মোবাইল চেক-আউট ব্যবস্থা উন্নত করা অত্যন্ত জরুরিঃ
ভাল চেক আউট ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি তিনজন অনলাইন ক্রেতার দুজনই শপিং কার্টে পণ্য অর্ডার করে রেখে দেন। তারা পণ্যটি আর কেনেন না। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইলাররা বছরে ১৮ বিলিয়ন ডলার লস করছেন।
বিআই ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টে বলা হয়েছে মোবাইল কমার্স জনপ্রিয়তা লাভ করলেও এখানে কনভার্শন রেইট ডেস্কটপের তুলনায় কম। এখানে কনভার্সন বলতে একজন ভিজিটর যখন ক্রেতায় পরিণত হয়। এই ভিজিটর থেকে বায়ারে কনভার্সনের ব্যাপারটাই সাধারণ ভাষায় কনভার্সন বলা হয়। ২০১৬ সালে মোবাইলে ক্রেতাদের কেনাকাটা করতে আকৃষ্ট করার জন্যে রিটেইলাররা তাদের মোবাইল চেকআউট প্রক্রিয়া আরো উন্নত করবেন।
স্টোর লয়াল্টি প্রোগ্রাম ক্রেতাকে মোবাইল পেমেন্ট সেবা নিতে উৎসাহী করবেঃ
অ্যাপল পে, অ্যাণ্ড্রয়েড পে, পে-প্যাল, স্যামসাং পে চালু হয়ে গিয়েছে ২০১৫ সালে কিন্তু এখনো এসব মোবাইল পেমেন্ট সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে নি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে মোবাইল পেমেন্ট লোকে পছন্দ করছে না। ইতিমধ্যেই দশ লক্ষ মার্চেন্ট অ্যাপল পে এর সাথে যুক্ত হয়েছে। ই-মার্কেটার এর ভাষ্যমতে ২০১৬ সালে মোবাইল পেমেন্ট ২১০% বৃদ্ধি পাবে। ২০১৬ সালে মোবাইল পেমেন্টকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় রিটেইল প্রতিষ্ঠান গুলো বিশাল ভূমিকা রাখবে। কফিশপ চেইন স্টারবাকস এর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে পেমেন্ট সুবিধা আছে এবং বর্তমানে তাদের আয়ের ১৬% এই পেমেন্ট থেকে আসে। ওয়ালমার্ট ডিসেম্বর মাসে ওয়ালমার্ট পে ছেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বিখ্যাত রিটেইলার টার্গেট ও তাদের নিজস্ব মোবাইল পেমেন্ট সেবা চালু করবে সেরকম খবর শোনা যাচ্ছে। অনেক লোকেই এসব পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করবে এবং এর পিছনে প্রধান কারণ হচ্ছে এসব রিটেইলাররা তাদের মোবাইল পেমেন্টের সাথে তাদের লয়াল্টি প্রোগ্রামকে ইন্টিগ্রেট করে দেবে। মানে ক্রেতা মোবাইলে পেমেন্ট করতে থাকলে পয়েন্ট অর্জন করবে এবং সেই পয়েন্টের ভিত্তিতে ডিসকাউন্ট সহ নানা ধরণের সুবিধা পাবে।
পরিধানযোগ্য টেকনোলজি এবং ইন্টারনেট অব থিংসঃ
আমরা এখন আস্তে আস্তে এমন একযুগে চলে যাচ্ছে যেখানে ইন্টারনেটের সাথে সবসময়ে এবং সর্বত্র আমরা যুক্ত থাকব। আমাদের ফোন, গাড়ি, কম্পিউটার, ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকবে। এখন স্মার্টওয়াচ ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই যে সার্বক্ষণিক বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে বিভিন্ন ভাবে যুক্ত থাকা একে “ইন্টারনেট অব থিংস” হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। উন্নত দেশের মানুষ জন আস্তে আস্তে এদিকে চলে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে রিটেইলাররা ইন্টারনেট অব থিংস এর সাহায্যে নানাভাবে ক্রেতার সাথে সংযুক্ত হয়ে তাকে নানাভাবে অফার দিবেন এবং কেনাকাটা করতে আকৃষ্ট করবেন। যেমন- যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ডিপার্টমেন্ট স্টোর কোহল’স অ্যাপল স্মার্টওয়াচ এর জন্যে একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে যার মাধ্যমে একজন ক্রেতা দোকানে কেনাকাটা করার সময়ে অ্যাপল ওয়াচে কুপন স্ক্যান করে চেকআউট করার সময়ে ঐ স্ক্যান দেখিয়ে লয়াল্টি রিওয়ার্ড পেতে পারবেন। অনেক রিটেইলার স্মার্টঅয়াচের মাধ্যমে ক্রেতাকে তাদের স্টোরে শুরু হওয়া ফ্ল্যাশ সেল সম্পর্কে নোটিফিকেশন দিতে পারবেন।
বাংলাদেশের প্রসঙ্গেঃ
