হুমায়ুন কবির পড়াশোনা করেছেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে । তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি গড়ে তোলেন ওয়েব ডিজাইন, ডোমেইন হোস্টিং প্রতিষ্ঠান ব্লাডসফট । এরপর গেইম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান লিটলকোর।
বাংলাদেশে ডিজিটাল ওয়ালেট চালু করে কেনা বেচার প্রক্রিয়া সহজ করার স্বপ্ন থেকেই তিনি গড়ে তোলেন ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান ওয়ালেটমিক্স লিমিটেড (https://www.walletmix.com/ ) যার মাধ্যমে ভিসা, মাস্টারকার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস, বিকাশ এর মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন ই-কমার্স ওয়েবসাইটে। ঘরে বসে যাতে অনলানে ভিসা মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ফিস দেয়া যায় সেজন্য তিনি ডেভেলপ করেছেন স্টুডেন্ট পোর্টাল এবং অফার করছেন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের ফিস প্রসেসিং এর জন্য ।
উদ্যোক্তা তৈরির মানসিকতা থেকেই তিনি ঘোষণা করেছেন মাত্র ৫০০০ টাকাই ওয়ালেটমিক্স ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে নিয়ে যে কেউ ঘরে বসেই শুরু করতে পারেন তাঁর ই-কমার্স ব্যবসা।
হুমায়ুন কবিরের স্বপ্ন দেশের ই-কমার্স খাতকে আরও গতিশীল করা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একে তুলে ধরা।
জনাব হুমায়ুন কবির সম্প্রতি ই-ক্যাব ব্লগকে একটি সাক্ষাৎকার প্রদান করেন যা এখানে তুলে ধরা হল।
রাজিব আহমেদঃ আপনাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু বলুন।
মো: হুমায়ুন কবির: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা গড়ে তুলি ওয়েব ডিজাইন, ডোমেইন হোস্টিং প্রতিষ্ঠান ব্লাডসফট । এরপর গেইম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান লিটলকোর এবং মজার ব্যপার হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মী ফ্রীলেন্সার।
বাংলাদেশে ডিজিটাল ওয়ালেট চালু করে কেনা বেচার প্রক্রিয়া সহজ করার স্বপ্ন থেকেই আমরা গড়ে তুলি ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান ওয়ালেটমিক্স লিমিটেড যার মাধ্যমে ভিসা, মাস্টারকার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস, বিকাশ এর মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন ই-কমার্স ওয়েবসাইটে। ঘরে বসে যাতে অনলাইনে ভিসা, মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ফিস দেয়া যায় সেজন্য ডেভেলপ করি স্টুডেন্ট ফিস প্রসেসিং পোর্টাল এবং অফার করছি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের ফিস প্রসেসিং এর জন্য এতে করে ছাত্র অভিভাবকরা ঘরে বসেই তাদের ফিস দিতে পারবেন। এছাড়া আমাদের আছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিলিং সফটওয়্যার যার মাধ্যমে ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তাদের মাসিক বিল পরিশোধ করতে পারবেন। এছাড়াও আমরা অফার করছি ই-কমার্স ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, অনলাইন পয়েন্ট অব সেল (POS) সফটওয়্যার, এবং কাস্টম সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট।
উদ্যোক্তা তৈরির মানসিকতা থেকেই আমরা অফার করিছি মাত্র ৫০০০ টাকা। ওয়ালেটমিক্স ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে নিয়ে যে কোন নতুন উদ্যোক্তা ঘরে বসেই শুরু করতে পারেন তাদের ই-কমার্স ব্যবসা।
রাজিব আহমেদঃ বাংলাদেশে ই–কমার্সে লেনদেন এর সিংহভাগ এখনো ক্যাশ–অন–ডেলিভারি প্রক্রিয়াতে হয়ে থাকে। কার্ডে লেনদেন এখনো অনেক কম। এই সমস্যা সমাধান কিভাবে করা যায়?
