টেসকো পিএলসি একটি ব্রিটিশ বহুজাতিক রিটেইল প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের ১১টি দেশে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা আছে। ফ্রাঞ্চাইজি মিলিয়ে তাদের মোট স্টোরের সংখ্যা ৭৮১৭ টি। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যেই আছে ৩,৫৩৫টি স্টোর এবং ৬টি স্টোর আছে।
প্রতিষ্ঠানের নাম: টেসকো পিএলসি (Tesco PLC)।
স্থাপিত: ১৯১৯
প্রতিষ্ঠাতা: জ্যাক কোহেন
ওয়েবসাইট: www.tescoplc.com
গ্রুপ চিফ একজিকিউটিভ: ডেভ লিউইস
হেডকোয়ার্টার: চেশনাট, যুক্তরাজ্য
কর্মচারী সংখ্যা: ৫,১৭,৮০২ (মে ২১ ২০১৫)
ব্যবসা সমূহ:
যুক্তরাজ্যে টেসকো’র মূল ব্যবসা। তিন লাখের বেশি লোক টেসকোতে কাজ করে। টেসকো তাদের ক্রেতাদের সবধরণের সেবা প্রদান করে থাকে। কর্মচারীদের কল্যাণেও টেসকো নানা ধরণের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।
ভারতের বেঙ্গালুরুতে টেসকো এর অপারেশনস এবং টেকনোলজি সেন্টার অবস্থিত। ২০০৪ সালে এটি স্থাপিত হয়। এখানে ৬৫০০ এর বেশি লোক কাজ করে। বিশ্বজুড়ে টেসকো গ্রুপের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্যে আইটি, ফাইন্যান্সিয়াল, কমার্শিয়াল, সম্পদ কেনা, স্টোর ডিজাইন, ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি তৈরি এবং বাস্তবায়নের কাজ করে থাকে টেসকো বেঙ্গালুরু। এছাড়াও টেসকো বেঙ্গালুরু বিশ্বজুড়ে টেসকোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় সাপ্লায়ারদের কাছে থেকে পণ্য সরবরাহ করে থাকে।
২০০৮ সালে টেসকো টাটা গ্রুপ এর প্রতিষ্ঠান ট্রেন্ট লিমিটেড এর সাথে একটি ফ্রাঞ্চাইজি চুক্তি করে। এ চুক্তির আওতায় টেসকো বেঙ্গালুরু ট্রেন্ট লিমিটেড এর হাইপার-মার্কেট চেইন ব্যবসা স্টার বাজারকে রিটেল সম্পর্কিত সহায়তা প্রদান করে থাকে। এছাড়া স্টার বাজার যেসব পণ্য বিক্রী করে থাকে তার ৮০% টেসকো বেঙ্গালুরু তাদের মুম্বাই ডিস্ট্রিব্যুশন সেন্টার থেকে বিতরণ করে থাকে। স্টার বাজারের পাশাপাশি এ ডিস্ট্রিব্যুশন সেন্টার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানেও পণ্য সাপ্লাই করে থাকে।
মালয়েশিয়াতে টেসকো ৫০টির বেশি হাইপার মার্কেট আছে। ২০০২ সাল থেকে দেশটিতে টেসকো তাদের ব্যবসা শুরু করে। হাইপারমার্কেট হচ্ছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এবং সুপারমার্কেট এর সমন্বয়। হাইপারমার্কেট অনেক বড় হয় এবং এখানে সব ধরণের পণ্য থাকে। মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর প্রদেশে টেসকোর একটি অত্যাধুনিক ডিস্ট্রিব্যুশন সেন্টার আছে যেখান থেকে এসব হাইপারমার্কেটে পণ্য বিতরণ সহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়।
ইন্টারনেটের দ্রুত বিস্তারের ফলে মালয়েশিয়াতে অনলাইন শপিং ব্যাপক জনপ্রিয় এবং অনলাইনে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে টেসকো ২০১৩ সালে গ্রসারি হোম শপিং চালু করে। টেসকো মালয়েশিয়া ৪০০০ ব্র্যাণ্ডের পণ্য বিক্রী করে থাকে যার ৯০% মালয়েশিয়াতে উৎপাদিত।
১৯৯৮ সালে থাইল্যাণ্ডে টেসকো লোটাস চালু হয়। টেসকো এর আন্তর্জাতিক ব্যবসা এর মধ্যে টেসকো লোটাস সবচেয়ে বড়। থাইল্যাণ্ডে টেসকো লোটাস এর ১৭০০ এর বেশি স্টোর আছে যার মাধ্যমে তারা ১ কোটি ২০ লক্ষ ক্রেতাকে প্রতি সপ্তাহে সেবা প্রদান করছে। ৫০ হাজারের বেশি লোক টেসকো লোটাস এ কর্মরত আছে।
টেসকোর ক্লাবকার্ড থাইল্যাণ্ডে বেশ জনপ্রিয়। এক কোটির বেশি সদস্য আছে ক্লাবকার্ডের। ২০১৪ সালে উত্তর পশ্চিম থাইল্যাণ্ডের বড় শহর খোন কেইনে একটি ডিস্ট্রিব্যুশন সেন্টার চালু করে। এ ডিস্ট্রিব্যুশন সেন্টারে সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে টেসকো লোটাস।
