ই-বে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বহুজাতিক সি-টু-সি এবং বি-টু-সি প্রতিষ্ঠান। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সবাই কম-বেশি এ প্রতিষ্ঠানটির কথা জানেন। যদিও একে আমরা ই-বে হিসেবে জানি কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটির নাম ই-বে ইনকর্পোরেটেড (ইঙ্ক)।
ওয়েবসাইটঃ www.ebayinc.com
মূল কার্যালয়ঃ স্যান হোজে, ক্যালিফোর্নিয়া।
প্রতিষ্ঠাতাঃ পিয়েরে অমিডায়ার
প্রতিষ্ঠা কালঃ ১৯৯৫
সাবসিডিয়ারিঃ
ই-বে ইঙ্ক এর তিনটি সাবসিডিয়ারি রয়েছেঃ
ই–বে : (www.ebay.com) এটি একটি মার্কেটপ্লেস। এর মাধ্যমে ইন্টারনেটে যে কেউ অনলাইনে পণ্য কিনতে এবং বেচতে পারবে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১৪.৯ কোটি লোক ই-বে ব্যবহার করে।
পে–প্যালঃ (www.paypal.com) এটি একটি ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম। এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পেমেন্ট সিস্টেম যেখানে একশ’র বেশি মূদ্রায় লেনদেন হয়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১৫২ মিলিয়ন সক্রিয় রেজিস্টার্ড পে-প্যাল অ্যাকাউন্ট রয়েছে। প্রতিদিন এ প্রতিষ্ঠানটি ৯৩ লক্ষ অনলাইন লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ করে।
ই–বে এন্টারপ্রাইজঃ (www.ebayenterprise.com) এ প্রতিষ্ঠানটি ই-কমার্স সল্যুশন তৈরি করে ও ই-কমার্স সেবা প্রদান করে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মার্কেটিং, কাস্টমার এনগেজমেন্ট, কাস্টমার কেয়ার, পেমেন্ট প্রসেসিং, ফুলফিলমেন্ট, ফ্রড ডিটেকশন, টেকনোলজি ইন্টেগ্রেশন সহ বিভিন্ন ধরণের সেবা। ২০১১ এর জুনে ই-বে এন্টারপ্রাইজ যাত্রা শুরু করে।
সর্বশেষ ব্যবসায়িক ফলাফলঃ মোবাইল কমার্সের উত্থান
গত অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ই-বে ইঙ্ক এর মোট আয় ৪.৯২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ই-বে মার্কেটপ্লেস ২.৩৩ বিলিয়ন ডলার এবং পে-প্যাল ২.২ বিলিয়ন ডলার। প্রথমবারের মতো পে-প্যাল এর আয় ২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
চতুর্থ প্রান্তিকে মোবাইল পেমেন্টের ভলিউম ৫৮% বেড়ে বাৎসরিক মোবাইল পেমেন্টের পরিমাণ হয়েছে ৪৫.৬ বিলিয়ন ডলার যা মোট লেনদেনের ২০%।
চতুর্থ প্রান্তিকে মোবাইল কমার্সের ভলিউম বেড়েছে ৩০% এবং বছর জুড়ে মোবাইল কমার্সে মোট লেনদেন হয়েছে ২৭.৯ বিলিয়ন ডলার। ক্রস বর্ডার ট্রেডিং বেড়েছে ২০%।
আলাদা হবে ই-বে এবং পে-প্যালঃ
ই-বে এর জন্যে এ বছরের শুরুটা ভাল হয় নি। জানুয়ারিতে চতুর্থ প্রান্তিকের ফলাফল ঘোষণা দেবার সময়ে প্রতিষ্ঠানটি বলে যে তারা চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তাদের মোট জনবলের ৭% (২৪০০ কর্মচারী) ছাটাই করবে। এছাড়াও পে-প্যালকে আলাদা করে দেয়া হবে। এটি আর ই-বে এর অধীনে থাকবে না। ই-বে এবং
পে-প্যাল আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসা করবে এবং আইপিও বাজারে ছাড়বে। ই-বে এন্টারপ্রাইজকে বিক্রী অথবা প্রাথমিক গণ প্রস্তাবনার মাধ্যমে বাজারে ছাড়া হবে।
