বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন কমার্স নিয়ে হৈচৈ হচ্ছে বাংলাদেশেও এখন কমার্সের জোয়ার শুরু হয়েছে ফেইসবুক, ইন্টারনেট সহ সব জায়গায় এখন কমার্সের উপরে লেখা, সেমিনার, ইভেন্টের খবর আসে অনেক তরুণতরুণী কমার্স প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন এবং অনেকে করার পরিকল্পনা করছেন ক্যাব চালু হবার পরে কমার্সের উদ্যম বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে এখন সবাই স্বপ্ন দেখে জ্যাক মা নয়তো অ্যামজন এর জেফ বেজোস হবার ভারতের ফ্লিপকার্ট, স্ন্যাপডিলের কথা এখন উঠে আসে তারা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে থেকে ব্যাপক ফাণ্ড পাচ্ছে সবাই সফল হতে চায় কিন্তু কথা হলো সফলতা কয়জন পায় এবং পাবার পরেও কয়জন ধরে রাখতে পারে? আমার আজকের ক্যাব পোস্ট কমার্সের ব্যর্থ উদ্যোক্তা নিয়ে

নীচের লেখাটি গত বছরের জুলাই মাসে ভারতের জনপ্রিয় পত্রিকা লাইভ মিন্ট প্রকাশিত হয় আমি পুরো লেখাটির সরাসরি অনুবাদ করেছি——

বেশ কিছু সময় ধরে তিনি বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন।

একজন মানুষ আর কতটা চাপ সহ্য করতে পারে।

তিন মাসের অফিসভাড়া প্রায় ছয় লক্ষ রুপি বাকি ছিল। বাড়ীওয়ালা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। দশমাসের লিজের টাকা বাকী পড়ে গিয়েছিল। ৫০ জন পণ্য সাপ্লায়ারের টাকা বাকী ছিল প্রায় ৬০ লাখ রুপির মতো। তারাও অপেক্ষা করে করে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিল। প্রায়ই তাদের ফোন কল আসত যা ছিল বিরক্তিকর। আস্তে আস্তে তাদের কথার ধরণও পাল্টে গিয়েছিল। একই সাথে ক্রেতারাও হয়ে উঠেছিলেন অসন্তুষ্ট। ই-কমার্স পোর্টালটির সেবার মান নিয়ে বিভিন্ন রিভিউ ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়াতে অভিযোগ জমে উঠছিল। অনলাইনে অর্ডার দিয়ে টাকা দেবার পরেও পণ্য হাতে পান নি তারা।

Kothandaraman Vaitheeswaran

এদিকে পাওনা টাকা শোধ না করা পর্যন্ত সাপ্লায়াররাও মাল সাপ্লাই দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু কাস্টমার তো আর সে কথা বোঝেনা। তারা খালি বোঝে যে তাদের হাতে পণ্য পৌছায়নি। অফিসের ল্যান্ডলাইন ফোন যেটি কিনা কাস্টমার সাপোর্টের জন্য ব্যবহৃত হত প্রায়ই ফোন আসতে কাস্টমারদের। তারা তাদের টাকা ফেরত চাইছিলেন। কিন্তু কেউ জবাব দিচ্ছিল না।

বিগত দেড় বছরে ইন্ডিয়াপ্লাজা ডট কম এর ৯৫% কর্মকর্তা চাকুরি ছেড়ে দিয়েছেন। একে একে সবাই যার যার মতো চাকুরি নিয়ে সরে পড়েছে।  ঠিক একটি ডুবন্ত জাহাজের নাবিক এবং যাত্রীরা একে একে সরে পড়ে সেভাবে ইন্ডিয়াপ্লাজার কর্মীরাও একে একে সরে পড়েছে। তাদের কয়েকমাসের বেতন পাওনা হয়ে গিয়েছিল। কেউ কোন বেতন পাচ্ছিল না।

কিন্তু ইন্ডিয়াপ্লাজার প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও কোথান্ডারামান ভাথিশ্বরণ (Kothandaraman Vaitheeswaran) এর কোথাও গিয়ে লুকানোর উপায় ছিল না। সব কিছু হারিয়ে তিনি তখন সর্বস্বান্ত। সম্বল বলতে ছিল তার যৎসামান্য সম্মানটুকু।

তার এ বাস্তবতা নিয়ে তিনি বেশ সময় ধরে ভেবেছেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে যে সমস্যায় তিনি পড়েছেন সেখান থেকে সহজে বেরিয়ে আসতে পারবেন না। বেঙ্গালুরুর ক্যাম্ব্রিজ রোডে অবস্থিত ইন্ডিয়াপ্লাজার অফিস বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্ত নিলেন।

২০১৩ এর ১২ আগস্ট দিনটি ছিল সোমবার। ঐ দিনেই অফিস খালি করবেন সিদ্ধান্ত নেন ভাথিশ্বরণ। সকাল সাড়ে আটটায় নিজের ল্যাপটপ ব্যাগটি নিয়ে ভাথিশ্বরণ নিজের অফিসে আসলেন। তবে সেদিন তার সাথে তার সবুজ রঙের দাগ পড়া পাটের তৈরি লাঞ্চ ব্যাগটি ছিল না যাতে করে প্রতিদিন তিনি বাসা থেকে তার স্ত্রীর হাতে বানান খাবার নিয়ে আসতেন। ভাথিশ্বরণ সেদিন বেশিক্ষণ অফিসে থাকবেন না সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল যেমন করে হোক পুরো ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলা এবং বাসায় ফিরে যাওয়া।

কিন্তু পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে লাগল।

৯ টার দিকে ইন্ডিয়াপ্লাজার অবশিষ্ট ছয়জন কর্মচারী অফিসে এল তাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে। এরপরে বাড়ীওয়ালা এলেন। অফিসের জিনিসপত্র যাতে কেউ সরাতে না পারে সে জন্যে তিনি তার সাথে বেশ কয়েকজন লোক এনেছিলেন। কোনায় দুটো ল্যাপটপ পড়ে থাকতে দেখে তিনি বললেন “আমি এগুলো নিয়ে নিচ্ছি।” ভাথিশ্বরণ কিছুই বললেন না। বাড়িওয়ালা তার কাছে ভাড়া পেত।

ইন্ডিয়াপ্লাজার কর্মচারীরা বই, কম্পিউটার, ফোন, প্রিন্টার, স্পীকার যা ছিল তা প্যাকেটে ভরছিল এক এক করে এবং ভাথিশ্বরন চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। সাড়ে দশটায় প্রথম ফোনকল এল। একজন সাপ্লায়ার কল দিয়েছিল।  ইন্ডিয়াপ্লাজার অফিস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এ খবরটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং ঐ সাপ্লায়ার তার পাওনা টাকা বুঝে নিতে চাচ্ছিলেন। তিনি ফোন করে বললেন যে তিনি আরো কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আসছেন। সাড়ে এগারোটা নাগাদ ইন্ডিয়াপ্লাজার অফিসে পাওনাদারদের ভিড় জমে গেল। তারা ভিতরে ভিতরে রেগে আছে এবং একই সাথে বিরক্ত এবং উদ্বিগ্ন। তারা তাদের পাওনা বুঝে নিতে চায়।

