hobo-international-lauren-wallet-vintage-leather

ই-কমার্স, করোনাকালীন প্রবৃদ্ধি ও নারী উদ্যোগের বিকাশ

জাহাঙ্গীর আলম শোভন

ই-কমার্স খাতে বিগত ৭ বছর প্রবৃদ্ধি ২৫% থেকে ৬০% উন্নীত হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে যা ছিল ৩০০% ক্ষেত্রবিশেষে। যদিও ২০২৪ সালে এসে এটা ২০% নেমে এসছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ধারণামতে  ই-কমার্স খাতে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে।  প্রায় ৫ লক্ষ ফেসবুক পেইজ ও ৬০ হাজারের সক্রিয় ফেসবুক উদ্যোক্তা। যাদের আবার একটা বড়ো অংশ হলো নারী।

করোনাকালীন সময়ে এদেশের ই-কমার্স নতুন মাত্রা লাভ করেছে। এটা নিয়ে অনেকে খুশি হলেও মুলত এই উন্নতিটা ভিয়েতনাম এবং পাকিস্তানের চেয়ে কম ছিল। বিশেষ করে তৈরী খাবার বা ফুড ডেলিভারীতে ভিয়েতনামে যেখানে ৭০০% প্রবৃদ্ধি ছিল সেখানে আমাদের দেশে  এটা ছিল ২৬৭%। যদি করোনাকালীন সময়ে নিত্যপণ্য সেবা সচল রাখায় এটা সম্ভব হয়েছে।

অন্যদিকে করোনাকালীন সময়ে বিকল্প পণ্য সেবা অনলাইনে বিক্রির একটা প্রবণতা দেখা যায়। যারমধ্যে অন্যতম ছিল মৌসুমী ফল বিশেষ করে আম ও লিচু। অন্যটি হলো কোরবানির পশু। যদিও অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির সংখ্যা নিয়ে কিছুটা অবিশ্বাস রয়েছে। বিশেষ করে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর যে হিসেব দেয় তার বাস্তবতা নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে বৈকি।

অনলাইনে নিত্যপণ্য বিক্রির মাধ্যমে একটি নতুন ব্যাপার ঘটেছে সেটি হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে কিছু লাগাম টেনেছে অনলাইন সুপারশপ। কারণ অনলাইনে পণ্যমূল্য লেখা থাকার কারণে ফড়িয়ারা হুট করে পণ্যের মূল্য বাড়াতে পারে না। যদিও ২০২৪ এর পট পরিবর্তন এর পর ফড়িয়ারা এই ট্র্যাকটাকেও অনেকাংশে ভেঙ্গেছে। তারা শাক-সবজির দামেও রেকড তুলেছে।

টিসিবি’র পণ্য অনলাইনে বিক্রির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য সাশ্রয়ীমূল্যে পণ্য ক্রয়ের ব্যবস্থা করা একটা মাইল ফলক ছিল। অনলাইনে টিসিবির পেয়াজ ৩৬ টাকা বিক্রির ঘোষণার সাথে সাথে পেয়াজের বাজারে দাম কমে যায় ২০%। তখন প্রায় ২৩০ টাকা পেয়াজের বাজার চলছিল।

 

আজ দেশের অর্থনীতির একটি বড়ো অংশ যেমন নারীদের হাতে বিনির্মিত হয়েছে। তেমনি ব্যবসা খাতের এখন দায়িত্বশীল ও সৃজনশীল একটি অংশ নারীরা পরিচালনা করছেন। তাদের অংশগ্রহণ ক্রমশ উজ্জল থেকে উজ্জলতর হচ্ছে। যে নারীরা ঘরে বসে ঘর সংসার সামাল দিয়ে ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন। তারা এই খাতের প্রায় এক চতুর্থাংশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন।

বাংলাদেশের নারীদের গৃহস্থালী এবং সংসারের কাজের অবদান বাদ দিলেও দেশের উন্নয়নে অবদান আজ বিশাল মহীরুহ হয়েছে। যা হয়তো আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে কেউ কল্পনা করেনি।  কোনো কোনো ব্যবসাখাতে ৩১% নারী। ই-কমার্সের এখন চল্লিশ হাজার কোটি টাকা ছুই ছুই করছে। প্রতিদিন ৯ লাখের মতো ডেলিভারী হয়। যার প্রায় এক চতুর্থাংশ নারীদের নিয়ন্ত্রণে। আবাসিক ফেসবুক উদ্যোক্তাদের প্রায় ৬০ শতাংশ নারী। প্রশিক্ষণগুলোতে ৪৬ শতাংশ নারীর উপস্থিতি আগামী দিনগুলোতে এই খাতে তাদের শক্ত অবস্থানের কথা জানিয়ে দেয়। করোনার মত শতাব্দীর বড়ো সংকট তাদের টলাতে পারেনি। আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের এই অংশগ্রহণ সমাজে সংসারে ও রাষ্ট্রে তাদের মর্যাদাকে উন্নত করছে দিনকে দিন।

করোনাকালীন সময়ে ই-কমার্স নগর জীবনকে যেমন নিরাপদ পণ্য সামগ্রী দিয়েছে তেমনি দিয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য। এ ধরনের মহামারি বা দূর্যোগ মোকাবিলায় নানারকম সমস্যার কথা বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে দেখেছি। শুধু তাই নয় আমাদের দেশের অতীত ইতিহাসেও মহামারী ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলায় যে কষ্টকর ইতিহাস রয়েছে। তা সমসাময়িক পত্র-পত্রিকা ও বইয়ের পাতায় আজো বিদ্যমান।

করোনার শুরুতে কিন্তু যখন ডেলিভারীম্যানদের যাতায়াত অবাধ ছিল না। তখন কিন্তু নারী উদ্যোক্তারা বিপত্তির মধ্যে পড়েছিল। প্রথম কয়েক মাসে ২৫% সাধারণ উদ্যোক্তা এবং ২৭% নারী উদ্যোক্তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যদিও পরে ই-কমার্স সেবার সচল হওয়ার সাথে সাথে অনেকে ফিরে আসে। বিশেষ করে নারীরা যেখানে পোশাক বেশী বিক্রি করতো সেখানে তাদের একটা বড়ো অংশ তৈরী খাবার, ক্যাটারিং ও খাবার ডেলিভারী সেবায় যুক্ত হয়। এদের একটা অংশ তাদের অন্য ব্যবসা বা পেশা থেকে খাবার ডেলিভারী পেশায় আসে। আর বাকী একটা অংশ যারা গৃহিনী হিসেবে জীবন যাপন করতেন সেখান থেকে তারা উদ্যোক্তাগিরি শুরু করেন।

কিন্তু মোট ব্যবসায়ীদের এখনো খুব বেশী সংখ্যক নারী উদ্যোক্তা নেই। এই বিষয়ে অন্য লেখায় আলোকপাত করা হলো।

159 total views, 3 views today

Comments

comments