ই-কমার্স ব্যাবসা নিশ্বন্দেহে একটি সময়োপযোগী কিন্তু আমাদের দেশে এই মুহুর্তে কিছুটা ঝুকিপূর্ন ব্যাবসা বলে আমি মনে করি। আবার একই সাথে এ খাতের সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত নিয়ে আমি প্রচন্ড রকম ভাবে আশাবাদী। এখন প্রশ্ন হচ্ছে “কেন ইকমার্স ব্যাবসাকে আমি ঝুকিপূর্ন বলছি?”

আসলে এই ঝুকিপূর্ন কথাটা আসার পিছনে মুলত আমরা ছোট খাট উদ্যোক্তারাই দায়ী। এবং এই আমরাই এর ই-কমার্স ভবিষ্যতকে নষ্ট করে ফেলছি।  আগেই বলে রাখা ভাল ই-কমার্স বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে একটু সময়সাপেক্ষ উদ্যোগ। লাভ (Profit) এখানে অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তরে লুকিয়ে থাকে। বাক্য একটু কঠিন লাগতে পারে, ব্যাখ্যা দিচ্ছি,

ই-কমার্স ব্যাবসায় সব সময় অনেক মুলধন নিয়ে নামলেই যে খুব ব্যাবসা সফল হবে তা না আবার কিছু পুঁজি ছাড়াই নেমে পড়বেন সেটাও হবে না। এখানে আসলে মুলধনের থেকে সব থেকে বেশি জরুরী হচ্ছে আপনার ই-কমার্স সঙ্ক্রান্ত জ্ঞান। আর পাশাপাশি কিছুটা ইন্টারনেট, স্যোশাল মার্কেটিং, হালকা প্রোগ্রামিং জানা থাকা এবং সর্বপরি ধৈর্য্য এবং তাৎক্ষনিক লাভের প্রত্যাশা না থাকা খুব জরুরী।

সবার আগে আপনাকে কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে হবে, প্রয়োজনে একটু আধটু সার্ভে করে নেয়া যেতে পারে।

১. আপনি আসলে অনলাইনে কি বিক্রি করবেন?

     সার্ভিস/প্রোডাক্ট? প্রোডাক্ট হলে সেটা কি ধরনের ভার্চুয়াল নাকি বাস্তবিক পন্য।

২. আপনার সম্ভব্য গ্রাহক কারা?

     আপনার পন্যের গ্রাহক কারা। আপনার পন্য কোন ধরনের বয়সের মানুষের জন্য, মানে আপনার টার্গেটেড Age Group কি, আপনার টার্গেটেড Gender কি। কোন পেশার মানুষ আপনার ক্রেতা হবার সম্ভাবনা বেশি? এই সকল প্রশ্নের একটা ডাটা শীট থাকা জরুরী।

৩. আপনার সার্ভিসের কি কোন সীমাবদ্ধতা আছে?

     নিজের সীমাবদ্ধতা জেনে রাখা ভাল এবং সেটা মাথায় রেখে কাজ করা উচিত।

৪. আপনার ডেলিভারি কভারেজ কেমন? আপনি আপনার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কত দূরঅব্দি পন্য পৌছে দিতে সক্ষম?

     এই বিষয়টা খুব জরুরী। দরকার হলে ছোট এলাকা নিয়ে কাজ করুন। নিজের ব্যাপ্তির বাইরে ওর্ডার নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ইমেজ নষ্ট না করাটাই উত্তম। আজকাল অনেক অনলাইন কুরিয়ার সার্ভিস আছে যারা ইকমার্স সাইটগুলোর পন্য ডেলিভার করে থাকে আপনি চাইলে তাদের সাথেও চুক্তি করে নিতে পারেন।

৫. আপনি কি পদ্ধতিতে গ্রাহকদের থেকে পেমেন্ট নিবেন?