ভাথিশ্বরণ তাদের মিনতি করলেন। তিনি বললেন, “আমার কাছে এখন কোন টাকা নেই।” “কিন্তু আমি কোথাও যাচ্ছি না এবং আপনারা ফোনে এখনো আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। আমরা অফিস বন্ধ করে দিচ্ছি কারণ আমাদের অফিস ভাড়া মেটানোর সামর্থ্য নেই। যদি থাকত তাহলে অবশ্যই আমরা ভাড়া মিটিয়ে দিতাম।”

এক দুঃস্বপ্ন

পুরো ঘটনাটি সত্যিই দুঃখজনক কিন্তু পুরোটা সময় ভাথিশ্বরণ নিশ্চুপ ছিলেন। একটি শব্দও তিনি উচ্চারণ করেন নি।

দুপুর ১টা নাগাদ সব হৈচৈ বন্ধ হয়ে গেল। অফিস তখন প্রায় খালি। কিছুই পড়ে নেই যেটা বাসায় নিয়ে যাওয়া যায়। একমাত্র বাড়িওয়ালাই রুমে ছিলেন। এবার ভাথিশ্বরণের চলে যাবার পালা।

এভাবেই ভাথিশ্বরণের ইন্ডিয়াপ্লাজার সমাপ্তি ঘটে। ভারতের একেবারে প্রথমদিককার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ছিল এই ইন্ডিয়াপ্লাজা। ১৯৯৯ সালে ফ্যাবমল ডট কম (Fabmall.com) নামে এটি চালু হয়। ভাথিশ্বরণ আর তার পাঁচজন বন্ধু মিলে একদম শূন্য থেকে প্রতিষ্ঠানটি চালু করে। তখন ই-কমার্স কম্পানি সম্পর্কে কারোরই কোন ধারণা ছিল না। ডট কম বুম, ৯/১১, ২০০৮ এর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়েছিল ইন্ডিয়াপ্লাজা। তার জীবনের সেরা সময়টুকু ভাথিশ্বরণ ইন্ডিয়াপ্লাজাকে গড়ে তোলার পিছনে ব্যয় করেছিলেন।

কিন্তু সেদিন বাড়ি ফিরে ভাথিশ্বরণ বুঝতে পারছিলেন না যে কি থেকে কি হয়ে গেল। পুরো ব্যাপারটা যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো। এ ব্যর্থতা মেনে নেয়া যায় না কোন ভাবে। তার ১৪ বছরের শ্রমের ফসল এভাবে শেষ হয়ে যাবে এটা তিনি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। ভারি অন্যায় হয়েছে তার সাথে। এটা তো তার গন্তব্য হওয়া উচিত ছিল না। ১৪ বছর ধরে ধৈর্য ধরে লেগে থাকার পরে ভারতে এখন ই-কমার্সের বাড়-বাড়ন্ত এবং আরো বাড়তে থাকবে আর এই সময়ে তার প্রতিষ্ঠানের কিনা এই অবস্থা।

এই যে এতদিন ধরে লেগে থাকা একেই দূরদর্শিতা বলা হয়। আর এভাবে একদম শূন্য থেকে যারা শুরু করে তাদের বলা হয় অগ্রদূত বা পাইওনিয়ার। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা তো এভাবে শেষ হতে পারে না। রাগ, হতাশা, অসহায়ত্ব, আর তিক্ত চিন্তায় ভরে উঠেছিল ভাথিশ্বরণের মনের ভিতরটা। যার সবকিছু হারিয়েছে কেবল সেই বুঝতে পারবে ভাথিশ্বরনের এ যন্ত্রণা।

কিন্তু এটাই সত্যি। এটাই ভারতীয় ই-কমার্সের একজন অগ্রদূত কে. ভাথিশ্বরণের জীবনের কাহিনী। ফ্লিপকার্ট, স্ন্যাপডিলের তুলনায় তিনি অনেক আগে ই-কমার্সে এসেছিলেন কিন্তু প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়েছেন।

একজন একগুঁয়ে জেদি স্বভাবের উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। কিভাবে তার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তিনি চালাবেন তা সম্পর্কে তার নিজস্ব চিন্তা ছিল কিন্তু তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফাণ্ডের উপরে নির্ভরশীলতা। ভাথিশ্বরণের এ কাহিনী ভারতের ই-কমার্সের বর্তমান ব্যবস্থার দিকে এক বিশাল প্রশ্নচিহ্ন উত্থাপন করেছে। এই যে এত অল্পসময়ের মধ্যে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর যে ব্যাপক উত্থান ঘটেছে তার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফাণ্ড। কিন্তু এটাকে কি ইতিবাচক বলা যায়? ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের বাজার তৈরি করতে ক্যাশ-অন-ডেলিভারি দিচ্ছে, তারা নিজেদের ক্ষতি সহ্য করে বাজার বৃদ্ধি করছে- সোজা ইংরেজিতে যাকে বলে ক্যাশ-বার্ণ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো তাই করছে। আর তাদের এ টাকা যোগাচ্ছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফাণ্ড।

কিন্তু এ কাহিনী হলো এক তিক্ত ব্যর্থতার কাহিনী এবং এর শুরুটা তখনি হয়েছিল যখন সবকিছুই ভালভাবেই চলছিল।

পাঁচ মিলিয়ন ডলারের খোঁজে

তখনো সবকিছু ভালই চলছিল ইন্ডিয়াপ্লাজার। ফ্লিপকার্ট বা স্ন্যাপডিলের তুলনায় ইন্ডিয়াপ্লাজা ডট কম এর ব্যবসা ছোট হলেও ভাথিশ্বরণ তার নিজ ভুবনে ভালই ছিলেন। ত্রিশজন কর্মচারী তার প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করত। মার্চ ২০১১তে রেজিস্ট্রার অব কম্পানিজ এ ইন্ডিয়াপ্লাজার নথি অনুসারে প্রতিষ্ঠানটির গ্রস মার্চেন্ডাইজ ভ্যালু ছিল ১৪ কোটি রুপি। একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ পণ্য বিক্রী হয় তাকে গ্রস মার্চেন্ডাইজ ভ্যালু  (জিএমভি) বলা হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল ৩.৮ কোটি রুপি এবং লস ছিল ১১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৯৫ রুপি।

