ই কমার্স: সবার স্বার্থে বাজারকে বিস্তৃত করতে হবে
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
ই কমার্স এসোসিশেন অব বাংলাদেশ। এই সংগঠনে ২৩০ টি কোম্পানী আজ অবধি নিবন্ধিত হয়েছে। আশাকরা যায় চলতি বছর ৩০০ কেমা্পানী হয়ে যাবে। ই কমার্সের ভবিষ্যত ভালো। একটি একটিভ এসোসিয়েশন হিসেবে এর কাযক্রম সর্বসহলে প্রশংসিত হয়েছে। দেশে মানুষ জীবন ওজীবিকার জন্য কাজ করতে চায়, কাজ করতে চায় দেশ ও সমাজরে জন্য। একদিকে বেকারত্ব আরেকদিকে নিজেই কিছু করার বা উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা তরুনদের এই ব্যবসায় নিয়ে আসছে।
আবার অন্যদিকে মানুষের ব্যস্ততা, যানজট, ইন্টারনেট ও মোবাইলে ব্যপক ব্যবহার মানুষকে অনলাইনে বেচাকেনা করতে উদ্ধুদ্ধ করছে। কিন্তু এর হার কতো। শতকরা কতজন মানুষ মাসে একবার কোনো অনলাইন শপ থেকে কেনাকাটা করে। না আমরা জানি না। এরকম কোনো সমীক্ষা হয়নি। তবে একটা জিনিস পরিষ্কার কাস্টমারের সংখ্যার দিক থেকে বলি আর টাকার অংকে বলি আমাদের ই কমার্স বাজারের পরিধি অনেক ছোট। ফলে আমরা এখনো এমন কোনো কোম্পানীর কথা জানি না যারা রোল মডেল হওয়ার মতো সফলতা অজর্ণ করেছে। আমি জানি এই বিষয়টা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
অবশ্য একদিক থেকে বিষয়টা মোটেই হতাশার নয়। আমাদের গার্মেন্টস ব্যবসায়টা দাড়াতে প্রায় ২ দশক সময় লেগেছে। প্রথম দশকে ব্যবসায় হিসেবে ভিত তৈরী করেছে এবং দ্বিতীয় দশকে এর বিস্তৃতি সম্প্ন্ নহয়েছে। ই কমার্স ব্যবসায়ের একটা দশক মোটামোটি অন্ধকার যুগের মতো ছিলো। ১৯৯৯-২০০৮ এই দশকে কেবল কতিপয় ব্যক্তি বার বার চেষ্টা করেও সামনে এগুতে পারেননি নানাবিধ সমস্যার কারণে।, পরবর্তী দশক টাকে আমরা ২ভাগে ভাগ কররতে পারি ২০০৯- ২০১৩ এই সময়ে সাপোর্ট বিজনেস গুলো এই ব্যবসায়ের জন্য একটু ম্যাচিউরড হয়েছে মাত্র। যেমন কুরিয়ার, পেমেন্ট গেটওয়ে। মূল কাজটা হবে এই দশকের দ্বীতিয়ার্ধে মানে ২০১৪- ২০১৯ সালের মধ্যে। এই সময়ে সেক্টরটা দাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।
এখন বর্তমান সময়ের কথা বলছি। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কোম্পানী যুক্ত হচ্ছে কিন্তু বাজারটা বড়ো হচ্ছেনা। এই মুহুর্তে বাজারটাকে বড়ো করার জন্য আমাদের সকলের কিছু করনীয় রয়েছে। তার আগে জেনে নিই বাজারটা কি কি ভাবে বড়ো করা যায়?
১. গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে:
বর্তমানে অনলাইন শপগুলোতে কি পরিমান মানূষ সেবা বা পন্য ক্রয় করে। তার বৃদ্ধির হার কত। আগামী বছরে এফ কমার্স শপসহ এখানকার ৫ হাজার শপ এর জন্য কতো ক্রেতা দরকার ? আসুন আমরা তার একটা ফর্দ ঠিক করি এবং সে লক্ষ্যটা অজর্নের জন্য করনীয় গুলো আলোচনায় নিয়ে আসি।
- বাজার এলাকা বা আয়তনের দিক থেকে: ডেলিভারী সমস্যার কারণে অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় পন্য পেীছানো যায়না। সেটা হয়তো সমাধান হতে সময় লাগবে তবুও এখন থেকে কিছু পরিকল্পনা প্রয়োজন। তাছাড়া শুধু ডেলিভারী নয় তাদের কাছে পন্যের মেসেজ বা পাঠানোর পথও আরো সহজ করতে হবে।ডেলিভারিতে আরো কিছু সমস্যা আছে সেগুলো ধীরে ধীরে সমাধান হচ্ছে প্রযুক্তির কল্যাণে। এখন সবার আশা হলো ডাক বিভাগকে যদি ই কমার্সের জন্য কাজে লাগানো যায়।
৩. পন্যের দিক থেকে বাজার বড়ো করা:
বর্তমানে যেসব ধরন ও মানের পন্য ই কমার্স সাইটগুলোতে পাওয়া যায়, মানুষের চাহিদার আলোকে এর ধরন আরো বাড়া দরকার। যদিও সৃজণশীল তরুন উদ্যোক্তারা প্রতিমোসেই কোনো না কোনো পন্য নিয়ে আসছে যা্ হয়তো অনেকের ধারনার বাইরে। গত কয়েকমাসে এরকম কিছু এসেছে যেমন-মধু, ডায়বেটিক পন্য, মিষ্টি, ও বেনারসি শাড়ী যদিও কাচাতরকারী, সবজি, মাছ ও শুটকি আগে থেকই ছিলো।
৪. অর্থমূল্যের দিক থেকে:
মাসে কত কোটি টাকার লেনদেন ই কমাসে হচ্ছে এর বিশ্লেষন করার সময় এসেছে যা হচ্ছে তা মোট দেশের অর্থ বাজাররের কত শতাংশ এবং পরিধি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কর্সূচী গ্রহলন করা দরকার।যদিও ২০১৪ সালে এর একটা হিসেবে এসেছে যে বছরে ২শ কোটি টাকার ই কমার্স লেনদেন হয় কিন্তু আসলে সেটা পন্য বা সেবাভিত্তিক নয় সেটা বিকাশ এর মতো লেনদেনগুলো কথা বলা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে আমাদের জানা প্রয়োজন অনলাইন থেকে মানুষ পন্য ও সেবা কিনতে কি পরিমাণ টাকা খরচ করে।
৫. সম্পৃক্ততার দিক থেকে:
আমরা প্রতিমাসে কিছু না কিছু শপিং করি। প্রতিদিনি কিছুনা কিছু কেনাকাটা করি। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা বছরে কতবার অনলাইন শপ থেকে কেনাকাটা করি। বা কয়বার মাসে ই কমার্স পন্য কিনি বা সপ্তাহে কয়টা অনলাইন শপ ভিজিট করি। এগুলো গবেণষান ও এনালাইসিস করে বাড়াতে হবে।
ই কমার্সে কে একটি সত্যিকারের সফল জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এই কাজটি করতে হবে। এজন্য ই ক্যাব থেকে একটা জরিপ করা যেতে পারে। এই জরিপটা হবে মূলত তিন পর্যায়ের ১. কাস্টমার ও উদ্যোক্তাদের সাক্ষাতকার ভিত্তিক। ২. সরকারী তথ্য পর্যালোচনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের, ৩. কুরিয়ারিএবং ওপিজি গুলোর থেকে তথ্য সংগ্রহ। এটা একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ গত বছর এই কাজটা করতে গিয়ে মাত্র ১০টি কোম্পানীর সাড়া পাওয়া গেছে। আশাকরি সে কাজটা এবার সহজ হবে কারণ তখন এসোসিয়েশন ছিলনা এখন এসোসিয়েশন আছে।
কেন বাজার বিস্তৃতি করা প্রয়োজন?
