ই কমার্স উদ্যোগে নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যা
Problems of women entrepreneur in E commerce
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
আমাদের দেশে আর্থ সামাজিক পরিস্থিতিতে নারীদের অনেক সমস্যা থাকে। ই কমার্সের ক্ষেত্রে থাকে বেশীরভাগ সুবিধা থাকে অল্পকিছু বাড়তি সমস্যা। আজ সে সমস্যাগুলো আলোচনা করবো। আসলে কারো সমস্যার সমাধান কিন্তু কেউ দিতে পারবেন না। আমি শুধু কিছু পরামর্শ দিতে পারি।
সমস্যা ১: সীমা আপু
সীমা আপু লেখাপড়া শষ একটা চাকুরী করতেন। বিয়ের ৩ বছর পর মা হন। বাচ্চা সামলাতে হিমসিম খেয়ে চাকরীটা ছেড়ে দেন। বাচ্চার বয়স এখন ৩ বছর। কিন্তু সীমা আপু আর চাকুরী করতে চান না। এমন কিছু করতে চান যাতে সংসারে কিছু হেল্প হয় আবারে বাবুকেও টেক কেয়ার করতে পারেন। কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। একবার ভাবলেন বুটিক শপ দেবেন। কিন্তু বুটিকের কাজটা নিজেই জানেন না। লোক নিয়োগ মানে কাজ জানা কিছু মহিলা দিয়ে কাজ শুরু করতে চেয়েছেন। কিন্তু একটা পুজি বিনিয়োগের ব্যাপার আছে ভরসা পাচ্চেন না। অনেকের কাছে তিনি ই কমার্স বিষয়ে শুনেছেন। পরিচিত অনেক বান্ধবী নাকি ফেইসবুকে কিছু বেচাকেনা করে থাকেন। এখন তিনি আগ্রহী কোথা থেকে শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না। কার কাছে গিয়ে জানবেন শুনবেন তাও বুঝতে পারছেন না। ভাবছেন মহিলা মানুষ আবার ছোট একটা বাচ্চা আছে কোথায় কার কাছে যাবে।
পরামর্শ:
সীমাআপুর মতো সমস্যা যদি আপনার হয়, প্রথমে আপনি ই কমার্স সম্পর্কে জানতে পরিচিত যারা পন্য বেচেন বা কেনেন তাদের সাথে কথা বলুন
দ্বিতীয়ত: আপনি ফেইসবুকে যেসব পেইজে পন্য বেচাকেনা হয় এগুলোর প্রতি খেয়াল রাখুন।
তৃতীয়ত ইন্টারনেটে এ বিষয়ে খোজ খবর ও পড়াশোনা করুন।
চতুর্থতরিলেটেড বিষয়ে লেখাপড়া বা ট্রেনিং কোর্স করতে পারেন।
পঞ্চমত : ই ক্যাবের হেল্প নেত পারেন।
সমস্যা ২: রুমা ভাবী
রুমা ভাবীর বান্ধবী ঝিনুক বাসায় বসে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পন্য বিক্রি করে থাকে। প্রথম প্রথম তেমন হয়না। এখন যেসব অর্ডার আসে মোটামোটি তার চলার মতো হয়ে যায়। এজন্য রুমাভাবী ভাবছেন তিনিও এফ কমার্স করবেন। কিন্তু জাহিদ ভাই কিছুতেই রাজি নয়। বলেন ওসব ইন্টারনেট ফিন্টারনেটে মেয়ে মানুষের দরকার নেই। ওসবে অনেক সমস্যা হয়। একই ছাদের নিচে থেকে স্বামীর অমতে কিছু কি আর করা যায়। অথচ করলে কত না ভালো হতো। তার বাচ্চারা সারদিন স্কুলে থাকে। তার হাতে সময়ও থাকে অনেক, কিছু করতে মনও চায়।
পরামর্শ: এক্ষেত্রে আনি নিজের নামে করবেন সেটা জরুরী নয়। আপনি একটা এফ শপ অন্যনামে খূলতে পারেন। ব্যবসাটা আপনার না করে দুজনেরই করতে পারেন। তাকে আপনার বিজনেসে এক্সেস দিয়ে দুজনে একসাথে করতে পারেন। তাকে বোঝাতে পারেন যে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে করে দেখি। যদি ভালো হয় করবো অসুবিধা কি? আর ফোন নাম্বার যে থাকবে সেটা ব্যক্তিগত নাম্বার দেবোনা। মোটকথা তিনি যে যে সমস্যার কথা বলছেন সেগুলো সমাধানের জন্য আপনি বিকল্প পদ্ধতি পেশ করবেন। তবে ব্যবসাটা সিরিয়াসলে করুন। নেহায়েত সময়কটানোর জন্য করলে অনেক কাজই তো আছে।
সমস্যা ৩: ছাদিয়া
লেখাপড়ার শেষপর্যায়ে। চাকুরী খুজছে। কিন্তু মন থেকে চাকরীর প্রতি তার কোন মোহ নেই। সে নিজে কিছু করতে চায় বিশেষ করে নিজের কিছু কাজ জানে সেগুলো সে অনলাইন শপ করে বিজনেস করার কথা ভাবছে। কিন্তু বাবা মা রাজি হচ্ছেনা। মেয়ে কি দোকান ফোকান করবে। আবার কোন সমস্যা হয়। এসব করলে আবার ভালো বিয়ে হতে সমস্যা হয় কিনা?
