টার্গেট যখন প্রবাসী গ্রাহক- এই বিষয়ে কিছু কথা হোক
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
আমাদের দেশের জনসংখ্যার একটা অংশ বাইরে থাকে। আমরা তাদের বলি প্রবাসী বা অনাবসী বাংলাদেশী। এই প্রবাসীরাই কিন্তু রেমিটেন্স প্রবাহের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে বিশাল একটা অবদান রেখে চলেছে। ব্যবসায়ীরা অনেক সময় প্রবাসীদের টার্গেট করে থাকেন। প্রবাসীদের জন্য অনলাইনে পেমেন্ট করা সহজ বলে ই কমার্স ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রবসীরা বড়ো একটা ফ্যাক্টর। প্রবাসীরা যখন তাদের দেশীয় কোন আত্মীয়র জন্য কোন পন্য বা সেবা চান তখন তিনি অনলাইনে পেমেন্ট দিলে দেশীয় প্রতিষ্ঠান তার ঠিকানা মোতাবেক পন্য ডেলিভারী দিয়ে থাকে। ই কমার্স ব্যবসায়ীদের কাস্টমারের বড়ো একটা অংশ এই প্রবাসী ক্রেতারা। এজন্য অনেকে জানতে চান কিভাবে প্রবাসী ক্রেতাদের কাছে তার পন্য সেবা বা বার্তাকে পৌছে দেবেন। তাই আজ এ বিষয়ে কয়েকটি টিপস দেয়ার চেস্টা করবো।
০১. ট্রাভেল, ভিসাও রিক্রুটিং এজেন্সি: এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রবাসীরা বিদেশ গমন করে থাকেন। এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রবাসীদের তথ্য থাকে। এদের মাধ্যমে আপনি প্রবাসী ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। অথবা প্রবাসে যাওয়ার সময় ছোট কোন একটা গিফট দিয়ে আপনি আপনার বিজ্ঞাপন দিয়ে দিতে পারেন। গিফটা হতে পাওে একটা হাতব্যাগ বা পার্সপোর্ট ব্যাগ বা ছোট কোনো কিছু।
০২. এলাকাভিত্তিক এসোসিয়েশান: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এলাকাভিত্তিক প্রবাসী সমিতি রয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য ও বিস্তারিত সংগ্রহ করতে পারেন। রয়েছে বাংলাদেশ সমিতিও তারা হতে পারে আপনার ভালো ক্রেতা।
০৩. বাংলাদেশ দূতাবাস: বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে প্রবসীদের তথ্য ও এসোসিয়েশনের ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার রয়েছে। দূতাবাসের মাধ্যমে আপনি সেটা সংগ্রহ করতে পারেন।
০৪. প্রবাসী পত্রিকা: প্রবাসে বাংলাদেশীদের বেশকিছু পত্রিকা রয়েছে। যেমন লন্ডন থেকে ইউরো বাংলা, সময়, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, সুরমা, জুমাবার, নিউইয়র্ক থেকে ঠিকানা, জাপান থেকে মানচিত্র, অস্টেলিয়া থেকে কর্নফুলী এরকম আরো অনেক রয়েছে। ই মেইলে তাদের সাথে যোগাযোগ করে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন।
০৫. প্রবাসী টিভি চ্যানেল: লন্ডন, আমেরকিায় কয়েকটি বাংলা চ্যানেল রয়েছে। প্রবাসীরা এসব চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন । আপনিও সুযোগটা নিতে পারেন।
০৬. প্রবাসীদের অনলাইন পত্রিকা: প্রবাসীদেও বেশ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা আছে। বাংলা ও ইংরেজী মিলিয়ে ৫০ টির কম হবেনা। আপনি তাদের সাহায্যও নিতে পারেন।