বই, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, কনজিউমার ডিউরেবল (ফ্রিজ, টিভি, গাড়ি ইত্যাদি) সহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য সামগ্রী ইন্ডিয়াপ্লাজাতে বিক্রী হচ্ছিল কিন্তু ভাথিশ্বরণ চাচ্ছিলেন আরো দ্রুত ব্যবসা বাড়াতে এবং তার জন্যেই তিনি বিনিয়োগ খোঁজা শুরু করলেন।

ঐ বছরেরে এপ্রিল মাসে কালারি ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্স প্রাইভেট লিমিটেড ইন্ডিয়াপ্লাজাতে ৫ মিলিয়ন ডলার (২৫ কোটি রুপি) বিনিয়োগ করে। এই বিনিয়োগের বিনিময়ে কালারি ইন্ডিয়াপ্লাজার বোর্ডে দুটি আসন লাভ করে।

বিনিয়োগ পাবার পরে ভাথিশ্বরন সাথে সাথে কাজ শুরু করে দিলেন। তিনি আরো কর্মী নিযুক্ত করলেন, ওয়েবসাইটকে আপগ্রেড করলেন, মার্কেটিং এ টাকা ঢাললেন, এবং থিঙ্কডিজিট (ThinkDigit)নামে একটি মাইক্রো-সাইট চালু করলেন। এ মাইক্রো-সাইটে প্রযুক্তি পণ্য বিক্রী হতো। এরপরে নানা দিক চিন্তা করে তিনি ক্যাশ-অন-ডেলিভারি সার্ভিসও চালু করলেন।

ভাথিশ্বরণের কাজের ফল আসা শুরু হয়ে গিয়েছিল ব্যবসা বাড়ছিল। এক বছরের মধ্যেই ইন্ডিয়াপ্লাজার কর্মচারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩০-এ এবং ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ঘটল ১৭৪%। মার্চ ২০১২ সাল নাগাদ ইন্ডিয়াপ্লাজার জিএমভি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮.৪ কোটি রুপিতে।

কিন্তু প্রদীপের আলোর নীচেই অন্ধকার থাকে। তেমনি ইন্ডিয়াপ্লাজার নথিপত্র ভালভাবে দেখার পরে যে ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা অত রমরমা ছিল না। কারণ জিএমভি বাড়ানোর জন্যে ভাথিশ্বরণ ব্যবসায় লস দিচ্ছিলেন এবং কিছু ক্ষেত্রে খরচ বাঁচাচ্ছিলেন। ২০১২ সালের ৩১ মার্চ থেকে ইন্ডিয়াপ্লাজার আয় কমতে শুরু করে। আয় ২৫% কমে ২.৯ কোটি রুপিতে পৌছায়। ইন্ডিয়াপ্লাজার লস হয়েছিল প্রচুর। একগুণ, দ্বিগুণ লস নয় রিতীমতো ১০ গুণ লস দিয়েছিলেন ভাথিশ্বরণ জিএমভি বাড়ানোর জন্যে। লস এর পরিমাণ ছিল ৯.২৫ কোটি রুপি (মার্চ ২০১১তে লস ছিল ১১ লক্ষ রুপি)। এতদিন ধরে যে প্রতিষ্ঠানটি ভালই চলছিল সেটির অবস্থা এক বছরের মধ্যেই খারাপ হয়ে গিয়েছে।

লস কাটাতে আরো টাকার দরকার এবং ২০১২ সালের জুলাইতে ভাথিশ্বরণ আবার নতুন করে বিনিয়োগকারীর খোঁজ শুরু করে দিলেন।

কিন্তু ব্যাপারটি অত সহজ ছিল না। কারণ যে প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ১৪ বছরে ৪০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করা হয়েছিল তার জন্যে নতুন করে বিনিয়োগ নিয়ে আসা খুবই কঠিন একটি কাজ। এর আগে বিনিয়োগের প্রাথমিক রাউন্ডগুলোতে বিনিয়োগকারীদের প্রথম প্রশ্ন ছিল- এবারের বিনিয়োগ করার ব্যাপারটা আমরা কি বিবেচনা করে দেখতে পারি? কিন্তু এখন তাদের চিন্তা অন্যরকম। তাদের কথা হলো আমাদের বিনিয়োগ ফেরত চাই এবং তা এখনি।

এমন নয় যে ভাথিশ্বরণ বিশাল অংকের টাকা চেয়েছিলেন। তার দাবি ছিল ২৬ কোটি রুপি।

এরপরের তিনমাস ভাথিশ্বরণ সারা ভারতে বিনিয়োগকারীর দরজায় কড়া নাড়লেন। মুম্বাই থেকে দিল্লী, চেন্নাই থেকে হায়দ্রাবাদ সব জায়গায় তিনি ইন্ডিয়াপ্লাজার কথা বললেন।

তার বিজনেস পিচটি ছিল খুবই সোজা-সাপ্টা- ইন্ডিয়াপ্লাজা একটি প্রতিষ্ঠিত ব্রান্ড। ইন্ডিয়াপ্লাজা ভারতের একটি মার্কেটপ্লেইস এবং এর চেয়ে ভাল কোন কিছু আপনারা পাবেন না। হ্যা, ব্যবসায় যদিও লস হচ্ছে কিন্তু আপনাদের এ বিনিয়োগ বিক্রী বাড়াতে এবং লস কাটিয়ে ওঠানোর কাজে ব্যবহার করা হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৪ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি লাভবান হয়ে উঠবে।

কিন্তু কেউই এখন ভাথিশ্বরণের কথায় রাজি হয় না।

উন্নতির থেকে অবনতির পথেঃ

২০১২ সালের অক্টোবর মাস নাগাদ সমস্ত ব্যাপারটি আরো জটিল আকার ধারণ করেছিল। ইন্ডিয়াপ্লাজার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ফুরিয়ে আসছিল। এক পর্যায়ে ভাথিশ্বরণ নিজের বেতন নেয়াও বন্ধ করে দেন। এর ফলে তার মাসে আড়াই লক্ষ রুপি বেঁচে যেত। কিন্তু কর্মীদের তো বেতন মেটাতে হবে। এদিকে পণ্য সাপ্লায়ারদেরও টাকা দিয়ে দিতে হবে। আস্তে আস্তে এখানেও সমস্যা দেখা দিল।

এসব ব্যাপারগুলো যখন ঘটছিল ভাথিশ্বরণ তখনো অফিসের বাইরে বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছিলেন এবং একের পর এক বিনিয়োগকারীদের কাছে টাকার আশায় ধরণা দিচ্ছিলেন। তিনি নিজ খরচে ভ্রমণ করে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছিলেন। সব মিলিয়ে ভাথিশ্বরণ ৩০ জন লোকের সাথে দেখা করেন। সবাই তার কথা শুনেছে ধৈর্য ধরে, তার প্রেজেন্টেশন দেখেছে কিন্তু টাকা দেয় নি।

