এটি প্রণয়নের তাগিদ দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত উদ্যোগ গ্রহণে সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানকে ডিও লেটার পাঠানো হয়।
৪। ২০২০ সালে নভেম্বর মাসে এই বিষয়ে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেল। এর পর থেকে অফিসিয়ালী এটি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। একই সময়ে ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়।
৫। ২০২১ সালের ফ্রেব্রুয়ারীতে এই নির্দেশিকা সর্বপ্রথম সরকারী সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানসমূহের মতামতের জন্য প্রেরণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংস্থাগুলো হলো বাংলাদেশ ব্যাংক, ডাক বিভাগ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ইত্যাদি।
৬। মার্চের প্রথম দিকে ই-ক্যাবের কাছে আসে খসড়া নির্দেশিকার কপি। ই-ক্যাব সকল সদস্য প্রতিষ্ঠানকে এর কপি পাঠায় এবং মতামত গ্রহণ করে। ই-ক্যাবের পলিসি গ্রুপের সমন্বয়ে আয়োজন করে মত বিনিময় সভা। সদস্যদের পাঠানো মতামত বিশ্লেষন করে একটি প্রস্তাবনার খসড়া তৈরী করা হয়।
৭। ১৯ মার্চ রাতে একটি আভ্যন্তরীন বৈঠকে চুলছেড়া বিশ্লেষণ করে খসড়াটি বিপরীতে প্রস্তাবনা তৈরী করা হয়।
৮। ২০ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে প্রথম মত বিনিময়সভা আয়োজন করে স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে। সেখানে ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সংযোজন, বিয়োজন, সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিমার্জনের বিভিন্ন পয়েন্ট তুলে ধরেন ই-ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব সাহাব উদ্দীন শিপন ।
৯। ২৭ মার্চে উক্ত প্রস্তাবনা আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়।
১০। ১১ এপ্রিল ই-ক্যাবের পলিসি কনফারেন্সে মন্ত্রী ও সচিবদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নির্দেশিকার দ্রুত প্রকাশের দাবী জানানো হয়।
১১। ৬ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত সচিব তপন কান্তি ঘোষ এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ‘ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা ২০২১’ বাস্তবায়নের অনুরোধ করেন ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) নেতৃবৃন্দ। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এই সভায় ই-ক্যাব প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার।
১২। ২১ জুন ২১ জুন-২০২১, সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা-২০২১ চূড়ান্তকরণে অংশীজনদের এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এই সভায় ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে দাবী ও তার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। এতে এসওপির প্রয়োজনীয়তা এবং দ্রুত প্রকাশের গুরুত্ব তুলে ধরেন ই-ক্যাবের জেনারেল সেক্রেটারী জনাব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল।
১৩। ২২ জুন ডিজিটাল হাট কর্মশালায় এসওপি’র বিষয়টি বাণিজ্য সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ই-ক্যাবের প্রেসিডেন্টসহ ইসি সদস্যরা।
১৪। ২৪ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আবারো দ্রুত এসওপি ও স্ক্রো বাস্তবায়নের তাগিদ দেয় ই-ক্যাব।
১৫। ২৭ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২য় দফা খসড়া প্রণয়ন করে এবং তা সরকারী দপ্তর ও বেসরকারী সংস্থাসমূহের মতামতের জন্য প্রেরণ করে।
১৫। ই-ক্যাব এ বিষয়ে গত ২৮ জুন বিশেষজ্ঞ এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের নিয়ে আবারো আলোচনা করে।
১৬। সর্বশেষ গত ২৯ জুন তৃতীয় খসড়ার উপর লিখিত প্রস্তাব পেশ করে ই-ক্যাব
১৭। ২৯ জুন রাত ১২ টার মধ্যে যেসব সদস্য ইমেইলে ও হোয়াটস আপে এসওপি নিয়ে মতামত দিয়েছেন। সেগুলো সংযোজন করা হয়। যা পরের দিন আবার জমা দেয়া হয় এবং আলোচনায় তুলে ধরা হয়।
১৮। ৩০ জুন ২০২১ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ এর সভাপতিত্বে ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা ২০২১ চূড়ান্তকরণে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনায় ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ই-ক্যাব এর সম্মানিত প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার, ই-ক্যাব সেক্রেটারী জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল এবং ই-ক্যাবের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভন। এখানে প্রতিটি পয়েন্টে ই-ক্যাবের দাবী ও তার ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়।
১৯। ৪ জুলাই ই-ক্যাব সরকার নির্দেশিকা প্রকাশ করে। এবং ৬ জুলাই ই-ক্যাব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। যাতে বাণিজ্য মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
যারা মতামত লিখিত দিয়েছেন, যারা সভায় যুক্তি তুলে ধরেছেন, যারা সমালোচনা করে ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন সকলকে ধন্যবাদ। ‘
ভবিষ্যতেও যারা সহযোগিতা করবেন, সমালোচনা করবেন এবং সমাধানের পথ দেখাবেন তাদের সকলকেও অগ্রিম ধন্যবাদ।
কখনো কোনো প্রাপ্তি একবারে আসে না। ধাপে ধাপে সফলতা আসবেই। গত ৭ বছরের ই-ক্যাবের প্রাপ্তি ৪ বছরর সফলতা এবং বিগত ১৫ মাসের অর্জন ইতিহাস হয়ে থাকবে। আর এর পেছনে প্রত্যেক ইসি সদস্য, প্রত্যেক স্ট্যান্ডিং কমিটি মেম্বার, প্রতিটি সদস্য, দাপ্তরিক, পরার্শক ও সমালোচকের অবদান রয়েছে। এভাবে আপনারা যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখুন। দেশ এগিয়ে যাবে।
ভাল থাকুন। অনেক অনেক ভাল
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
4,601 total views, 4 views today