
ই-ক্যাবের কাজের ক্ষেত্রে করোনাকালীন অভিজ্ঞতা -১
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল, লকডাউন অবস্থায় গ্রাহকের কাছে সেবা পৌছে দেয়া। সেজন্য আমরা সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কাজ করেছ। আমাদের বিভিন্ন সদস্য প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭০ হাজার মালগাড়ি সারাদেশে পণ্য পৌছে দিয়েছে।
আমি কেন্দ্রীয় লকডাউন ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে প্রাইভেট সেক্টর থেকে একমাত্র মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল যে লকডাউনে থাকা মানুষদের জন্য নিত্যপণ্য সেবা দেয়া। শহর এলাকায় খুব ভাল সেবা দিতে পারলেও গ্রামীণ পর্যায়ে লকডাউনকে শিথিল করে নিত্যপণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়েছে।
পরে আমরা নিত্যপণ্যের সাথে গেজেট, পোশাক ও বই বিক্রির অনুমতি নিয়েছি। তখন আমাদের নতুন সমস্যা দেয়া। তাহলো ডেলিভারী কর্মী সংকট। তখন বেশী বেতন দিয়ে বিশেষ গাড়িতে করে গ্রাম থেকে তাদেরকে আনতে হয়েছে।
এই সময়ে, নিত্যপণ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ৩০০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু যারা গেজেট পোশাক বা অন্য আইটেম বিক্রি করে তারা এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেনি। আমাদের মাত্র ৮% প্রতষ্ঠিান নিত্যপণ্য সেবা দেয়। ৩% লজিস্টিক সেবা দেয়া। বাকী প্রায় ৮৫% গেজেট ও পোশাক বিক্রি করে।
এর মধ্যে আমরা চারটি সার্ভে করেছি। সেখানে বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান সমূহের ২৭% নারী উদ্যোক্তা। আমি বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশন এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এখানেও আমরা কোভিডের ক্ষতি সম্পর্কিত একটা সার্ভে করেছি। এখাতে মাত্র ৪% কর্মী নারী। এবং ২৭% লোকের চাকরী স্থায়ীভাবে চলে গেছে। বেতান বা সাময়িক ক্ষতি হয়েছে ৬৬% কর্মীর। এখাতে অনেকে নিজেদের কৃষি সাথে যুক্ত করার কথা ভাবছে। তারা মনে করছে যেকোনো পরিস্থিতিতে কৃষিপণ্যের চাহিদা থাকবে।
আমরা সাপ্লাই চেইনের যে সমস্যার মুখোমুখী হয়েছি। ট্রাডিশনাল ক্ষেত্রে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ কৃষকের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তার কাছে পৌছাতে না পারলে উৎপাদন এবং পুরো ইকো সিস্টেম ব্যাহত হবে।
আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে বেশীরভাগ নারী উদ্যোক্তা হ্যান্ডিক্রাপ্টস ও বুটিকশপ নিয়ে কাজ করে। তারা খুব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাদের বেচাবিক্রি ফেসবুক দোকান নির্ভর। এদের মধ্যে যারা অতিক্ষুদ্র তারা এতটাই সংকটে পড়েছে যে, তারা আমাদের কাছে বেঁচে থাকার জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়েছে।
করোনাকালীন সময়ে মধ্যবিত্ত শ্রেনীর একটা অংশ তাদের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রাখতে পারছিলনা। তাদের জন্য ই-ক্যাব সরকারের সাথে মিলে ভুর্তুকি দিয়ে অনলাইনে পণ্য বিক্রয় করার সুবিধা রেখেছিল।
আমি যেহেতু, বাংলাদেশে কোভিড সংক্রান্ত সেবার অগ্রভাগে ছিলাম। এবং মাঠে একটিভ ছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কয়েকটা জিনিস দরকার
১. সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত
২. মনোবল ধরে রাখা
৩. আগে থেকে যেকোনো সমস্যার জন্য প্রস্তুত থাকা
৪. হাতের কাছে যেসব সুবিধা আছে সেগুলো ব্যবহার করা
৫. সরকারের কাছে দাবী জানিয়ে সুবিধা আদায় করে নেয়া।
নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে আমার কিছু পরামর্শ হলো-
যেসব দেশে উদ্যোক্তাশীপ উন্নত হচ্ছে সেসব দেশে নারীদের জন্য ভেনচার ক্যাপিটেল খুব জরুরী। সাথে সাথে ভেনচার ক্যাপিটেল এর একটি কনসালটেন্সি বিভাগ থাকতে হবে যারা নারী উদ্যোক্তাদের সাথে সবসময় যুক্ত থেকে তাদেরকে সিদ্ধান্ত সাহায্য করবে। এবং তাদের জন্য ব্যবসা বিষয়ক তথ্যপ্রাপ্তি সহজ করে দেবে।
অক্টোবর ২০২০ এ অনুষ্ঠিত আইসিটি শী ট্রেডস এর একটি মত বিনিময় সভায় প্রদত্ত বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ
807 total views, 3 views today