২০১২ সালের নভেম্বর নাগাদ একজন বিনিয়োগকারী আসেন এবং একটি টার্মশীটে স্বাক্ষর করেন। ভাথিশ্বরণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। তিনি ভেবেছিলেন যে তার কষ্ট বৃথা যায় নি।

এরপরে তিনি সেই বিনিয়োগকারীর টাকার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলেন। প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহ, প্রতিটি ক্ষণ তিনি এই আশা নিয়ে বসেছিলেন আগামীকাল হয়তো বিনিয়োগকারীর টাকাটা হাতে পাবেন। কিন্তু সেই সুদিনের মুখ তার আর দেখা হয় নি।

ইন্ডিয়াপ্লাজার অবস্থা দেখে ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর কালারি ক্যাপিটালের দুজন পরিচালক বোর্ড থেকে ইস্তফা দিলেন।

২০১৩ সালে ইন্ডিয়াপ্লাজার অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে উঠল। একেকটা দিন আসে এবং আগের দিনের চেয়েও অবস্থা ঘোরতর হয়ে ওঠে। অনেক কর্মী চাকুরি ছেড়ে দিল, ঋণের বোঝা বাড়তে লাগল। সবদিক থেকে ভাথিশ্বরণ কোণঠাসা হয়ে পড়লেন। শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি টাকা যোগাড় করার চেষ্টা করে গিয়েছিলেন কিন্তু তার সব চেষ্টাই বৃথা। একটু একটু করে এগিয়ে এল ২০১৩ এর ১২ই আগস্ট যেদিন ইন্ডিয়াপ্লাজার অফিস বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ভাথিশ্বরণ তখনো হাল ছেড়ে দেন নি। তিনি ক্রেতা খোঁজার চেষ্টা করলেন। ইন্ডিয়া প্লাজার তথ্য, ব্রান্ড, সফটওয়্যার এমনকি কাস্টমার ডাটা কেউ যদি কিনে নেয়।

কিন্তু এখনো তিনি কোন ক্রেতা পেলেন না। তিক্ত, কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভাথিশ্বরণ ২০১৩ এর ৮ ডিসেম্বর আর পরমেশ্বরণ (R. Parameswaran) এর কাছে তার পদত্যাগ পত্র পেশ করেন। আর পরমেশ্বরণ ইন্ডিয়াপ্লাজার একজন বিনিয়োগকারী এবং কম্পানির বোর্ডের সবচেয়ে পুরানো পরিচালক। পরমেশ্বরণ তার ইমেইলটি গ্রহণ করলেন না। কিন্তু ভাথিশ্বরণ এ নিয়ে আর মাথা ঘামালেন না।

জোয়ারের স্রোতে ভেসে যাওয়া:

এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে। বেঙ্গালুরুর উলসুরে ভাথিশ্বরণের রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স এর জিমনেসিয়ামে ভাথিশ্বরণের সাথে আমার সাক্ষাৎ করার কথা ছিল। সাক্ষাৎকারের জন্যে এটা বলতে গেলে একেবারেই খাপছাড়া একটা জায়গা।

আমরা দুজনে মিলে তিনটে ধূসর রঙ এর প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে নিয়ে বসলাম। অতিরিক্ত চেয়ারটায় একটি চা-ভর্তি থার্মোস এবং কিছু কাগজের কাপ রাখা হলো। ভাথিশ্বরণের উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি বয়স ৫৩ বছর, চোখে চশমা এবং ক্লিন শেইভ করা । তার হাবভাব এখনকার উদ্যোক্তাদের সাথে মেলে না। একজন প্রাণোচ্ছল, নির্ঝঞ্ঝাট কিন্তু একই সাথে চিন্তাশীল মানুষ তিনি। তার পরনে ছিল একটি সাদা শার্ট, একটি ঘন নীল রঙের ট্রাউজার এবং একজোড়া চামড়ার স্যান্ডেল।

কিন্তু ইন্ডিয়াপ্লাজার কথা চলে আসতেই ভাথিশ্বরণের সহজ ভাবটা চলে গেল। ইন্ডিয়াপ্লাজার ব্যবসায়িক ক্ষতি এবং বন্ধ হয়ে যাবার ব্যাপারে তার কোন সমস্যা নেই। দিনের শেষে এটা ব্যবসা এবং ব্যবসায় লাভ-ক্ষতি আছেই। একজন উদ্যোক্তা ব্যবসা শুরু করেন কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তার ব্যবসা চলে না। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। ভাল দিন এবং খারাপ দিন দুটোই তিনি দেখেছেন। এসবই তিনি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু যে জিনিসটা তাকে পীড়া দেয় তা হচ্ছে সেইসব ব্যর্থ  ফান্ডিং রাউন্ড। সেই টার্মশীট যার টাকা তিনি কখনো হাতে পান নি। দীর্ঘ সময় ধরে ইন্ডিয়াপ্লাজা তিল তিল করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু কোন বিনিয়োগকারী ইন্ডিয়াপ্লাজার যথার্থ মূল্যায়ন করেন নি। এ প্রতিষ্ঠানের কোন সম্ভাবনাই তারা দেখতে পান নি।

“এ বিষয় গুলো নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না,” তিনি বললেন। “ কিন্তু আমি আপনাকে যেটা বলতে পারি তা হলো কোন বিনিয়োগকারী কখনোই আপনার মুখের উপরে বলবে না যে সে আপনার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবে না। কিন্তু তাদের সাথে বেশ কয়েকটা মিটিং করার পরে আপনার কাছে ব্যাপারটা জলের মতোই স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে তারা আপনার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়। দূর্ভাগ্যবশতঃ আপনি যদি জানেন যে আপনার ফান্ডিং রাউন্ড খুবই কঠিন হবে আপনি তখন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করেন যাতে সমস্যা গুলো আপনি এড়াতে পারেন। যদি তা না করেন তাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে এবং আস্তে আস্তে পুরো ব্যাপারটি আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। ধ্বংসটা তখন থেকে আরো ত্বরান্বিত হয়।”

“ মানুষ তার স্বপ্ন নিয়ে পথ চলে এবং সিদ্ধান্ত নেয়। আমিও স্বপ্ন দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সেই সিদ্ধান্ত আমাকে আজ এখানে নিয়ে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের জন্যে আমার প্রতিষ্ঠান একটা পোর্টফোলিও মাত্র। কিন্তু আমার জন্যে এ প্রতিষ্ঠান আমার স্বপ্ন, আমার জীবন। এটাই হচ্ছে মৌলিক পার্থক্য। একজন বিনিয়োগকারী তার পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে আমার প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনায় আনেন নি কিন্তু তাদের সেই পোর্টফোলিও আমার জীবন। এ পুরো ব্যাপারটা আজো আমাকে অনেক পীড়া দেয় যে আমার জীবন কারো পোর্টফোলিও।”

“আমি মাঝে মাঝে নিজেকে জিজ্ঞাসা করি-বিনিয়োগকারীদেরকে দূরদর্শী হতে হবে। তাদের এটা বুঝতে হবে যে এই একটা প্রতিষ্ঠান এখন হয়তো লস এর মধ্যে আছে কিন্তু এর বড় হবার সম্ভাবনা আছে এখানে বিনিয়োগ করা যাক। এদিকে আরেকটি প্রতিষ্ঠান যেটি খুব বেশি লাভ করছে না। যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক। এই যে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের ব্যাপার এটা অনেক চিন্তা-ভাবনার বিষয় তাই নয় কি?”

