বুক রিভিউ কি এবং কেন?
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
বুক রিভিউকে আমরা বলি পুস্তক সমালোচনা বা পাঠ প্রতিক্রিয়া। কোনো একটা বই পড়ার পর বইটি সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতা ও ভালোমন্দ আমরা যখন প্রকাশ করি। তখন সেটাকে বুক রিভিউ বলে। প্রায় সবগুলো দৈনিকে সাহিত্য পাতায় বুক রিভিউ থাকে। উন্নত বিশ্বে বুক রিভিউর উপর ভিত্তি করে কোনো কোনো বই লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়। আমাদের দেশে লাখ লাখ কপি না হলেও রিভিউর কারণে বই বিক্রি বাড়ে ও প্রচার প্রসার হয়। রকমারি ডট কম এর সাইটে গেলে আমরা দেখতে পাবো যে, সেখানে বইগুলোতে পাঠকের রিভিউ রয়েছে। সচেতন পাঠেকেরা যখন বই কেনেন। তখন অন্যদের রিভিউ দেখে তারা সিদ্ধান্ত নেন।
বইয়ের বিভিউতে কি থাকে?
বইয়ের রিভিউতে থাকে প্রথমে বইটির প্রাথমিক কনটেন্ট। যেমন বইয়ের নাম। লেখকের নাম, অনুবাদ বই হলে অনুবাদকের নাম। প্রচ্ছদ শিল্পীর নাম। প্রকাশক। প্রকাশকাল। দাম ও পৃষ্ঠাসংখ্যা।
এরপরে একটি সমৃদ্ধ আলোচনায় বইয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। সাহিত্য হলে এর শব্দচয়ন, ভাষা, অলংকার সাহিত্যমান ইত্যাদি সমালোচক তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশ্লেষণ করে থাকেন। গল্প, সংলাপ লেখার ভঙ্গি, লেখকের নিজস্বতা, মান ইত্যাদি বিষয়ে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষন করেন। শুধু ভালো বই লেখা যেমন একটা সাহিত্য। বইয়ের আলোচনা লেখাও একটা সাহিত্যকর্ম। তাই বইয়ের রিভিউ লেখার জন্যও মুন্সিয়ানা থাকতে হয়। খুব কিছু ব্যতিক্রম বা দিলে রিভিউ শেষের দিকে বইতে কোনো দূর্বলতা থাকলে সেটা উল্লেখ করতে হয়। যেমন লেখা যদি সুখপাঠ্য না হয় অথবা তথ্যে ভুল থাকে ইত্যাদি। আর রিভিউর সাথে অবশ্যই বইয়ের ছবিটিও প্রকাশ করা হয়।
রিভিউ লেখার নিয়ম কি?
বইয়ের রিভিউ লেখার জন্য। প্রথমে বইটি পুরোটা পড়া জরুরী। সেজন্য আগে পড়া উচিত বইয়ের ভূমিকা। ভূমিকা পড়ে প্রাথমিক ধারণা নেয়ার পর। একটি কাগজ কলম বা নোটবুক নিয়ে বই পড়তে বসতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়। ভূমিকা পড়ে কি প্রত্যাশা তৈরী হয়েছে। তার একটা তালিকা করে নিলে। তাহলে বইটি পড়ার সময় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসেব মেলানো সহজ হয়ে যায়।
এরপর ধারাবাহিকভাবে বইটি পড়ার সময় কোনো ভালো বা মনে লাগা পয়েন্ট কথা বা লেখা দাগ দেয়া বা নোট নেয়ার অভ্যাস থাকতে হবে। তেমনি কোনো ভুল বা অসঙ্গতিটা বুঝতে হবে। পুরো বইয়ের মোরাল, সারমর্ম বা গল্পটাও বুঝে নিতে হবে। বই পড়ার সময় পজেটিভ ও ইতিবাচক নেটাগুলো এক কাগজে আর নেতিবাচক নোটগুলো আলাদা কাগজ বা আলাদা পৃষ্ঠায় টুকে নেয়া যায়।
পরে বিষয়টি গুছিয়ে লিখে ফেললেই হয়ে যাবে সুন্দর রিভিউ। তবে ভালো পড়াশোনা না থাকলে বইয়ের রিভিউ লেথা যায়না। এজন্য নিয়মিত পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আজকাল পেশাদার রিভিউ লেখকরা প্রতিটি বইয়ের রিভিউ লেখার জন্য ভালো সম্মানি পান। কোনো ক্ষেত্রে বইটি প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই রিভিউ রাইটারদের দিয়ে ভূমিকা লেখানো হয়। আর রিভিউ লেখার আরেকটা সুবিথা হলো রিভিউ লিখলে বিনামূল্যে বইয়ের কপি পাওয়া যায়। তাই যাদের লেখালেখির অভ্যাস আছে। তারা চাইলে রিভিউ রাইটার হতে পারেন। খুব সহজ যে বইগুলো আগে পড়েছেন। রকমারি ডট কম এ গিয়ে সেই বইগুলো রিভিউ লিখে দিলেই হবে।