মো: হুমায়ুন কবির: আমাদের কুরিয়ার সার্ভিস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মালিক পক্ষ এবং ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহকে এক সাথে কাজ করতে হবে এই সমস্যা সমাধানে। এতে করে লেনদেনের ঝুঁকি কমে আসবে। প্রত্যেক তাদের নিজেদের অবস্থান থেকে অনলাইনে কার্ডে পেমেন্ট করাকে উৎসাহিত করতে হবে। এতে প্রত্যেক পক্ষই উপকৃত হবে এবং কার্ডে লেনদেন বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে এ যাত্রায় সমস্যা রয়েছে, এখনো আমাদের সবগুলো ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড অন করে (চালু) রাখে না। ফোন করে অন করাতে হয়। এই বিষয় গুলোর যত দ্রুত সমাধান করা যাবে ততই আমরা ই-কমার্সের পরিপূর্ণ সুফল ভোগ করতে পারব।
রাজিব আহমেদঃ বাংলাদেশে ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি সাধারণ অভিযোগ হচ্ছে যে পেমেন্ট গেটওয়ে সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চহারে চার্জ করে। এ সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
মো: হুমায়ুন কবির: এক্ষেত্রে আমরা যদি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে নজর দি তাহলে বুঝতে পারব আসলে আমাদের স্থানীয় বাজারে এর হার বেশী কিনা। এটাও সত্যি যে কিছু প্রতিষ্ঠান উচ্চ হারে চার্জ করছেন। তবে হ্যা সরকারি পেমেন্ট সুইচ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে চালু হয়ে যাবে। তাতে কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে। ভিসা ও মাস্টার কার্ডের খরচ অনেক কমে আসবে। এতে করে সবগুলো ব্যাংক একটি পদ্ধতির মধ্যে চলে আসবে।
রাজিব আহমেদঃ বাংলাদেশে অনলাইনে লেনদেন কে জনপ্রিয় করে তোলার জন্যে সরকারের কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
মো: হুমায়ুন কবির: নিঃসন্দেহে বর্তমান সরকার প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের জন্য আন্তরিক ভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছেন, এর সাথে সরকারি পেমেন্ট সুইচ দ্রুত বাস্তবায়ন করা, সরকারি ভাবে ই-কমার্সে কেনা বেচার সুবিধাগুলোর উপর ক্যাম্পেইন চালানো, ত্রুটিবিহীন ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা, কম দামে উচ্চগতির ইন্টারনেট স্পীড নিশ্চিত করা। ফ্রি ওয়াইফাই জোন ঘোষণা করলে এই সেক্টর আরো ভাল করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এছাড়া গ্রামের আইটি সেন্টার গুলোর দক্ষতা বাড়ানো গেলে তারাও গ্রামের পণ্য সামগ্রী অনলাইনে বিক্রি করে গ্রামের মানুষের আয় বাড়াতে পারবে।
রাজিব আহমেদঃ ই–ক্যাব এর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যে ওয়ালেটমিক্স এর কোন বিশেষ অফার রয়েছে কি? থাকলে তা এখানে উল্লেখ করুন।
মো: হুমায়ুন কবির: ই-ক্যাব এর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যে ওয়ালেটমিক্স ৫০০০ টাকায় ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে সেবা দেবে। ভিসা, মাস্টার কার্ড, নেক্সাস কার্ড এবং আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডের চার্জ ২.৮% করা হবে।
রাজিব আহমেদঃ আপনাদের প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মো: হুমায়ুন কবির: ওয়ালেটমিক্স বর্তমানে ই-কমার্স ওয়েবসাইেটর জন্য পেমেন্ট গেটওয়ে দিলেও অদূর ভবিষ্যতে ডিজিটাল ওয়ালেট সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা আছে যাতে সহজে পেপাল এর মতো ওয়ালেটমিক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ক্রেডিট ভিত্তিক পেমেন্ট করা যায়। এতে করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং ক্রেতা উভয় পক্ষই উপকৃত হবেন আশা করি।
রাজিব আহমেদঃ উদ্যোক্তা হবার ব্যপারে কি ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছিল।
মো: হুমায়ুন কবির: যেহেতু আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, পারিবারিকভাবে ব্যবসা করার জন্য আমি কোন মূলধন পাইনি। এতে করে আমাকে সব সময় প্রতিটি সিদ্ধান্ত অনেক বিচক্ষণতার সাথে নিতে হয়েছে। শুরুর দিকে আমি আমার কর্মীদের নিয়ে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। দেখা গেছে বিভিন্ন বিদেশী প্রজেক্টে লোকাল কর্মীরা পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করেননি, কোন ক্লায়েন্টের কাজ ডেলিভারি দিতে হবে তিন ঘণ্টার মধ্যে কিন্তু আমার প্রোগ্রামার এসেছে চার ঘণ্টা দেরীতে অথবা দেখা যেত তিন দিনে যে কাজ ডেলিভারি দিতে হবে সে কাজ শেষ করতে লেগে যেত চার দিন অথচ প্রত্যেক সিদ্ধান্ত, কাজের সময়সীমা সবার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নেয়া হতো, কয় দিনের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করব। আমাদের এই সমস্যা গুলোর জন্য আমরা অনেক বাঁধা এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আর একটা ইস্যু ছিল, শুরুর দিকে তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে লোকাল মার্কেটে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি যেহেতু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বয়সকে অভিজ্ঞতার মাপকাঠি হিসেবে দেখা হয়।
রাজিব আহমেদঃ যেসব তরুণ ই–কমার্স সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চায় তাদের প্রতি আপনার কি উপদেশ আছে?
মো: হুমায়ুন কবির: আমরা দেখে থাকি যে, তরুণ উদ্যোক্তারা এক সাথে সব কিছু করার চেষ্টা করে যেটা একেবারেই ভুল সিদ্ধান্ত। সাফল্য লাভ করার জন্য একজন উদ্যোক্তাকে একেবারেই একটি নির্ধারিত ক্ষেত্রে লক্ষ্যস্থির করে এগুতে হবে। মূলত সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে একটাই মূলমন্ত্র, আপনার লক্ষ্য অর্জনে বিচক্ষণতার সাথে লেগে থকতে হবে। অসীম ধৈর্য থাকতে হবে। যেসব উদ্যোক্তা সাফল্য পায় না তারা মূলত সাফল্যের একেবারে দ্বারপ্রান্তে এসে হাল ছেড়ে দেয়। খারাপ সময়টাকে মোকাবেলা করতে জানতে হবে। আমার খারাপ সময়েও ছেড়ে না দেয়ার যে জেদ সেটিই এগিয়ে নিয়ে যায় আমাকে। সবার প্রতি শুভ কামনা
রাজিব আহমেদঃ আপনাকে ধন্যবাদ।
মো: হুমায়ুন কবির: আপনার মাধ্যমে ই-ক্যাবের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। যেকোন ব্যবসায়িক পরামর্শের জন্য আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ফেইসবুকে www.fb.com/mhkbs এবং ফেইসবুক পেইজ www.fb.com/TeamKabir
আমার প্রতিষ্ঠানের ফেইসবুক পেইজ www.fb.com/walletmix
7,574 total views, 5 views today