০৭. সূভ্যেনির ও ম্যাগাজিন: প্রবাসীরা বিভিন্ন সূভেন্যিও ও ম্যাগাজিন বের করে থাকেন। এসোসিয়েশান গুলোর সাথে যোগাযোগ রাখলে আপনি সেসবে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন সহজেই।
০৮. ডাইরেক্টরী: কোন কোন দেশের প্রবাসীরা তাদের সংস্থার ডাইরেক্টরী প্রকাশ করে থাকেন। সেখানে সবার নাম ঠিকানা ও ফোন নাম্বার থাকে। এ ধরনের ডাইরেক্টরী সংগ্রহ করতে পারেন।
০৯. গণ জমায়েত: বিদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রবাসীরা একত্রিত হয়। সেখানে কোন বিজ্ঞাপন বা লিপলেট দিয়ে আপনি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।
১০. প্রবাসী এজেন্ট: কিছু প্রবাসী আছেন যারা দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। বিশেষ করে প্রবাসী ছাত্ররা এ ব্যাপারে বেশী আগ্রহী। বিদেশের যেসব শহরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী রয়েছে। সেখানে ২/১ জন এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেন। তাতে করে তারা আপনার প্রচারণা চালাবে এবং তাদের মাধ্যমে যে বিক্রি হবে আপনি তা থেকে তাকে একটা কমিশন দেবেন। খেয়াল রাখতে হবে এটা নির্ণয় করার জন্য আপনার সফটওয়ার বা ইনভেন্টরী ব্যবস্থা ভালো সহজ ও নিখুত হতে হবে। যেন লোকটি কোনভাবে না ঠকে।
১১. নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্ট: বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ মার্কেটসহ নির্দিস্ট কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে বাংলাদেশীরা সমবেত হন। সেসব জায়গায় বিজ্ঞাপন ও লিফলেট প্রচারের ব্যবস্থা করতে পারেন। যেমন মালয়েশিয়া, সেীদিআরব, আমিরাতে রয়েছে বাংলাদেশ মার্কেট, সিঙ্গাপুরে মোস্তফা সেন্টার, লন্ডনে ইস্ট লন্ডন মসজিদ ইত্যাদি।
১২. ব্যবসায়িক এজেন্ট: বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী রয়েছেন আপনি তাদের সাথে ব্যবসায়িক চুক্তিতে কাজ করতে পারেন। যেমন আপনার যদি টেইলারিং শপ হয় তাহেল আমিরাতের একজন বাংলাদেশী টেইলারের সাথে আপনি চুক্তি করতে পারেন। তিনি তার কাস্টমারকে বলবেন যে তিনি বাংলাদেশের জন্যও অর্ডার নিয়ে থাকেন। সে অর্ডারটি তিনি আপনাকে রেফার করবেন। আপনি তাকে একটা কমিশন অফার করবেন। আবার আপনার মাধ্যমে আপনি তার জন্যও অর্ডার নিতে পারেন। বিদেশে থাকা আত্মীয়র জন্য দেশের পরিবার পরিজন আপনাকে অর্ডার দেবে। এক্ষেত্রে তিনি আপনাকে কমিশন দেবেন। ঠিক এভাবে আপনার ফাস্টফুড শপ হলে আপনি লন্ডনের কোন রেস্টুরেন্ট মালিকের সাহায্য নিতে পারেন। ব্যবসায়ীরা যখন মার্কেটিং করবে তখন কাস্টমারের কাছে তার একটা বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে।
১২. ফেইসবুকে: ফেইসবুকে আপনি এনএরবি ক্যাটাগরি চুজ করে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। বা কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশী বা যে ক্যাটাগরিতে প্রবাসীদের ফাইন্ড আউট করা যায়।
