logos

 

এফ কমার্স ও ই কমার্স
জাহাঙ্গীর আলম শোভন

অনলাইনে ব্যবসা শুরু হয়েছে ই কমার্স এর মাধ্যমে। ই কমার্স মানে ইলেকট্রনিক্স কমার্স আরো সহজ কথায় ইলেকট্রনিক্স মাধ্যম ব্যবহার করে যে ব্যবসায় পরিচালনা ও লেনদেন করা হয়, তাকে আমরা ই কমার্স বলি। সময়ের সাথে ফেইসবুক যোগ দেয় এই কাফেলায়। ফেইসবুক নিয়ে আসে তাদের পেজ ব্যবহার করার মাধ্যমে পন্য বেচার সুযোগ। পেমেন্ট ও ডেলিভারী ছাড়া ক্রেতার সাথে ভোক্তার সব ধরনের যোগাযোগ ফেইসবুকের মাধ্যমে হচ্ছে বিধায় একে ফেইসবুক কমার্স বা এফ কমার্স বলা হচ্ছে। মূলত এটাও ই কমার্স এর একটা অংশ বা একধরনের ই কমার্স। ফেইসবুক যেমন অনলাইনে সেলস করে তেমনি যেকোনো একটি নিজস্ব অনলাইন শপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন শপ পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে বেকার সমস্যা, পার্টটাইম চাকরীর অভাব এবং মহিলাদের জন্য ঘরে বসে করা যায় বিধায় এফ কমার্স জন জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বর্তমানে প্রায় ২ হাজার তরুন তরুন প্রতিদিন ফেইসবুকের মাধমে তাদের পন্য ও সেবা সেল করছে, এর সংখা প্রতিদিন বাড়ছে। অন্যদিকে ২ শতাধিক অনলাইন শপ স্বাতন্ত্রভাবে নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ই কমার্স করে আসছে। এই সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বর্ধিত হচ্ছে। আবার ২ শর মতো অনলাইন শপ রয়েছে যারা আসলে প্রচলিত ব্যবসায় একটা বাড়তি শাখা হিসেবে অনলাইন চালাচ্ছেন। অনেকেই নিজের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেইসবুকেও কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

আসলে ফেইসবুকও ই কমার্স আর ই কমার্স মানেই কিন্তু এফ কমার্স নয়। তবে অনেকের আলাদা ই কমার্স সাইট থাকলেও ফেইসবুক ফেইজ রাখছেন বিভিন্ন কমিউনিটিতে প্রচার ও ভোক্তা সাধারনের সাথে একটি কমিউনিকেশন চেইন মেনটেন করার জন্য। আবার ফেইসবুক কমার্স বা এফ কমার্স বলতে পেশাদারীত্বটা বোঝায়না। কারণ যে কেউ একটা পেইজ খুলে এতে ব্যবসা করতে পারেন। আবার মন না চাইলে কাল থেকে তা বন্দও করে দিতে পারেন। এছাড়া সাম্প্রতীক কালে ফেইসবুকের মাধ্যমে কিছু প্রতারণার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে ভোক্তা সাধারনের বিশ্বাসের জায়গাটা এফ কমার্স একটা প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখেছে।

প্রচলিত অর্থে এফ কমার্স ও ই মার্সের তুলনামূলক বিশ্লেষণ

এফ কমার্সের সুবিধাসশূহ
১. যে কেউ যখন খুশি যেকোন একটা নাম দিয়ে ফেউসবুকে একটা শপপেইজখুলে ব্যবসা শুরু করতে পারে।
২. এফ কমার্স এর জন্য পেমেন্ট গেটওয়ে দরকার হয়না বা এড করা কঠিন বটে। বিকাশ বা ক্যাশ অন ডেলিভারী কা কন্ডিশন ডেলিভারীতে মাল ডেলিভারী দেয়া যায়।
৩. এজন্য ট্রেড লাইসেন্স টিন ভ্যাট অফিস কোন কিছুরই প্রয়োজন হয়না।
৪. ওয়েবসাইট তৈরী বা এসংক্রান্ত খরচের প্রয়োজন নেই।
৫. ওয়েবসাইট আপডেট ও পন্য প্রদর্শন দরকার হয়না। খুব সহজের ফেইসবুকে পোস্ট দেয়া যায়।
৬. ফেইসবুকে মার্কেটিং ও প্রচার প্রচরণা করা যায় খুব সহজে।
৭. এটা পরিচালনার জন্য অনেক কিছু জানার প্রয়োজন হয়না।