১৯৯৬ সালে চেক রিপাবলিকে টেসকো কে-মার্ট স্টোরকে কিনে নেয় এবং তারপরে ব্যবসা শুরু করে। ২০১১ সালে টেসকো এরকম আরো কয়েকটি স্টোর কিনে নেয়। ২০১০ সালে টেসকো দেশটির রাজধানী প্রাগে তাদের স্টোর চালু করে। ২০১২ সালে টেসকো অনলাইন গ্রসারি হোম শপিং সার্ভিস চালু করে। ক্রেতারা ২০,০০০ এর বেশি ফ্রেশ এবং ফ্রোজেন খাবার এবং গ্রসারি পণ্য অনলাইনে কিনতে পারে।
১৯৯৫ সালে টেসকো হাঙ্গেরিতে ব্যবসা শুরু করে। তখন প্রতিষ্ঠানটি ২৬টি স্টোর কিনে নেয়। বর্তমানে টেসকো হাঙ্গেরিতে দুইশ’র বেশি স্টোর চালায়। দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে টেসকো। টেসকো হাঙ্গেরি দেশটি স্থানীয় পণ্য সাপ্লায়ারদের কাছে থেকে পণ্য সংগ্রহ করে বিক্রী করে থাকে। তাদের বিক্রী করা পণ্যের প্রায় ৮৫% দেশীয় পণ্য। দ্রুত ও উন্নত মানের পণ্য সংগ্রহের জন্যে টেসকো স্থানীয় পণ্য সরবরাহকারীদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। পণ্য সরবরাহকারীদের প্রশিক্ষণের জন্যে তারা একটি সাপ্লায়ার একাডেমিও তৈরি করেছে। টেসকো যুক্তরাজ্যে হাঙ্গেরি থেকে ১০০ মিলিয়ন পাউণ্ডের পণ্য রপ্তানি করেছে।
১৯৯৭ সালে আয়ারল্যান্ডে টেসকো অ্যাসোসিয়েটেড ব্রিটিশ ফুডস’ আইরিশ রিটেইল অপারেশনসকে কিনে নেয়ার মাধ্যমে আয়ারল্যাণ্ডে তাদের ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে টেসকো আয়ারল্যান্ড এর প্রথম সারির রিটেইল স্টোর। আয়ারল্যাণ্ডে টেসকোর ১৪০টির বেশি স্টোর আছে। আয়ারল্যাণ্ডের স্থানীয় কৃষকদের কাছে থেকে টেসকো আয়ারল্যান্ড পণ্য সংগ্রহ করে থাকে। ১১০০০ এর বেশি কৃষকের কাছে থেকে টেসকো পণ্য সংগ্রহ করে।
সেন্ট্রাল ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে পোল্যাণ্ডে টেসকোর সবচেয়ে বড় ব্যবসা। দেশটিতে টেসকোর ৪৪০টির বেশি স্টোরে ৩০,০০০ লোক চাকরি করে। প্রতি সপ্তাহে পোল্যাণ্ডের ৫০ লক্ষের বেশি ক্রেতাকে টেসকো সেবা প্রদান করে থাকে।
১৯৯৬ সালে টেসকো পোল্যাণ্ডের ৩১টি স্টোর কিনে নেয়। সেন্ট্রাল ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে পোল্যাণ্ডেই প্রথমবার টেসকো ক্লাবকার্ড ছাড়ে। ২০১২ সালে পোল্যাণ্ডে টেসকো গ্রসারি হোম শপিং সার্ভিস চালু করে। পোল্যাণ্ডে ১৫০০ এর বেশি স্থানীয় সরবরাহকারীদের কাছে থেকে টেসকো পণ্য সংগ্রহ করে। টেসকো যুক্তরাজ্যেও পোল্যাণ্ড থেকে পণ্য আমদানি করে থাকে।
১৯৯৬ সালে স্লোভাকিয়াতে টেসকো কে-মার্ট এর সাতটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর কিনে নেয়। বর্তমানে স্লোভাকিয়াতে টেসকো প্রথম সারির একটি ব্রান্ড। সারা দেশে টেসকোর ১৫০টির বেশি স্টোর আছে যেখানে ৯০০০ এর বেশি লোক চাকরি করে।
স্টোর ছাড়াও টেসকো এর কাপড়ের ব্যবসার মূল কেন্দ্র। টেসকো ইন্টারন্যাশনাল ক্লথিং বিজনেস বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য কিনে সেন্ট্রাল এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে টেসকোর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পণ্য সরবরাহ করে থাকে।
২০০৩ সালে টেসকো তুর্কির কিপা ব্র্যান্ডকে কিনে নেয় এবং ২০০৫ সালে তুর্কির বোদরাম এ টেসকো তাদের প্রথম স্টোর খোলে। বর্তমানে তুর্কিতে টেসকো এর ১৭০টির বেশি স্টোর আছে এবং প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৯,৬০০ কর্মচারী আছে। টেসকো কিপা তুর্কির সবচেয়ে বড় চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে গ্রসারি হোম শপিং সেবা চালু করে টেসকো। ২০০৬ সালে কিপা এক্সপ্রেস স্টোর চালু করে যা প্রতিসপ্তাহে ১৩ লক্ষ ক্রেতাকে সেবা প্রদান করছে।