কিন্তু আপনি যখন বিনিয়োগের আশায় তাদের কাছে গিয়েছিলেন তখন কিন্তু আপনার প্রতিষ্ঠান লাভজনক অবস্থায় ছিল না।

“সেই কথাটাই আমি বলতে চাইছি। এমন যদি হতো যে ইন্ডিয়াপ্লাজা ডট কম একটি পুরানো প্রতিষ্ঠান এবং অল্প লাভ করছে এবং আমরা নতুন বিনিয়োগ আনতে পারছি না তাহলেও আমাদের কোন সমস্যা ছিল না। বিনিয়োগ ছাড়াই ইন্ডিয়াপ্লাজা ডট কম এর চলে যেত। কিন্তু পানি যখন আপনার মাথার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তখন আপনাকে খুব সাবধানে এগোতে হবে। একটু ভুল হলেই জোয়ারের তোড়ে আপনি ভেসে যাবেন।”

ভাথিশ্বরণ তার যুক্তিতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন কিন্তু তার প্রতিষ্ঠান অল্প লাভ করছিল এ কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। ইন্ডিয়া প্লাজা পাঁচ বছর আগেও লাভজনক ছিল না। তখন তার লস এর পরিমাণ ছিল সামান্য। এ ব্যাপারটি নিয়ে ভাতিশ্বরণকে একটু চাপাচাপি করতেই তিনি বললেন যে তার সব মনে নেই এবং পরে তিনি বললেন যে তার প্রতিষ্ঠান সামান্য লাভ করছিল। না ব্যাপারটা আসলে তা নয়। ২০১১, ২০১২ বা তার আগেও ইন্ডিয়াপ্লাজা সেভাবে লাভের মুখ দেখেনি। কিন্তু উদ্যোক্তারা সবসময়ে তার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বাড়িয়ে বলে থাকেন। কারণ এভাবে বলতেই তারা অভ্যস্ত।”

ব্যবসার আসল ভিত্তি লাভ:

নিজের ব্যবসা সম্পর্কে উদ্যোক্তাদের বাড়িয়ে বলার স্বভাব বা বিনিয়োগকারীদের দুরদর্শীতার অভাব- দুটো কারণের একটাও কিন্তু একটি ব্যাপারকে এড়িয়ে যেতে পারেনি এবং ভাথিশ্বরণ নিজেও এ ব্যাপারটাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেন সেটি হচ্ছে “লাভ।” আজও লাভের ব্যাপারটি ভাথিশ্বরণকে মানসিক পীড়া দেয়।

তিনি বলেন “ভারতবর্ষে একটি ব্যবসা বন্ধ করা খুবই কঠিন।” “সেটা অন্যকথা। চারিদিক থেকে সব সমস্যা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আমাকে কাবু করে ফেলল। আমি ব্যর্থ এবং সমস্যা জর্জরিত এবং কোন এক অদ্ভুত কারণে এর সবটার দায় বর্তায় আমার উপরে। আমি এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না। সব কিছুর জন্যে আমাকে দায়ী করা হলে আমার সাথে ভীষণ অন্যায় করা হবে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে এটা আমি মানতে রাজি আছি যে আমি আমার সুযোগের যথাযথ সদব্যবহার করতে পারিনি। কিন্তু যেটা আমি মানতে পারি না তা হলো ইন্ডিয়াপ্লাজা বন্ধ হয়ে যাবার পরে শুধু আমাকেই এই প্রতিষ্ঠানের দেনাদারদের কাছে কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। কেউ আমাকে সাহায্য করে নি।”

“ আমি কারো কাছে থেকে ব্যক্তিগত ভাবে টাকা গ্রহণ করিনি। ইন্ডিয়াপ্লাজা টাকা নিয়েছে এবং এসবই কম্পানির দেনা। ইন্ডিয়াপ্লাজা তা আমার একার প্রতিষ্ঠান ছিল না। এর আরো বিনিয়োগকারী ছিল, পরিচালক বোর্ড ছিল। ইন্ডিয়াপ্লাজা যদি ব্যক্তিমালিকানাধীন হতো তাহলে ব্যাপারটা আমি মেনে নিতাম কারণ ব্যক্তি মালিকানায় ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান এক ধরা হয়। কিন্তু লিমিটেড কম্পানিতে ব্যাপারটা অন্যরকম।”

কিন্তু বর্তমান ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলো কেন লাভের মুখ দেখছেনা? লাভ করাই তো যে কোন ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য। ভারতের বর্তমান ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে লাভের ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

এ প্রশ্নের উত্তরে ভাথিশ্বরণ বলেন “ আপনার এ প্রশ্নের সোজাসাপ্টা উত্তর হলো হ্যা, ব্যবসার জন্যে লাভ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” “যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লাভজনক নয় তার টিকে থাকাটাই অর্থহীন। কিন্তু আমি এটাও বলছি না যে ব্যবসা শুরু করার প্রথম দিন থেকেই শুধু লাভের চিন্তা মাথায় রেখে কাজ করে যেতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে আগে যাতে সেটি লাভের মুখ দেখতে পারে। লাভ করাই ব্যবসার মূল  লক্ষ্য।ব্যবসার বিক্রী, প্রবৃদ্ধি, ক্রেতা সংখ্যা, বাজারমূল্য, বিনিয়োগ কোনটা দিয়েই লাভ এর গুরুত্বকে খাটো করা বা একেবারে সরিয়ে দেয়া যাবে না। কারণ লাভ করার ফলেই একজন কম্পানির মালিক তার প্রতিষ্ঠানের গন্তব্যের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রাখতে সক্ষম হন। লাভ ছাড়া সে যতই বলুক না কেন যে সব তার নিয়ন্ত্রণে সেটি ভুল। কোন কিছুই তার নিয়ন্ত্রণে নেই। আপনার বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারার ক্ষমতাই আপনার গন্তব্যকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যখন লস করে সেই টাকার ঘাটতি কাউকে না কাউকে তো পোষাতেই হবে। সেটা তো আর অলৌকিক ভাবে হবে না।”