পরামর্শ: আপনার সমস্যাটা যদি ছাদিয়ার মতো হয়। তাহলে আপনি ভালো করে শিখুন। যদি শুরু করতে চান ষ্টান্ডার্ডভাবে শুরু করতে পারবেন। আর আপনি আপনার পরিবারকে বোঝাতে চাইলে আপনাকে তো অনেক ভালো করে জানতে হবে।
সমস্যা ৪: শাহনাজ
শাহনাজ ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু পাড়া প্রতিবেশী কেউ ভালো চোখে দেখছেনা। ঘরের লোকেরাও কানাকুনা করে। যেহেতু কেউ ভালো কোন চাকুরীর সন্ধান দিতে পারছেনা তাই বেশী কিছু বলছেনা। তবে ভালো কিছু দেখাতে না পারলে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।
পরামর্শ:
আপনার অনেক পন্য নিয়ে ব্যবসায় করার দরকার নেই। আপনি সহজপাপ্য কিছু দিয়ে শুরু করুন। এবং ব্যবসা দাড়াতে সময় লাগে একথা সবাইকে বোঝাতে হবে। আর কিছু কিছু সার্ভিন ফোনে বা বাসায় বসে দেয়ার নেয়ার চেষ্টা করুন। পরিবারের কাউকে বা কোন বন্ধুকে সহযোগি হিসেবে নিন। সবচে বড় কথা নিজে জিনিসটি ভালোভাবে বুঝুন তারপর শুরু করুন। নিজে যা জানেন তার উপর ভরসা না করে আরো ভালোভাবে আয়ত্ত করুন। বিশেষকরে মার্কেটিংটা। আর বড়ো ২/১টা অর্ডার পেতে চেস্টা করুন। সফল হলে বাসায় সেটা শেয়ার করুন। আর নিজেন কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। নিজে যা করেন তা আত্মবিশ্বাসের সহিত প্রকাশ করুন। প্রথমে নিজের বন্ধু বান্ধবদের মাঝে বিক্রির চেস্টা করুন। আবার বলছি মার্কেটিংটা বুঝুন। মার্কেটিং কনসেপ্ট প্রতিনিয়ত পরিবর্তণ হচ্ছে। সূতরাং এ ব্যাপারে সবসময় আপডেটেট থাকুন।
সমস্যা ৫: জান্নাত
উপরের সমস্যাগুলো কাটিয়ে জান্নাত মোটামোট্ িব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অবাঞ্চিত ফোন। কিছু লোক ফোন করে খাজুরে আলাপ করতে চায়। কখনো বাজে কথা বলে। কখনো অসময় ফোন দেয়। কখনো ফেইক অর্ডারও করে। একেবারে বিরক্তির চরম সীমা।
পরামর্শ: আপনার সমস্যা যদি জান্নাতের মতো হয়। যদিও মেয়েরা এগুলো ছেলেদের সাথে ভালো হেন্ডল করতে পারে। সমস্যা হয় মেয়েরা যখন কাউকে বিশ্বাস করে বা দূর্বল হয়ে পড়ে। তার আগে মেয়েরা ভালোই সামলাতে পারে। তবুও বলি কথা বলার সময় এলার্ট থাকুন। অন্যরকম ইঙ্গিত দেখলে চোয়াল শক্ত করে ফেলুন। বেশী সমস্যা হলে কল কেটে দেয়া বা ব্লক করার রাস্তাতো আপনার আছে। তারউপর আরো অনেক কিছু করতে পারেন। নাম্বার চিনতে পারলে অন্যকাউকে দিয়ে ধরাতে পারেন। ইঙ্গিত দিয়ে বলতে পারেন। ঠিকআছে আপনি যদি অন্যবিষয়ে কথা বলেন তাহলে আমার বসকে বা ভাইকে বা বাবাকে বা হাজবেন্ডকে বা ফেন্ডকে দিচ্ছি। এসব বলতে পারেন।
সমস্যা ৬: লিমা