এ আলাদা হবার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে ই-বে এর খারাপ ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানটি অ্যামাজন এবং আলিবাবা গ্রুপ এর সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। এছাড়াও গত বছর সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (এসইও) এ ভুলের কারণে গুগল ই-বে কে শাস্তি দেয় এবং তাদের সার্চ রেজাল্ট থেকে ই-বে এর লিঙ্ক সরিয়ে ফেলে যার ফলে গুগলে ই-বে এর অর্গ্যানিক ট্রাফিক এবং র্যাঙ্কিং এর ব্যাপক অবনতি হয় এবং ই-বে এর ২০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়।
এছাড়াও গত বছরের মাঝামাঝিতে ই-বে মার্কেটপ্লেস সাইবার অ্যাটাকের শিকার হয়। ফেব্রুয়ারি ও মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ই-বে এর ক্রেতাদের তথ্য চুরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাট, ফ্লোরিডা, এবং ইলিনয় প্রদেশের ব্যবহারকারীরা এ হ্যাকিং এর শিকার হন। ঘটনার পরে ই-বে তাদের ১৪৫ মিলিয়ন ব্যবহারকারীকে তাদের অ্যাকাউন্টের তথ্য আপডেট করতে অনুরোধ করে। হ্যাকাররা ই-বে ব্যবহারকারীদের পাসওয়ার্ড, ই-মেইল ঠিকানা এবং জন্মতারিখ চুরি করে। এ ঘটনা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অন্যদিকে পে-প্যাল এর ব্যবসা ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটতে থাকে।গত বছরে ই-বে এর তিনটি সাবসিডিয়ারির মধ্যে সবচেয়ে ভাল করে পে-প্যাল। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা ই-বেকে পে-প্যালকে আলাদা প্রতিষ্ঠান করার জন্যে চাপ দিতে থাকে যাতে ভবিষ্যতে পে-প্যাল নির্ঝঞ্ঝাটে ব্যবসা করতে পারে।
তবে আলাদা হবার পরেও ই-বে এবং পে-প্যাল একসাথে কাজ করবে। গত সপ্তাহে ই-বে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনে তাদের কাগজপত্র পেশ করে সেখান থেকে জানা যায় যে আলাদা হবার পরে ই-বে এর মার্চেন্ডাইজ বিক্রীর ৮০% পে-প্যাল প্রক্রিয়াকরণ করবে। যদি পে-প্যাল এর শেয়ারের দাম পড়ে যায় তাহলে ই-বে তা কিনে নেবে। আলদা হবার পর পাঁচ বছর যাবত এ ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে।
আলাদা হবার পরে ই-বে পে-প্যাল এর মতো কোন নতুন পেমেন্ট সিস্টেম তৈরি করবে না এবং একই ভাবে পে-প্যাল ও ই-বে এর মতো কোন নতুন অনলাইন মার্কেটপ্লেস চালু করবে না।
e-Bay & J D Worldwide:
চীনের ই-কমার্স বাজার এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স বাজারের একটি। আর এ বিশাল বাজারকে ধরতে ই-বে এবং চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ই-কমার্স সাইট জে ডি ডট কম এখন ই-বে অ্যাণ্ড জে ডি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নামে নতুন ক্রসবর্ডার ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। মার্চ মাসে আলিবাবা এবং অ্যামাজন.কম এর পার্টনারশীপ হয়। অ্যামাজন আলিবাবার টি-মল ওয়েবসাইটে তাদের একটি স্টোর চালু করেছে। এরই জবাবে ই-বে এবং জে ডি ডট কম এর এ নতুন প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে ই-বে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য বিক্রেতাদের কাছ থেকে অনলাইনে চীনা ক্রেতারা পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। এ প্ল্যাটফর্মে ৪৫০টি অনলাইন স্টোরে ১২০০ ব্র্যাণ্ডের দেড় লক্ষ পণ্য বিক্রী হচ্ছে। এ স্টোরের সুবিধা হচ্ছে চীনের ক্রেতাদের আর পণ্য শিপিং, কাস্টমস এবং ভাষার ঝামেলা পোহাতে হবে না।
সোদবিজ এবং ই-বেঃ