“কিন্তু পরিস্থিতি এখন বদলে গিয়েছে। ব্যবসাতে এখন টাকা লস হবে এটাই হয়তো ধরে নেয়া হয়েছে। যে যত বেশি লস করবে সে তত ভাল অবস্থায় থাকবে এবং দ্রুত বড় অঙ্কের টাকা লস দেয়া মানেই সেই প্রতিষ্ঠান বড় এবং স্মার্ট। কিন্তু এখানে আমি কোন স্মার্টনেস দেখি না। হয়তো আমার চিন্তাকে পুরানো যুগের। সমগ্র বিশ্বে এটাই হয়তো এখন ধরে নেয়া হয়েছে যে ইন্টারনেট-ভিত্তিক ব্যবসা চালাতে হলে লস দিয়েই চালাতে হবে আর মানুষও ইন্টারনেট-ভিত্তিক ব্যবসা পছন্দ করে। কিন্তু এ বিষয়টা নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করেও আমি আমার মত বদলাতে পারিনি এবং আমার মনে হয় আমার চিন্তাই সঠিক।”

কিন্তু…………

“আমার এ চিন্তা-ভাবনা আমার অভিজ্ঞতার ফসল।১৯৯৯ সালে ডটকম বুম এর ঠিক ছয়মাস আগে আমি আমার ইন্টারনেট কম্পানি স্থাপন করি। তখন ই-কমার্স ছিল সকলের খুবই প্রিয় বিষয়। নয় মাস পরে ই-কমার্সকে নিয়ে সবাই গালি-গালাজ করা শুরু করল। কেউ আর আমাদের সাথে কথাই বলতে চায় না। ২০০০ সালের ১৪ এপ্রিলকে ইন্টারনেট ব্যবসার “ব্ল্যাক ফ্রাইডে” বলা হয়ে থাকে। সেদিন নিউইয়র্কের শেয়ারবাজারে ডট কম প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম ধুম করে ৬০% কমে গেল। একটি ব্যবসা পড়ে যাবার পিছনে মূল কারণ আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন। এ পরিবর্তন আগেও হয়েছে আমি দেখেছি।”

“ ১৯৯৯ এর জুন থেকে ২০০০ এর মার্চ পর্যন্ত সবার কাছেই আমরা ছিলাম অনেক আদরের পাত্র। চালু হবার ছয় মাসের মধ্যেই মিডিয়াগুলো ইন্টারনেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে হৈচৈ শুরু করে দিত।কত প্রতিষ্ঠানের কথা তখন প্রকাশিত হয় কিন্তু ২০০০ সালের এপ্রিলের পরে আগামী তিন বছর পর্যন্ত সব চুপচাপ। কেউ আর ই-কমার্স নিয়ে কথাও বলতে চায় না। ইন্টারনেট ব্যবসার উত্থান এবং পতন আমি দেখেছি এবং এগুলো খুবই ভয়াবহ। ভারতে এখনো পর্যন্ত এমন কোন ইন্টারনেট-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তৈরি হয় নি যেটি এরকম প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করে টিকে থেকেছে।”

বোকা লোকের অর্থহীন খেলা:

ই-কমার্সের বিভিন্ন বিষয়ে আপনার চিন্তাগুলো একেবারেই সোজাসাপ্টা। পণ্য ডেলিভারির খরচ ক্রেতার কাছে থেকে নেয়া সম্পর্কে আপনার ধারণা তো ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

“হ্যা, আমার ধারণা গুলো সোজাসাপ্টা কিন্তু এ বিষয়গুলো নিয়ে আমি লম্বা সময় ধরে চিন্তা করেছি এবং আমি একেবারে গোড়া থেকে চিন্তা করেছি। বর্তমানের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে আপনি যদি তাকান তাহলে দেখবেন যে তারা শুধু হিসাব কষে। তাদের কথা হলো যে তারা এক’শ রুপি খরচ করবে ক্রেতা ধরার জন্যে এবং দু্’শ রুপি খরচ করবে তার কাছে পণ্য পৌঁছে দেবার জন্যে এবং বিক্রী বাবদ ২০ রুপি লস দেবে। মোট লস হচ্ছে ৩২০ রুপি। এই ৩২০ রুপি লস করার বিনিময়ে আমি একজন ক্রেতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। এবার আগামী ১৮ মাস বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে আমি এ ক্রেতার কাছে কম মার্জিনে পণ্য বিক্রী করে একটু একটু করে আমার ঐ ৩২০ রুপির ক্ষতি পুষিয়ে নেব। এতে আমার কাছে দিনের শেষে কোন লাভ থাকবে না। আমি আবার বিনিয়োগ যোগাড় করে লস দিয়ে এভাবে ক্রেতা ধরব। এই ব্যবসার মডেল আমি একটুও পছন্দ করি না। এতে প্রথম থেকেই গলদ আছে।”

“যদি কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এ ধরণের হিসাব তৈরি করে বলে যে এই হলো আমার পরিকল্পনা। তুমি আমার ক্রেতা এবং আমার কাছে থেকে তুমি যখন পণ্য ক্রয় করবে তখন আমি লস দেব কিন্তু এখন তোমাকে আমার কাছ থেকে আরো আটবার পণ্য ক্রয় করতে হবে যাতে করে আস্তে আস্তে আমি আমার এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারি। এ কথা শুনে কোন ক্রেতা যদি সেই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে পণ্য ক্রয় করা শুরু করে খুব ভাল কথা। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি আরেকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আসে এবং ঐ ক্রেতাকে আরো কম দামে পণ্য বিক্রী করা শুরু করে তখন তো সেই ক্রেতা ঐ ই-কমার্স কম্পানির কাছে থেকে পণ্য কিনবে। তখন ঐ আগের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নতুন ক্রেতা ধরবার জন্যে আবার লস দেবে। এভাবে একটা চক্র বার বার ঘটতে থাকবে। এটা তো বোকা লোকের অর্থহীন খেলা বই কিছুই নয়।”

 

কিন্তু এখানে যুক্তি হচ্ছে ক্রেতাকে এ ধরণের ঘরে বসে আরামে কেনাকাটা করানোয় অভ্যস্ত করে তোলা এবং সহজে একজায়গায় অনেক পণ্য বিক্রী করা।

“ না এ যুক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর যখন বাজারে আপনিই একমাত্র ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। একজন ভোক্তা সাধারণ মানুষের মতোই আচরণ করবে। আরেকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যদি আসে তখন সেই ভোক্তা তার কাছেই যাবে যার কাছ সে সবচেয়ে কম দামে পণ্য পাবে। সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চাইছে সেই যেন শেষ প্রতিষ্ঠান হয়। কিন্তু প্রতিদিন নতুন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গজাচ্ছে এবং এর থেকে কেউ কেউ টিকতে না পেরে চলে যাচ্ছে। ক্রেতা তার আরামের জন্যে কেনাকাটা করবে আমার কাছে থেকে এ কথা বলে দিনের শেষে আমরা নিজেরাই নিজেদের ঠকাচ্ছি।”

তাহলে অ্যামাজন এর ক্ষেত্রে আপনি কি বলবেন?

