ই-কমার্সে আসতে চান?
প্রতিটি ব্যবসায় শুরু করার আগে সে ব্যবসাটি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে সঠিক কার্যকারণ ঠিক করে সেটাতে যোগ দেয়া উচিত। আর যদি এমন হয় যে, আপনি সহজ মনে করে কোনো কাজ করছেন তাহলে তাতে কখনোই প্রকৃত সফলতা পাওয়া যায়না। পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আর কোনো কাজই আসলে সহজ নেই। ই-কমার্স কারো কাছে সহজ মনে হয়। সেটার বিভিন্ন কারণ আছে। কিন্তু আসলে একটা পেজ খোলা আর ওয়েবসাইট বানানো যত সহজ একটা ব্যবসা চালানো ততটা সহজ নয়।
তবুও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তরুন ই-কমার্সে আসছে আসবে। কেন তাদের আসা উচিত আর কেন উচিত নয় সেটাই আজ আলোচ্য
আপনি ই-কমার্সে আসতে পারেন যদি স্বল্প পরিসরে কিছু করতে চানও সেটাও সেযমন সম্ভব যেতমনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশী ইনভেস্টমেন্টও এখানে করা সম্ভব। পুজির পরিমাণ আর বেচাবিক্রির উপর লাভ লোকসান নির্ভর করবে সেটাতে বলার অপেক্ষা রাখে না।
১. আপনি স্বল্প পরিসরে এককভাবে ব্যবসা করতে চান সেজন্য আপনি ই কমার্সে আসতে পারেন। অনেকে ওয়ানম্যান আর্মি হিসেবে এই ব্যবসা করে। সেক্ষেত্র আপনাকে আলাদা করে ডেলিভারী ম্যানসহ কিছু সেবা নিতে হবে। এবং অনলাইন যোগাযোগে দক্ষ ও পরিশ্রমি হতে হবে। তবে ছোট পরিসরে করা মানে ছোট ব্যবসা সেটা মাথায় রাখতে হবে।
২. বাংলাদেশে ই কমার্স এর ভবিষ্যত ভালো সেজন্য আপনি ই কমার্সে আসতে পারেন। তবে যেহেতু ভবিষ্যত ভালো সেহেতু আপনার চেয়ে আরো বড়ো বড়ো পার্টি এখানে খেলতে আসবে। সূতরাং সে প্রস্তুতি নিয়ে আসুন। আপনি মানসম্পন্ন সেবা দিলে আপনি হয়তো উঠে দাড়াতে পারবেন। বড়ো বড়ো অনেকের ভিড় ঠেলে ফখরুদ্দিন বাবুচি উঠে দাড়িয়েছে।
৩. অল্প পুঁজিতে এই ব্যবসা করা যায় সেজন্য আপনি ই কমার্সে আসতে পারেন। সব ব্যবসাই ছোট বড় আছে। ছোট বাদাম ব্যবসায়ী যেমন আছে তেমনি বিদেশ থেকে বাদাম আমদানীর কোটি টাকার ব্যবসা আছে। আপনি একটি পেজ খুলেও অনলাইন ব্যবসা করতে পারেন। আবার একটি ওয়েবসাইট খুলেও করতে পারেন। সাহস আত্মবিশ্বাস থাকলে ছোট থেকে শুরু করতে পারেন। তবে বড়ো কিছু করার স্বপ্ন থেকে সরে যাবেন না।
৪. এই ব্যবসাটা অনেকেই সিরিয়াস পেশাদারী হিসেবে করছেনা বা পারছেনা, আপনি পারবেন এবং করবেন সেজন্য আপনি ই কমার্সে আসবেন। একটা শর্ত আছে শর্তটা হলো এই ব্যবসা করার জন্য যে দক্ষতা ও রিসোর্স প্রয়োজন সেটা যদি আপনার থাকে। কারণ এটা প্রচলিত ব্যবসার চেয়ে বেশী কঠিন ও বেশী চ্যালেঞ্জের। কারণ আপনি চাঁদপুরে একটা দোকান দিলে সেটা শুধু চাঁদপুরের ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিযোগীতা করতে হয়। আর যখন অনলাইনে আপনার দোকান হবে তখন আপনার প্রতিযোগিতা সারা বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বের সাথে।
৫. এই ব্যবসায় ভালো লোকেরা না আসলে ব্যবসাটাতে প্রতারক লোকজনের আধিপত্য শুরু হবে সেজন্য আপনি ই কমার্সে আসবেন। অবশ্যই সঠিকভাবে পরিচলনা করতে হবে। আর শিখে নিতে হবে। আপনার ভুল ধারণার জন্য যেন সমস্যা না হয়।
