‘‘ভাষা সংস্কৃতির বিকাশে তথ্যপ্রযুক্তি’’ বিষয়ক প্রবন্ধ ০৩
মুক্তধারায় (অনলাইনে) তুলে করুন আপনার ভাষা ও সংস্কৃতিকে
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
( বন্ধণীতে অবস্থিত ইংরেজী শব্দ বাদ দিলে এটা হবে ইংরেজী শব্দবিহীন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক একটা পূর্ণ রচনা। সম্ভবত বিদেশী শব্দবিহীন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রথম প্রবন্ধ হয়ে থাকবে এটি। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক শব্দগুলোতে ও বাংলা পরিশব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সেটা ইংরেজী শব্দের স্থলে বাংলা শব্দের ব্যবহার চালু করার জন্য নয়। শুধু একটি বার্তা দেয়ার জন্য যে বাংলাভাষায় বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি চর্চা সম্ভব, আমাদের রক্তার্জিত বাংলাভাষা দূর্বল নয় )
আমরা ভাবি যে আমাদের ভাষা সংস্কৃতি ও নিজস্ব কৃষ্টিকে ভালোভাবে উপস্থাপন করা দরকার। কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে আমরা কাজের কাজটি করিনা। হয়তো অন্যান্য কাজের ছাপে এই কাজটাকে আর পাত্তা দিতে পারিনা, নয়তো লাভ লোকসানের হিসেব করে কাজটা বাদ দিয়ে দিই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা বুঝতে পারিনা আসলে কি করা দরকার। আবার এমনও হয় পর্যাপ্ত উৎসাহ না পাওয়ার কারণে মগজের দপ্তরে লালফিতায় ছাপা পড়ে যায় নথিটি। মহান ভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আমি আপনাদের কয়েকটা পরামর্শ নিয়ে হাজির হয়েছি। নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য।
কিছু একটা করুন:
আপনি যদি সিদ্বান্ত নেন আমি আমার ভাষা ও সংস্কৃতি তথা দেশ ও জাতির জন্য কিছু একটা করবেন। তাহলে দেখবেন ঠিক ঠিক একটা কিছু করার জন্য পেয়ে গেছেন। এক্ষেত্রে আমি আমার ব্যাপারটা আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করতে পারি। আমি প্রথমে ফোকলেন নামে একটা সংস্থা গঠন করে লোকসাহিত্যের জন্য কাজ করতে থাকি, এটা ২০০২ সালের কথা বাংলা ১৪০৯ সাল। পরে দেখলাম আমি আসলে এ কাজে সময় দিতে পারছিনা। কিন্তু আমার লোকসাহিত্যের জন্য কিছু করা চাই। আমার আবার টাকা পয়সা নেই যে খরচ করবো। তখন আমি ২০০৫
বাংলা ১৪১২ থেকে রাখালী নামে একটি ছোট পত্রিকা বের করি। ডাকপত্রের (পোস্টকার্ড) সাইজ। ২/৩টা লেখা থাকে। ১৫০ থেকে ২০০ শব্দ। খুব ছোট একটা ব্যাপার কিন্তু আমি বলি বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র পোস্টকার্ড ভিত্তিক পত্রিকা, আর বাংলাভাষার সবচেয়ে ছোট কাগজ।
ছোট একটা কাজ, যদি করে দেখাও আজ:
করতে পারেন ছোট কোন কাজ যাতে অনেক বেশী কিছু করতে হবেনা। আপনি ভাবতে থাকুন দেখবেন ঠিক ঠিক পছন্দের একটা পেয়ে যাবেন। কি বল্লেন? আমার কাছ থেকে জানতে চান? আচ্ছা দাঁড়ান বলছি।
১. আপনি আপনার আশে পাশে ১০ জন অশিক্ষিত মানুষকে অক্ষর জ্ঞান দিতে পারেন।
২. আপনার ছোটবেলায় শোনা লোকসাহিত্যগুলো দাদীর গল্প, বচন, বিলুপ্ত খেলা, গ্রামীণ ছড়া, খেলার বোল, বিয়ের গান, লোককথা, লোকগীতি, পালা, ধাঁধাঁ ইত্যাদি লিখে রাখতে পারেন। আরো ভালো হয় যদি এগুলো কোন পঞ্জিতে (ব্লগে) বা ফেইসবুকে পেশ করতে পারেন।
৩. আপনার এলাকায় মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত লোকসাহিত্য গুলো আপনার মুঠোফোন দিয়ে ধারণ করে আন্তজালে (ইন্টারনেটে) প্রকাশ করতে পারেন।
৪. নিজে প্রমিত বাংলা বলে আশপাশের সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন।
৫. আপনার থাকতে পারে একটি আঞ্চলিক ভাষা। বাংলা ভাষার শব্দভান্ডারের সাথে তার হয়তো রয়েছে কিছু ফারাক। আপনি নিজেই আপনার আঞ্চলিক ভাষার একটি অভিধান লিখে রাখতে পারেন। আপনার ভাষার শব্দগুলো কিন্তু আস্তে আস্তে মরে যাচ্ছে। আপনি সে ভাষার শব্দগুলোকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচালেন।
করার আছে অনেক কিছু:
১. শুদ্ধবাংলা, নির্ভুল বাংলা শেখার জন্য আপনি একটি চলচ্চিবি শিখনি (ভিডিও টিওটোরিয়াল) বানাতে পারেন।
২. শুধুমাত্র বাঙলা সাহিত্য ও সঙস্কৃতি বিষয়ক একটি আলাদা পঞ্জি (ব্লগ) বানাতে পারেন।
৩. বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে মুক্তধারায় (অনলাইনে) বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারেন।
৪. ছোটদের জন্য একটি বানান শিক্ষা চলচ্চবি শিখনী (ভিডিও টিওটোরিয়াল) বানাতে পারেন।
৫. নতুন প্রজন্মের মাঝে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতির গৌরবের কথা প্রচার করতে পারেন।
সমৃদ্ধকরুন বাংলা তথ্যভান্ডার
১. আমরা উইকিপিডিয়া, বাংলা পিডিয়াকে সমৃদ্ধ করতে পারি বাংলা লেখা ও তথ্য দিয়ে।
২. আমরা বাংলা পঞ্জিগুলোতে (ব্লগে) নতুন নতুন বিষয় সংযোজন করতে পারি।
৩. আমরা বাঙলা নতুন বিষয়ে নতুন পঞ্জি (ব্লগ) খুলতে পারি
৪. আমরা বাংলা দাখিলা/পেশ/ডাক (পোস্ট) গুলোকে গুগল ও অন্যান্য অন্বেষীযন্ত্রের (সার্চ ইঞ্জিন) সাথে সংযোগ ঘটিয়ে দিতে পারি।
৫. আমরা শুদ্ধ উচ্চারণ বিষয়ক শিক্ষা বক্তৃতা ইউটিউবে চলচ্চবি (ভিডিও) আকারে দাখিলা (পোস্ট) দিতে পারি।
৬. আমরা সমন্বিম মাধ্যমে শিক্ষাকে নিয়ে আসতে পারি।
৭. আমরা বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা অবতরঙ্গ বা হাওয়াইমাকাম বা বাতায়নী (ওয়েবসাইট) খুলতে পারি।
৮. আমরা আমরা উইকিপিডিয়া, বাংলা পিডিয়াতে সম্পাদনা করে দিতে পারি।