     এ বিষয়টা শুরুতে অনেক জটিল ছিল কিন্তু এখন অনেকটাই সহজ। অনেক পেমেন্ট গেটওয়ে আছে যাদের মাধ্যমে আপনি পেমেন্ট নিতে পারেন, অথবা আপনি ক্যাশ অন ডেলিভারিও নিতে পারে। কিংবা দুটোই রাখতে পারেন। তবে ক্যাশ অন ডেলিভারির ক্ষেত্রে অনেকটা ঝুকি নিয়ে কাজ করতে হয়। তবে প্রতিবার অর্ডারের সাথে সাথেই গ্রাহককে কল করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন এবং তার প্রদেয় তথ্য আর একবার নিশ্চিত করে নিন।

৬. আপনি কি পন্য স্টোর করে সেটা সেল করবেন? নাকি বিভিন্ন স্টোর থেকে কালেক্ট করে সার্ভ করবেন?

     এটা খুব গুরুত্বপুর্ন একটা সিদ্ধান্ত। শুরুতে মালামাল কিনে স্টোর করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনাকে হয়তবা ঝুকিতে পরতে হবে। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে গ্রাহকদের স্বাদ এবং জীবনবোধ অনেক সময় খুব দ্রুতই পরিবর্তন হয়। গতকালের কেনা পন্য হালের জমানায় আগামিকল্যই Old Fashion হয়ে যেতে পারে। যা কিনা আপনাকে লস গুনতে বাধ্য করবে। আবার বিভিন্ন স্টোর থেকে পন্য সংগ্রহ করে সেটা বিপনন করাটাও একটু দক্ষতার ব্যাপার। সেক্ষেত্রে আপনার কাংখিত স্টোরে সেই পন্যটির স্টক আছে কিনা?, মূল্য পরিবর্তন হল কিনা?, স্টোরটি কি বন্ধ আছে কিনা? এবং সর্বোপরি স্টোর মালিকের সাথে আপনার চুক্তিনামা অবশ্যই জরুরি। চুক্তি মৌখিক হতে পারে আবার লিখিত হতে পারে। লিখিত চুক্তি সব সময়ই ব্যাবসার জন্য সুফল বয়ে আনে। আগে থেকেই স্টোর মালিকের সাথে সব আলোচনা সেরে নিন, যেমন সে আপনাকে পন্য মূল্যের শতকরা কত শতাংশ লাভ দিবে? পন্যের জন্য বিক্রয় পরবর্তী সেবা কিভাবে নিশ্চিত করবে (যদি থাকে) ইত্যাদি। এবং প্যাকেজিং এর ব্রান্ডিং কি হবে বা কেমন হবে।

৬. আপনার মার্কেটিং বা ব্যাবসা প্রোমোট করার পদ্ধতি কি?

     এটা অনেকটাই Depend করে আপনার উপরের ১,২,৩,৪ নাম্বার প্রশ্নের উত্তরের উপর। আপনার সার্ভিস আরিয়া বুঝে মার্কেটিং করুন আবার পাশাপাশি Potential Clients (Future Customers) ও মাথায় রাখতে হবে। আপনি স্যোশাল মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন এবং শেয়ার করতে পারেন, কিছু লিফলেট (প্রোমোশনাল অফার)বিলি করতে পারেন, পত্রিকার ভাজে কিছু লিফলেট দেয়া যেতে পারে, চাইলে লোকাল ডিস লাইনের অফিসে গিয়ে ভিডিও চ্যানেলে টেক্সট এড বা এড দিতে পারে। এই পুরো পলিসিটাই আপনাকে নিতে হবে আপনার সার্ভিসের এরিয়া, সার্ভিস দেয়ার ক্ষমতা এবং গ্রাহকদের উপর সার্ভের উপর ভিত্তি করে। SEO মার্কেটিং এর একটা বড় বিষয় ই-কমার্স সেক্টরে, আপনার সাইটকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজড করুন। এটা যে কোন মার্কেটিং পদ্ধতির চাইতে সেরা।

৭. আপনার রেভিনিউ পলিসি কেমন?

