21fce72

ই কমার্র্স ও ভ্যাট
জাহাঙ্গীর আলম শোভন

দেশ জনগনের। জনগন একে গড়বে। এজন্য তারা তাদের নাগরিক দায়িত্ব পালন করবে। ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করবে। সরকারকে মতামত জানাবে। আয়ের উপর কর দেবে এবং মূল্যের উপর সংযোজিত কর মূসক বা ভ্যাট দিবে। জনগনের পদত্ত অর্থ দিয়ে সরকার জনগনের জন্য কাজ করবে। সরকার বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে, উন্নয়ন কর্মসূচী ঠিক করবে। আমাদের মতো দেশগুলোতে সরকারকে বাজেট প্রণয়নের জন্য বৈদেশিক আয়, বৈদিশিক সাহায্য, বৈদেশিক ঋণ এবং রাজস্ব আয়ের উপর র্নিভর করতে হয়। কখনো কখনো বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার রাজস্ব আদায়ের হার বাড়িয়ে থাকে আবার নতুন নতুন খাত বের করে করে তার উপর বিভিন্ন কর আরোপ করে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার চেস্টা করে। এভাবে সরকার জিডিপি বাস্তবায়ন করতে চায়। প্রায় প্রতিটি অর্থ বছরেই সরকারকে জিডিপি বাস্তবায়নে হিমশিম খেয়ে শেষে কাটছাট করতে হয়। কারণ কখনো রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যায়, কখনো বিদেশী বিনিয়োগ বাঁধাগ্রস্থ হয় কখনোবা রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়না।
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে এমডিজি, এবং জিডিপি বাস্তবায়নের জন্য গরীব সরকারকে তারই গরীব জনগনের দ্বারস্থ হতে হয়। কারণ দেশের উন্নয়ন। আমরা সবাই এই কথাও জানি যে আমাদের মতো দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান পেশা, ব্যবসা ও শিল্পখাতে সরকার বিভিন্ন সরাসরি সাহায্য দিয়ে থাকে। এবং সেটাও দেশের উন্নয়নের জন্য কারণ কোনো একটা খাত বিকশিত হলে সরকার, জনগন ও দেশের অর্থণীতি বিভিন্নভাবে তার সুফল পেয়ে থাকে। সেজন্য সরকার প্রণোদনামূলক নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। তারমধ্যে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, বিদেশ থেকে বিনাশূল্কে কাচামাল আনার সুযোগ, ব্যাংক লোন, বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ, সহজ সুন্দর নীতিমালা প্রণয়ন, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। এছাড়া সরকার আরকর ও ভ্যাট আরোপ থেকে বিরত থেকেও উন্নয়নশীল খাত সমূহকে সহায়তা করে থাকে। ভূর্তকি ও অর্থসাহায্যও কখনো কখনো করতে হয়। আমাদের দেশেও সরকার আইটি কৃষি, কুটির সহ বেশকিছু খাতে এভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। কারণ এসব খাতে যদি উন্নতি সম্ভব হয়। তাহলে বিভিন্নভাবে সরকার লাভবান হবে সে লাভ কর বা ভ্যাট আরোপের চেয়ে অনেক বেশী।
এসব খাতে কর্মসংস্থান হবে, বৈদেশিক মূদ্রা আসবে, অর্থের প্রবাহের মাধ্যমে অর্থনীতিতে নানা ভূমিকা রাখবে। সবচে বড়ো কথা একটি ব্যবসা ও শিল্প ও পেশাখাত যদি দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাহলে হাজার হাজার উদ্যোক্তা পেশাজীবি ও শ্রমজীবি মানুষ এর সাথে সম্পৃক্ত হবে। এতে করে সরকার যদি 10 বছর বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান ও কর আরোপ থেকে বিরত থাকে। 10 বছর পর সে সেক্টর যেখানে গিয়ে দাড়াবে। সেখানে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান কাজ করবে। তখন সরকার আস্তে আস্তে অল্প করে কর আরোপ শুরু করলেও বিশাল একটা আয়ের উৎস তৈরূী হবে।
ই কমার্স খাতে কথা বলছি। যে নামে সরকারী বালামে কোন ক্যাটাগরি ছিলনা, এখনো সিটি ছাড়া অন্যত্র নেই। কোনো ব্যংক ঋনের সুযোগ নেই। মাত্র 150টি কোম্পানী নিবস্ধন করেছে। যারা 10 বছর আগে শুরু করেছে এখনো আবার সেভাবে কেউ লাভের মুখ দেখেনি। সরকার ই কমার্স এর জন্য কোনো নীতিমালাও করেনি। সরকারী ডাক বিভাগের সেবা দেয়ার জন্য ই কমার্স ব্যবসায়ীদের কোনো বাড়তি সুবিধার কথাও শোনা যায়নি, বলা হচ্ছে পেপল এর মতো পেমেন্ট কোম্পানী প্রতিষ্ঠা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ণীতিগত কাঠামোও দেশের নেই। ক্রেতাবেশী প্রতারক চক্রের দ্বারা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হলে প্রতিকার বিষয়ে শক্ত কোন আইন তৈরী হয়নি। ইতোমধ্যে গত গত ২০১৫-১৬ বাজেট থেকে যদিও সরকার বাহাদুর এর উপর 4শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব থেকে সরে এসছে। এজন্য সরকার বাহাদুরকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। আশা করি এবারো তা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি ই কমার্স এর জন্য ব্যবসায়িক খাত হিসেবে অন্তুভূক্তি, লোন সুবিধা, বিনিয়োগ, ট্রেড লাইসেন্স সহজিকরণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।
গত বারের বাজেটে অনেকগুলো ইতিবাচক দিক ছিলো। এক ধরনের উন্নয়ন মুখী ছিলো বলা যায়। এতে 2024 সাল পর্যন্ত  আইটি ব্যবসায় কর রহিত করা হয়েছে। এজন্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের ধন্যবাদ জানাতে হয় ।
ই কমার্স ব্যবসায়ী মূলত তরুন উদ্যোক্তা যারা কোনো সরকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের সাহায্য ছাড়াই আত্মকর্মসংস্থান একটা পথ করে নিয়েছে। এখনো এখানো হাজারো সমস্যা। পন্য ডেলিভারী দিলে চুরি হয়ে যায়, নস্ট হয়ে যায় সময়মত ডেলিভারী হয়না। বিকাশে পেমেন্ট নিলে হাজারে 20 টাকা দিতে হয়, ব্যাংকে পেমেন্ট নিলে দিতে হয় অনলাইন চার্জ, ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং এর সেবা নিলে সেখানেও আছে সার্ভিস চার্জ, পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানীর মাধ্যমে কার্ডে পেমেন্ট করলে দিতে হয় 2.5-3 শতাংশ চার্জ, আছে আবার মাসিক চার্জ, কুরিয়ার চার্জও কম নয়, প্যাকিং চার্জ আর না ই বললাম। তাই এ খাতে ভ্যাট  অন্তত 10 বছরের মধ্যে  যেন  ফিরে না আসে সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