“অ্যামাজন বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে অ্যামাজন ডট কম থেকে কেনাকাটা করে না এরকম ক্রেতার সংখ্যাই বেশি এবং এটা নিয়ে আমি রীতিমতো বাজি ধরতে রাজি আছি আপনার সাথে (কারণ যুক্তরাষ্ট্রে মোট রিটেইল সেলস এর মাত্র ৬.৬% হচ্ছে ই-কমার্স বা অনলাইন রিটেইল সেলস)। এখন যুক্তরাষ্ট্রে যেসব ক্রেতারা দোকান বা অন্য কোন ই-কমার্স সাইট থেকে কেনাকাটা করে এদের মধ্যে কি এমন কেউ নেই যে অন্তত একবারের জন্যে হলেও অ্যামাজন ডট কম থেকে কেনাকাটা করেনি? অবশ্যই আছে। তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে- কেন তারা আবার অ্যামাজন ডট কম থেকে কিনছে না? তাদের অ্যামাজন ডট কম থেকে কেনাকাটা করার অভিজ্ঞতা কি খারাপ ছিল? অবশ্যই না। এ ব্যাপারটা অ্যামাজন প্রথম থেকেই ভালভাবে অনুধাবন করতে পেরেছে। বিশ্বের সব দেশেই ভোক্তা একই রকম আচরণ করে। যদি কেউ অপেক্ষাকৃত কম দামে তাদের কাছে পণ্য বিক্রী করে তারা সেই বিক্রেতার কাছেই যাবে। এটা তারা কখনোই বলবে না যে আমি আরামে এবং ব্রান্ডের পণ্য কেনার জন্যে খরচ করব।”

ক্যাশ অন ডেলিভারির খারাপ দিক:

ক্যাশ অন ডেলিভারি সম্পর্কেও আপনার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আপনার সিওডি করার কোন চিন্তাই ছিল না কিন্তু সিওডি এর ফলেই ভারতের ই-কমার্স সেক্টরে বড় পরিবর্তন এসেছে।

“ সিওডি সম্পর্কে আমার ধারণা এখনো বদলায়নি। আমি মনে করি ক্রেতাদের জন্যে সিওডি একটি ঝামেলার ব্যাপার। তারা অনলাইনে কেনাকাটা করে আরামের জন্যে। ক্রেতারা সিওডি ব্যবহার করে কারণ তাদের কাছে ক্রেডিট কার্ড নেই। ২০০২ সালে আমি প্রথম সিওডি শুরু করি এবং ২০০৪ সালে বন্ধ করে দিই। এর কারণ হলো সিওডি এর জন্যে ম্যানেজমেন্টকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। ২০০৮ সালে যখন সিওডি ব্যাপক জনপ্রিয় হয় তখন আমার কাছে তথ্য ছিল যে কোন কোন ক্রেতা তাদের নিজস্ব ক্রেডিট কার্ড থাকার পরেও কার্ডে কেনাকাটা না করে সিওডিতে কেনাকাটা করছেন।”

“হ্যা সাধারণ মানুষের মধ্যে সিওডি খুবই জনপ্রিয় হয়।”

“সিওডি তার নিজস্ব কারণে জনপ্রিয় হয় নি। সিওডি এর জনপ্রিয় হবার পিছনে কারণ ছিল পণ্যের দাম। আজও আমি যে কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ করব এ ব্যাপারে। তারা বলুক যে তারা সিওডি দেবে এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে পণ্য বিক্রী করবে ক্রেতার কাছে। দেখা যাক কয়জন লোকে সেই ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য ক্রয় করে। সিওডি আসলে একটি বিশাল বড় মার্কেটিং স্কীম ছিল এবং জিনিসপত্র কেনার ক্ষেত্রে সিওডি আজও অনেক ঝামেলা সৃষ্টি করে। কেন আপনি টাকায় দাম মেটানোর কথা চিন্তা করবেন যখন ডেলিভারি ম্যান আপনার বাসায় এসে আপনাকে পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছে? সিওডি এর খারাপ দিকও আছে। এখন আমাকে আপনার (রিপোর্টারের) বাসার ঠিকানা দিন এবং আমি আপনার নাম ঠিকানা দিয়ে সিওডি তে আপনার জন্যে একটি রিফ্রিজারেটর ক্রয় করব।  পুরো কেনার যা প্রসেসিং তা আপনি সামলাবেন। কিন্তু আপনি যখন কার্ডের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করবেন  তখন সিওডিতে কেনার সময়ে যেসব ঝামেলার সম্মুখীন হচ্ছেন তার কিছুই হতে হবে না এবং আমরা এটা দেখেছি। এখনি আমি আপনার নামে পাঁচটা রেফ্রিজারেটরের অর্ডার দেই। যদি না চান ফেরত দিয়ে দেবেন আর যদি মনে হয় কিনবেন তাহলে ক্যাশ টাকা দিয়ে দাম মেটান। তাহলে আপনিও বুঝতে পারবেন।”

কিন্তু সিওডি এর কারণে তো এখন ভারতের টিয়ার-২ এবং টিয়ার-৩ লেভেলের শহরগুলোতে ই-কমার্স জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে………

“এটাও আপনার ভুল ধারণা। বর্তমানে কমপক্ষে ভারতের ২০ কোটি লোকের কাছে ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড আছে (এপ্রিল ২০১৫ এর তথ্য মোতাবেক ভারতে ৫৫ কোটি ৪৭ লক্ষ ডেবিট কার্ড এবং ২ কোটি ১৩লক্ষ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে।) দেশে অনলাইন ক্রেতার সংখ্যা  ২ কোটি। এদেশের কার্ডধারীদের ৯০% এখনো অনলাইনে কেনাকাটা করে না। এমনকি আমি এটাও বাজি ধরে বলতে পারি যে এই ২ কোটি অনলাইন ক্রেতার অর্ধেকের কার্ড আছে। এটা কোন কল্পনা হয়। এটাই একদম প্রমাণিত।”

যেভাবে আমরা চিন্তা-ভাবনা করতে অভ্যস্ত:

অদ্ভুত ব্যাপার হলো আপনার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর আছে কিন্তু আপনার এখন আর কোন ব্যবসা নেই।

“হ্যা। আমার এখন কোন ধাঁধা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা উচিত। আমরা সবাই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করি।”

আপনি কি ফ্লিপকার্টের বানসাল বা স্ন্যাপডিল এর কুনাল বহেল এর সাথে কথা বলেছেন?”