সোদবিজ (Sotheby’s)( www.sothebys.com) একটি ব্রিটিশ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। নিলামে পণ্য বিক্রী করা এর প্রধান ব্যবসা। বিভিন্ন চিত্রশিল্পীর দামী ছবি, ভাস্কর্য সহ নানা পণ্য তারা নিলামে বিক্রী করে থাকে। এখন ই-বে এবং সোদবীজ পার্টনারশীপে মিলিত হয়েছে। এর ফলে সোদবীজ-এ এর নিলাম ই-বে তে লাইভ স্ট্রীমিং করা হবে এবং ই-বে থেকে ক্রেতারাও সোদবীজ এর নিলামে অংশগ্রহণ করে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।
শেষ কথাঃ
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে আগের লেখাগুলোতে আমি তাদের ব্যবসার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সহ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে লেখা শেষ করেছি। এবারের লেখাটি একটু অন্যরকম ভাবে শেষ করছি। ই-বে নিয়ে লিখতে গিয়ে দুটি বেশ মজার ঘটনা পেলাম-
২৩ বছর বয়সী আরোন গ্যালাওয়ে পেশায় একজন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। সম্প্রতি তিনি চেক রিপাবলিকে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন।তিনি আয়ারল্যাণ্ডের রায়ানএয়ারলাইন্স ভ্রমণ করছিলেন। প্লেন থেকে নামার সময়ে ভুলে তিনি তার ৪৯৯ পাঊন্ডের ডি-৫২০০ নাইকন ক্যামেরাটি ফেলে যান। এ ব্যাপারে তিনি গ্রাউণ্ড ক্রু দের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলে যে তারা ক্যামেরাটি খুঁজে পায় নি। আরোন খুবই মন খারাপ করেন। হোটেলে এসে তিনি ই-বে তে ঢুকে ক্যামেরা দেখতে থাকেন। ঠিক তখনি তার নজরে পড়ে যে তার ক্যামেরাটিই ই-বে তে বিক্রী করা হচ্ছে এবং নিলামের আর মাত্র ৩৩ মিনিট বাকি আছে। তখন তিনি বিক্রেতা ফার্ণান্দো মিগেল ভিসু এর কাছে একটি ই-মেইল লেখেন এবং তার ক্যামেরাটি ফেরত চান। মিগেল রায়ানএয়ারলাইন্সে ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট হিসেবে কাজ করতেন এবং তিনি ক্যামেরা চুরির কথা স্বীকার করেন এবং আরোনকে ব্যাপারটি এয়ালাইন্সের কর্তাব্যক্তিদের না জানানোর অনুরোধ করেন।
ই-বে তে প্রতিদিন কতকিছুই বিক্রী হয়। ২১ বছর বয়সী বেন লারসেন একজন সৌখিন আলোকচিত্রী যিনি পুরনো ফিল্ম সংগ্রহ করতে পছন্দ করেন। গতকাল ই-বে থেকে তিনি বেশ কিছু পুরান ক্যামেরা ফিল্ম কেনেন যার মধ্যে একটি ছিল কোডাক প্লাস এক্স প্যান সাদাকালো ৩৫ মিলি ফিল্ম। ফিল্মটি প্রসেস করার সময়ে তিনি দেখেন যে ফিল্মে ৫০ বছরের পুরানো সিউল, দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক ছবি রয়েছে যেগুলো ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে তোলা হয়েছিল।
এরকম আরও নানা ধরণের পণ্য ই-বে তে বিক্রী করা হয়।
তথ্য সূত্রঃ
www.reuters.com/article/2014/05/22/us-ebay-password-idUSBREA4K0B420140522
http://searchengineland.com/google-ebay-penalty-cost-197031
http://recode.net/2015/01/21/ebay-to-cut-2400-jobs-and-explore-sale-or-ipo-of-enterprise-unit/
http://fortune.com/2015/03/06/humbled-amazon-turns-to-rival-alibaba-for-help-in- china
www.wsj.com/articles/ebay-paypal-offer-new-details-on-planned-split-1428612663
www.zacks.com/stock/news/170883/ebay-teams-up-with-jdcom-in-china-on-consumer-demand
http://abcnews.go.com/US/virginia-man-finds-trove-vietnam-war-era-photos/story?id=30370840
8,504 total views, 2 views today