লিমা নিজে পুতির কাজ জানে। জানে সেলাই। তাইসে নিজেউ ব্যাগ পুতির অলংকার, বাচ্চাদের জুতো এসব বানিয়ে বেচা শুরু করে দিয়েছে। প্রতিদিন ৪/৫টা অর্ডার আসে। সে বিকেলে গিয়ে কুরিয়ারে দিয় আসে। কখনো ফোন করলে কুরিয়ারের লোক আসে। মোটামোটি চলছে। সমস্যা হলো তাকে পন্য কেনার জন্য চকবাজার যেতে হয় সেখানে অনেক গিঞ্জি এলাকা। ভিড় খুব বিরক্ত লাগে। কিছু লোক বাজেভাবে তাকায় কেউ আবার বাড়তি খাতির করে। যেটা লিমার পছন্দ নয়। মাঝে মধ্যে একটা উটকো ফোনও আসে। লিমার ধারনা যাদের সাথে তার কাচামালের কাজ সেসব কেউ বা দোকানের কর্মচারী টাইপের কেউ হবে। বাজে মেসেজ পাঠায়। এসব কারণে ও ইচ্ছে করেনা মার্কেটে যেতে।
পরামর্শ: আপনার সমস্যা যদি লিমার মতো হয়। তাহলে আপনি দোকানদের সাথে ভালো ব্যবহার ভাই বোনের মত করুন। ফল পাবেন। কারণ একজন মানুষ যতোই খারাপ হোক সবার সাথে সে খারাপি করতে নাও চাইতে পারে। এরপরও যদি ঠিক না হয় তাহলে এভয়েট করতে পারেন। দোকানে যদি কর্মচারীরা চালায় মালিকের নাম্বার রাখতে পারেন। আর উটকো ফোনের কথাতো বললাম। আর আপনার নিজের পন্য নিজে কেনায় ভালো। তবে আপনার ধারণা ও বিশ্বাস থাকলে পন্য সাপ্লায়ের জন্য আপনি অন্যকারো হেল্প নিতে পারেন। যিনি আপনার পন্য বাসায় পৌছে দেবে। সেক্ষেত্রেও মাঝে মধ্যে গিয়ে অথবা কাউকে পাঠিয়ে পন্যের দাম ও নতুন কোন কিছু বাজারে আসলো কিনা? তা খবর রাখুন। আর নিজেও এমনভাবে থাকুন যাতে আপনার দিকে কেউ আঙুল তুলতে না পারে।
সমস্যা ৭: মাধবী
মাধবীর সমস্যাটা ভিন্ন । সে কাজ করার জন্য সব সময় ৩/৪টা মেয়ে রাখে। সমস্যা হলো কোন মেয়ে বেশীদিন থাকেনা। এবং যাওয়ার পর নানারকম বদনাম করে। এক এক সময় সব ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে।
পরামর্শ: প্রথম কথা হলো পরীক্ষিত ও ভালো মেয়ে দেখে নিন। দ্বিতীয়ত মেয়েদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। খুব ব্যক্তিগত বিষয়ে শেয়ার করবেন না। নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে থেকে দূরে রাখুন। মেয়েরা ভালো বন্ধু এবং ভালো শত্রু দুটোই হয়। আপনি কোনটা বানাবেন সেটা আপনার পরিচালনার উপর নির্ভর করবে। আর বেতনের বা কাজের বাইরে ইনস্পিরেশান বা বাড়তি কাজের একটা অফার রাখুন। এই টাকাটা নগদ দেবেন না। ঈদে দেয়ার কথা বলুন। চলে গেলেও সেটা একটা সিেেস্টমের মধ্যে নিয়ে আসেন। যেমন এমন হতে পারে কেই ৩ মাস পর চলে গেলে বাড়তি ভাতার ৫০% পাবেনা। অথবা ঈদছাড়া পাবেনা। আর চাকুরী েেছড়ে যাওয়ার সময় আপনার আর কাজে লাগবেনা এই ভেবে তার সাথে সম্পর্ক নস্ট করবেন না। আর এর পরেও খোজখবর রাখুন।
সমস্যা ৮: তানজিনা