এতক্ষণ তো যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের মোবাইল কমার্সে কি হবে তা নিয়ে অনেক কিছুই বললাম। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে- আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইল কমার্স জনপ্রিয় হবে কিন্তু বাংলাদেশের সাথে এর সম্পর্ক কি? সম্পর্ক আছে। সম্পর্কটা হচ্ছে বাংলাদেশেও এ বছরে ই-কমার্স এর জায়গায় মোবাইল কমার্স চলে আসবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল কমার্সে ২০১৬ সালের যেসব ট্রেন্ড আমি উল্লেখ করেছি তার অনেকটাই এ বছরে বাংলাদেশেও সীমিত আকারে শুরু হয়ে যাবে।
কেন এটা হবে? আপনি যদি খেয়াল করে দেখেন তাহলে দেখবেন যে বাংলাদেশ মোবাইল কমার্সের উপযুক্ত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে এখন যারা ই-কমার্স উদ্যোক্তা আছেন, ছোট-বড়-মাঝারী, তারা সবাই জানেন আমাদের দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামো মোটেও ভাল না। ঢাকা, চট্টগ্রাম এর মতো বড় বিভাগীয় শহর গুলোর বাইরে সাধারণ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ মোটেও ভাল না এবং সেরকম ভাল আইএসপি নেই। কিন্তু আমাদের দেশের সব জায়গায় থ্রি-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক আছে। বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি (বিটিআরসি) এর ডিসেম্বর ২০১৫ পরিসংখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৩ কোটি ৩৭ লক্ষ মোবাইল গ্রাহক আছেন। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ৪১ লক্ষ এবং এদের মধ্যে ৫ কোটি ১৪ লক্ষ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।
ডেইলিস্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে স্মার্টফোন আমদানী ২০১৪ সালের তুলনায় ২৮.২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ৪০.৪৫ লক্ষ ইউনিট স্মার্টফোন আমদানি হয়েছে। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এর ভাষ্যমতে দেশজুড়ে থ্রিজি নেটওয়ার্ক আসার কারণে স্মার্টফোনের বিক্রী বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা ট্রিবিউন এর আগস্ট ২০১৫ এর রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে যেসব হ্যান্ডসেট বিক্রী হয় তার ২০% এর বেশি স্মার্টফোন।
এ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং স্মার্টফোন হাত ধরাধরি করেই জনপ্রিয় হবে।
চীন এবং ভারতের ই-কমার্স বাজার বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স বাজার এবং এ দুটি দেশে মোবাইল কমার্সের হাত ধরেই অনলাইনে কেনাকাটা জনপ্রিয় হয়েছে। একই ঘটনা ঘটছে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যাণ্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তানসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ গুলোতে। এর পেছনে কারণ হচ্ছে এসব দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ অবকাঠামো নেই। চীন এত বড় দেশ এবং কয়েকটি প্রদেশ ছাড়া বাকীগুলোতে ভাল শপিং মল, দোকান এসব নেই। কিন্তু মোবাইল ইন্টারনেট সব জায়গায় আছে এবং স্মার্টফোনের মাধ্যমে চীনের লোক ইন্টারনেটে ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা করছে এবং স্মার্টফোনের মাধ্যমে দামও মিটিয়ে দিচ্ছে। আলিবাবা ডট কম বিশ্বের বৃহত্তম এবং চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান এবং আলিবাবা ডট কম এর অন্যতম প্রধান ব্যবসা হচ্ছে আলী-পে যার মাধ্যমে মোবাইলে কেনাকাটা করা যায়।