এফ কমার্সের অসুবিধা:
১. খুব সহজে শুরু করা যায় বিধায় এটা কাস্টমারের কাছে খুব একটা গুরুত্ব বহন করেনা।
২. এতে পেমেন্ট গেটওয়ে সুবিধা প্রায় নেই বিধায় অনেক সময় উদ্যোক্তার প্রতারণা বা হয়রানী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে শুরু করতে হয়না বিধায়, কেউ এটাকে পেশাদারী শপ মনে করেনা। ফলে বিশ্বাসের জায়গাটা খুব দূর্বল থকে।
৪. নিজস্ব ওয়েবসাইট না থাকলে ক্রেতারা সন্দেহ করে এবং ভালো চোখে দেখেনা।
৫. নিজস্ব ওয়েবসাইটে কাস্টমাইজ ওয়েতে নিজেদের ফিচার বা প্যাটার্ন অনুসারে যেমন পন্য দরদাম ও তথ্য প্রদর্শণ ও সরবরাহ করা যায়, ফেইসবুকে তা সম্ভব হয়না।
৬. ফেইসবুকে হাজার হাজার ফেইজের সাথে প্রচারণা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় ইদুর দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে হয়।
৭. এতে কোনো আলাদা ডিজাইন করা যায়না বিধায় নিজের পন্য ও সেবাকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ তেমন একটা থাকেনা।
৮. কার্ড বা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনর সুযোগ হয়না বিধায় অনেকসময় ক্রেতারা নিরুৎসাহিত হয়।
৯. ফেইসবুক মূলত সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফরম এটা ব্যবসায়িক প্লাটফরম নয় তাই এখানে প্রচার প্রসার বা মার্কেটিং করা যতটা সবিধের ব্যবসা করা ততটা সুবিধের নয়। কারণ কখনো ফেইসবুক নিজেদের পলিসি পরিবর্তণ করতে পারে। আবার কখনো বা দেশে ফেইসবুক ব্যবহার বন্ধ বা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।

ই কমার্সের সুবিধাসমূহ
১. যে কেউ যখন খুশি যেকোন একটা নাম দিয়ে অনলাইনে একটা শপ বা ওয়েবসাইট খুলে ব্যবসা শুরু করতে পারেনা বলে জনগন মনে করে যারা অনলাইন শপ খুলেছে তারা প্রকৃত ব্যবসায়ী। তাছাড়া একটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকা প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি ও ভাবমূর্তির প্রশ্নের সাথে জড়িত।
২. বিকাশ বা ক্যাশ অন ডেলিভারী কা কন্ডিশন ডেলিভারীতে মাল ডেলিভারী দেয়া যায়। এবং নিজের ওয়েবসাইটে লিংকআপ করে পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানীর মাধ্যমে ব্যাংক ও বিভিনন্ন কার্ড দিয়ে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে পারে। ফলে ব্যবসায়িক লেনদেনে একটা আস্থার পরিবশে তৈরী হয়। ক্রেতা বা ভোক্তা কারো প্রতারিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকেনা।
৩. ই কমার্স ওয়েবসাইট তৈরীর ট্রেড লাইসেন্স টিন ভ্যাট না হলেও করা যায়, কিন্তু সাধারণত প্রথাগত নিয়মে যেহেতেু ব্যবসা করতে এসব লাগে সেজন্য ই কমার্স করার জন্যও এসব প্রয়োজন হয়। আর পেমেন্ট গেটওয়ের সার্ভিস নেয়ার জন্য ট্রেড লাইসেন্স, ছবি, এনআইডি ইত্যাদির কপি জমা দিতে হয়। ফলে এখানে প্রতারণা করার সুযোগ থাকেনা।
৪. বর্তমানে কিছু কোম্পানী রয়েছে যারা ডোমেইন, ওয়েবসাইট এবং পেমেন্ট সব সুবিধা একই প্যাকেজের আওতার দিয়ে থাকে। যাতে উদ্যোক্তার পন্য সংগ্রহ, ডেলিভারী ও সাইট আপডেট ছাড়া আর কোন টেনশন করতে হয়না। কারণ বিশেষকরে পেমেন্ট মার খাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
৫. ওয়েবসাইট আপডেট ও পন্য প্রদর্শন এর ক্ষেত্রে নিজেদের মত ফিচারিং, বিবরণ ছবি ও ওয়েব ডিজাইন করা যায়।

৬. আপনার ই কমার্স আলাদা সাইট থাকলেও ফেইসবুকে মার্কেটিং ও প্রচার প্রচরণা করা যায় খুব সহজে।
৭. এটা পরিচালনার জন্য ব্যবসার সাধারণ জ্ঞান থাকা ভালো। এই জ্ঞান প্রতিক্ষেত্রে কাজে লাগে।
৮. ই কমার্সের মাধ্যমে নিজস্ব একটা নাম সুনাম ও ব্রান্ড দাড় করানো যায় এবং পরবর্তীতে ব্যবসা প্রসারের ক্ষেত্রে তেমন একটা সমস্যা হয়না।
৯. এছাড়া কাস্টমাইজ বা উন্নত ওয়েবসাইট হলে পন্যক্রয় পার্টি নিয়ন্ত্রণ, এজেন্ট তথ্য, পন্য ডেলিভারী সব কিছুই অনলাইনে নিয়ন্ত্রন করা যায়।
১০. ওয়েবসাইটটি আপডেটেড ও কাস্টমাইজ হলে প্রতিষ্ঠানের সমগ্র কর্মকান্ড অনলাইনে পরিচালনা করা যায়। পন্য স্টক, একাউন্টস থেকে শুরু করে সব কিছূ।