একটা নমূনা বুক রিভিউ দেয়া হলো।
বই: আনফোল্ড ইউর পটেনশিয়াল
লেখক: ড মো: আলমাছুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম শোভন
প্রচ্ছদ: নাসরিন সুলতানা
দাম: ২০০ টাকা
প্রকাশক: ছায়াবীথি
প্রকাশকাল: ফ্রেব্রুয়ারী ২০১৯
আনফোল্ড ইউর পটেনশিয়াল একটি আত্ম উন্নয়নমূলক বই। প্রচলিত অর্থে এটাকে মোটিভেশনাল বই বলে একপাশে ফেলে দেয়ার সুযোগ নেই। এটা আসলে জীভনগঠনমূলক বই, এখানে মেডিটেশন আছে, স্বাস্থ্যপুষ্টি আছে, আছে সামাজিক উন্নতির বিভিন্ন দিক। এটাতে মানুষের আত্মিক শারীরিক, দৈনিন্দিন ও সামাজিক জীবনের উন্নয়নের কথা রয়েছে। একজন মানুষ কেন কিভাবে স্বাবালিলভাবে নিজেকে প্রকাশ করবে? কিভাবে একজন মানুষের সুপ্ত ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে? পাষ্পরিক বোঝাপড়া ও অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা আসলে কি অর্জণ করি? শারীরিক সুস্থ্যতা, পিএইচ ভারস্যাম এসব সুস্থ্যতার বিষয় যেমন আছে। তেমনি আছে সফল হওয়ার জন্য মনোবলের কথা। ড: মো: আলমাছুর রহমান তার লেখনীতে একজন মানুষের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে মানবিকতার বিকাশের একটা রোডম্যাপ অংকন করেছেন বলা যায়। তিনি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত দিয়ে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছেন।
দুই লেখকের আরেকজন হলেন জাহাঙ্গীর আলম শোভন। তিনি তার লেখায় মানুষের জীবনের অনুরুপ দুটি দিক ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের ভিন্ন কিছু বিষয় তুলে এনেছেন। তিনি আমাদের জীবনের দৈনিন্দিন বাস্তবতার নিরিখে বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যা করেছেন। যেসব মানুষ আসলে বিভিন্ন কারণে হতাশায় ভুগছেন। তারা এর থেকে অনুপ্রেরণা পাবেন। তিনি আত্মবিনির্মানের পথ, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের উপায়, আমরা প্রতিনিয়ত সামাজিক আচরণে যেসব ভুল করে থাকি, এবং আমাদের সম্ভাবনা থাকা সত্বেও কেন আমরা কখনো কখনো পিছিয়ে পড়ি তা পয়েন্ট আকারে ব্যাখা করেছেন।
বিশেষ করে আত্মহত্যা নিয়ে দুই লেখকই আলোকপাত করেছেন। বিষয় এক হলেও নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচনার কারণে শুধু আত্মহত্যা বিষয়ক লেখা নয়। পুরো বইটি হয়ে ভালো জীবনের ম্যানুয়েল। একই বইতে দুই লেখকের দুই রকমের লেখার স্বাদ সেটা পাঠক বেশভালোভাবেই টের পাবেন। বইয়ের প্রচ্ছদটা কালো হলেও খুব অর্থপূর্ণ আর সুন্দর হয়েছে।
কিছু কিছু বিষয় পাঠক জানেন কিন্তু এই বইতে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা জানার পরও আপনি বই পড়ে সেগুলোকে নতুন করে গুরুত্বসহ নেবেন। আবার এমন অনেক বিষয় আছে, যা আমাদের চারপাশে বিরাজমান কিন্তু আমরা আসলে সেভাবে কখনো ভাবিনি বা খেয়াল করিনি। এই বই পাঠে সেসব বিষয় নতুন ভাবনার খোরাক জাগবে।
সব বয়সের পাঠকের উপযোগী বইটিতে সম্ভবত কম্পিউটারে ফাইল ট্রান্সফার করার সময় কিছু ফন্টজনিত সমস্যা হয়েছে। ২/১ টা বানান প্রমাদ বাদ দিলে বইটি পড়ার পর মনে হবে এত ভালো একটা বই আর এতো ছোট! সবচেয়ে বড়ো কথা হলো বর্তমানে এসব জীবন গঠনমূলক বিষয়ে লেখার জন্য এক শ্রেণীর লেখক ইন্টারনেট থেকে কপি পেস্ট করা কনটেন্ট এর উপর ভরসা করে থাকেন। কিন্তু এই বইটির কনটেন্ট মৌলিক।
12,509 total views, 3 views today