     শুরুতে লাভের চাইতে সার্ভিস দিয়ে গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন করার উপর জোড় দেয়া উচিত। মনে রাখবেন, আপনার গ্রাহক সন্তুষ্টি আপনার ব্যাবসার সব থেকে বড় মুলধন। কাজেই প্রতিটি পন্যে লাভের হার ঠিক সেভাবেই ধরা উচিত যাতে গ্রাহক সেটাকে দুষ্প্রাপ্য বা অতিরিক্ত লাভের চেষ্টা বলে মনে না করেন।

৮. আপনার টেকনিক্যাল ব্যাকাপ কেমন?

     এই প্রশ্নটিতে টেকনিক্যাল ব্যাকাপ বলতে অনেক কিছুকে বোঝানো হচ্ছে। আপনার সাইটে অনেক সময় নানা রকম Technical Error, Frauding, Hacking এর মত কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা দেখা যেতে পারে। সেটাকে সামলানোর মত দক্ষতা অথবা জনশক্তি কি আপনার আছে? মনে রাখবেন ভাল ই-কমার্স সাইট কখনোই Offline থাকা উচিত না। এতে আপনার ভিজিটর কমে যেতে পারে। এ সমস্ত ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক সমাধান দেয়ার ব্যাবস্থা থাকতে হবে।

৯. আপনি কি ধরনের গ্রাহক সেবা চালু করবেন?

     আধুনিক ব্যাবসায় গ্রাহক সেবা ব্যাবসার এক ধরনের মূলধন। যেই কোম্পানীর গ্রাহক সেবা যত ভাল তার সেল তত বেশি। কারন মানুষ আজকাল বিক্রয়োত্তর সেবা নিয়ে সব থেকে বেশী চিন্তিত। আপনি চাইলে অনলাইন, অফলাইন দুটোই রাখতে পারেন। গ্রাহক সেবা দেয়ার জন্য অবশ্যই আলাদা একটি নাম্বার নিশ্চিত করুন, এবং সেটাকে চেষ্টা করবেন মোটামুটি ২৪ ঘন্টা রেসপনসিভ রাখতে। এতে করে গ্রাহকদের ভরসা, বিশ্বাস এবং আস্থা বেড়ে যায় যা আপনার পন্য বিক্রির ক্ষেত্রে সহায়ক।

১০. পুরানো ক্রেতাদের ফিরিয়ে আনতে আপনি কি পদ্ধতি অবলম্বন করছেন?

     একজন ক্রেতা মানেই সে একবার ক্রেতা নয়। একজন ক্রেতাকে পুনঃ পুনঃ ক্রতে হিসেবে পেতে চাইলে আপনাকে অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। যেমন, গ্রাহকের জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানানো, বিশেষ বিশেষ দিনে তার ইমেইলে বা মোবাইলে কিছু ডিস্কাউন্ট বা কুপন অফার দেয়া। গ্রাহকের ঠিকানায় ভিভিন্ন রকম সন্মানী কার্ড (গোল্ড কার্ড, প্লাটিনাম কার্ড। এগুলো মুলত ডিস্কাউন্ট কার্ড। সেটা ভার্চুয়ালও হতে পারে আবার প্লাস্টিক কার্ডও হতে পারে) পাঠানো। এছাড়াও আপনি আপনার নিজস্ব চিন্তায় আরো কোন পদ্ধতি আবিস্কার করে নিতে পারেন।

লেখকঃ সরদার নাহিদ নিয়াজ

     উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী

     www.furnitouch.com

     FB: www.facebook.com/furnitouch.com.bd

     Google Page: https://plus.google.com/116123620428620621008/

(ফার্নিটাচ ডট কম এ ঘুরে আসার জন্য অনুরোধ রইল। Furnitouch.com দেশের একমাত্র অনলাইন ফার্নিচার ও হোম ডেকর শপ। আমরা দিচ্ছি ক্যাশ অন ডেলিভারি ও অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা। আছে ৩ দিনের মানি ব্যাক গ্যারান্টি, প্রথম বারের মত যে কোন পন্যের উপর এক বছরে সার্ভিস ওয়ারেন্টী। এছাড়াও ফার্নিচার ও হোম ডেকর সঙ্ক্রান্ত যে কোন অথ্যের জন্য আমাদের ব্লগ ভিজিট করতে পারেন। )

6,873 total views, 3 views today

Comments

comments

Your email address will not be published.