“না তবে আমার অন্তত যোগাযোগ করা উচিত ছিল।”

“এখনো কি ইন্ডিয়াপ্লাজার বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের সাথে আপনার কথা হয়?”

“না”

“তারা আপনার সাথে আর যোগাযোগ করেন না?”

“না। কেউ না।”

“কেন”

“যোগাযোগ করে কি লাভ হবে? আমি মনে করি যে মানুষ হিসেবে আমরা সবাই আমাদের নিজেদের সম্পর্কে খুবই উচু ধারণা পোষণ করে থাকি। আমরা সবাই এ সমস্যার শিকার। এটা কোন ইগোর ব্যাপার নয়। আমরা এভাবেই চিন্তা করতে অভ্যস্ত। তাই আমি হয়তো ভাবব যে ভারতের ই-কমার্সের আমি একজন পায়োনিয়ার এবং আমার অনেক অভিজ্ঞতা আছে এবং শেখাবার অনেক কিছু আছে। এসব লোকেরা (স্ন্যাপডিল, ফ্লিপকার্ট এর সিইও) আমার কাছে থেকে শিখতে পারে। এদের উচিত হবে আমার সাথে যোগাযোগ করা।অন্যদিকে তারাও ভাববে এ লোকটা কে? না এর কাছে থেকে তো কোন কিছুই শেখার নেই।”

ইন্ডিয়াপ্লাজা বন্ধ হয়ে যাবার পরে ভাথিশ্বরণ এখন আর সেভাবে ব্যস্ত থাকেন না। প্রায় দিনই তিনি এখন ঘরে কাটান। তবে তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কনসাল্টেন্সি করে থাকেন। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইন্টারনেট ব্যবসা স্থাপন করতে যাচ্ছে। ভাথিশ্বরণ তাদের নাম বলেন নি তবে এটা বলেছেন যে প্রতিষ্ঠান গুলো “বড় ব্র্যান্ড।”

এ থেকে যা আয় হয় তাতে তার আর তার পরিবারের ভরণপোষণের খরচ উঠে যায়।

“এর পাশাপাশি আরো কিছু টেক স্টার্ট-আপ আছে যাদের আমি মেনটরিং করে থাকি। তবে এটা আমি টাকার বিনিময়ে করি না। ই-কমার্সের প্রতি আমার যে প্যাশন সেটাকে জিইয়ে রাখার জন্যেই এটা করা।”

আড়াই ঘন্টা ধরে আমরা কথা বলছি। ইতিমধ্যেই জিমনেসিয়াম এবং তৎসংলগ্ন এলাকা অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছে এবং এখনো লাইট জ্বালানো হয় নি।

“যদি আমি বলি যে অতীত আমাকে ভাবায় না তাহলে মিথ্যা বলা হবে।”“উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে আপনার গায়ের চামড়া মোটা করতে হবে।”

ব্যর্থতা থেকে থেকে শিক্ষাগ্রহণ:

অতীতের মতো বর্তমান তাকে এত পীড়া দেয় না। এখন নিজের সীমিত সাধ্যে যা কুলায় তাই করে থাকেন। ইন্ডিয়াপ্লাজা নিয়ে তার অভিজ্ঞতাকে কেউ সেভাবে মূল্যায়ন করে না। এর কারণ তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।”

“এটা বেশ বড় একটা সমস্যা” ভাথিশ্বরণ বলেন। “আমি মনে করি যে উদ্যোক্তারা ব্যর্থ হন না। প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়। আমাদের এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য করতে শিখতে হবে। ভারতে এখন এ সংস্কৃতিটা গড়ে ওঠেনি।এখানে উদ্যোক্তাকে তার ব্যবসার অংশ ধরা হয় এবং কম্পানির সাফল্য বা  ব্যর্থতাকে উদ্যোক্তার সাফল্য/ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উদ্যোক্তারা সবসময়ে সফল হবার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়তে তাদের অভিজ্ঞতা, সেই ব্যবসার খুঁটিনাটি, পণ্য, সেবা, প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা জ্ঞান রাখেন। এটাই তো তাদের স্কিল। সে বিচারে তাদের এই অভিজ্ঞতা অমূল্য।”

“আজ যদি আমি সিলিকন ভ্যালিতে থাকতাম এবং এ ধরণের ব্যর্থতার মুখোমুখি হতাম তাহলে আমার কাছে একের পর এক চাকুরির অফার আসত।ভারতে এই ধারাটা এখনো গড়ে ওঠেনি। প্রতি দশটি স্টার্ট-আপ এর মধ্যে নয়টিই ব্যর্থ হয়। এর মানে হচ্ছে অনেক বেশি স্টার্ট-আপ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এই যে এত গুলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এটার দায় কি শুধু ঐ প্রতিষ্ঠানের সিইও এর? অবশ্যই না। তারা সবাই আজকে সফলতার দেখা পেয়েছে।”

“কিন্তু ভারতে আমাকে কোনভাবেই মূল্যায়ন করা হবে না কারণ আমি একজন ব্যর্থ উদ্যোক্তা। আমার প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুরো ব্যপারটা আমার কাছে খুবই বিরক্তিকর।”

শেষ কথাঃ এ লেখার অংশ হিসেবে আমি ইন্ডিয়াপ্লাজার কয়েকজন প্রাক্তন বোর্ড সদস্যদের কাছে ই-মেইল প্রেরণ করি। আমার ইচ্ছে ছিল, উদ্যোক্তা হিসেবে ভাথিশ্বরণের এই যাত্রাকে তারা কিভাবে মূল্যায়ন করে তা সম্পর্কে জানা। তা সম্ভব না হলে (অনেকে হয়তো এ বিষয়টা নিয়ে কথাই বলতে চাইবেন না)অন্ততঃ ইন্ডিয়াপ্লাজার ব্যর্থতা সম্পর্কে তারা কি ভাবছেন তা জানা। কিন্তু বেশিরভাগই আমার ই-মেইলের কোন প্রত্যুত্তর দেন নি। কেবল মাত্র বানি কোলা (Vani Kola) নামে একজন উত্তর দেন। কালারি ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্স তাকে ইন্ডিয়াপ্লাজার বোর্ডের একজন পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করে।

তিনি বলেন, “ব্যবসায় ব্যর্থতা একটি  বাস্তবতা। আমাদের সামনে এমন অনেক উদ্যোক্তার উদাহারণ আছে যারা প্রথম বার ব্যর্থ হয়েও নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করেন। তাদের পূর্ব ব্যর্থতা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা তাদের সফল হতে সাহায্য করে।”

সূত্র:

লাইভমিন্ট

 

13,161 total views, 3 views today

Comments

comments