ই কমার্সের অসুবিধাসমূহ
১. নূনতম একটা পুজি না হলে এটা শুরু করা যায়না। বিশেষ করে ওয়েব সাইট তৈরী, মার্কেটিং, লাইসেন্স ইত্যাদি।
২. শুধুমাত্র নিজের সাইট দিয়ে মার্কেটিং করা যায়না। সামাজিক যোগাযোগ ও মার্কেটিং এর অন্যান্য মাধ্যমের সাহায্য নিতে হয়।
৩. চাহিবা মাত্রই এটা শুরু করা যায়না, একটু প্রস্তুতি, একটু পরিকল্পনা ও কিছু জ্ঞান থাকার প্রয়োজন হয়।

কখন ফেইসবুক বা এফ কমার্স:
ক্স যদি কোন নগদ অর্থ না থাকে কিন্তু কাজ করার আপ্রাণ আগ্রহ থাকে তাহলে ফেইসবুক দিয়ে প্রাথমিক শুরু করা যায়।
ক্স যদি ব্যবসা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান না থাকে বা পরীক্ষামূলক ও শিক্ষণীয় কিছু করা দরকার তাহলে ফেইসবুক ভাল্।ো
ক্স তাছাড়া ইকমার্স সাইট কিংবা অফলাইন ব্যবসার জন্যও আপনি প্রচার প্রচারণার কাজে ফেইসবুক ব্যবহার করতে পারেন।

কখন ই কমার্স:
ক, যদি আপনি চান যে আপনার নিজের মতো করে ব্যবসা করবেন, তাহলে ই কমার্স
খ, যদি আপনি চান যে আপনি সঠিকভাবে দেশের আইন মেনে ব্যবসা করবেন তখন আপনার জন্য ই কমার্স
গ, যখন আপনি চাইবেন আপনার ব্রান্ড বা প্রতিষ্ঠান নামটিই আপনার পরিচিতির একটা অংশ হবে। তখনও ই কমার্স
ঘ, যদি আপনি সত্যি সত্যি একজন পেশাদার ব্যবসায়ী হতে চান তাহলে আপনার জন্য ই কমার্স
ঙ, যদি আপনি বিভিন্নভাবে ব্যাংক, কার্ড, ক্যাশ, বিকাশ, মেবাইল, চেক এর মাধ্যমে পেমেন্ট নিতে চান তো আপনার জন্যও ই কমার্স
চ, যদি আপনি ক্রেতার বিশ্বাস অর্জণ করতে চান, তাহলেও আলাদা ই কমার্স স্ইাট করেই ই কমার্স ব্যবসা করুন।
ছ, ভবিষ্যতে বড় কিছু করতে চাইলে আপনার যে অতীত ইতিহাস প্রয়োজন হবে সেজন্যই আপনার সঠিকভাবে পরিপূর্ণ ই কমার্স করা দরকার।
জ, আপনি যদি একটি ব্রাড দাড় করাতে চান তাহলেও আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইট নিয়ে ব্যবসা শুরু করা দরকার।
ঝ, আপনার যদি অন্যান্য সবিধা, যেমন ব্যাংকলোন, বড় কোম্পানীর সাথে, কাজ বা সরকারী টেন্ডার এসবের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রেও আপনাকে ট্রেড লাইন্সেনিয়ে নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবসাটা করতে হবে।

অনুটিকা:
১. শুরুর আগে আপকি কি ব্যবসা করবেন তার বিস্তারিত প্লান করে নিন।
২. তারও আগে সাটাডি করুন। পড়ে নিন ই ক্যাব ব্লগে আর্টিকেলগুলো।
৩. আপনি প্রথমে একটি ডোমেইন নাম নিয়ে নিন। এবং ফেইজবুক পেইজখুলে প্রচারণা ও কমুউনিটি চেইন বা নেটওয়ার্ক উন্নয়ন করুন।
৪. আপনার ব্যবসা পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিন। ওয়েবসাইট খুলুন। ব্যাংক একাইন্ট করুন। পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস নিন। পন্যের সাপ্লাই ব্যবস্থা ঠিক করে নিন।
৫. এই ব্যবসা সম্পর্কে আরো জানতে ও নানা সমস্যায় সহযোগিতা পেতে ই কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ই ক্যাবের মেম্বার হোন।

14,002 total views, 2 views today

Comments

comments

Your email address will not be published.