গত বছরের মে মাসে চায়না রিসোর্সেস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড এর সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চার করে যার মাধ্যমে একটি মাল্টি-ফরম্যাট রিটেইল গড়ে তোলা হবে। চীন টেসকোর জন্যে এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। সিআরই চীনের বাজারের উপরে বিশেষজ্ঞ এবং টেসকো প্রতিষ্ঠিত একটি মাল্টি-চ্যানেল রিটেইল ব্র্যাণ্ড। এ দুয়ে মিলে টেসকো চীনের বাজারে ভাল অবস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
১৯৯৭ সালে টেসকো ব্যাঙ্ক চালু করা হয়। প্রথমে এটি একটি ক্রেডিট কার্ড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চালু হয়। বর্তমানে ব্যাঙ্কটির ৭৬ লক্ষ লোককে সেবা প্রদান করছে। প্রতিষ্ঠানটি রিটেইল ব্যাঙ্কিং সহ বিভিন্ন ধরণের সেবা প্রদান করে থাকে
ডানহামবি একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। তারা ক্রেতাদের নিয়ে গবেষণা করে থাকে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্রে এ প্রতিষ্ঠানের অফিস আছে যেখানে দুই হাজারের বেশি লোক চাকরি করে। এডউইনা ডান এবং ক্লাইভ হামভি মিলে এ প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন। বর্তমানে একটি টেসকো এর একটি সাবসিডিয়ারি যারা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন নামীদামী রিটেইলার ব্র্যাণ্ডের সাথে কাজ করে এবং বিভিন্ন গবেষণা কার্য পরিচালনা করে।
ডটকম সেন্টার এবং ক্লিক অ্যান্ড কালেক্ট প্রোগ্রাম:
অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে টেসকো যুক্তরাজ্যে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো হোম শপিং চালু করেন। অনলাইনে ক্রেতাদের দ্রুত পণ্য ডেলিভারি প্রদানের জন্যে টেসকো ডটকম সেন্টার চালু করেছে। ডটকম সেন্টার যুক্তরাজ্য প্রথমে শুরু করে। পরে ফ্রান্স এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ডটকম সেন্টার তৈরি করা হয়। ডটকম সেন্টার দুই ধরণের কাজ করে। অনলাইনে অর্ডারকৃত পণ্য ডট কম সেন্টার থেকে বিতরণ করা হয়। একই সাথে এটি পিক-আপ পয়েন্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হয় যেখানে ক্রেতা তার অনলাইনে অর্ডারকৃত পণ্যটি সংগ্রহ করে।
এছাড়াও আছে টেসকোর ক্লিক অ্যান্ড কালেক্ট প্রোগ্রাম । এ প্রোগ্রামের আওতায় একজন ক্রেতা অনলাইনে পণ্য অর্ডার দেবার পরে তাদের পছন্দের জায়গা এবং পছন্দ মতো সময়ে তাদের অর্ডারকৃত পণ্য ডেলিভারি নিয়ে থাকে। যুক্তরাজ্যে ১৭৫০টি লোকেশনে টেসকো ক্লিক অ্যান্ড কালেক্ট সেবা প্রদান করে থাকে এদের মধ্যে টেসকো এর স্থানীয় দোকান, বাস স্টেশন ইত্যাদি রয়েছে। ক্রেতা তার পোস্টকোড দিয়ে জানতে নিকটবর্তী ক্লিক অ্যান্ড কালেক্ট পয়েন্ট জানতে পারবে। ক্রেতা চাইলে একটি নির্দিষ্ট স্লট ও বুক করতে পারবে টাকা দিয়ে।
ক্রেতাদের জন্যে টেসকোর গুগল গ্লাস অ্যাপ্লিকেশন তৈরি:
এ বছরের শুরুতে টেসকো গুগল গ্লাস ব্যবহারকারীদের জন্যে টেসকো গ্রসারি নামে একটি অ্যাপ্লিকেশন ছাড়ে। ব্রিটেনের রিটেইল প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে টেসকোই প্রথম বারের মতো এ অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে। এ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে গুগল গ্লাস ব্যবহারকারীরা তাদের হাত ব্যবহার না করে টেসকোতে পণ্য সমূহ ব্রাউজ করতে পারবেন। টেসকো ল্যাব এ অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে। যেসব ক্রেতাদের টেসকো ডট কম এ অ্যাকাউন্ট আছে গুগল গ্লাসের মাধ্যমে তারা সহজেই তাদের অনলাইন বাস্কেটে পণ্য যোগ করতে পারবে।
সূত্রঃ
11,330 total views, 3 views today