বাংলাদেশেও কিন্তু অবস্থাটা একই রকম। আমাদের দেশে সব কিছুই ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকার বাইরে ভাল দোকান বা শপিং মল নেই যেখান থেকে লোকে ভাল মানের পণ্য, বইপত্র সহ আরো অন্যান্য পণ্য ক্রয় করতে পারে। অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবার ফলে বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরে এখন একটা ক্রেতা শ্রেণী গড়ে উঠেছে যারা ভাল মানের পণ্য খোঁজে এবং কিনতে চায়। এসব ক্রেতারা যদি স্মার্টফোনের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে আরামে স্মার্টফোনেই মোবাইল ওয়ালেট এর মাধ্যমে পণ্যের দাম মিটিয়ে দিতে পারে হলে তারা সেই সুযোগ লুফে নেবে। এক কথায় বলতে গেলে মোবাইল কমার্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বত্র অনলাইনে কেনাকাটা জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব।
এবার আমরা বাংলাদেশের গ্রামের চিত্র দেখি। দৈনিক কালের কন্ঠ ৪ জানুয়ারি “জীবন বদলে গেছে অজপাড়াগাঁয়েও” শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়েছে,
গ্রামে এখনো দারিদ্র্য আছে, কিন্তু না খেয়ে থাকা মানুষ আর নেই। এখনো আঁতুড়ঘরে সদ্যোজাত শিশু শেষ চিৎকার দিয়ে চির বিদায় নেয়, কিন্তু সংখ্যায় অনেক কম। গ্রামের শিশুদের এখনো লাঙল ধরতে হয়, তবে বিদ্যালয় থেকে ফিরে। রোগ-শোক-জরা আছে, সেই সঙ্গে আছে চিকিৎসার ব্যবস্থাও। জীবন বদলানোর আশায় এখনো শহরে যায় গ্রামের বহু তরুণ-তরুণী, তবে সমৃদ্ধ জীবনের স্বপ্ন এখন গ্রামে থেকেও দেখা যায়। শুধু নৌকাবাইচ আর হাডুডু নয়, গ্রামের ছেলেটি এখন লা লিগার বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচেরও খবর রাখে।
ঐ রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে বাংলাদেশের ১৩ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহকের বড় অংশ গ্রামের মানুষ। আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের কারণে গ্রামের মানুষ এখন শ্যাম্পু, সাবান সুগন্ধি কেনে। বাড়িতে বাড়িতে এখন মটরসাইকেল আছে।
স্মার্টফোন নিয়ে রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে
তাদের কেউ কেউ স্কাইপ ব্যবহার করতেও শিখে গেছে। বিদেশে থাকা স্বজনরা এখন আর টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করে নিজের গলার আওয়াজ পাঠায় না। গ্রামের অল্পশিক্ষিত অনেক তরুণ-তরুণীরও এখন ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে। গ্রামের মানুষ এখন ইন্টারনেট ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বড় গ্রাহক। প্রায় এক কোটি কৃষকের আছে নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুতের আওতায়। ৮০ লাখ পরিবার সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুত্ ব্যবহার করে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। দেশে সৌর বিদ্যুত্ উত্পাদিত হয় ৩৩০ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের সঙ্গে গ্রামে গেছে টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রীও।
পাঠক এখন কি চিত্রটি একটু একটু করে আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এটা থেকে আপনার অনুমান করতে কষ্ট হচ্ছে না যে অদূর ভবিষ্যতে অনেক গ্রামের লোকের হাতে স্মার্টফোন থাকবে। স্মার্টফোন চালানো সহজ, ডেস্কটপ কম্পিউটারের মতো বিশাল জায়গা লাগে না বা অনেক বিদ্যুৎ লাগে না। ডিসপ্লেও মোটামুটি বড়। তাই সব মিলিয়ে অদূর ভবিষ্যতে গ্রামে গঞ্জের মানুষের কাছে স্মার্টফোনই হয়ে উঠবে কম্পিউটার।
গত বছরের অক্টোবরে বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ (বিসিজি) “Bangladesh The Surging Consumer Market Nobody Saw Coming” শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যাতে বলা হয় যে দেশের জনসংখ্যার ৭% উচ্চ ও মধ্যবিত্ত এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে ২০২৫ সালে বাংলাদেশে মধ্য ও উচ্চবিত্ত মানুষের সংখ্যা হবে ৩কোটি ৪০ লক্ষ। এটা তো আর বলা লাগবে না যে এদের সবার হাতেই স্মার্টফোন থাকবে কারণ ততদিনে ইন্টারনেট সংযোগ আরো উন্নত হবে।