১৩. ফেউসবুক পেইজ: বিভিন্ন এলাকার প্রবাসীদের পেইসবুক পেইজ রয়েছে। এসব পেইজে জয়েন করে আপনি বিভিন্ন পোস্ট ও ইনব্ক্স দিতে পারেন। দিতে পারেন বিভিন্ন অফারও। লন্ডন প্রবাসী সিলেটিদেও বেশ কয়েকটি পেইজ রয়েছে এসব ঈেফজের মেম্বারও কম নয়।
১৪. বিশেষ অফার: আপনি বিভিন্ন সময় প্রবাসীদেরকে মেনশান করে বিভিন্ন অফার দিতে পারেণ। যাতে তারা বুঝতে পারে আপনার প্রতিষ্ঠান প্রবাসী কাস্টমারদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
১৫. প্রবাসী নির্ভর এলাকা: বাংলাদেশের প্রবাসী নির্ভর এলাকাগুলো যেমন সিলেট, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী এসব এলাকায় বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। তাতে প্রবাসীদের আত্মীয় স্বজন জানবে এবং আকর্ষণীয় কোন ব্যাপার হলে নিশ্চই তারা প্রবাসী প্রিয়জনেকে জানাবে। আর যেসব প্রবাসীরা সেসময় দেশে থাকবে তারা জেনে যাবে।
১৬. দেশীয় পয়েন্ট: দেশীয় কয়েকটা পয়েন্টে প্রবাসীদেও প্রচুর আনাগোনা রয়েছে এসব জায়গায় বিলবোর্ড, ব্যানার বা লিফলেট দিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। যেমন সোনার গাঁ হোটেল সৌদি এয়ারলাইন অফিস, কাকরাইল বায়রা অফিস, ফকিরাপুলের রিক্রুটিং এজেন্সি পাড়া, বনানীর মেডিকেল সেন্টার, গুলশান ২ এর মেডিকেল পয়েন্ট, এয়ারপোর্ট, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্তণালয়, প্রবাসী কল্যান ব্যাংক, পার্সপোর্ট অফিস, কাকরাইলের বামকা অফিস ইত্যাদি জায়গা।
১৭. ডাটাবেইস তৈরী: আপনি যখন দেশি ক্রেতাদের সেবা দেবেন তখন তাদের কাছ থেকে প্রবাসে তাদের কোন প্রিয়জন আছে কিনা থাকলে তার ফোন ইমেইল নিতে পারেন। দিতে পারেন তার জন্য বিশেষ ছাড়। অর্থাৎ যার প্রবাসী আত্মীয় আছে তিনি যদি একটা ফরম ফিলাপ করে তাতে তার আত্মীয়র নাম ঠিকানা বা ফোন নং দিয়ে দেন। তার জন্য ৫% ছাড় এই অফার দিয়ে আপনি প্রবাসীদের একটা ডাটাবেইস তৈরী করতে পারেন। এই তথ্য গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি এবং সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার দায়িত্বেও কথা ভেবে কাজটা করবেন।
১৮. বিদেশ গমন: আপনি ভালো চ্যানেল বা এসোসিয়েশন এর মাধ্যমে বিদেশে গমন করে বিভিন্ন সেমিনার ও গেট টুগেদার করে প্রবাসী ক্রেতাকে ম্যানেজ করার চেস্টা করতে পারেন।
১৯. ফেয়ার: প্রবাসে বিভিন্ন বাণিজ্যমেলা, বাংলাদেশ মেলা, বাংলা বইমেলা, ইসলামী বইমেলা, এক্সিবিশন, পয়েলা বৈশাখ, ২১ ফ্রেব্রুয়ারী এসব ভেন্যুতে স্টল দিয়েও প্রচার প্রচারণা চালাতে পারেন।
20. ইমেইল: প্রবাসীদের ই মেইল সংগ্রহ করে মেইলে বিজ্ঞাডন দিতে পারলে আপনি কম খরচে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন।
21. কলসেন্টার: দেশে কিছু সেন্টার রয়েছে যারা আপনার হয়ে প্রবাসী ক্রেতাদের ফোন করে আপনার পন্যের কথা বলবেন।
আসলে আপনি যখন কোনো কিছু একাগ্রভাবে করতে চাইবেন তখন আপনার সামনে হাজারটা পথ বেরিয়ে যাবে। আজ এ পর্যন্তই। আবার নতুন কোন বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন।
https://www.facebook.com/jshovon
7,277 total views, 2 views today