ট্রাফিক পাবার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে সোশিয়াল মিডিয়া নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং ওয়েবের উপর নিজেদের অথরিটি ও প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। অনেকেই সোশিয়াল মিডিয়াকে তার নিসের উপর লিডার হবার জন্য ব্যবহার করেন এবং এক সময় দেখা যায় তারা তাদের শিল্পে / ইনডাজট্রিতে প্রভাব বিস্তারও করছেন ।
বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসায়ের জন্য সোশিয়াল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকের উপর নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। বলা যায় মার্কেটিং এর ৯০% বা তারও বেশি বাজেট ব্যায় হয় ফেসবুকে। কিছুদিন আগের এক আন্তর্জাতিক জরিপেও দেখা গেছে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা গুগলের চেয়ে ফেসবুকের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। পাশের দেশ ভারত, পাকিস্থান ও ফেসবুকের উপর এতটা নির্ভরশীল নয়। এর ফলাফল কতটা শুভ বা অশুভ তা সময়ই বলে দিবে।
তবে তার কিছু ফল সবাই ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছেন। গত কিছুদিন টানা বাংলাদেশে সোশিয়াল মিডিয়া বন্ধ থাকায় পত্রিকায় খবর বের হয় দেশের যে, অনলাইন বেচা কেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে। শুধু ফেসবুক নির্ভর বেচাকেনা করে গেছে ৯০% বা অনেক ক্ষেত্রে তারও অনেক বেশি। খুবই ভয়াভহ তথ্য। এমনটা আর সামনে হবে না বা এর চেয়ে খারাপ কিছু হবে এমন নিশ্চয়তা কেউ দিচ্ছে না। যদিও সোশিয়াল মিডিয়া শক্তিশালী, কিন্তু এটি এমন নয় যে একমাত্র এর উপরই ই-কমার্সের ট্রাফিকের জন্য নির্ভর করা যায়। এমন কিছু কাউকে পাওয়া যাবে যারা তাদের সাইটের সব ট্রাফিকই সোশিয়াল মিডিয়া থেকে পেয়ে থাকে, বিশেষত একটি নেটওয়ার্কের কথা বিশেষ করে বলা যায়। ঝুকিটা আসলে সেখানেই আপনি যখন শুধুমাত্র একটিমাত্র নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর করেন সেটা অনেকটা এক ঝুড়িতে সব ডিম রাখার মত। যদিও এখন এই ঝুড়িটা দেখতে সুন্দর এবং স্থিথিশীল বলে মনে হচ্ছে। ঝুড়িটি যদি হঠা ভেঙ্গে যায় তাহলে আপনার সব ডিম মাটিতে ধূলিসাৎ হবে। আপনি কি সেটাই চান ?
সম্প্রতি একটি আর্টিকেলে লেখা হয়েছে যে, টুইটার ফেসবুকের মত এলগোরিদম পরীক্ষা করতে যাচ্ছে। এই এলগোরিদম পে টু প্লে প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে, যেখানে আগের মত আর সোশিয়াল মিডিয়াতে উপস্থিতি দেখা যায় না। ফেসবুক পোস্ট এখন মাত্র ৩% অডিয়েন্সকে প্রদর্শন করা হয়, যা ফেসবুকে অনেক বড় প্রভাব রেখেছে। তাই আপনার থাকতে হবে অনেক বেশি অডিয়েন্স। একটা সময় ছিল যখন এমনটা ছিল না তখন সবাই খুশি ছিল। ফেসবুকের এই পরিবর্তনে অনেক লোকই বলেছেন তাদের এনগেগমেন্ট ও ট্রাফিকে ব্যপক ধস নেমেছে। আপনি নিজে কি খুশি হবেন যদি আপনার ফেসবুক ফ্যান পেইজে ৩০০ ফ্যান থাক, যাদের মধ্যে শুধু মাত্র ৯ জন ফ্যান তাদের হোম ফিডে পোস্ট দেখতে পান। টুইটার এই একই পথ অনুসরণ করবে কিনা সময়ই তা বলে দিবে। টুইটার ও যদি একই পে টু প্লে একগোরিদম গ্রহণ করে তবে এর ব্যবহারকারিরা শুধুমাত্র অভিযোগই করতে পারে কিন্তু বাস্তবতা হল প্রতিটি সোশিয়াল নেটওয়ার্ক শেষ পর্যন্ত কি করবে তার সিদ্ধান্ত একমাত্র তারাই নিতে পারে ।