বুঝতেই পারছেন যে সময় এসে গিয়েছে বাংলাদেশে মোবাইল কমার্স শুরু করার এবং যেসব ই-কমার্স উদ্যোক্তা মোবাইল প্রযুক্তির উপরে জোর দেবেন তারাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবেন এবং লাভের মুখ দেখবেন।
মোবাইল বান্ধব ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরিঃ
মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের বেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে যে কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশেও আমি মনে করি সে কথা খাটে। আমাদের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা দুই তিনটি অ্যাপ্লিকেশন খুব বেশি ব্যবহার করেন। তাই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ক্রেতা আকৃষ্ট করা বাংলাদেশের ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্যে অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র এবং মাঝারী প্রতিষ্ঠান এবং অ্যাপ্লিকেশন তৈরি এবং নিয়মিত আপগ্রেড অনেক খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার।
সুতরাং অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের উপরে জোর না দিয়ে মোবাইল ওয়েবসাইটের উপরে জোর দিতে হবে। একজন ভিজিটর তার স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট পিসি থেকে যেন নির্ঝঞ্ঝাটে ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারে এবং ব্রাউজ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। স্মার্টফোনে ওয়েবসাইট যেন লোড হতে বেশি সময় না নেয়, সুন্দর ডিজাইন হয় এবং আরামে ব্রাউজ করা যায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
সোশ্যাল কমার্সঃ
যুক্তরাষ্ট্রের আগেই বাংলাদেশে সোশ্যাল কমার্স চালু হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশে এখন এক কোটির বেশি লোক ফেইসবুক ব্যবহার করেন। ই-কমার্সকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে ফেইসবুকের ভূমিকাকে অস্বীকার করার উপায় নেই।অনেক প্রতিষ্ঠান এবং ছোট উদ্যোক্তা ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা বিক্রী করছেন। আমাদের দেশের অনেকেই ফেইসবুক এর মাধ্যমে কাপড় চোপড় কিনছে এবং এদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
মোবাইল কমার্সের ক্ষেত্রে ফেইসবুক আরো বড় ভূমিকা রাখবে কারণ আমাদের দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশই ফেইসবুকে প্রচুর সময় কাটায়। আর যদি এমন হয় যে ফেইসবুকে পণ্য দেখেই সাথে সাথে “বাই বাটন” এ চাপ দিয়ে কয়েক ক্লিকে স্মার্টফোনেই পণ্যটি কিনে ফেলা যাচ্ছে তাহলে বাংলাদেশে প্রচুর লোক এভাবে পণ্য কিনবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
মোবাইল পেমেন্ট হবে ক্যাশ-অন-ডেলিভারির উপযুক্ত বিকল্পঃ
বর্তমানে বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্যে ক্যাশ-অন-ডেলিভারি বিশাল সমস্যা। অনলাইনে কার্ডে পেমেন্ট করে এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। মোবাইল কমার্স হচ্ছে পেমেন্ট সমস্যার উপযুক্ত সমাধান। আমাদের দেশে মোবাইলের সাথে যা কিছু সম্পর্কিত তা লোকে সাদরে গ্রহণ করে এবং এর সবচেয়ে বড় উদাহারণ হচ্ছে বিকাশ। বিকাশের সাফল্য দেখে বাংলাদেশের অনেক ব্যাঙ্ক এখন তাদের নিজস্ব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালু করেছে।
Source: www.e-cab.net/ই-কমার্স-অ্যাসোসিয়েশন-অব/
এ কারণে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের মোবাইল কমার্সে যাতে ক্রেতা আরামে পেমেন্ট করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। মোবাইল ওয়ালেট বা অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে পেমেন্ট ইন্টিগ্রেট করা বা মোবাইল ওয়েবসাইটের সাথে মোবাইল ওয়ালেট/বিকাশ ইন্টিগ্রেট করে দেয়া, এ ধরণের কাজগুলো বাংলাদেশের অনলাইন রিটেইলারদের অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমের সাথে রিটেইলাররা তাদের নিজস্ব লয়াল্টি প্রোগ্রাম ইন্টিগ্রেট করবে বাংলাদেশের অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের মোবাইল পেমেন্টের সাথে এরকম লয়াল্টি প্রোগ্রাম ইন্টিগ্রেট করে তাহলে ক্রেতারা পেমেন্ট করতে আরো উৎসাহী হবে।
