সাপ্লাই চেইন এবং সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট আধুনিক ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম নিয়ামক। এই কাজটি যেমন প্রতিটি ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ন তেমনি ব্যবসা ও পেশা হিসেবেও এর কদর দিন দিন বাড়ছে। ইউরোপ আমেরিকাতে আরো অনেক আগে থেকেই এবিষয়ে একাডেমীক কোর্স চালু হলেও সাম্প্রতীক সময়ে আমাদের দেশেও হচ্ছে। রয়েছে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা, এটা এক বৎসরের কোর্স। আবার শুধুমাত্র সাপ্লাই এর উপর ভিত্তি করে দেশে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এবং সাপ্লাই চেইন থাকার কারণে অনেকে ভালো ব্যবসা করে যাচ্চেন।
একটি উদাহরণ দেয়া যাক। যেমন ধরুন বসুন্ধরা গ্রুপ ও বিডি গ্রুপ প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার মাছ বিদেশে রফতানী করে। অথচ তাদের একটি পুকুর কিংবা মাছের খামার নেই। তাহলে এটা কি করে সম্ভব। হ্যাঁ এটা সম্ভব হয়েছে। শক্তিশালি সাপ্লাই চেইন এর কারণে।
আরো খোলাসা করা যাক। রাধুনি কোম্পানীর নিশ্চই অনেক সরিষা ক্ষেত নেই। আড়ং এর বিশাল গোয়ালঘর নেই। তাহলে তারা চাহিদামত প্রোডাকটস বাজারে দিচ্ছে কিভাবে। যদিও এসব ক্ষেত্রে সাপ্লাই চেইন তৈরীর জন্য ভিন্ন ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। তবুও সাপ্লাই চেইন হচ্ছে তাদের ব্যববসার মূল সূত্র।
এবার আসি ই কমার্সে। আপনি অনলাইনে প্রোডাক্টস সেল করবেন। সে পোডাক্টস আপনি বানান কিনা গ্রাহক নিশচই সেটি জানতে চাইবেনা। গ্রাহক জানতে চাইবে। আপনার প্রোডাক্টস কিকি কাজে লাগে। এর দাম কত? গ্রাহক দামটা কিভাবে দিবে, পন্যটা কিভাবে হাতে পাবে। সময়মত পাবে কিনা? এবং সেটি মানসম্পন্ন কিনা? যারা ওয়ালমার্টের পন্য কেনে তারা জানে যে ওয়ালমার্ট পন্যটি তৈরী করেনা। তবে তারা এমনভাবে পন্যটি কাস্টমারের হাতে দেয় যাতে কাস্টমার মান সর্ম্পকে নিশ্চিত হয়।
তাহলে আপনাকে উপরের কোয়ারীগুলো সঠিক সমাধান দিতে পারলেই আপনার ব্যবসা সফল হবে। আর সেটা নির্ভর করছে মানসম্প বিশ্¦স্ত এবং কার্যকর সাপ্লাই চেইন এর উপর।
মনে রাখবেন সবচে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো পেশাদারিত্ব। আপনি পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে পারলে বাজারে আপনার বিশ্বাস যোগ্যতা তৈরী হবে। আরো উদাহরণ দেই।
আপনার বাসায় যে ভীম সাবানটা দিয়ে থালা বাসন ধোয়া হয়। সেটা ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিডেট এর পন্য। আপনি এখনিই প্যাক দেখুন সেটা তাদের তৈরী নয় পন্যটির উৎপাদক টিকে গ্রুপ। অথচ কাল যদি ‘‘টিকে ডিশ ওয়াশিং বার’’ বের হয় আমি নিশ্চিত আপনি সেটা না কিনে ভীমটাই আবার কিনবেন এবং ২টাকা দাম বেশী হলেও। তাহলে বিষয়টা কি দাড়ালো ইউনিলিভারের নামের উপর আপনার নির্ভরশীলতা। এটাই ব্যবসায়ের বড় পুঁজি।
কি কি ধরনের সাপ্লাই চেইন হয়। সেটা কিভাবে তৈরী করবেন। আপনার সাপ্লাই চেইনটা কি হবে। এ বিষয়ে একটা আস্ত লেখা পাবেন আশা করি।

যদি উদ্দেশ্য এটা হয় যে আপনি নিজের দেশ জাতি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চান। তাহলে তো বিষয়টা পরিষ্কার আপনি দেশী পোডাক্টস সেল করবেন। অর্থ্যাৎ সে প্রোডাক্টস যেটা আপনার দেশকে প্রমোট করবে। যেমন ধরুন নকশী কাঁথা, ধরুন পাটজাত দ্রব্য, জামদানী শাড়ি, লুঙ্গি, কুটির শিল্পজাত দ্রব্য। উদাহরণ দিতে গেলে অনেক রয়েছে।
২. অবশ্যই বাংলা নামে ই কমার্স জগতে প্রবেশ করা যাবে। তার উদাহরণ আপনার সামনে রয়েছে। এখনই ডক কম।
৩. আমি যেসব প্রডাক্টস এর কথা বলেছি এগুলো দেশীয় হলেও সর্বত্র পাওয়া যায়না। এজন্য এগুলোতে ই কমার্স এর একটা সম্ভাবনা আছে। কারণ এসব পন্যের চাহিদাও আছে। যেমন কুমিল্লার খাদি। অথবা চাকমাদের তৈরী ব্যাগ ইত্যাদি।
৪. এ কাজে সফল হওয়ার জন্য আপনাকে শক্তিশালী সাপ্লাই চেইন তৈরী করতে হবে। যেমন ধরুন আপনি যদি ৫০ ধরনের পন্য নিয়ে ব্যবসা করেন। তাহলে প্রতিটা পন্যের জন্য আপনাকে কমপক্ষে তিনজন সাপ্লাইয়ার এর সাথে সম্পর্ক রাখতে হবে। যেমন ধরুন আপনি শাহাজাদপুর তাতে তৈরী শাড়ী বিক্রি করছেন। তাহলে অন্তত তিনজন তাত ব্যবসায়ীর সাথে আপনার যোগাযোগ থাকবে যাদের আপনি অর্ডাও করলে পন্য পাঠিয়ে দেবে।তাছাড়া ঢাকায় অনেক সাপ্লায়ার আছে। আপনি পন্য কিনবেন একজনের কাছ থেকে কিন্তু তিনজন থাকলে সুবিধা হলো আপনি দামটা যাচাই করতে পারেন। আর কোনো কারণে একজন দিতে না পারলে আরেকজনের দ্বারস্থ হতে পারলেন।

5,950 total views, 2 views today

Comments

comments

Your email address will not be published.