টুইটারের এলগোরিদম পরিবর্তন ও পে টু প্লে নীতি গ্রহণ এর ব্যবহারকারীদের বিপাকে ফেলে দিবে। তখন খুবই স্বাভাবিক ভাবেই ব্লগিং এর গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে। সোশিয়াল মিডিয়া শক্তিশালী তারমানে এই নয় যে এটিই একমাত্র বিকল্প। ব্লগের সাহায্যে আপনি এখন ও কনটেন্ট পাবলিশ করার এবং তা দুনিয়ার সাথে তা শেয়ার করতে পারেন। ব্লগিং আপনাকে একই সাথে অনেক সুবিধা ও প্রদান করে যেমন এর সাহায্যে আপনি ইমেলইল লিস্ট বানাতে পারেন এবং যার সাহায্যে
আপনি সেল বাড়াতে পারেন। এই সব সুবিধার মাধ্যমের আপনি আপনার অডিয়েন্সের সাথে যোগাযোগের ব্যপারে নিজের নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতে পারেন। অন্যদিকে সোশিয়াল মিডিয়ারতে আপনার ইন্টারেকশনের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে তাদের । যদি কোন সোশিয়াল নেটওয়ার্ক আপনার একাউন্ট বন্ধ করে দেয়, আপনার সব কথোপকোথন বন্ধ হয়ে যাবে আপনি তা চান বা না চান। সরাসরি মার্কেটিং করা মানে সি আর এম () এর উন্নতি, আপনার ব্র্যান্ডের উপর আরো অনেক বেশি নিয়ন্ত্রন, এবং উচ্চহারে রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট। ফেসবুক নিয়ে কনফিউজ থাকা উচিত নয়। অনেকেই ফেসবুককে তাদের নিজেদের সম্পদ বলে মনে করে, এবং লাইক এবং ফলোয়ার বাড়াতে প্রচুর বিনিয়োগও করে। এটা অনেকটা ভাড়া করা ফ্লাটের সোনদ্র বাড়াতে প্রচুর অর্থ খরচের মত।
আপনি সেটা উপভোগ করতে পারবেন কিন্তু আপনার পরিশ্রমের সুবিধার অধিকারী হতে পারবেন না। অনেক বিনিয়োগের পর ও ল্যান্ড লর্ড, ফেসবুক আপনার ভাড়া বারিয়েই চলেছে। যার ফল সরুপ খুবই অল্প সংখ্যাক মানুষের কাছে ফেসবুক আপনার পোস্ট প্রদর্শন হবে। অধিকাংশ ফ্যানের কাছে পোছতে হলে আপনাকে পে করতে হবে।
এর চেয়ে আপনি যা করতে পারেন তা হল নিজের ব্র্যান্ডের শক্তি বাড়াতে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন, যাতে করে আপনি আপনার অডিযেন্সদের চাহিদা মেটাতে পারেন। নাইক যেমনটা করেছে নাইক প্লাসের মাধ্যমে, পেপসি শুরু করেছে রিফ্রেশ প্রজেক্টের মাধ্যমে। লেগোর এক ডজনের বেশি মোবাইল এপ রয়েছে যেগুলো কাস্টমারদের সাথে সরাসরি ওয়ান টু ওয়ান রিলেশানশিপ ত রি করে (শিশু যারা তাদের পণ্য ব্যবহার করে এবং তাদের পিতামাতা যারা তাদের পণ্য ক্রয় করে উভয়ের জন্যই )।
আমেরিকান এক্সপ্রেসের ইতিমধ্যেই তাদের পণ্যের মাধ্যমে তাদের ক্রেতাদের সাথে সরাসরি লিঙ্ক রয়েছে,তারা ফোরাম খুলেছে, যা ছোট ব্যবসায়ীদের একটি ব্র্যান্ডেড কনটেন্ট সাইট। আপনি সোশিয়াল নেটওয়ার্ক বা এডের মাধ্যমে আপনার পন্য বা প্লাট ফর্মের সচেতনতা বাড়িয়ে নিতে পারেন। তবে ডিরেক্ট টু কাস্টমাররের যেকোন উদ্যোগ এর সাথে আপনার নিয়ন্ত্রনে থাকা একটি ওয়েব সাইট থাকা উচিত।
প্রায় সব ব্যবসায়ীরাই ফেসবুকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে বা করছে। বেস্ট বাই সোশিয়াল নেটওয়ার্কে তাদের শপ খুলেছে, হোম ডিপোট তাদের পেইজে লাইক করার জন্য বিশেষ অফার দিয়েছে, লেভি’স ‘লাইক’ বাটন এড করেছে। এসবের মানে কি এই যে, ফেসবুক রুট ই-কমার্সের জন্য প্রধান খেলোয়ারে পরিণত হচ্ছে ?