৬. আপনি শিক্ষিত এবং আপনার প্রযুক্তি জ্ঞান আছে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যবসা করার জন্য আপনি ই কমার্সে আসবেন। হাঁ আপনার যদি কোনো ট্রাডিশনাল বিজনেস থাকে তাহলে আপনি চাইলে সেটাকে ই-কমার্সে কনভার্ট করে অনলাইন বাজারে আসতেই পারেন।
৭. আজকাল মানুষ ঘরে বসে সার্ভিস পেতে চায় সেজন্য আপনি ই কমার্স করতে পারেন। যদি আপনি মানুষের ঘরে সেবাটা খুব সুন্দরভাবে পৌঁছে দিতে পারেন। চাইলে আপনি একটি নির্দিষ্ট এলাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন।
৮. বাংলাদেশে মোবাইল এবং ইন্টারনেট দ্রুত প্রসার ঘটছে সেজন্য আপনি ই কমার্সে আসতে পারেন। কারণ একে ই-কমার্সের বাজার দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। আর সম্ভাবনাও বাড়ছে। বড়ো বাজারে প্রবেশ করার জন্য বড়ো করে প্রস্তুতি নিতে পারেন। অবশ্য আপনার যদি একটা ভালো পরিকল্পনা থাকে তাহলে আস্তে আস্তে আগাতে পারেন। প্রাথমিক কিছু জ্ঞান আর প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করতে পারেন।
৯. বিদেশী কোম্পানী আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। সেজন্য আপনি ই কমার্সে আসবেন। এর মানে হলো আপনি এবং আপনার মতো দশজন বাজারে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে একটা ইকোসিস্টেম দাড় করাতে পারেন। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে যখন দক্ষ জনশক্তি তৈরী হবে। তখন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবেন আর আপনি যখন বাজারে সেট হয়ে যাবেন তখন খুব সহজে আপনাকে কেউ হটিয়ে দিতে পারবেনা।
১০. এই ব্যবসা এখনো শক্তিশালী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়নি আপনার অনেক কিছু করার সুযোগ আছে যদি বিষয়টা আপনি বুঝতে পারেন। এর মানে হলো আপনাকে কঠিন সংগ্রাম করে আপনার ভিত্তি দাড় করাতে হবে।
১১. এখনো কঠিন প্রতিযোগিতা শুরু হয়নি অনেক পন্য নিয়ে ব্যবসা করলে আপনি হবেন। প্রথম এবং আপাতত একমাত্রসেজন্য আপনি ই কমার্সে আসবেন। তবে এই পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাবে। সেটা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। আর সত্যিকার অর্থে সঠিকভাবে ই-কমার্স করতে হলে বড়ো বাজেটের প্লান এবং দক্ষ টিম দরকার হবে আপনার।
১২. আপনার পাশে ই- ক্যাব আছে। বাংলাদেশে এর আগে কোনো ব্যবসায় ব্যবসা শুরু করার আগে এসোসিয়শন গঠিত হয়ে আগ্রহীদের পাশে দাড়ায়নি। এক দুই দশক ব্যবসা চালু হওয়ার পরে প্রতিষিবঠত ব্যবসায়ীরা মিলে এসোসিয়েশন করেছে। তারা কাউকে ব্যবসা শেখায়নি। ব্যবসা শিখে তারা সমিতিতে যোগ দিয়েছে। আপনারা এমন একটা প্লাটফরম পেয়েছেন। যারা আপনাদের ব্যবসা শেখাচ্ছে। প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। একটা ইতিবাচক দিক। যদিও আমি মনে করি শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরী করা যায়না। তবে যার উদ্যোক্তা মেজাজ আছে প্রশিক্ষণ তাকে দ্রুত তৈরী হতে সাহায্য করে।