তানজিনা ব্যবসাটা শুরু করার সময় বাসার কাউকে বলেনি। সহপাঠি এক ছেলে বন্ধু সব কাজে সাহায্য করেছে। এখন বেচাকেনা যাই হোক তার সাইটটা একটা পর্যায়ে এসেছে। এখন রাফির সাথে তার সম্পর্ক খারাপ। সে ভয়ে আছে রাফি সব ড্রিল করেছে। এমনকি পার্সওয়াডও সে জানে। যেকোনো মুহুর্তে একটা সমস্যা তৈরী হতে পারে। রাফির গার্লফ্রেন্ড মুহুয়া। মুহয়ার সাথে তানজিনার সম্পর্ক ভালো না। এর আগে রাফি ফেউসবুক পেউজের পার্সওয়াডটা মুহয়াকে বলে দিয়েছিলো। তার মাসখানেক পরে তানজিনার ফেইসবুক পেইজটা হ্যাক হয়। তানজিনার ধারণা এটা মুহুয়া করেছে।
পরামর্শ: এসব সমস্যার জন্য আগেই সতর্ক থাকা উচিৎ। তারপরও কারো সাহায্য নিলে পার্সওয়ার্ড চেঞ্জ করে নিতে পারেন। আর ব্যক্তিগত সমস্যার সাথে ব্যবসা মেলাবেন না। আর কারো প্রতি বিরুপ হলে আপনি আপনার মনোভাব তাকে বুঝতে না দিয়ে নিজে আগে উদ্ধার হয়ে নেবেন। আর একটা কথা মনে রাখবেন ভাই ভাই আর বোনে বোনে শত্রুতা হয়। সূতরাং বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে ও বিষয়টি মাথায় রাখুন। সম্পর্কভালো থাকা অবস্থায় সতর্ক হোন। প্রয়োজনে পরিবারের কথা বলে জিনিসগুলো নিয়ে নিন। বা চেঞ্জ করে ফেলুন।
লিজা তার পন্য সংগ্রহের জন্য ২/৩ জন লোককে কিছু টাকা দিয়েছিলো কারণ পন্যগুলো সর্বত্র পাওয়া যায়না। ওর পক্ষে এতদূর থেকে আনা সমভব নয়। এবং যেহেতু লোকগুলো আগে কিছু পন্য দিয়েছিল এখন তাদের কাছে টাকা কম আছে বলায় সে টাকা দিতে রাজি হয়েছিলো। ফোন নাম্বার ছাড়া অন্যকিছু সে জানেনা। এখন লোকগুলোর কাছে পন্য বা টাকা চাইলে আজে বাজে কথা বলে। একজনকে ওকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিল। টাকাও কম না সব মিলিয়ে প্রায় হাজার বিশেক হবে। এখন মনে হচ্ছে লোকগুলো ভালো না।
পরামর্শ: এগুলো আমাদের কমন সমস্যা। কিন্তু সমস্যাগুলো কখনো জটিল হয়ে যায় যখন ঐ সমস্ত লোকেরা মনে করে সে মেয়ে মানুষ সে আবার কি করবে? এ ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে অল্প পরিচয়ে কাজ করা ঠিক নয়। যদি করতে হয় নাম ঠিকানা সমভব হয়ে এনআইডি নিয়ে নিতে পারেন। আর একজন তৃতীয় ব্যক্তি বিশেষ করে পরিচিত কোন পুরুষ আত্মীয়কে মাঝখানে বা সামনে রেখে লেনদেন করুন। আর সমস্যা আছে মনে হলে একটু সমঝে সমঝে আস্তে আস্তে ভালো ভালো কথা বলে আদায় করার চেস্টা করতে পারেন। নেহায়েত কোন আশা না থাকলে থানায় একটা জিডি এন্ট্রি করে রাখুন। আর সে রিলেটেড ব্যবসায়ী যদি লোকটি হয় তাহলে রিলেটেড লোকজনের কাছ থেকে তার ব্যাপারে খোজ খবর নিতে পারেন। নিয়ে বলতে পারেনযে আপনার সব তথ্য আমার কাছে আছে আপনি আমার সাথে চালাকি করতে পারবেন না।
আমি মেয়েও নই। ই কমার্স উদ্যোক্তাও নই। তবুও সমাজ সচেতন হিসেবে। বা কনাসল্টেন্সি ও কাউন্সেলিং করি বলি কিছু বিষয় জানি। সে অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা। কেউ একম হন আর দ্বিমত হন জানাতে পারেন। বিশেষ করে মেয়ে পাঠকরা।
7,496 total views, 2 views today