জিডি ডট কম (http://www.gd.com.bd/) একটি ই কমার্সস কোম্পানীর উদোক্তা নাফিসুর রহমান বলেন, সরকারের উচিত এই খাতকে সাহায্য করে এগিয়ে দেয়া সেক্ষেত্রে এ ধরনের পদক্ষেপ আমাদের জন্য বিশাল একটা ধাক্কা। যেখানে ক্রমলোকসান এর কারনে অনেক উদ্যোক্তা হাত ঘুটিয়ে নিচ্ছেন সে খাতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত পুরো সেক্টরটির জন্য মারাত্মক বিপর্যয় বয়ে আনবে, সরকারের উচিত এখনি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা।

এখন সরকারের উচিত বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী, তার মন্ত্রণালয়ের সচিবও আমলাদের এই সেক্টরটা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা রাখা উচিত। ওপেন মার্কেটপ্লেস বা ক্লাসিফাইড এড সাইটের সাথে ই কমার্সকে গুলিয়ে ফেলাটা আমরা আশা করিনা। আরেকটা বিষয় হলো যেখানে এখনো অনেক তরুন উদ্যোক্তা ট্রেড লাইসেন্স ও টিন জটিলতার জন্য সরাসরি ই কমার্সে না এসে এফকমার্সসে বন্দী হয়ে আছে। সেখানে যদি আরো একটি বাঁধা এসে উপস্থিত হয় তাহলে পুরো সেক্টরের স্বাভাবিক গতি নস্ট হবে। কিছু মানুষ প্রচলিত আইনরে আওতায় না এসেই ব্যবসা করতে উৎসাহিত হবে। এটা আমাদের কারো জন্য মঙ্গলজনক হবেনা। আবার অনেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এটাও হতাশার বিষয়।

আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ চীন, ভারত এমনকি পাকিস্তানেও ই কমার্স খাত অর্থণীতির একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। বাজার ব্যবস্থার একটা বড়ো অংশ অনলাইনে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সেখানে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। অথচ ব্যাপক জনসংখ্যা, শহরের যানজট, বেকারত্ব ও পুজি সংকটের এই দেশে এই ই কমার্সটাই হকে পারে আমাদের শেষ সম্বল। যখন বেকারত্বের যন্ত্রণায় চুরি ডাকাতি লূন্ঠন সহ নানা সামাজিক অপরাধ বাড়ছে, একটু ভালো জীবনের জন্য মানুষ সমূদ্রে অজানা বিপদ মাথায় নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ছে ঠিক এই পরিস্থিতিকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ এর মাধ্যমে তরুন উদ্যোক্তারা সমস্ত আশাহত জাতিকে পথ দেখাতে চলেছে। সরকার অবশ্যই এই কাজে সহযোগীর ভূমিকা নেবে বিমাতার ভূমিকা নেবেনা এমনটাই প্রত্যাশা ই কমার্স উদ্যোক্তাদের।
লেখক: ই কমার্স কনসালটেন্ট এবং সহসভাপতি, রির্সাচ এন্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট স্টান্ডিং কমিটি, ই কর্মাস এসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ, (ই ক্যাব) [email protected]

7,962 total views, 3 views today

Comments

comments