সব দেখে শুনে উত্তর টা হ্যাঁ মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ফরেস্টার রিসার্চ এনালিস্ট সুচরিতা মুলপুরু অবশ্য এর উত্তরে বলেছেন “না”।
মুলপুরু “ফেসবুক কি ই-কমার্স চালনা করবে ” শিরোনামে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তার কোম্পানি প্রায় ২ ডজন প্রযুক্তি ভেন্ডর, রিটেইলার, এবং মার্কেটারদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, এবং তিনি দেখতে পেয়েছেন যে, এসব কোম্পানি ফেসবুক ও অন্যান্য সোশিয়াল মিডিয়া থেকে কম লাভবান হয়েছেন। তিনি দেখতে পেয়েছেন , নতুন কাস্টমার বানাতে এবং ধরে রাখতে সোশিয়াল মিডিয়াতে উপস্থিতি ইমেইল এবং পেইড সার্চের তুলনায় কম কার্যকর।
জরিপে দেখা গেছে গড়ে ফেসবুক মেট্রিক্স হচ্ছে, ক্লিক থ্রো রেট ১% এবং কনভারসান রেট ২%। অন্যদিকে ইমেইল মার্কেটিং এর ক্লিক থ্রো রেট ১১% এবং কনভারশান রেট ৪%!
ফেসবুকের সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, “খুব কম লোকই সেখানে শপিং রিলেটেড কাজ কর্মের জন্য যায়, ফেসবুকে পণ্য নয় বরং অন্য লোকদের খুজতে যান” মুলপুরা তার সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
মিলিয়ন মিলিয়ন অন্য সব লোকের মত আমি ও সোশিয়াল মিডিয়া ভালবাসি। আমি এর সাহায্যে অন্যদের সাথে কানেটেকেড থাকতে পছন্দ করি। সে যাই হউক অনেকে তাদের ই- কমার্স সাইটের ভিজিটরের জন্য ফেসবুকের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। সোশিয়াল নেটওয়ার্ক ভিজিটর নিয়ে আসে, তারপরও এক ঝুড়িতে সব ডিম রাখার নীতি আপনার এড়িয়ে চলা উচিত। আপনার ডিমের ঝুড়ি পরে গেলে (তা আপনার ভুলেই হউক বা অন্যের), আপনার ই-কমার্স সাইটের ভিজিটররা ভুগবেন সাথে আপনি ও।
তথ্যসুত্রঃ
http://blogs.wsj.com/digits/2011/04/07/facebook-wont-become-e-commerce-force-analyst-says/
http://www.businessinsider.com/facebook-commerce-2012-2
http://billbelew.com/blog/case-study-marketing-blogging-vs-facebook/
http://www.business2community.com/social-media/7-reasons-not-depend-social-media-blog-traffic-01284224#WApqoj0tAAzZQr3m.97
http://www.convinceandconvert.com/social-media-strategy/3-ways-facebook-is-killing-your-website/
7,921 total views, 3 views today