আমাদের দেশে প্রনিনিয়ত বিভিন্ন সেক্টর থেকে মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছে। বর্তমানে দেশে ৩শএর মতো নিয়মিত অনলাইন শপ রয়েছে তিন হাজার রয়েছে ফেইসবুক শপ আরো এক দেড় হাজার রয়েছে বিভিন্ন নিয়মিত ব্যবসায়ীদের অনলাইন সেবা। ৫ হাজারের বেশী প্লাটফর্মমে বেচাকেনা করার জন্য কতজন লোক প্রয়োজন। আমরা যদি গড়ে নুনতম দৈনিক ১০ জন কাস্টমার প্রতিটি শপের জন্য হিসেব করি। তাহলে প্রতিদিন ৫০ হাজার ক্রেতা প্রয়োজন। যদি ধরে নেই একজন ক্রেতা মাসে মাত্র ১ দিন অনলাইনে কেনাকাটা করে তাহলে এর সংখ্যা প্রয়োজন ১৫ লাখ। এখন আমারেদর বাজারে বর্তমানে লাখ দুয়েক ক্রেতা আছেন বলে ধারণা করা যায়। যদি জীবনে একবারও অনলাইন শপ থেকে কোনো কিনেছে তাদের হিসেব করা হয় তাহলে হয়তো তাদের সংখ্যা ৫ লাখে দাড়াবে। আর নিয়মিত ক্রেতা এক লাখের মতো হবে। মানে যারা ২/৩ মাসের মধ্যে একবার কোনো ।অনলাইন শপ থেকে কিছু কেনাকাটা করেন।এই সংখ্যা হেরফের হতে পারে এটা কোনো জরিপ নয় শুধু পর্যবেক্ষনমাত্র।
এখন আমরা দেখতে চাই যে প্রকৃত চিত্রটা কেমন হওয়া উচিত। আমি ধরে নিলাম আগামী ২/৩ বছরে অনলাইন শপের সংখ্যা ১০ হাজারে দাড়াবে।প্রতিটি শপের জন্য দৈনিক গড় কাস্টমার দরকার ৩০ থেকে ৫০ জন। তবে একটি ফার্চার শপে হয়তো ৫ জন হলেও চলবে আবার একটি মুদি বা সবজিশপে দৈনিক বমপক্ষে ২০০ ক্রেতা প্রয়োজন। ধরি গড়ে ৫০ জন। আমি ধরে নিলাম ক্রেতারা গড়পড়তায় ২ সপ্তাহে একদিন কোনো কোনো শপ থেকে ১ বার কেনাকাটা করবে। এর মধ্যে কেউ সপ্তাহে ২টি শপের দারস্থ হতে পারে কেই আবার ৬ মাসে একদিন। ফলে আমরা হিসেবটাকে দ্বিগুন করে হিসেব করতে হবে মানে ৫০ জনের স্থলে ১০০ জন বা তারও বেশী। তবুও এখন আমরা সপ্তাহের গড়ে হিসেব করলে দেখা যাবে কাস্টমার প্রয়োজন= ১০,০০০ শপ*১০০ ক্রেতা*৭দিন=৭০,০০,০০০।
৭০ লাখ মানুষকে নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে আমরা ই কমার্স ব্যবসায়ের সাথে পরিচিত করাতে হবে। তবে এই লক্ষ্যে প্রথমে ১০ লাখ চলতি বছর, আগামী বছর ২০১৬ সালে একে নিয়ে যেতে হবে ২০ লাখে, ২০১৭ সালে এই সংখ্যা হতে হবে ৩৫ লাখ, এভাবে চললে ২০১৮ সালে হবে ৫৫ লাখ এবং ২০১৯ সালে কাংখিত লক্ষ্য অর্জণ করা যাবে। একদিক থেকে এটা খুব কঠিন নয় আমাদের দেশে কোনো একটি শহরের জনসংখ্যাও এর সমান। আমাদের দেশে ২ কোটি পরিবার আছে মাত্র ১০ লক্ষ্য পরিবারকে সম্পৃক্ত করতে পারলে কাজটা সহজ হবে।শুধুমাত্র ফেউসবুক ব্যবহার কারীর সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে গেছে েএবং প্রতিদিন সেটা বাড়ছে। সূতরাং সম্ভাবনাও কিন্তু রয়েছে। এখন কত দ্রুত প্রথম টার্গেট মানে ১০ লাখ অতিক্রম করা যায় ততই পরবর্তী লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে।
আপনারা প্রত্যেকে ভাবুন এই কাজটি কিভাবে করা যায়।
5,712 total views, 3 views today