৯. অন্তজালে (ইন্টারনেটে) বিভিন্ন বাতায়নীতে (ওয়েবসাইটে) থাকা লেখাগুলোর নিচে মন্তব্য করে বানান ভুল থাকলে তা ধরিয়ে দিতে পারি।
১০. আমরা এমন একটা ব্লগ বা ওয়েব বানাতে পারি যাতে শুধু সৃজনশীল রচনা থাকবে। গল্প কবিতা উপন্যাস ছড়া গান ইত্যাদি। যারা পত্রিকায় লেখার সুযোগ পারয়না তাদের জন্য এটা হবে একটা প্লাটফর্ম।
বড়ো কিছু করতে চাইলে
১. আপনি এমন একটি ভালো অনুবাদী (ট্রান্সলেটর) বানাতে পারেন।
২. আপনি একটি আধুনিক অভিধান বানাতে পারেন, যাতে নতুন চালু হওয়া বিদেশী শব্দের অর্থ থাকবে।
৩. আপনি একটি বানান অভিধান বানাতে পারেন যেটি গণকযন্ত্রে (কম্পিউটারে) বানান শুদ্ধিকরনের কাজ করবে।
৪. আপনি এমন একটি বায়বীয় হাজু (সফটওয়ার) বানাতে পারেন যেটি বুলিয়ে (স্ক্যান করে) বইয়ের অক্ষরকে গণকযন্ত্রের (কম্পিউটারের) অক্ষরে রুপান্তর করা যাবে।
৫. আপনি একটি আনুষ্ঠা (প্রোগ্রাম) বানাতে পারেন। যা সঠিক বানানের সাথে সাথে বানানোর নিয়মটাও বলে দেবে। এতে করে লোকেদের সঠিক বানান শেখা সহজ হয়ে যাবে।
৬. একটি কণ্ঠ বায়বীয় হাজু (সফটওয়ার) বানাতে পারেন। যাতে গণকযন্ত্রে (কম্পিউটারের) অক্ষরে ছাপ দেয়ার সময় সঠিক উচ্চারনটা রেজে ওঠে।
৭. গণকযন্ত্রের (কম্পিউটারের) সাধারণ (কমন) আনুষ্ঠাগুলোকে (প্রোগ্রামগুলো) বাংলায় বানাতে পারেন।
দ্যূতি ব্যবসায় (ই কমার্স) করতে চান যদি:
আপনি যদি এসব কাজ ব্যবসায়িকভাবে করতে চান তাহলেও এতে আপনার জন্য সম্ভাবনা রয়েছে। শিশুদের শিক্ষামূলক গুমনি (সিডি) বানাতে পারেন। আপনি ছলচ্চবি শিখনি (ভিডিও টিউটোরিয়াল) দিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। আপনি বিভিন্ন শ্রেণীর প্রশ্নউত্তর, বক্তপ্রত্র (লেকচারশীট) ইত্যাদি নিয়ে খোলাধারায় (অনলাইনে) বা কলগুমনি (সিডি) বানিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। আপনি হাতের কপি, (হ্যান্ডনোট) নমুনা প্রশ্ন (মডেল টেস্ট) ইত্যাদির বায়ুবীয় হাজু, (সফটওয়ার) কল গুমনি, (সিডি) খোলাধারায় (অনলঅইনে) বাতায়নী (ওয়েব সাইট) বানিয়েও ব্যবসা করার সুযোগ রয়েছে। আপনি দিতে পারেন দূরশিক্ষণ বা খোলাধারা বিদ্যালয় (অনলআইন স্কুল)।
প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন:
সবকিছুতে ব্যবসা করার দরকার কি উপরের যেকোন একটা কাজ আপনি সমাজ বা দেশের জন্য করুন। সেটি আপনাকে ব্যাপক পরিচিত এনে দিবে। অভ্র সম্মবর্ণ (ইউনিকোডের) প্রস্তুতকারী এটি বাজারে বিক্রি করলে হয়তো অনেক টাকা পেতো। কিন্তু তিনি সেটা বিনামূল্যে দিয়ে দেশে ও সমাজে যে সুনাম বা ইতিবাচক ভাবমূর্তি সেইসাথে প্রচারণা পেয়েছেণ। তিনি আসলে শেষপর্যন্ত লাভবানই হয়েছেন।
5,550 total views, 2 views today