১৩. আমাদেরকে ঠকে ঠকে ঠেকে ঠেকে শিখতে হয়েছে। কিন্তু আজকাল গুগলে ইউটিউবে অনেক কিছুই শিখতে পারা যায়। তবে এটা সহজ এবং কঠিন। যেটা সহজে পাওয়া যায় সেটা সবার জন্য পাওয়া যায়। এতে করে খুব বেশী লোক ই-কমার্সে আসবে। ছোট বাজারে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশী হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে ই-কমার্সে নামতেই পারেন।
১৩. পেজবুক ভিত্তিক পেজ বা ই-কমার্সের কিছু প্রতারণার বদনাম আছে। এটা আসলে দেশের সব সেক্টরে আছে। কিন্তু এখানে সুবিধা হলো আপনি চাইলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণা রোধও করতে পারেন। তাই ই-কমার্সে বর্তমানে যেসব সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান বের করতে পারলে আপনি এ ব্যবসায় আসতেই পারেন।
১৪. কোনো অফিস না নিয়ে নিজের ঘরে বসে স্বল্প পরিসওে করতে পারেন। সেজন্য আপনি ই কমার্সে আসতে পারেন। আসলে অফিস বিষয়না বিষয়হলো কাজের জায়গা। এটা সব ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আপনি বাসায় শুরু করতে পারেন তবে চিরদিন বাসায় বসে করবেন এই ভাবনা যেন না তাকে।
১৫. নিজের পন্য না থাকলেও সাপ্লাই চেইন এর মাধমে আপনি পন্য বিক্রি করতে পারেন সেজন্য আপনি ই কমার্সে আসবেন। সেজন্য আপনার কাছে ভালো পন্যের সোর্সিং থাকতে হবে। চাহিবামাত্র পেতে হবে এবং তাদের স্টক সম্পর্কে তথ্য পেতে হবে।
১৬. একসময় অনলাইন ব্যাংকিং, মাস্টার কার্ড, ডেবিট ক্রেডিট কার্ড, ভিসা কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং এসব ছিলনা, এখন আছে সেজন্য ই-কমার্সের সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। তবে বাংলাদেশে ৯৫ ভাগ ই-কমার্স লেনদেন ক্যাশ অন ডেলিভারীতে হচ্ছে। েএটা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
১৭. বাংলাদেশে এমন কিছু পন্য তৈরী হয়, তা আপনি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চান সেজন্য আপনি ই কমার্সে আসবেন। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে এটা আপনি করতেই পারেন। আর নিশ পন্যের ক্ষেত্রে সবসময় একটা ভালো সম্ভাবনা থাকে।
১৮. আপনি বাজারে একটা দোকান দিলে আপনার সীমানা সে বাজার পর্যন্ত। অনলাইনে শপ খুললে আপনার বাজার বিশ্বব্যাপী সেজন্য আপনি ই কমার্সে আসতে পারেন। তবে ওইযে বললাম সেটা শুধু আপনার জন্য নয় আপনার কম্পিটিটরের জন্যও তাই। প্রস্তুতি নিয়েই আসুন।
১৯. দোকান দিলে আপনার অনেক টাকার মাল দিয়ে দোকান সাজাতে হয়। এখানে আপনি অর্ডার পাওয়ার পর পন্য কিনবেন। বিক্রি হবে কি হবেনা সে ঝুঁকি নেই। সেজন্য আপনি ই কমার্সে আসবেন। কিন্তু এটা সব সময় ভালো ফল বয়ে আসতে নাও পারে। নিজের কাছে পন্য রেখে বিক্রি করলে সে সুবিধা অন্যের স্টকের পন্য বিক্রিতে আপনি সে সুবিধা পাবেন না বরং কিছূ সমস্যা তৈরী হতে পারে।
২০. অনেক পন্য আছে আপনাকে কিনতেও হবেনা শুধু অর্ডার কালেক্ট করে কোম্পানীকে জানিয়ে দেবেন। তারা পন্য পাঠাবে। তারাই দাম নেবে। আপনি পাবে।ন শুধু লাভের অংশ বা কমিশন এজন্যও আপনি ই কমার্সে আসতে পারেন। এটা আসলে ই-কমার্স নয় এটা একরকম মার্কেটিং করা। এরকম হলে শুধু ই কমার্স কেন? আরো অনেক ব্যবসাই করতে পারেন।
লেখা: জাহাঙ্গীর আলম শোভন
14,319 total views, 2 views today