মানুষের স্মার্টফোনের কেনাকাটার মানসিকতার সাথে মানিয়ে নেয়াঃ
যুক্তরাষ্ট্রে ক্রেতারা কাজের মধ্যে মোবাইল শপিং করে এবং খুব দ্রুত শপিং করে এবং মোবাইল ডিভাইসে কনভার্সন রেইটও কম। বাংলাদেশেও স্মার্টফোনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে একই দৃশ্যের অবতারণা হবে। লোকে চলাফেরা কাজকর্মের মধ্যেই স্মার্টফোন ব্রাউজ করবে এবং পণ্য কিনবে। চীনে স্মার্টফোনে লোকে সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা করে যখন তারা যানবাহনে ভ্রমণ করে সেই সময়ে।
Source: Alizila
বাংলাদেশেও লোকে বাসে করে অফিসে যাতায়াত করে। ট্রাফিক জ্যামে কিছু করার থাকে না তখন তারা স্মার্টফোন খুলে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করবে এবং পছন্দ হলে পণ্যটি কিনে ফেলবে। এই যে একটা কাজের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার করে কেনাকাটা সেরে ফেলা এটা বাংলাদেশেও প্রচুর ঘটবে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রেতার এই মানসিকতা বুঝে এ সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে। তাই বাংলাদেশের অনলাইন স্টোর গুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টোর গুলোর মতোই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। মোবাইলে কত, আরামে এবং দ্রুত ক্রেতা কেনাকাটা করতে পারবে সেটা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে।
মোবাইল কমার্সের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হবে পণ্য ডেলিভারি
গত বছরে আমি ই-ক্যাব ব্লগে ভারতে অনলাইনে ক্রয়কৃত পণ্য ডেলিভারি নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। ভারতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলোকে তাদের আয়ের ৩০% লজিসটিক্স খাতে ব্যয় করতে হয় অর্থাৎ পণ্য ডেলিভারির জন্যে। বাংলাদেশে ই-কমার্স সেক্টরের জন্যে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পণ্য ডেলিভারি এবং মোবাইল কমার্সের ক্ষেত্রেও এটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হবে। মোবাইল কমার্সে ক্রেতা সঠিক সময়ে পণ্যের ডেলিভারি না পেলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবসা করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে।
নিরাপত্তাঃ
মোবাইলে লেনদেন জনপ্রিয় হবার সাথে সাথে এ খাতের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কোটি কোটি লোক মোবাইল ওয়ালেট বা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে টাকা পে করবে এবং তখন তাদের ব্যক্তিগত তথ্য এবং লেনদেন যাতে সুরক্ষিত থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
গত বছরে আমি ভারতের গ্রোথ স্টোরি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের উপরে পোস্ট দিয়েছিলাম। গ্রোথ স্টোরির প্রতিষ্ঠাতা মিনা গণেশ ভারতীয় ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে “Think Mobile First” অর্থাৎ যে কোন ব্যবসা বা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মোবাইল প্রযুক্তির কথা প্রথমে মাথায় রাখতে হবে উদ্যোক্তাদের। বাংলাদেশেও এখন সেই সময়ে এসে গেছে এ বাংলাদেশে যারা ই-কমার্স শুরু করবেন বা অনলাইনে কোন ধরণের ব্যবসা করার কথা চিন্তা করবেন বা যারা ইতিমধ্যেই অনলাইন ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন তাদের সবাইকে এখন মোবাইলের উপরে জোর দিতে হবে।
সূত্র:
9,259 total views, 3 views today